-পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা
وان كلا لما ليو فينهم ربك اعما لهم انه بما يعملون خبير. فاستقم كما امرت الخ.
তরজমাঃ আর যখন সময় আসবে, তখন আপনার প্রতিপালক তাদের প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ কর্মের প্রতিদান অবশ্যই পুরোপুরি দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি, তারা যা করে সে বিষয়ে পূর্ণ খবর অবহিত আছেন। অতএব, (হে আমার অনিন্দ্য সুন্দর, হাবীব পেয়ারা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি স্থির থাকতে বলূন যেভাবে আপনি নির্দেশিত হয়েছেন ……।” (সূরা হুদ-১১১, ১১২, ১১৩ ও ১১৪)
(ধারাবাহিক)
‘যুলফান’ শব্দটি বহুবচন যুলফাতান-এর যেমন ‘যুলমান’ বহুচন যুলমাতান-এর। আর আরবীতে তিনের কমতো বহুবচন হয় না। সম্ভবতঃ এজন্যই সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি রজনীর নামাযকে বহুবচন করতে যেয়ে মাগরিব ও ইশার সাথে বিতর নামাযকে সংযুক্ত করেছেন এবং ওয়াজিব বলে ফতওয়া দিয়েছেন। আর দিনের সর্বশেষ ফরয নামায মাগরিব তিন রাকা’য়াত বিতর বা বিজোড় হওয়ার কারণে সেদিকে ক্বিয়াস করে রাতকালীন শেষ নামায তিন রাকা’য়াত বিশিষ্ট বিজোড় বা বিতর নামকরণ করা হয়েছে। বিশিষ্ট ও অনুসরনীয় তাফসীর গ্রন্থসমূহে এই মতই সর্ব সম্মতিক্রমে সমর্থিত হয়েছে। (তাফসীরে কবীর, তাফসীরে হক্কানী)
অতঃপর পরের বাক্যে বলা হয়েছে, সৎকর্ম, অবশ্যই অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। একথার অর্থ নেকী বা পুণ্য মুছে ফেলে গুণাহ বা পাপকে। সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে তিবরানী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নতুন পুণ্য, পুরাতন পাপকে অতিদ্রুত সুচারুরূপে বিলোপ করে। এত দ্রুত বিলোপ করে যে, তার দৃষ্টান্ত বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, সাইয়্যিদুনা হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, আমি একবার নিবেদন করলাম, হে প্রিয়তম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তখন খাযীনার্তু রহমত, শাফিউল উম্মত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, পাপ সংঘটিত হলে পরক্ষণেই পূণ্য করবে। কারণ পূণ্য পাপকে মুছে দেয়। আমি বললাম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুও কি পূণ্য কর্ম? হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “এটাতো পূণ্যসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম।”
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণনায় এসেছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্তের নামায, জুমুয়ার নামায ও রমাদ্বান মাস মধ্যবর্ত্তী সময়ের পাপরাশিকে অপসারণ করে।
এখানে ‘হাসানাত’ দ্বারা সব ধরনের নেকী বা পূণ্য কর্মকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ নামাযসমূহ, ঈমান, যিকির এবং ইস্তিক্বামাত যা অত্যন্ত কষ্টকর আমল-এর দ্বারা ‘সাইয়্যিয়াত’ বা গুণাহসমূহ অর্থাৎ কৃত গুণাহসমুহকে হুকুকুল ইবাদ ব্যতীত নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
যেমন “সূরা আনকাবুত”-এর ৪৫ নং আয়াত শরীফে বর্ণিত আছে,
ان الصلوة تنهى عن الفحشاء والمنكر.
অর্থঃ “নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” মোট কথা নামায ও ইস্তিক্বামাত আল্লাহ পাক-এর আজিমুশ্ শান নিয়ামত বটে (সুবহানাল্লাহ)।
শেষে বলা হয়েছে- যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। একথার অর্থ- ইতোপূর্বে বর্ণিত ইস্তিক্বামাত বা স্থিরতা যারা অবলম্বন করবে অথবা পালন করবে দ্বীনী বা ধর্মীয় বিধানসমূহ যথাযথভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আলোকে, তাদের জন্যই এই কুরআন শরীফ এক অনন্য উপদেশ। কারণ দারিমী শরীফ ও মিশকাত শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
اول ذهاب الد ين تر ك السنة.
অর্থঃ- “দ্বীন ইসলামের আমল উঠে যাওয়ার সুচনাই হবে সুন্নত তরক করার মাধ্যমে।”
আর “মিশকাত শরীফে” বর্ণিত হয়েছে,
لو تر كتم سنت نبيكم لضللتم.
অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নত ত্যাগ করো, তাহলে তোমরা অবশ্যই গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।”
(সমাপ্ত)
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা শরীয়ত ও চরিত্র ধ্বংসের মূল হোতা
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা