অবশেষে তথাকথিত শাইখুল হাদীছও মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ফতওয়া স্বীকার করেছেন। তার রাহমানী পয়গাম পত্রিকার সেপ্টেম্বর/০৫ সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে-
“(ক) কোন প্রাণীর ছবি কাপড়, মানিব্যাগ বা অন্য কিছু দ্বারা আবৃত থাকলে তা সঙ্গে নিয়ে নামায পড়লে নামায শুদ্ধ হবে। তবে অনাবৃত অবস্থায় সঙ্গে নিয়ে নামায পড়লে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। এ ক্ষেত্রে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে।
(খ) কোন প্রাণীর ছবি যা দূর থেকে স্পষ্ট ভাবে বুঝা যায় তা যদি নামাযীর ডানে বামে, সামনে-পিছনে অথবা মাথার উপর রাখা থাকে তাহলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। অতএব, ম্যাচ ও আগরবাতিতে সংযুক্ত প্রাণীর ছবি যদি স্পষ্ট ও দূর থেকে বুঝা যায় তাহলে এ প্রকার ছবিও নামাযীর ডানে-বামে, সামনে-পিছনে অথবা মাথার উপরে রাখা থাকলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।
উল্লেখ্য, মসজিদে ছবি সংযুক্ত কোন প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে চাইলে ছবিকে ঢেকে দেওয়ার কোন স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে অথবা তা মাথা বিহীন করে রাখবে। (প্রমাণঃ আল-বাহরুর রায়িক ২/৪৮, আদ দূররুল মুখতার- ২/৪১৭, বুখারী শরীফ- ২/৮৮১, সুনানে আবূ দাউদ- ৩/৪১৫, কানযুদ দাকায়েক- ১/৪৩)”
উদ্ধৃত জবাবের মূল কথা হল, যে কোন প্রাণীর ছবি তোলা ইসলামে নিষেধ। এমনকি মসজিদে যদি আগরবাতি বা ম্যাচে একটি প্রাণীর ছবিও থেকে থাকে তাহলে পুরো মসজিদে যদি এক লক্ষ মুছল্লী থাকে তবুও সবার নামায মাকরূহ তাহরীমী অর্থাৎ হারামের কাছাকাছি হবে। সেক্ষেত্রে ফিক্বাহর কিতাব অনুযায়ী সবারই নামায দোহরিয়ে পড়া ওয়াজিব।
উল্লেখ্য মসজিদের ম্যাচে বা আগরবাতিতে যে ছবি থাকে তা যে পূজার জন্য নয় বা অতীব সম্মান প্রদর্শনের জন্য নয় বরং এমনিতেই সাধারণ ছবি তাতে সবাই একমত। কিন্তু তারপরেও তথাকথিত শাইখুল হাদীছের পত্রিকায়ও কয়েকটি কিতাবের এবারতের ভিত্তিতে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে সেরূপ ছবি থাকলেও সব মুছল্লীর নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।
মূলতঃ ফিক্বাহর সমূহ কিতাবের ভাষ্যও তাই। এক্ষেত্রে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যায় ৩৫৩টি দলীল উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে রাহমানী পয়গামে মাত্র ৫টি দলীল পেশ করা হয়েছে।
আর এক্ষেত্রে মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার পেছনে মূল কারণ হল যে কোন প্রকার প্রাণীর ছবি থাকা। সম্মান বা পূজার জন্য বা সাধারণ উদ্দেশ্য থাকা এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। অর্থাৎ প্রাণীর ছবি তোলাই নাজায়িয ও হারাম।
কিন্তু তথাকথিত ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন খান সাহেব ইদানিংকালে বলে বেড়াচ্ছেন যে, যে সব ছবি সাধারণভাবে ছাপা হয় পূজার জন্য বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য নয় তা নাজায়িয নয়। যে কারণে তিনি নিজেও এখন পেপার পত্রিকায় অহরহ ছবি তুলে বেড়াচ্ছেন। কেবলমাত্র ‘মাসিক মদীনা’ পত্রিকাটি তার ধর্ম ব্যবসার মূল খোলস বিধায় এখনও সেখানে নিজের ছবি ছাপেননি।
আর সেক্ষেত্রে তথাকথিত শাইখুল হাদীছের রাহমানী পয়গাম, সেপ্টেম্বর/০৫ সংখ্যার আলোকে বলতে হয় যে, তার ফতওয়া শুদ্ধ নয়। মাহিউদ্দীনের ফতওয়া মুতাবিক মসজিদে আগরবাতি বা ম্যাচের ছবিতে মুছল্লীদের নামায মাকরূহ হবে না। কিন্তু তথাকথিত শাইখুল হাদীছের ফতওয়ায় মাকরূহ তাহরীমী হবে।
অর্থাৎ একটি মাকরূহ তাহরীমী কাজ বা হারামের কাছাকাছি কাজকে মাহিউদ্দীন জায়িয বলেছে। আর মাকরূহ তাহরীমী কাজকে যারা জায়িয বলে ফুকাহায়ে কিরামের মতে তারা সুস্পষ্ট বিদয়াতী। সেক্ষেত্রে তথাকথিত শাইখুল হদসের ফতওয়া মুতাবিক মাহিউদ্দীন অনিবার্যভাবে বিদয়াতী।
অপরদিকে রাহমানী পয়গামের সেপ্টেম্বর/০৫ সংখ্যা ছাড়াও তথাকথিত শাইখুল হাদীছ তার নিজের লিখা আরো কিতাবে ছবি তোলা যে নাজায়িয; তা লিখেছেন এবং বহু ওয়াজেও বলেছেন বটে।
এমনকি ১৯৯৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর সাপ্তাহিক বিচিত্রায় এক সাক্ষাৎকারেও তা বলেছেন।
কিন্তু তারপরেও তিনি হরদম বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছবি তুলে যাচ্ছেন। অর্থাৎ নিজের ফতওয়া নিজে আমল না করায় তিনি নিজেও ইসলামের দৃষ্টিতে চরম ফাসিকরূপে সাব্যস্ত হন।
এরপর একই সংখ্যায় টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান সম্পর্কে তার ভাষ্য হলঃ
“তবে প্রচারিত অনুষ্ঠান সমূহের মধ্যে যদি শরীয়ত নিষিদ্ধ কোন কিছু না থাকে এবং বেপর্দেগী না হয় তাহলে কেবল সংবাদ, ইসলামিক ও শিক্ষামূলক আদর্শ অনুষ্ঠান শ্রবণ করা ও দেখা জায়িয হতে পারে।”
কিন্তু এক্ষেত্রে তার জানা উচিত ছিল তিনি যে প্রাণীর ছবিকে নিষিদ্ধ বলেছেন সে ছবিই উক্ত টিভি চ্যানেলের মূল ভিত্তি। কাজেই প্রাণীর ছবিই যদি হারাম হয় তাহলে যতই শর্ত পালন করা হোক তা দেখা কি করে জায়িয হয়। মূলতঃ ছবিই যে টিভি চ্যানেলগুলোর মূল চালিকা শক্তি সে কথা সে শাইখুল হাদীছ দাবী করলেও তার আদৌ জানা নেই। এহেন জেহালতি তার জন্য সত্যিই খুবই করুণার বিষয়।
এরপর তিনি বলেছেন-
“স্বাভাবিক কার্য কর্ম ঠিক রেখে এবং শরীয়তের বিধানাবলী পালন করে ও পূর্ণ ছতর ঢেকে স্বল্প সময় ক্রিকেট খেলা জায়েয আছে।”
সত্যিই গোমরাহী তাকে প্রকটভাবে পর্যুদস্থ করেছে বটে। ৫০ বছরের অধিককাল যাবত তিনি বুখারী শরীফের দরস দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে এই হাদীছ শরীফকে কি করে বেমালুম চেপে রাখতে পারলেন। যে, “মু’মিনের জন্য তিনটি খেলা ব্যতীত অন্যসব হারাম। (১) কুস্তি খেলা (২) ঘোড়ায় চড়া (৩) সাতার কাটা।”
উল্লেখ্য এ হাদীছ শরীফখানা তিনি তার বুখারী শরীফেও উল্লেখ করেছেন। আর আজকে ইসলামের নামে রাজনীতিতে নেমে নিজের বলা ও লিখার বিরুদ্ধেই একের পর এক কাজ করে যাচ্ছেন। ছবি তুলছেন, বেপর্দা নারী নেতৃত্ব সমর্থন করছেন, লংমার্চ, হরতাল, কুশপুত্তলিকা দাহ, ইত্যাদি করছেন। এ কারণেই হাদীছের শাইখ না হয়ে প্রকৃত মানদণ্ডে তিনি আজ হদসের শাইখ বা নাপাকির ওস্তাদ বা শাইখুল হদসে পরিণত হয়েছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)
-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