তাফসীরুল কুরআন: বুগ্য বা শত্রুতার নিন্দা ও তার প্রতিকার

সংখ্যা: ২১৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

 

يايهاالذينامنوالاتتخذوابطانةمندوناللهلايألونكمخبالاودواماعنتمقدبدتالبغضاءمنافواههموماتخفىصدورهماكبرقدبينالكمالاياتانكنتمتعقلون.

অর্থ : হে ঈমানদাররা! তোমরা ঈমানদার ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করনাতারা তোমাদের ক্ষতি সাধনে কোন ত্রুটি করে নাতোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দশত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখেই প্রকাশ হয়ে পড়ে আর যা কিছু তাদের অন্তরে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্যআমি তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দিলামযদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৮)

 

উদ্ধৃত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, প্রকৃতপক্ষে কাফির, মুশরিকরা হচ্ছে মুসলমানদের শুত্রু ফলে তারাই মুসলমানদের প্রতি শুত্রুতা পোষণ করতে পারেএবং বাস্তবিক করেও থাকেকিন্তু মুসলমানরা হচ্ছে পরস্পর ভাই ভাইফলে তারা একে অপরের সাথে সর্বদা মিত্রতা বা বন্ধুসুলভ আচরণ বজায় রাখবেতারা একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ বা শত্রুতা করতে পারে না

 

তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি মুহব্বত করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, বিদ্বেষ পোষণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, আদেশ করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, নিষেধ করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য সে ঈমানে পরিপূর্ণ” (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

 

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মুমিন ব্যক্তি কখনও বিদ্বেষ পরায়ণ হতে পারে না

 

হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, বিদ্বেষভাবের তারতম্য অনুসারে মানুষ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত

 

প্রথম শ্রেণী : ছিদ্দীক্বগণউনাদের মনে কারো প্রতি বিদ্বেষ জাগরিত হলে কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমে উনারা মূলোচ্ছেদ করে থাকেনউনারা বিরাগভাজন ব্যক্তির উপকার করেন এবং পূর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠতার সাথে তার সাথে মিলিত হন

 

দ্বিতীয় শ্রেণী : পরহেযগারগণউনারা বিরাগভাজন ব্যক্তির উপকার ও অপকার কিছুই করেন নাঅর্থাৎ বিদ্বেষভাব উনাদের মানসিক অবস্থার কোনই পরিবর্তন ঘটাতে পারে না

 

তৃতীয় শ্রেণী : ফাসিক ও যালিমএরা বিদ্বেষকারী ব্যক্তির অনিষ্ট বা ক্ষতি সাধনের নিমিত্তে সর্বদা সচেষ্ট থাকে

 

হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কেউ তোমার অনিষ্ট করে থাকলে তুমি তার উপকার করইহাই মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভের প্রকৃষ্টতম উপায়ইহা সম্ভবপর না হলে অন্ততপক্ষে তাকে ক্ষমা কর

 

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তিনটি বিষয়ে আমি শপথ করতে পারিউহা এই- (১) ছদকা দিলে ধন কমেনা, কাজেই তোমরা ছদকা দাও। (২) যে ব্যক্তি অপরের অপরাধ ক্ষমা করে, ক্বিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে অধিক মর্যাদা দান করবেন। (৩) যে ব্যক্তি নিজের জন্য ভিক্ষার পথ উন্মুক্ত করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য দরিদ্রতার পথ উন্মুক্ত করে দেন

 

হযরত উকবা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার হাত ধরে বললেন, “সংসারী লোক ও আখিরাতের পথিক উভয়ের জন্য যে ভাব উত্তম; তা আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছিআপনার সাথে কেউ সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলে আপনি তার সাথে মিলিত হবেনআপনাকে কেউ বঞ্চিত করলে, আপনি তাকে দান করবেনআপনার প্রতি কেউ অত্যাচার করলে, তাকে আপনি ক্ষমা করবেন

 

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে নিবেদন করলেন, “হে মহান আল্লাহ পাক! আপনার বান্দাগণের মধ্যে কোন ব্যক্তি আপনার নিকট অধিক প্রিয়?” খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “শাস্তি দানে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়

 

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত লোক উত্থিত হলে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, যাদের পুরস্কার মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট রয়েছে তারা উঠুনকয়েক সহ¯্র লোক উঠবেন এবং উনারা বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাবেনকারণ উনারা দুনিয়াতে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিতেন

 

বর্ণিত রয়েছে, খলীফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের নিকট যুদ্ধবন্দীদেরকে আনয়ন করা হলোতখন এক বুযুর্গ ব্যক্তি তথায় উপস্থিত ছিলেনতিনি খলীফাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি যা চেয়েছ মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে তা দান করেছেন অর্থাৎ তোমাকে বিজয়ী করেছেনএখন মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান, তা তুমি দাও অর্থাৎ তাদেরকে ক্ষমা করোইহা শুনে খলীফা সমস্ত বন্দীকে ক্ষমা করে দিলেন

 

মোটকথা, মহান আল্লাহ পাক তিনি সদয় সহনশীল এবং তিনি সদয় সহনশীল ব্যক্তিকে ভালোবাসেন

 

 

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৫

তাফসীরুল কুরআন: যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৬

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৭

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৮

তাফসীরুল কুরআন: যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ১০