আল্লাহ পাক উলামায়ে ‘ছূ’র মেছাল দিয়েছেন কুকুরের সঙ্গে এবং গাধার সঙ্গে। আলিম খাঁটি কি-না তা চিনবার আর একটি আলামত এই যে, আলিম খাঁটি হলে তাঁর ইল্ম যত বাড়বে ততই তাঁর ভয় বাড়বে এবং আল্লাহ পাক-এর ফরমাবরদারী বাড়বে।
যাদের আল্লাহ পাক-এর ভয়ে ক্রন্দন বাড়বে না, আল্লাহ পাক-এর ভয়ে সন্দেহজনক জিনিস থেকে বেঁচে থাকার পরহিযগারী বাড়বে না, আল্লাহ পাক-এর ভয়ে নিজের ভুল ত্রুটি স্বীকার করবে না, আল্লাহ পাককে রাজী করার কষ্ট করা বাড়বে না, নফসের সঙ্গে কঠোর জিহাদ বাড়বে না এবং আল্লাহ পাক-এর নূর হাছিল করার জন্য অনবরত কষ্টের জীবন যাপনের স্পৃহা বাড়বে না, নফসের সঙ্গে, শয়তানের সঙ্গে দুশমনি করা বাড়বে না, পক্ষান্তরে বাড়বে এই চিন্তা- কাপড় ভাল হোক, খানা-পিনা ভাল হোক, কুরসি-চেয়ার ভাল হোক, লেবাস-পোশাক ভাল হোক, হসবণ্ডসব ভাল বড় মানুষের সঙ্গে হোক, দুই একটা ফ্যাক্টরি হোক, গাড়ী, লঞ্চ, ইস্টিমার হোক, বড় লোকদের সঙ্গে উঠা-বসার সুযোগ হোক, পার্টিতে দাওয়াত হোক, তবে বুঝা যাবে যে, সে আর আলিমে হক্কানী নেই, সে আলিমে ছূ’ বা উলামায়ে ‘ছূ’ অসৎ আলিম হয়ে গিয়েছে। হে ভাই, এসব জিনিসের চিন্তা তুমি নিজের থেকে দূর করে দাও।
বলাবাহুল্য যে, طمع (তমা’) বা লোভ নামক মারাত্মক ব্যাধিই মানুষকে অমানুষ বানিয়ে দেয়। আর সম্মান, পদ, সম্পদ ইত্যাদি লোভের কারণেই আলিমের অন্তর থেকে ইলম বের হয়ে যায়। আর ইল্ম থেকে খালি হয়ে যাওয়াই পদস্খলিত হওয়ার কারণ। তাই প্রবাদ আছে, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। হাদীছ শরীফে উপদেশ দেয়া হয়েছে,
حب الدنيا راس كل خطيئة.
অর্থঃ “দুনিয়ার মুহব্বত সকল গুনাহর মূল।” ‘টাকা নয়-টাকার লোভই সব পাপের মূল।’ এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যাস্বরূপ দার্শনিক কবি মাওলানা রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থাৎ- “পানি যদি নৌকার ভিতর ঢুকে যায়, তাহলে ঐ পানিই নৌকাকে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দেয় আর পানি যদি নৌকার নিচে থাকে তবে নৌকা নিরাপদে চলে।।”
ঠিক তদ্রুপ টাকা যতক্ষণ হাতে থাকে, দিলের মধ্যে টাকার লোভ ও মোহ না ঢুকে ততক্ষণ টাকার দ্বারা মানুষের কাজ নির্বিঘেœ চলে। কিন্তু যখন টাকার লোভ মানুষের অন্তর রাজ্যে প্রভাব বিস্তার করে, তখন এ টাকাই মানুষকে টাকার বান্দা বানিয়ে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য করে ধ্বংস করে দেয়।
উদাহরণ স্বরূপ বাদশাহ আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’- মোল্লা মোবারক নাগুরী ও তার দুই পুত্র- আবুল ফজল, ফৈজী প্রমুখদের কথা বললে খুব সহজে বুঝা যাবে। এই মোল্লা ছিল তথাকথিত একজন বড় দরজার আলিম এবং সর্ব বিষয়ে তার বুৎপত্তির দাবী ছিল।
অতীব আশ্চর্যের বিষয় এই যে, পূর্বে এই মোল্লা অনেক পীড়াপীড়ি সত্বেও শাহী দরবারের সামান্য হাদিয়াও গ্রহণ করতোনা। কিন্তু বাদশাহ আকবরের যামানায় সে তার দুই পুত্রের সহায়তায় তথাকথিত রাজনীতিতে যোগদান করে তাদের এত দিনের অর্জিত ও পালিত ইল্ম, আমল সবই হারিয়ে উলামায়ে ছূ’তে পর্যবসিত হয়।
ঠিক একই অবস্থা বর্তমান ক্ষেত্রেও। তথাকথিত ইসলামী রাজনীতিতে জড়িত হবার ফলে এত দিন যারা ৪০/৫০ বছর হাদীছ শরীফ পড়িয়ে আসছে বলে প্রচার করে তারাই এখন হাদীছ শরীফের খেলাফ আমল করে। যারা মাদ্রাসার মুহতামিমগীরি করেছে, মুফতীগীরি করেছে তারাই এখন কুরআন-সুন্নাহ্র ফতওয়ার বিরুদ্ধে ফতওয়া দেয়। যারা ৩৮/৩৯ বছর ইসলামী পত্রিকার সম্পাদনা করেছে বলে দাবী করে তারাই ইসলামের খেলাফ বিস্তর লিখালিখি করে। যে সব নামধারী পীর, ছূফী, দরবেশরা বাবার ২৭ খানা কিতাবের কথা বলে তারাই আবার কিতাবের বিরুদ্ধে বলে।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বর্তমান উলামায়ে ‘ছূ’রা তাদের গোমরাহী ও ভুল ফতওয়া দিয়ে মুসলিম মিল্লাতকে বিভ্রান্ত করছে। তারা বাদশাহ আকবরের ‘দ্বীনে ইলাহী-এর মত আজকে ‘দ্বীনে জুমহুরী’ (দ্বীনে গণতন্ত্র) প্রচলন করে চলছে। তাদের প্রচলিত দ্বীনে জুমহুরীতে শুধু মৌলবাদ, হরতাল, লংমার্চ, ব্লাসফেমী, ছবি, টিভি, ভিসিআর, কুশপুত্তলিকা দাহ, বেপর্দা, বেহায়া, ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্রই জায়িয় হচ্ছে না। বরং দ্বীনে জুমহুরীর নামে তারা সুদ-ঘুষ, শরাব, নারী নেতৃত্বসহ সকল হারামকেই হালাল করে চলছে। যা মূলতঃ বাদশা আকবরের উলামায়ে ছূ’দের তুলনায় কোন অংশেই কম নয়। বরং অপেক্ষাকৃত বেশী।
অতএব, এদের পরহিয করা এখন ঈমানী দায়িত্ব। (সমাপ্ত)
তাফসীরুল কুরআন ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারকের বুযুর্গী
তাফসীরুল কুরআন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল
তাফসীরুল কুরআন ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারকের বুযুর্গী
তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী
তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী