واذا قي لهم اتبعوا ما انز الله قالوا بل نتبع ما الفينا عليه اباءنا او لو كان اباؤهم لايعقلون شيئا ولا يهتدون.
তরজমা: যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন তা তোমরা অনুসরণ কর। তখন তারা বলে, কখনই নয়, বরং আমরা আমাদের বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষদেরকে যার উপর পেয়েছি তার অনুসরণ করবো। যদিও তাদের বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষদের কোনই জ্ঞান ছিলনা এবং তারা সৎ পথে পরিচালিত ছিলনা। (সূরা বাক্বারা-১৭০)
তাফসীর: এ আয়াত শরীফের অনুরূপ আরো একাধিক আয়াত শরীফ কিছুটা শাব্দিক পরিবর্তনে সূরা আ’রাফ-৩, সূরা আনয়াম-১৫৩, সূরা লুক্বমান-২১, সূরা যুমার-৫৫ ইত্যাদি সূরার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। যাতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সকলেই যেন আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি নাযিলকৃত বিধি-বিধান কুরআন ও সুন্নাহ’র অনুসরণ করে এবং নিজেদের গোমরাহী ও অজ্ঞতাকে পরিহার করে।
আয়াত শরীফে বলা হয়েছে, “যা নাযিল করা হয়েছে তা তোমরা অনুসরণ কর, মেনে চলো।” এখানে নাযিলকৃত বিষয় বলতে কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফকে বুঝানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
“সাবধান! তোমরা জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আমাকে কুরআন শরীফ এবং তার অনুরূপ (হাদীছ শরীফ) দেয়া হয়েছে।” (আবূ দাঊদ, মিশকাত, মিরকাত)
তিনি আরো ইরশাদ করেন,
“সাবধান! তোমরা জেনে রাখ, আমি কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনেক বিষয় আদেশ দিয়েছি, উপদেশ দিয়েছি এবং অনেক বিষয় নিষেধও করেছি। আমার এসব বিষয়ও নিশ্চয়ই কুরআন শরীফের বিষয়ের সমান; বরং তা হতেও অধিক গুরত্বপূর্ণ।” (আবূ দাঊদ, মিশকাত, মিরকাত)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি যে বিধান, হুকুম-আহকাম নাযিল বা অবর্তীণ করেছেন তা সকলকে মেনে চলতে হবে। এর বিপরীত কারো কোন ওজর-ইখতিয়ার, বক্তব্য-মন্তব্য গ্রহণযোগ্য হবে না। কেউ যদি কারো কোন বক্তব্য-মন্তব্য, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা উল্লেখ করে ও গ্রহণ করে সে মুসলমান হিসেবে গণ্য হবে না। সে বর্ণনাই উল্লেখিত আয়াত শরীফে পেশ করা হয়েছে।
কাজেই, এই দ্বীন ইসলাম তথা কুরআন ও সুন্নাহ’র বিপরীত নিজেদের মনগড়া, বাতিল নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বার যারা প্রবর্তন করবে এবং তা অনুসরণ করবে তারা আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত-মা’রিফাত ও সন্তুষ্টি লাভের পরিবর্তে আল্লাহ পাক-এর অসন্তুষ্টি, আযাব-গযব ও লা’নতের মধ্যে পতিত হবে। যার উদাহরণ কাফির, মুশরিক, মুনাফিক ও মুরতাদ মুসলমানরা। ইবরত ও নছীহত গ্রহণের জন্য সম্প্রতিকালের মুসলমান নামধারী এক মুরতাদের মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করা জরুরী। কারণ সে বাইতুল মোকাররম মসজিদ-এর খতীব পদে থেকে প্রকাশ্য কুরআন ও সুন্নাহ’র খিলাফ কুফরী ও গোমরাহীমূলক ফতওয়া প্রদান করতো। সে বলতো, কুরআন শরীফে আছে, ভোট একটি আমানত (নাঊযুবিল্লাহ) এবং হাদীছ শরীফে আছে, তোমরা সৎ লোককে ভোট দাও। (নাঊযুবিল্লাহ) সে আরো বলতো, ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদয়াত ও শিরক। (নাঊযুবিল্লাহ) আর নববর্ষ আল্লাহ পাক-এর নিয়ামত। (নাঊযুবিল্লাহ)
এমনিভাবে সে ব্লাসফেমী আইন, হরতাল, লংমার্চ, ছবি, খেলাধুলা, নারী নেতৃত্ব, মহিলাদের কুস্তি, ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদিকে জায়িয ফতওয়া দিত। অথচ শরীয়তে এগুলো হারাম ও কুফরী।
এই হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম ফতওয়া দেয়ার কারণেই মৃত্যুর সাথে সাথে তার সেসব লক্ষণ ফুটে উঠে তাতে সে বদকারই প্রমাণিত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তার মৃত্যুর এক ঘণ্টার মধ্যেই লাশে পঁচন ধরে, বিকট দুগন্ধ ছাড়াতে থাকে, পেট অত্যন্ত ফুলে যায়, চেহারা কালো ও কুৎসিত হয়ে যায়, কান দু’টা কালো ও লম্বা হয়ে যায়, নাক বাশির মত লম্বা হয়ে যায় এবং তা থেকে পঁচা রক্ত ও রস নির্গত হয়, ঠোঁট দু’টা কুচকুচে কালো হয়ে নিচে বাঁকা হয়ে ঝুলে পড়ে। এক কথায় পুরো অবয়ব জুড়ে বিদঘুটে আকৃতিসহ পঁচন আর বিশ্রি দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। কর্তৃপক্ষ তার দেহের পঁচন ও দুর্গন্ধকে কমানোর জন্য ফরমালিন ঢেলে দিয়ে, চাকা চাকা বরফ দিয়ে ঢেকে রাখে, সাথে চা পাতারও প্রলেপ দেয়। তথাপি পঁচন ও দুর্গন্ধসহ তার বিদঘুটে চেহারার বিকৃতি কমেনি।
কাজেই, কুরআন ও সুন্নাহ’র বিকৃত ব্যাখ্যা করলে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, নবী-রসূল, ছাহাবা ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের বিরোধিতা করলে শয়তান ও তার দোসর ইহুদী-খৃষ্টান, ওহাবী, কাদিয়ানী ও শিয়াদের অনুসারী হলে তার পরিণতি এরূপ হবে এটাই বাস্তব।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে এরূপ কুখ্যাত মুরতাদ উলামায়ে ‘ছূ’দের করুণ পরিণতি সম্পর্কে জানা, বুঝা এবং তাদের থেকে হুঁশিয়ার হয়ে নিজেদের ঈমান ও আমল হিফাযত করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৪
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৫
তাফসীরুল কুরআন: যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৬
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৭
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৮