তাফসীরুল  কুরআন: মসজিদে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কার্যকলাপ প্রচার ও প্রসারের ভয়াবহ পরিণতি

সংখ্যা: ১৬৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

و من اظلم مـمـن منع مسجد الله ان يذ کر فيها

اسمـه وسعی فی خرابها اولئک ما کان لهـم ان يد خلوها الا خائفين لهم فی الد نيا خزی و لهم فی الاخرة عذاب عظيم

তরজমা: যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার মসজিদসমূহে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং উহার ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয় তার চেয়ে বড় জালিম বা সীমালংঘনকারী কে হতে পারে? এদের জন্য মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বৈধ নয়। তবে প্রবেশ করতে হলে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করতে হবে। এদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। (সূরা বাক্বারা- ১১৪)

          তাফসীর: আয়াত শরীফে বলা হয়েছে, “মসজিদসমূহে আল্লাহ তায়ালার নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং মসজিদের ধ্বংস সাধনে উদ্যত হয়” এর ব্যাখ্যায় রইসুল মুফাস্সিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালার ঘরে আল্লাহ তায়ালার যিকির হতে না দেয়া মসজিদ ধ্বংসের নামান্তর। (তাফসীর মাযহারী)

          মসজিদ আল্লাহ তায়ালার ঘর। যমীনের উপর শ্রেষ্ঠতম স্থান, পবিত্র স্থান। আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুন্নতি তর্জ-তরীক্বায় ইবাদত-বন্দেগীর জন্যে মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। এখানে আল্লাহ তায়ালার যিকির ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আলোচনা করা ও শরীয়তের আহকাম বর্ণনা করা দায়িত্ব-কর্তব্য। আর শরীয়তের খিলাফ যত কর্মকা- রয়েছে- বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, ইসলামের নামে তন্ত্র-মন্ত¿ করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, ইসলামের নামে খেলাধুলা করা ইত্যাদি সর্বপ্রকার কুফরী, শিরকী, হারাম, নাজায়িয, বিদয়াত, বেশরা সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে বলা থেকে মুসলমানদের পবিত্র রাখা ও মসজিদকে পবিত্র রাখাই হচ্ছে মসজিদের প্রকৃত হক্ব ও আদবের অন্তর্ভূক্ত।

          হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, মসজিদে দুনিয়াবী কথা বললে চল্লিশ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়। একইভাবে আযানের সময়, কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সময়, আলিমদের মজলিসে ও কবরস্থানে দুনিয়াবী কথা বললে চল্লিশ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়। (তাফসীরে আহমদীয়া, তরীকুল ইসলাম)

          হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, কেউ যদি মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলে তখন ফেরেশতাদের তরফ থেকে প্রথমে বলা হয়,

اسکت يا عبد الله

“হে আল্লাহ তায়ালার বান্দা তুমি চুপ কর।” এরপরও যদি সে কথা বলে তখন ফেরেশতা বলেন,

اسکت يا عدو الله

“হে আল্লাহ তায়ালার শত্রু তুমি চুপ কর।” এরপরও যদি সে ব্যক্তি কথা বলে তখন ফেরেশতা বলেন,

اسکت يا لنت الله

“হে আল্লাহ তায়ালার লা’নতগ্রস্থ ব্যক্তি তুপি চুপ কর।”

          উল্লেখ্য, মসজিদে সাধারণ দুনিয়াবী কথা বলার কারণে যদি চল্লিশ বছরের আমল নষ্ট হয় এবং আল্লাহ তায়ালার শত্রু ও মালাউন বা অভিশপ্ত হিসেবে সম্বোধন করা হয়। তাহলে কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কুফরী, শিরকী, হারাম, নাজায়িয, বিদয়াত, বেশরা কাজের প্রচার-প্রসারের কথা মসজিদে বললে তার কত বছরের আমল নষ্ট হবে? এবং তাকে কি হিসেবে সম্বোধন করা হবে?

          প্রকৃতপক্ষে তার জীবনের সমস্ত আমল নষ্ট হবে এবং সেই সাথে তার ঈমানুও নষ্ট হবে। আর সে সম্বোধিত ও আখ্যায়িত হবে বড় জালিম বা সীমালংঘনকারী হিসেবে।

          উল্লেখ্য, কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়তে প্রাণীর ছবি সুস্পষ্ট হারাম ও নাজায়িয বুখারী, মুসলিমসহ শত-সহস্র হাদীছ শরীফে ছবির ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং ছবির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরকালে জাহান্নামে কঠিন শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন- হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত ঐসব ব্যক্তি ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ)

      হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনিবলেব, প্রত্যেক ছবি তৈরিকারী ব্যক্তি জাহান্নামী হবে এবং প্রতি ছবিকে তাকে জাহান্নামে শাস্তিদানের কাজে নিয়োজিত করা হবে।

          হাদীছ শরীফে এত স্পষ্ট এবং অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা থাকার পর কোন মুসলমান ভোটার কার্ডের জন্য হোক অথবা আইডি কার্ডের জন্য হোক অথবা অন্য কোন ক্ষেত্রে হোক ছবি তোলার জন্য বলতে পারে না। আর তা মসজিদে কেন যমীনের কোন জায়গায়ই বলার অধিকার নেই। এরপরও কেউ যদি বলে, উদ্বুদ্ধ করে, উৎসাহ দেয়, চাপ প্রয়োগ করে, বাধ্য করে, বুঝতে হবে সে মুসলমান নয়। সে জালিম, ফাসিক, কাফির, মুনাফিক ও মুরতাদ।

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৪

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৫

তাফসীরুল কুরআন: যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৬

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৭

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৮