–পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
বর্ণিত আছে, জনৈক বরমকী উজির তার পুত্র সহকারে বন্দী হয়ে জেলখানায় আবদ্ধ হয়ে গেল। পুত্র জিজ্ঞাসা করল, আব্বাজান! এতো প্রভাব ও সম্মান প্রতিপত্তির পরও আমরা এরূপে লাঞ্ছিত হলাম এর কারণ কি? পিতা বললেন, বৎস! কোন মাযলুমের বদ দুআ রাতের অন্ধকারে ছিটকে এসে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, আর আমরা গাফিল ছিলাম। কিন্তু অনন্ত আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন গাফিল নন।
হযরত সাইয়্যিদ ইবনে হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি আমার অন্তরে সর্বাপেক্ষা বেশী ভয় অনুভব করি ঐ ব্যক্তির, যার উপর যুলুম করে ফেলি; আল্লাহ পাক ছাড়া যার কোন সাহায্যকারী নাই। সে এ কথা বলতে থাকবে যে, আল্লাহ পাক-এর সাহায্যই আমার জন্য যথেষ্ট। তোমার আমার মাঝে আল্লাহ পাক রয়েছেন।
সূরা আহযাব এর ৫৮নং আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন,
والذ ين يؤذون المؤ منين والمؤ منت بغير ماا كتسبوا فقدا حتملوا بهتا نا وا ثما مبينا.
অর্থঃ “মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী কোন অপরাধ না করলেও যারা তাদেরকে পীড়া দেয়, তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।”
দলীলুল আরিফীন কিতাবে এই আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিনা কারণে যারা মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয় তারা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টিতে পতিত হয়।
এরপর উল্লেখ করা হয়েছে একটি হেকায়েতঃ এক বাদশাহ আল্লাহ পাক-এর বান্দাদের প্রতি এমন জোর-যুলুম করত যে বিনা কারণে তাদেরকে দুঃখ কষ্টে জর্জরিত করত এবং হত্যা করত। কিছুদিন পর এ বাদশাহকে বাগদাদের কংকরী মসজিদের নিকট দেখা গেল, ধুলায় লুক্তিত এলোমেলো মাথার চুল, ধন দৌলত ও ঐশ্বর্য হতে বঞ্চিত। একজন লোক তাকে দেখে চিনল এবং জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি সেই বাদশাহ নও যে মক্কা শরীফে জনসাধারণের প্রতি যুলুম করতে? সে লজ্জিত হয়ে উত্তর দিল, হ্যাঁ। আমিই সেই লোক। কিন্তু তুমি আমাকে চিনলে কি করে?
লোকটি বলল, আমি তোমাকে সেই সময় ধন-দৌলতে ঐশ্বর্যে দেখেছি যখন তুমি বিনা কারণে লোকদের প্রতি যুলুমের শাসন কায়েম করেছিলে এবং খোদার ভয় হতে চোখ বন্ধ করেছিলে। বাদশাহ বলল, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আমি তাই করতাম এবং আমার বর্তমান অবস্থা সেই পাপেরই প্রায়শ্চিত্ব।
আখিরী যামানা অর্থাৎ এক হাজার হিজরীর পরের অবস্থা সম্মন্ধে আনিসুল আরওয়াহ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আখিরী যামানার লোক আমার দলভূক্ত হক্কানী-রব্বানী আলিমদেরকে প্রাণে মেরে ফেলবে, যেভাবে চোর ও ডাকাতদেরকে মারা হয়। ঐ সময় লোক আলিমদেরকে মুনাফিক এবং মুনাফিকদেরকে আলিম মনে করবে। সে সময় জীবন মৃত্যুর চেয়ে নিকৃষ্টতর হবে।
আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তিন প্রকার লোক বেহেশতের সুগন্ধও ভোগ করতে পারবে না।
প্রথম. যে দরবেশ মিথ্যা কথা বলে।
দ্বিতীয়. যে ব্যবসায়ী অপরের ধন আত্মসাৎ করে।
তৃতীয়. যে ধনী বখীল বা কৃপন।
যখন দরবেশ মিথ্যা বলবে, ধনী কৃপনতা করবে এবং ব্যবসায়ী অপরের আমানত আত্মসাৎ করবে তখন আল্লাহ তায়ালা যমীন হতে বরকত তুলে নেবেন।
উক্ত কিতাবে আরও বর্ণিত আছে, আখিরী যামানার আলিম ও আমির সম্মন্ধে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, শেষ যামানার দলপতিগণ স্বেচ্ছাচারী হবে এবং আলিমগণ দুনিয়াকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে এবং ফিৎনা সৃষ্টি করবে সুতরাং সে সময় জীবিত থাকার চেয়ে মৃত্যু উত্তম হবে।
কেননা মু’মিনগণ তখন বিলাসে নিমজ্জিত হবে অর্থাৎ আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকবে। এরপর ইরশাদ করলেন, যখন আমির হবে যথেচ্ছাচারী এবং আলিম হবে দুনিয়ার বন্ধু তখন আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার বুক থেকে বরকত তুলে নিবেন। রোগ, ব্যাধি ও অন্যায় করার প্রবণতা মানুষকে গ্রাস করবে। শহর বিরান হবে এবং পৃথিবীর বুকে ঝগড়া-বিবাদ ছড়িয়ে পড়বে। এরপর ইরশাদ করলেন, আখিরী যামানার অধিকাংশ আলিম নামধারীরা তথা ধর্মব্যবসায়ীরা মদ্যপায়ী ও সমকামী হবে। সুতরাং অবশ্যই জানবে যে, তারা দোযখের লাকড়ি।
ফক্বীহ আবুল লাইস সমরকন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “বুস্তানুল আরিফীন” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, কোন শহরে চারটি বস্তু থাকলে সে শহরবাসী নিরাপদ থাকবে। যথা- ন্যায়পরায়ন শাসক- যিনি যুলুম করেন না। হিদায়েতের অনুসারী আলিম, বুযুর্গানে দ্বীন- যারা সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করেন এবং ক্বুরআন শরীফ ও ইল্ম্ শিক্ষায় মানুষদেরকে উদ্ধুদ্ধ করেন। আর পর্দানশীন মহিলাগণ- যারা জাহিলিয়াতের যুগের মত প্রকাশ্যে বেড়ান না। (চলবে)
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৪
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৫
তাফসীরুল কুরআন: যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৬
তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৭
তাফসীরুল কুরআন: যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ১০