তাফসীরুল কুরআন: কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-২

সংখ্যা: ১৭২তম সংখ্যা | বিভাগ:

واذا قيل لهم اتبعوا ما انزل الله قالوا بل نتبع ما الفينا عليه ا باء نا او لو كان اباؤهم لا يعقلون شيئا ولا يهتد ون.

তরজমা: যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন তা তোমরা অনুসরণ কর। তখন তারা বলে, কখনই নয়, বরং আমরা আমাদের বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষদেরকে যার উপর পেয়েছি তার অনুসরণ করবো। যদিও তাদের বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষদের কোনই জ্ঞান ছিলনা এবং তারা সৎ পথে পরিচালিত ছিলনা। (সূরা বাক্বারা-১৭০)

শানে নুযূল: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদীদের একটা দলকে ইসলামের দিকে আহবান জানালেন, জান্নাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন এবং অবাধ্যতার জন্য শাস্তি যে অবধারিত সে কথাও বললেন। তখন তারা আল্লাহ পাক-এর হাবীবকে সম্বোধন করে বললো, আমরা আপনার অনুসরণ করবো না। বরং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে পথে চলতে দেখেছি সে পথে চলবো। কারণ তারা আমাদের চেয়ে অধিক বিজ্ঞ ও  শ্রেষ্ঠ। তখন এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়।

তাফসীর: আল্লাহ পাক আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে, তারা আল্লাহ পাক-এর আহকাম তথা আদেশ-নিষেধ পরিপূর্ণরূপে পালন করে তাঁর প্রকৃত বান্দা হবে এবং তাঁর যিনি হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রকৃত উম্মত হবে এবং উনাদের উভয়ের সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি হাছিল করবে।

আল্লাহ পাক-এর সেই পুত:পবিত্র আহকাম তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের মাধ্যমে যমীনবাসীর কাছে পৌঁছিয়েছেন। যুগে যুগে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম আল্লাহ পাক-এর সেই আহকাম মানব জাতির কাছে পৌঁছিয়েছেন এবং সর্বশেষ নবী ও রসূল, যিনি নবীদের নবী রসূলদের রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে যমীনে পাঠিয়েছেন এবং উনার প্রতি তিনি যে আহকাম বা বিধান নাযিল করেছেন তার নামই  কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ।  প্রথমটি হচ্ছে ‘ওহীয়ে মাতলূ’ যা হুবহু তিলাওয়াত করতে হয় আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ‘ওহীয়ে গইরে মাতলূ’ যা হুবহু তিলাওয়াত করতে হয়না। তবে উভয়টির হুকুম মেনে চলতে হবে। কারণ ইতায়াত করা ফরযের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ পাক-এর এই ওহীর বিধান যতদিন পর্যন্ত বান্দারা মেনে চলবে বা পালন করবে ততদিন পর্যন্ত তারা হিদায়েতের উপর, ঈমান ও ইসলামের উপর থাকবে। আর যখন বান্দারা এর আমল থেকে দূরে সরে যাবে তখন তারা গোমরাহীতে নিপতিত হবে। এ মর্মে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত যিয়াদ বিন লবীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদিন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটা বিষয়ের উল্লেখ করে বলেন, এটা ইল্ম্ উঠে যাওয়ার সময় সংঘটিত হবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ পাক-এর হাবীব! কি করে ইল্ম্ উঠে যাবে? অথচ আমরা নিজেরা কুরআন শরীফ শিক্ষা করছি এবং আমাদের সন্তানদেরও শিক্ষা দিচ্ছি। অতঃপর আমাদের সন্তানগণ ক্বিয়ামত পর্যন্ত (বংশানুক্রমে) তাদের সন্তানদেরও শিক্ষা দিতে থাকবে। তখন আল্লাহ পাক-এর হাবীব বললেন, যিয়াদ! তোমার মা তোমাকে হারাক! এতদিন তো আমি তোমাকে মদীনা শরীফের একজন বেশ জ্ঞানী ব্যক্তি বলে মনে করতাম। এই ইহুদী ও খ্রিস্টানরাও তো তাওরাত শরীফ এবং ইনজীল শরীফ পড়ছে? কিন্তু তাতে যে বিধি-বিধান নাযিল করা হয়েছে তা তারা আমল করছে না। (তিরমিযী, আহমদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

কাজেই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ পড়লে এবং পড়ালেই যে কেউ হিদায়েত লাভ করবে তা নয়। বরং কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক যা পালন করতে বলেছেন এবং হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা পালন করতে বলেছেন তা পরিপূর্ণরূপে পালন করতে হবে। যেমন কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে পর্দা করার জন্য আদেশ করেছেন। আরো আদেশ করেছেন, দ্বীন ইসলাম ব্যতীত কেউ যেন অন্য কোন ধর্মের কোন নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা গ্রহণ না করে। কেউ যদি আল্লাহ পাক-এর আদেশের বিপরীত আমল করে অর্থাৎ পর্দা না করে এবং ইসলামের খিলাফ বিধর্মীদের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা- ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র, হরতাল, লংমার্চ ইত্যাদি করে তাহলে সে ইসলামের উপর থাকতে পারবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে তথা জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত হবে। একইভাবে হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছবি না তোলার ব্যাপারে আদেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যারা ছবি তুলবে, তোলাবে তারা জাহান্নামী হবে এবং সবচেয়ে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৪

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৫

তাফসীরুল কুরআন: যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৬

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৭

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৮