وان كلا لما ليوفينهم ربك اعمالهم انه بما يعملون خبير. فاستقم كما امرت الخ.
তরজমাঃ আর যখন সময় আসবে, তখন আপনার প্রতিপালক তাদের প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ কর্মের প্রতিদান অবশ্যই পুরোপুরি দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি, তারা যা করে সে বিষয়ে পূর্ণ খবর অবহিত আছেন। অতএব, (হে আমার অনিন্দ্য সুন্দর, হাবীব পেয়ারা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি স্থির থাকতে বলূন যেভাবে আপনি নির্দেশিত হয়েছেন ……।” (সূরা হুদ-১১১, ১১২, ১১৩ ও ১১৪)
তাশরীহঃ যখন সময় আসবে, বুঝা গেল, এখনো সময় আসেনি। অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে এ পার্থিব জীবনে কর্মের প্রতিদান পাওয়ার সময় নয়। কারণ মৃত্যুর পূর্বের অবস্থাকে ‘দারুল আমল’ বা আমলের জায়গা বলা হয়। এখানে পাপের শাস্তি তাড়াতাড়ি দেয়া হচ্ছেনা মানে এটা নয় যে, আল্লাহ পাক পাপের হোতাকে ও পাপকে পছন্দ করেন বা তাকে চেনেন না বা জানেন না বরং মৃত্যুর পর আখিরাতে চূড়ান্ত বিচারের সময় যখন হবে তখন আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই মতভেদ সৃষ্টিকারী সকল বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীকে যথোপযুক্ত শাস্তি দিবেন। তাদের প্রতিটি কর্মকান্ডের নিখুঁত চিত্র সম্পর্কে আল্লাহ পাক যে ওয়াকিফহাল আছেন তা এ আয়াত শরীফে বর্ণিত সাত সাতটি তাকিদ বা নিশ্চয়তা জ্ঞাপক শব্দ দ্বারা পাঠকবর্গ ও শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন।
যথা ১. ان ২. كلا ৩. لما ৪. لما মুখাফ্ফাফার মাসূলার দ্বারা ৫. لام এর ক্বস্মিয়্যাহ বা শপথসূচক হওয়ার দ্বারা ৬. ليو فينهم –এর لام দ্বারা যা শপথের জবাব এবং ৭. নুনে তাকীদ ছাক্বীলাহ দ্বারা। এমনকি এই সাতটি তাকীদ দ্বারা এ কথাও প্রমাণিত হচ্ছে যে, রবূবিয়্যাত বা প্রভূত্ব ও উবূদিয়্যাত বা দাসত্ব-এর পরিপূর্ণ অবস্থা ক্বিয়ামতেই প্রকাশ পাবে।
অতএব, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জগতবাসীকে আমার এই ওয়াদার কথা জানিয়ে দিন যে, তারা যেন পার্থিব মতলব হাছিল করার জন্য তাড়াহুড়া না করে বরং সদা সর্বদা ইস্তিক্বামাত বা দৃঢ়চিত্ত থাকে। এখানে আল্লাহ পাক তাঁর অনিন্দ সুন্দর হাবীব পেয়ারা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর একনিষ্ঠ আশিক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমকে সত্যের প্রতি ইস্তিক্বামাত বা দৃঢ় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এই দৃঢ়তা বা স্থিরতা হলো চিত্তের অবিচলতা, কোনোক্রমেই সত্যচূত না হওয়া। বিশ্বাসে, অভিব্যক্তিতে ও কাজেকর্মে বাঁকা পথ অর্থাৎ খিলাফে সুন্নত অবলম্বন না করা। ‘কামুস’ অভিধানে বলা হয়েছে, ‘ইস্তিক্বাম’ হলো মধ্যম পথ। ‘ক্বওওয়ামতুহু’ অর্থ আমি তাকে সোজা করে দিয়েছি। ‘ক্ববীম’ ও ‘মুসতাক্বীম’ সমার্থক। এর অর্থ সেই সুমসৃণ পথ, যা তার পথিককে সফল গন্তব্যে পৌছে দেয়। এ হিসাবেই ‘ছিরাত্বল মুসতাক্বীম-এর অর্থ করা হয় সরল পথ, সোজাপথ, সহজ পথ ইত্যাদি। ‘ইস্তিক্বামাত’ অর্থাৎ স্থিরতা বা দৃঢ়তার নির্দেশটি একটি কঠিন নির্দেশ। নির্দেশটির বাস্তবায়ন ততোধিক কঠিন, কঠোর। তাই ছূফী সাধক রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেছেন, এক ‘ইস্তিক্বামাত হাজার হাজার কারামাত বা অলৌকিকত্ব প্রদর্শন অপেক্ষা উন্নত এবং বেলায়াতের মূলই হলো ইস্তিক্বামাত। এই ইস্তিক্বামাত বা দৃঢ়তা নিম্নরূপঃ ১. বিশ্বাসগত দৃঢ়তাঃ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক-এর প্রতি সুদৃঢ়ভাবে এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তিনি সকল পূর্ণতা ও উৎকর্ষতার সমষ্টি। তাঁর অস্তিত্ব ও গুণাবলী, সৃষ্টির অস্তিত্ব ও গুণাবলীর মতো নয়। সৃষ্টিকূলের ন্যায় তিনি অসহায় যেমন নন; তেমনি নন স্বেচ্ছাচারীও। তবে তিনি সর্বশক্তিধর ও ইচ্ছাময়। যা ইচ্ছা তাই করতে তিনি সম্পূর্ণ সক্ষম। সৃজন, লালন-পালন ও ক্ষমা প্রদর্শন সম্পূর্ণ তাঁরই করুণা নির্ভর। সুতরাং তিনি ব্যতীত ইলাহ বা উপাস্য কেউ নেই ইত্যাদি। ২. কর্মগত দৃঢ়তাঃ অর্থাৎ মুবাল্লিগে আমকে নিসঙ্কোচে পালন করতে হবে সত্য ধর্ম দ্বীন ইসলাম প্রচারের গুরু দায়িত্ব। শরীয়তের বিধানে কোনো প্রকার ইফরাত-তাফরীত ও হ্রাস-বৃদ্ধি বা ব্যতিক্রম ঘটানো চলবে না। বরং তা অক্ষুন্নভাবে ধরে রাখতে হবে। যেমন, সর্বাপেক্ষা উত্তম ও কল্যাণকর ইবাদত হলো নামায। নামায ফরয করা হয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত। কিন্তু অধিক কল্যাণ লাভের আশায় নামাযকে ছয় অথবা সাত ওয়াক্ত বানানো যাবে না। নামাযের নির্ধারিত রাকায়াতসমূহ যেখানে যেমন বিধিবদ্ধ রয়েছে তা থেকে বাড়ানো যাবে না বা কমানো যাবে না কোনোক্রমেই। পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক ও ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে হালাল-হারামের সুনির্দিষ্ট শরয়ী হদ বা সীমারেখা। (অসমাপ্ত)
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা শরীয়ত ও চরিত্র ধ্বংসের মূল হোতা
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা