শাইখুল হদছ সম্পর্কে যারা ভাল জানেন তারা তার সদ্য ভোল পাল্টানোতে আশ্চর্য না হলেও সাধারণ মানুষ যুগপৎ হতচকিত ও ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। পঞ্চাশ বছরেরও অধিককাল হাদীছ শরীফ পড়িয়েছেন- এমনটিই তার প্রচারণা। সে প্রেক্ষিতে হাদীছ শরীফের আদর্শ ও প্রভা তার থেকে বিকশিত হবে তাই সবার আশা ও মূল্যায়ন। কিন্তু সে মূল্যায়নের মানদণ্ডকে বন্ধু স্বার্থপ্রনোদিত হয়ে তিনি বার বারই খান খান কবে ভেঙ্গেছেন। তবে এক্ষেত্রে কতটুকু চশমখোর ও নির্লজ্জ নীতিহীন হতে পারেন, মহাজোটে যোগ দিয়ে তারই জ্বলন্ত নজীর তিনি দেখালেন। ভোজবাজির মত বিবৃতি পাল্টানো ও বেপরোয়া, দলবদলের ধারাবাহিকতায় এরশাদ এখন প্রচলিত রাজনীতির ভাষায় বিতর্কিত রাজনৈতিক হিসেবে পর্যবসিত। কিন্তু তারপরেও এরশাদ যা করছেন তা রাজনীতির বিতর্কিত পথে চলা। কিন্তু শাইখুল হদছ তো প্রচলিত রাজনীতির প্রক্রিয়ায় চলছেন না। তিনি সুবিধা ভোগ করছেন ধর্মের হুস্থাবরণে, ধর্মের আশ্রায় ও ধর্মের ব্যানারে।
কাজেই শাইখুল হদছের মূল্যায়নে ধর্মের তথা ইসলামের মাপকাঠিটা অনিবার্যভাবে সম্পৃক্ত। শাইখুল হাদীহ সাহেব ৫ দফা চুক্তির মাঝে শর্ত করেছেন সনদ প্রাপ্ত হক্কানী আলিমগণ ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করবেন।
কিন্তু শাইখুল হদছ সাহেবের কর্মকাণ্ড, তিনি নিজেই যে কোনো মতেই হক্কানী আলিম নন বরং সাক্ষাত ধর্মব্যবসায়ী সে কথা উজারভাবে প্রকাশ ও প্রমান করেছে। এ বিষয়ে সাক্ষী সাবুদ দরকার নেই। তার অজস্র লেখা তার বিবৃতির সঙ্কলনই যথেষ্ট।
৩৬, বাংলাবাজার হাছানিয়া লাইব্রেরী থেকে ডিসেম্বর/১৯৯৯ সালে, শাইখুল হদ্দছ আজিজুল হকের রচিত, আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা নামক একটি বই প্রকাশিত হয়। উক্ত বইয়ের ১৩৪ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেন
“রং বেরংয়ের পোশাক, লিপিষ্টিক লাগানো, সভা সমিতি করা, রাজনৈতিক আসরে নামা, প্রকাশ্যে সভা-সমিতিতে বক্তৃতা দেয়া আর বেশ্যাবৃত্তি করা। শুধু পেশাদারী বেশ্যা না, অপেশাদার বেশ্যাবৃত্তি করা।”
শাইখুল হৃদছের এই লিখিত বিবৃতি থেকে প্রতিভাত হয় যে, তিনি বেশ্যার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন এবং আছেন।
শুধু তাই নয় যার জন্য শাইখুল হদছ ‘টুপি পড়তে পারেননি’ ‘পাগড়ী পড়তে পারেননি’, ‘ওযুর পানি পাননি’, তার ভাষায় যারা ছিল- চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী, ভারত ও র’এর এজেন্ট তারা আজ কোন তওবা ছাড়াই শাইখুল হদহ সাহেবের রাজনৈতিক গুরু ও পূজ্য হয়ে উঠলেন। বিষয়টি তার অনুসারীদের জন্যও রীতিমত বদহজমের কারণ বটে।
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, শাইখুল হদছ সাহেব এখন স্মৃতিভ্রমে ভুগছেন। কিন্তু সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহলের কাছে তো রেকর্ড ও বেফারেন্স অনেক। গত ৫ বছরে শাইখুল হদছ সাহেব জোট সরকার ও তার নেত্রীর
যে ছানা-ছিফত বয়ান করেছেন এবং শেখ হাছিনা ও তার দলকে শয়তান ও বদকারের সাথে তুলনা করেছেন তার ফিরিস্তি অনেক। পত্রিকার কলেবরে তার প্রকাশ সম্ভব নয়। তবে রাধুনীর জন্য ভাত একটি টিপলেই যথেষ্ট। তেমনি বক্ষ্যমান নিবন্ধে শাইখুল হদছের দু’চারটি উক্তিই বিষয়টি পরিষ্কার করবে।
ইসলাম বিদ্বেষী আ’লীগ চিরতরে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে
-শাইখুল হদস আজিজুল হক
কক্সবাজার থেকে স্টাফ রিপোর্টার: চারদলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শীর্ষনেতা ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান শাইখুল হদছ আজিজুল হক বলেছেন, ইসলাম বিদ্বেষের কারণে আওয়ামী লীগ চিরতরে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বিগত ৯৬/২০০১ সাল পর্যন্ত এদেশের আলিম-ওলামা, মসজিদ মাদ্রাসাসহ ইসলামপ্রিয় জনতার ওপর শেখ হাছিনার আওয়ামী লীগ সরকারের অকথ্য নির্যাতনের কারণে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এই দলটি এখনও দেশী বিদেশী ইসলাম বিরোধী শক্তির সাথে আঁতাত করে চারদলীয় জোট সরকার উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করছে। ইনকিলাব- ২৪শে এপ্রিল/২০০৪
চারদলীয় জোট সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে শাইখুল হদহ বলেন, “উদ্ভট কথা বলায় শেখ হাছিনার জুড়ি নাই। বর্তমান সরকারকে আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া কড় জঞ্জাল সাফ করতে হচ্ছে। (দৈনিক সংগ্রাম ২০ শে অক্টোবর ০১)
“প্রধানমন্ত্রী খালেদা ধৈর্য ধারণ করে আওয়ামী লীগের জঞ্জাল সাফ করে দেশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। নিশ্চয় এজন্য তিনি সোয়াবের ভাগিদার হবেন।” (২০শে অক্টেবর আজকের কাগজ/০৩)
ও “চারদলীয় জোট সরকার বিশেষ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ধৈর্য সহিঞ্চুতার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছেন ইনশাআল্লাহ তার সাফল্য অনিবার্য।
তার উপর আল্লাহর রহমত আছে, অবশ্যই থাকবে। (দৈনিক যুগান্তর ২০শে অক্টোবর-০৩)
রহমত কার উপর আছে সেটা আল্লাহ পাক ভাল জানেন। তবে শাইখুল হৃদছ সাহেব যে রহমত থেকে দূরে সরে গেছেন তা তার বক্তব্য কর্মকাণ্ড থেকেই প্রতিভাত হয়। এবং এ কারণেই তিনি আর হক্কানী আলিম নেই। তাও প্রমাণিত হয়।
উল্লেখ্য একই জনসভায় শাইখুল হলছ ছাহেব চারদলীয় জোট থেকেই নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন। ‘ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান শাইখুল হাদীছ আল্লামা আজিজুল হক তার বক্তৃতায় চারদলীয় ঐক্যজোটের সঙ্গে এক থেকে ভবিষ্যতে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দেন। (দৈনিক সংবাদ ২০ শে অক্টোবর-০৩)
কিন্তু আজকের সত্য হল যে, শাইখুল হদছ ছাহেব তার প্রতিশ্রুতি রাখেননি। আর শাইখুল হদীছ হিসেবে নিশ্চয়ই তার ভালো জানা আছে যে, মুনাফিক তথা ধর্মব্যবসায়ীর ৪টি বৈশিষ্ট্যের প্রথম ২টি হল- ১. মিথ্যা বলা ২. ওয়াদার খিলাফ করা।
উল্লেখ্য হাসিনা সরকারের সময় তারা টুপি-পাগড়ী পড়তে পারেননি এটা যেমন মুনাফিকী তেমনি চারদলীয় জোটের সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এটাও তেমন মুনাফিকী। আর মুনাফেকীর শাস্তি হল আহান্নামের অতল গহবরে সে কথাও শায়খুল হদছের অজানা নেই। এদিকে শাইখুল হাদছ ছাহেব সারা দেশের মুসলমানকে কাফের বা বোকা ঠাওরানোর অবকাশ পেয়েছেন। তার
চুক্তিনামার বিষয় হল- “হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী” -এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা- মূলতঃ এটি সব মুসলমান এমনিতেই মানেন। তাতে আবার আইন প্রণয়নের পেছনে কোন দুরভিসন্ধি?
