তাফসীরুল কুরআন: কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-৬

সংখ্যা: ১৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

وَاِذَا قِيْلَ لَـهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلْفَيْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ

তরজমাঃ যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন তা তোমরা অনুসরণ কর। তখন তারা বলে, কখনই নয়, বরং আমরা আমাদের বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষদেরকে যার উপর পেয়েছি তার অনুসরণ করবো। যদিও তাদের বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষদের কোনই জ্ঞান ছিলনা এবং তারা সৎ পথে পরিচালিত ছিলনা। (সূরা বাক্বারা-১৭০)

তাফসীরঃ আল্লাহ পাক তাঁর যিনি হাবীব যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, যিনি তামাম মাখলূক্বাতের জন্যও নবী ও রসুল, তাঁর উপর যে ওহী’র বিধান নাযিল করেছেন সেটাই হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ। এই কুরআন ও সুন্নাহ’র হুকুম- আহকাম, আদেশ-নিষেধের ভিত্তিতে যে দ্বীন আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতকে দেয়া হয়েছে তার নাম হচ্ছে ইসলাম।

সুতরাং, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা উম্মত তাদেরকে অবশ্যই দ্বীন-ইসলামকে পরিপূর্ণরূপে অনুসরণ করতে হবে বা পালন করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন-

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ادْخُلُوْا فِى السِّلْمِ كَآفَّةً وَلَاتَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّيْطَانِ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ ۝

অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! অর্থাৎ হে লোক সকল! তোমরা যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ঈমান এনেছ তারা ইসলামের মধ্যে পরিপুর্ণরূপে দাখিল হয়ে যাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাক্বারা-২০৮)

এ আয়াত শরীফ-এর শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয়, ইহুদী সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েকজন বড় বড় আলিম ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন, করে দরবারে নববী শরীফে আসা-যাওয়া করতে লাগলেন; উদ্দেশ্য হলো, ইসলাম সম্পর্কে ইল্্ম্্ হাছিল করবেন। একদিন তিনি দরবারে নববী শরীফে বসা ছিলেন এমন সময় কিছু উটের গোশ্ত হাদিয়া আসলো, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরীক্বা বা নিয়ম ছিল তাঁর কাছে কোন হাদিয়া আসলে তিনি তার একভাগ স্বীয় হুজরা শরীফে পাঠিয়ে দিতেন। আর অবশিষ্ট ভাগ উপস্থিত লোকদের মাঝে বণ্টন করে দিতেন। যখন উটের গোশ্্ত হাদিয়া স্বরূপ আসলো তখন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলকে উটের গোশ্ত বণ্টন করে দিলেন খাওয়ার জন্য। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইহুদীদের জন্য উটের গোশ্্ত খাওয়া হারাম ছিল। ইহুদী থাকা অবস্থায় আমি কখনও উটের গোশ্ত খাইনি। তাই আজকে নতুন করে উটের গোশ্ত খেতে আমার কাছে কেমন যেন মনে হচ্ছে। দয়া করে আমাকে এ থেকে রূখছত (অব্যাহতি) দান করুন।

আল্লাহ পাক-এর হাবীব তিনি তো ওহী ব্যতীত কোন কথা বলেন না। তিনি চুপ করে রইলেন। সেই মুহূর্তে আল্লাহ পাক উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করেন। এখানে স্মরণীয় যে, উটের গোশ্ত খাওয়া ফরয নয়, ওয়াজিব নয়, সুন্নতে মুয়াক্কাদাও নয়। বরং তা হচ্ছে মুস্তাহাব-সুন্নত। এই মুস্তাহাব-সুন্নত থেকে রুখছত চাওয়ার কারণে আল্লাহ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন যে, হে ঈমানদাররা! ইসলামে পরিপূর্ণ দাখিল হয়ে যাও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।

কাজেই, ইসলামে যা বলে দেয়া হয়েছে, আদেশ-নিষেধ করা হয়েছে তা হুবহু এবং যথাযথভাবে পালন করতে হবে, অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে।

যদি কেউ ইসলাম তথা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর কিছু বিষয় মানে আর কিছু বিষয় অস্বীকার করে তার ব্যাপারে আল্লাহ পাক নিজেই ফায়ছালা ঘোষণা করেছেন।

আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন-

اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْىٌ فِى الْـحَيٰوةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ ۝

অর্থঃ “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ অস্বীকার করবে? তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এটা করবে তার জন্য কোনই প্রতিদান নেই। বরং তার জন্য ইহকালে রয়েছে লাঞ্ছনা এবং পরকালে তাকে কঠিন শাস্তির দিকে হাকিয়ে নেয়া হবে। আর আল্লাহ পাক তোমাদের কৃতকার্য সম্পর্কে খবর রাখেন।” (সূরা বাক্বারা-৮৫)

অর্থাৎ, যারা নিজেদের পছন্দমত বা সুবিধামত বা খেয়াল-খুশিমত কিতাব তথা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর কতিপয় হুকুম তথা আদেশ-নিষেধ মানবে এবং কতিপয় হুকুম তথা আদেশ-নিষেধ মানবে না আল্লাহ পাক-এর কাছে এ সমস্ত লোকদের ভাল কোনই প্রতিদান নেই। বরং তাদের জন্য দুনিয়াবী জিন্দিগীতে রয়েছে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অপমান-অসম্মান। আর পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি।

কাজেই, আজ যারা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, মসজিদ, মাদ্্রাসা, ইয়াতীমখানা ইত্যাদি ভাল কাজও করছে আবার কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর নিষেধকৃত গান-বাজনা, খেলাধুলা, ছবি, বেপর্দা, ভোট, নির্বাচন ইত্যাদিও করছে তাদের জন্যই মূলতঃ ইহকালে লাঞ্ছনার কথা এবং পরকালে কঠিন শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যার উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত আজকে সকলের কাছে স্পষ্ট। নামধারী আলিম-উলামা থেকে শুরু করে আমীর-উমারা সবাই আজ সে লাঞ্ছনা ও শাস্তির শিকার। নাউযুবিল্লাহ।

 তাফসীরুল কুরআন ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারকের বুযুর্গী

 তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী

তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী

 তাফসীরুল কুরআন: হিদায়তে আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী

তাফসীরুল কুরআন