(ধারাবাহিক)
ولاتتمنوا ما فضل الله به بعضكم على بعض للرجال نصيب مما اكتسبوا وللنساء نصيب مما اكتسبن وسئلوا الله من فضله ان الله كان بكل شئ عليما.
তরজমাঃ “যা দিয়ে আল্লাহ পাক তোমাদের কাউকেও কারো উপর ফযীলত দান করেছেন, তোমরা তার তামান্না করোনা। পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ। আল্লাহ পাক-এর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (সূরা নিসা/৩২)
واسئلوا الله من فضله.
অর্থঃ- “সুতরাং আল্লাহ পাক-এর অনুগ্রহপ্রাপ্তির জন্য নিবেদন জানাও।” তাঁর রহমতের ভা-ার অফুরন্ত। তিনি একটি পুণ্যকে দশগুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। আবার কখনো দান করেন অপরিমেয়, অনির্ণেয়। তাঁর দান দুনিয়া থেকে আখিরাত পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি কাউকে বেশী দিলে তার প্রতি হিংসা করা বা পরশ্রীকাতর হওয়া বৈধ নয়। اسئلوا শব্দটি পুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হলেও এখানে পুরুষ-মহিলা উভয়কেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। اقيموا الصلوة واتوا الزكوة ইত্যাদির ন্যায় অন্যান্য আহকামের আয়াতসমূহের মতোই। এখানে হিকমত এই যে, যেহেতু পুরুষ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী আর মহিলা তার অধীন। অথবা পুরুষ মূল আর মহিলা তার শাখা। তাই পুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করার উদ্দেশ্য হলো পুরুষরা যদি ইছলাহপ্রাপ্ত বা সংশোধিত হয়ে যায় তাহলে মহিলারা আপছেআপ নেক্কার, চরিত্রবতী হয়ে যাবে। কারণ, মহিলারা জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কোন না কোন পুরুষের আশ্রয়ে থাকে। এখানে دعائى فضل বা অনুগ্রহ প্রার্থনা করা ও অন্যান্য ইবাদতের মতো একটি ইবাদত। তবে অন্যান্য ইবাদতের জন্য সময় ও অবস্থার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু দু’আর বেলায় কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। অর্থাৎ সবসময় দু’আ করো, সবাই দু’আ করো, সব রকমভাবে দু’আ করো। অর্থাৎ মুখ দ্বারা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা, চোখ দ্বারা, অশ্রু দ্বারা। যেমন শিশু কিছুই জানে না কিন্তু কাঁদতে উস্তাদ। কোন চাওয়া-পাওয়ার ক্ষেত্রে ও মা-কে আহবান করার ক্ষেত্রে কাঁদতে পারে ঠিকই। মূলতঃ কেঁদে কেঁদে চাওয়া ও পাওয়ার ব্যাপারটি অনেক প্রাচীন অভ্যাস ও সবক বটে। ফক্বীহুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ পাক-এর কাছে তাঁর ফযল বা অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। তিনি প্রার্থনা মঞ্জুর করলে তুমি অনুগ্রহম-িত হবে। জনৈক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ পাক-এর কাছে তাঁর ফযল বা অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। আল্লাহ পাক পছন্দ করলে ফযলের অধিকারী হতে পারবে। আর প্রশস্ততার অপেক্ষা করা অতি উত্তম ইবাদত। সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোন মুসলমান আল্লাহ পাক-এর নিকট তিনবার জান্নাত প্রার্থনা করে, তখন জান্নাত বলে, আয় বারে ইলাহী! তাঁর অভিলাষ পূর্ণ করুন। আবার যখন কোন মুসলমান তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রার্থনা করে, তখন জাহান্নাম বলে, আয় বারে ইলাহী! তাঁর প্রার্থনা পূর্ণ করে দিন। হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, অত্র আয়াত শরীফে বর্ণিত فضله অর্থ ‘তাঁর অনুগ্রহ’ দ্বারা আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহু, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও বুঝানো হয়েছে। মূলতঃ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধারে নূরুল্লাহ ও যিকরুল্লাহ এবং ফাদ্বলুল্লাহ। যা আমাদের বিনা চেষ্টা, শ্রম, প্রার্থনা ও আকাঙ্খায় আল্লাহ পাক আমাদেরকে দান করেছেন। অতএব, তাঁকেই মুহব্বত ও অনুসরণ করা উচিত। (সমাপ্ত)
তাফসীরুল কুরআন: পুরুষ জাতিকে নারী জাতির উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে
তাফসীরুল কুরআন: পুরুষ জাতিকে নারী জাতির উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা শরীয়ত ও চরিত্র ধ্বংসের মূল হোতা
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা শরীয়ত ও চরিত্র ধ্বংসের মূল হোতা