-পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা
وسيعلم الذ ين ظلموا لى منقلب تنقلبون.
তরজমা: “অত্যাচারীরা বা নিপিড়নকারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ?” (সূরা শুয়ারা-২২৭)
ما للظامين من حميم ولا شفيع يطاع.
তরজমা: যালিমদের জন্য কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই এবং সুপারিশকারীও নেই, যার সুপারিশগ্রাহ্য হবে।” (সূরা মু’মিন-১৮)
وان الظامين لفى شقا ق بعيد.
তরজমা: সীমালঙ্ঘনকারীরা অশেষ মতভেদে রয়েছে।” (সূরা হজ্জ-৫৩)
وما للظلمين من نصير.
তরজমা: এবং সীমালঙ্ঘনকারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা হজ্জ-৭১)
তাশরীহ: যুলূমের তা’রীফ বা সংজ্ঞা এবং আক্বসাম বা প্রকারভেদঃ
বিশ্বখ্যাত ভাষাবিদ হযরত ইমাম রাগিব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যুলূম’-এর অর্থ কোন বস্তুকে নির্দিষ্ট স্থান হতে স্থানান্তরিত করে অনুপযুক্ত স্থানে রাখা।”
কুতুবে রব্বানী আব্দুল কবীর ইয়ামিন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “ক্বলব্ বা অন্তর হলো আল্লাহ পাক-এর যিকির ও স্মরণের স্থান। সুতরাং তাতে যিকির ব্যতীত অন্যকিছুকে স্থান দিলে সে যুলূম্ করলো। আর ব্যবহারিক অর্থ হলো, সত্য ও ন্যায়কে পরিহার করে তার বিপরীতকে অনুসরণ করা এবং মানুষের জান-মাল ও ইজ্জত-আবরুর উপর অত্যাচার করা। যুলূমের বিপরীত হলো আদল বা ইনসাফ। যুলূম ও যুলূমকারীর পরিণতি সম্পর্কে কুরআন শরীফের বহুস্থানে বিভিন্ন আয়াতে কারীমায় কঠোর ভাষায় ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যুলূম বা অত্যাচার মানব চরিত্রের একটি জঘন্য দোষ বা অপরাধ। যে দয়ালু নয়, আল্লাহ পাক তার উপর দয়া প্রদর্শন করেন না। যে যালিম বা অত্যাচারী আল্লাহ পাক তার জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত করে রেখেছেন।
মূলতঃ অত্যাচার করা কঠিন কবীরা গুণাহ। যুলূম দুই প্রকারঃ (১) নিজ নফস্ বা আত্মার উপর যুলূম, (২) সৃষ্ট জীবের উপর যুলূম। (আত্মার উপর) সর্বনিকৃষ্ট যুলূম হলো আল্লাহ পাক-এর সাথে শিরক্ করা এবং আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্যকে উপাস্য বলে গ্রহণ করা ও তার পূজা করা। যত প্রকার গুণাহ আছে প্রত্যেক প্রকার গুণাহ্ই আত্মার উপর এক একটি যুলূম। কেননা, আত্মার প্রকৃতিই হলো সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা। এর বিরূদ্ধ কার্যই এর উপর যুলূম হিসেবে পরিগণিত হয়।
মাযলূম বা অত্যাচারিত ব্যক্তি, যালিম বা অত্যাচারী ব্যক্তির ছওয়াব পাবে এবং তার গুণাহ্ অত্যাচারী ব্যক্তির উপর বর্তাবে। শাসনকর্তা বা বিচারকের অত্যাচারের গুণাহ আরো অধিক এবং তার শাস্তিও কঠিন।
যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
عن ابى هر يرة رضى الله تعا لى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اتد رو ن ماا لمفلس قالوا المغلس فينا من لا درهم له ولا متاع فقال ان المفلس من امتى من يأ تى يوم القيا مة بصلاة وصيام وزكوة ويأ تى قد شتم هذا وقذف هذا واكل مال هذاوسفك دم هذا وضرب هذا فيعطى هذا من حسنا ته وهذا من حسنا ته فان فنيت حسنا ته قبل ان يقضى ما عليه اخذ من خطا يا هم فطر حت عليه ثم طرح فى النار.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি জান, কোন্ ব্যক্তি নিঃস, গরীব? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, আমাদের মধ্যে গরীব হচ্ছে যার কোন অর্থসম্পদ নেই। তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে নিঃস, গরীব ব্যক্তি হবে, যে ক্বিয়ামতের দিন নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ইবাদতসহ আবির্ভূত হবে। কিন্তু সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো মাল আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে মেরেছে (সে এসব গুণাহও সাথে করে নিয়ে আসবে।) এদেরকে তার নেক আমলগুলো দিয়ে দেয়া হবে। উল্লিখিত দাবিসমূহ পূরণ করার পূর্বেই তার নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যায় তবে দাবীদারদের গুণাহ্সমূহ তার কাঁধে চাপানো হবে। অতঃপর তাকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে।” (মুসলিম শরীফ) (অসমাপ্ত)
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা শরীয়ত ও চরিত্র ধ্বংসের মূল হোতা
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা