পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা
(ধারাবাহিক) কুরআন শরীফে বারবার মহিলাদের বর্ণনা পুরুষদের পরে এসেছে। যেমন, আলোচ্য আয়াত শরীফে প্রথমে الرجال এবং পরে النساء এবং সূরা আহযাবের ৩৫ নং আয়াত শরীফে অনেকগুলো গুণের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকবার প্রথমে পুরুষদের জন্য বহুবচনরূপ শব্দ এবং তারপরেই স্ত্রীলোকদের জন্য শব্দরূপ বর্ণিত হয়েছে।
এমনকি অধিকাংশ স্থানে পুরুষদের আলোচনার অধীনেই মহিলাদের বর্ণনা এসেছে। যেমন, নামাযের বর্ণনার পর যাকাতের বর্ণনা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে,
اقيموا الصلوة واتوا الزكوة.
অর্থঃ- “তোমরা নামায আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর।” ইত্যাদি। স্মর্তব্য যে, রাণী বিলকিস ইয়ামেনের সাবা-এর সম্রাজ্ঞী ছিলেন। কিন্তু কখন? মুসলমান হওয়ার পূর্বে। যখন মুসলমান হয়ে হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধা হলেন তখন আর ইয়ামেনের সম্রাজ্ঞী থাকেননি। সুতরাং এটা দলীল হবে না। কোন ধর্মেই মহিলাদের ইমামতি ও সম্রাজ্ঞী হওয়া জায়িয ছিলনা। হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত কোন নবীর দ্বীনেই মহিলাদেরকেএই পদ দেয়া হয়নি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমানে আলিম-উলামা নামধারী কিছু গোমরাহ লোক রয়েছে, যারা নারী নেতৃত্বকে শরীয়ত সম্মত বলে মনে করে তা গ্রহণ করছে এবং এর স্বপক্ষে বিভিন্ন অভিমতও তারা পেশ করছে। যা মূলতঃ কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ ও কুফরীর শামিল। যেমন, তারা বলছে, ‘বিশ্ব জুড়ে মুসলমানদের এই দুর্দিনে নারী নেতৃত্ব নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা ঠিক নয়।” তাদের এ বক্তব্য প্রকাশ্যরূপে হাদীছ শরীফ তথা শরীয়তের খিলাফ। যেমন, হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
لن يفلح قوم ولوا امرهم امرأة.
অর্থঃ- “যে জাতি তাদের শাসনকর্তৃত্ব নারীদের হাতে তুলে দেয়, তাদের কখনও কল্যাণ হতে পারে না।” (বুখারী) আরো ইরশাদ করেছেন,
وامركم الى نسائكم فبطن الارض خير لكم من ظهرها.
অর্থঃ- “যখন তোমাদের শাসন ক্ষমতা গিয়ে পড়বে নারীদের হাতে তখন দুনিয়ার পৃষ্ঠদেশ অপেক্ষা অভ্যন্তরভাগই তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণজনক বলে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ তখন তোমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই উত্তম। (তিরমীযী) তারা আরো বলছে যে, ‘জঙ্গে জামাল বা উষ্ট্রের যুদ্ধে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর নেতৃত্বে বহু ছাহাবী যুদ্ধ করেছেন।” মূলতঃ তাদের এ বক্তব্যও সঠিক নয়। সঠিক বর্ণনা হচ্ছে যা তা হচ্ছে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যুদ্ধ করতে যাননি। বরং যুদ্ধ থামাতে গিয়েছিলেন। তিনি যদি নেতৃত্ব গ্রহণ করতেন তবে তিনিই খলীফা হতেন। কিন্তু তিনি বা কোন উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না খলীফা হননি।
অথচ নারী নেতৃত্ব জায়িয হলে তারাই হতেন খলীফা হবার সবচেয়ে উপযুক্ত। যেমনটি আজকের নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, স্বামীর নেতৃত্বের অবসানে তাদের স্ত্রীরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছে এবং পিতার অবসানে তাদের মেয়েরা। কিন্তু ইসলামে সেটা জায়িয নেই বলেই উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ এবং সাইয়্যিদাতুন্ নিসা হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হননি। আলোচ্য আয়াত শরীফের তাফসীরে বলা হয়েছে, আল্লাহ পাক জাতিগতভাবে পুরুষকে নারীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তাই পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক হয়ে থাকে। আল্লাহ পাক যেহেতু পুরুষদের মধ্যে থেকে নবী-রসূল পাঠিয়েছেন সেহেতু পুরুষদেরকে অধিকতর জ্ঞান দিয়েছেন। তাই তারা উত্তম ব্যবস্থাপক। শারীরিক শক্তিমত্তা ও অন্যান্য যোগ্যতাও তাদের অধিক। নুবুওওয়াত, খিলাফত, পার্থিব কর্তৃত্ব, খিলাফত পরিচালনা, জিহাদ, জুমুয়ার নামায, ঈদের নামায, নামাযের জামায়াত, খুৎবাহ, অধিক মিরাছ, বিবাহের কর্তৃত্ব, অধিক স্ত্রীলাভের অধিকার, তালাকের অধিকার, রমাদ্বান শরীফের নিরবচ্ছিন্ন রোযা, নিরবচ্ছিন্ন নামায এরকম অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে পুরুষদের। ইত্যাদি কারণে আল্লাহ পাক বলেন, للرجال عليهن درجة. অর্থঃ- “পুরুষদেরকে মহিলাদের উপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে।” (সূরা বাক্বারা/২২৮) (সমাপ্ত)
তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল
তাফসীরুল কুআন পুরুষদেরকে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে -মাওলানা শামসুদ্দোহা
তাফসীরুল কুআন: পুরুষদেরকে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে
তাফসীরুল কুরআন পুরুষদেরকে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে
তাফসীরুল কুরআন পুরুষদেরকে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে