তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা

সংখ্যা: ১৪২তম সংখ্যা | বিভাগ:

ধারাবাহিক)

সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, “আলিমের ঘুমও ইবাদত। আলিমের চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত। আখিরাতের সৌন্দর্য এবং দুনিয়ার কদর্যতা তাঁদের চোখের সামনে পরিস্কারভাবে দৃশ্যমান। আখিরাতের সুখণ্ডশান্তি সৌন্দর্যের নির্মলতা ও স্থায়ীত্ব এবং দুনিয়ার শান-শওকত ও জাঁক-জমকের অস্থায়ীত্ব এবং মলিনতা তাঁদের চোখের সামনে। তাঁরা অস্থায়ী ও ময়লাযুক্ত দুনিয়াকে পরিত্যাগ করেছেন। এবং নিজেদেরকে চিরস্থায়ী ও নির্মল আখিরাতে সোপর্দ করেছেন।

তাঁরা রিয়াজত ও মুজাহাদা করে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ খুব গভীরভাবে অধ্যায়ন করে আল্লাহ পাক-এর আজমত ও জালালের আইনুল ইয়াক্বীন দিব্যদৃষ্টি হাছিল করেছেন। তাঁদের আখিরাতের গুরুত্বেরও আইনুল ইয়াক্বীন হাছিল হয়েছে।

যাঁদের আখিরাতের আইনুল ইয়াক্বীন হাছিল হয়েছে তাঁরা দুনিয়ার শান শওকত ও জাঁক-জমককে নগণ্য মনে করেন। কেননা, তাঁরা স্বচক্ষে দেখেন যে, আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ায় কোন অস্তিত্ব নেই। অতি নগন্য অস্তিত্ব আছে বটে। এবং তাঁরা এটাও দেখতে পান যে, দুনিয়া ও আখিরাত দুইটি সতীনতুল্য সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী জিনিস। একটি রাজী হলে অন্যটি নারাজ হবে। আর যদি দুনিয়ায় সম্মানী হয় তবে আখিরাতে অসম্মানী হবে। যদি দুনিয়ায় অসম্মানী হয় তবে আখিরাতে সম্মানী হবে। উভয়কে একত্রে সমভাবে রাজী রাখা এবং সমভাবে ভালবাসা অসম্ভব।

অবশ্য কোন কোন অতি উচ্চস্তরের ওলীআল্লাহ হুজুরী ক্বলবের অত্যন্ত পাক্কা মশ্ক করে প্রকাশ্যভাবে দুনিয়ার ব্যবসা বাণিজ্যের বা রাজ্য পরিচালনার ছূরত অবলম্বন করেছেন বটে। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে দিল্কে তাঁরা দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণই পৃথক রেখেছেন। দিল্কে সদা আল্লাহ পাক-এর যিকিরের মধ্যে এবং আল্লাহ পাক-এর ফরমাবরদারীর মধ্যে মশগুল রেখেছেন। এই ধরনের আওলিয়ায়ে কিরামগণের শানেই বলা হয়েছে,

رجال لاتلهيهم تجارة ولابيع عن ذكر الله.

“তেজারত (ব্যবসা) এবং ক্রয়-বিক্রয় তাঁদেরকে আল্লাহ পাক-এর যিকিরে বাধা দিতে পারে না, আল্লাহ পাক-এর যিকির হতে বিরত ও বঞ্চিত রাখতে পারে না।” (সূরা নূর-৩৭)

এই ধরনের উচ্চ শ্রেণীর আওলিয়া যারা, তাঁরা দুনিয়ার এসব কাজের মধ্যে মশগুল হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের দিল্ এসব কাজে এক মুহূর্তের জন্যও মশগুল হয়না।

হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশ্বন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, মিনা বাজারের মধ্যে একজন ব্যবসায়ী দেখেছি, পঞ্চাশ হাজার গিনি (স্বর্ণমুদ্রা) কেনাবেচা করেছে, কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য তাঁর দিল্ আল্লাহ পাক-এর যিকির হতে গাফিল হয়নি।

হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাবে লিখেছেন, খাঁটি দ্বীনদার আলিমের সংখ্যা খুবই কম। যাদের মধ্যে সম্পদের লোভ ও ক্ষমতার লোভ নেই এবং যাঁদের উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ পাক-এর দ্বীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরীক্বা জারী করা ব্যতীত আর কিছুই নয়। তাঁদের নিজের ব্যক্তিগত কোনই স্বার্থ নেই, মালের মুহব্বত নেই, এমন আলিমের সংখ্যা খুবই কম।

যেসব আলিমের মধ্য হতে সম্পদের লোভ ও ক্ষমতার লোভ এখনও দূর হয়নি তারা একমতে আসতে পারে না। ফিক্বাহ্র কিতাবের মধ্যে বিভিন্ন ফুক্বাহার বিভিন্ন মত লিপিবদ্ধ আছে। তারা নিজের মতলব হাছিল করার উদ্দেশ্যে ঐ মত গ্রহণ করবে, যে মতের দ্বারা ক্ষমতাসীনদের নৈকট্য এবং সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারবে। আল্লাহ পাক-এর দ্বীন জারী করা তাদের উদ্দেশ্য হবে না।

কাজেই সতর্ক থাকতে হবে, ইলমের দ্বারা আল্লাহ পাক-এর দ্বীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরীক্বা জারী করা ছাড়া নিজের স্বার্থ উদ্ধার ও মতলব হাছিল ইত্যাদি কিছুই না হওয়া চাই। যাদের এরূপ উদ্দেশ্য তারাই উলামায়ে ‘ছূ’। য   (অসমাপ্ত)

তাফসীরুল কুরআন: পুরুষ জাতিকে নারী জাতির উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে

  তাফসীরুল কুরআন: পুরুষ জাতিকে নারী জাতির উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে 

তাফসীরুল কুরআন- পুরুষ জাতিকে নারী জাতির উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা শরীয়ত ও চরিত্র ধ্বংসের মূল হোতা

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা শরীয়ত ও চরিত্র ধ্বংসের মূল হোতা