তবে কি শাইখুল হদছ ছাহেব এই প্রমাণ করতে চান যে দেশের সবাই অমুসলমান আছে আর তাদেরকে মুসলমান বানানোর জন্যই তিনি জলীল সাহেবের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করলেন। (নাউযুবিল্লাহ)
তিনি আরো বলেছেন, সনদপ্রাপ্ত হক্কানী আলেমগণ ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন। কিন্তু সনদপ্রাপ্ত হলেও আলিম যদি হক্কানী না হয়, তাহলে কি হবে? যেমন শাইখুল হদছ ছাহেব সনদ প্রাপ্ত হলেও তার বক্তব্য অনুযায়ীই তিনি হক্কানী নন। আর সনদপ্রাপ্ত ও হক্কানী এ দু’টো বিষয় মূল্যায়ণ করবে কে? তিনি ও তার পরিষদ এ মূল্যায়নের ইজারা নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির জোয়ার এবং ফেরকা ও ফিতনার ছয়লাব ঘটানোর মাওকাই যে কুক্ষিগত করতে চাচ্ছেন তা বলাইবাহুল্য।
তিনি আরো বলেছেন, নবী-রসূল ছাহাবায়ে কিরামের অপরাধ ও কুৎসা রচনা করা দন্ডনীয় অপরাধ। অথচ নবী-রসূল ও সাহাবায়ে কিরামের কোন সনদ ছিলনা। তার মানে কি তারা কতওয়া দেয়ার ক্ষেত্রে মূর্ণ ও আযোগ্য
ছিলেন! (নাউযুবিল্লাহ)
তারা কি ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করতেন না? তাহলে আজকে ফতওয়ার সাথে কথিত সনদের সংযোগ করে শাইখুল হদহ ছাহেব মূলতঃ নিজেই নবী-রসূল ও সাহাবায়ে কিরামের মানহানির চেষ্টা করলেন। এখন তিনি নিজেই প্রথম নিজের শাস্তি দাবী করবেন কি?
মজার ব্যাপার হল, সারাদেশে ফতওয়ার নামে যেসব অরাজকতা ঘটেছে
সবই তার কওমী সনদওয়ালারাই করেছে। এখন এ ক্ষেত্রে তিনি কি জবাব দিবেন?
পরিশেষে বলতে হয় যে, তিনি এদেশের সাথে ইসলামের নামে চরম
থোকা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আব্দুল জলীলের সাথে চুক্তিনামায় বলেছেন যে, পবিত্র
কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়তবিরোধী কোন আইন প্রণয়ন হবেনা। কিন্তু বাস্তব কথা হলো যে বর্তমানে দেশে কি কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী শত শত আইন নেই? তবে এগুলো বন্ধের ব্যাপারে তাদের কোন চুক্তি হলো না কেন?
আর ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রেক্ষিতে বর্তমান সংবিধানের আওতায় যে সম্পূর্ণভাবে কুরআন-সুন্নাহর আইনের আদলে সব আইন প্রণয়ন করা যা বিরোধী আইন প্রণয়ন না করা সম্ভব নয় একথা সাধারণেও বুঝে। কিন্তু তারপরেও বামপন্থী, এলডিপি, আওয়ামী লীগ না হয় এটাকে নির্বাচনী কৌশল বলে পার পেতে চাইছেন।
কিন্তু ইসলামকে ব্যবহার করে যারা ভণ্ডামী, বোমাৰাজী ও ব্যবসা করছেন তারা কিভাবে তা করতে পারছেন?
মূলতঃ তারা যে কোন পর্যায়ের লোক সেটা তারা নিজেরাও অবগত। কারণ তথাকথিত শাইখুল হাদীছ হিসেবে তারা তো বহুবার আওড়িয়েছেন যে, “ধর্মব্যবসায়ীরা সৃষ্টির নিকৃষ্ট। ধর্ম ব্যবসায়ী মুনাফিকদের অবস্থান হবে জাহান্নামের অতল গহবরে।”
সুতরাং এ ধরনের নিকৃষ্ট মুনাফিকদের জন্য অসম্ভব কিছুই নয়। ধর্মের নামে ব্যবসা, গিরগিটির ন্যায় বার বার রং পাল্টানো তো তাদের কাছে নস্যি মাত্র।
মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২