তাফসীরুল কুরআন: সুন্নতের পরিপূর্ণ আনুগত্য ব্যতীত ইস্তিক্বামতের উপর চলা অসম্ভব

সংখ্যা: ১৪৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

وان كلا لما ليوفينهم ربك اعمالهم انه بما يعملون خبير. فاستقم كما امرت ومن تاب معك ولاتطغوا انه بما تعملون بصير. ولاتركنوا الى الذين ظلموا فتمسكم النار وما لكم من دون الله من اولياء ثم لاتنصرون. واقم الصلوة طرفى النهار وزلفا من اليل ان الحسنت يذهبن السيات ذلك ذكرى للذكرين.

তরজমাঃ আর যখন সময় আসবে, তখন আপনার প্রতিপালক তাদের প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ কর্মের প্রতিদান অবশ্যই পুরোপুরি দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি, তারা যা করে সে বিষয়ে পূর্ণ খবর অবহিত আছেন। অতএব, (হে আমার অনিন্দ্য সুন্দর, হাবীব পেয়ারা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি স্থির থাকুন যেভাবে আপনি নির্দেশিত হয়েছেন এবং যারা তওবা করে আপনার সাথে আছেন (অর্থাৎ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাল্লাহু তায়ালা আনহুম) তাঁরাও স্থির থাকুক। আর সীমালঙ্ঘন করবেন না। নিশ্চয়ই তিনি আপনারা যা করছেন তা দেখেন। আর আপনারা যালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বেন না। ঝুঁকে পড়লে আগুন আপনাদেরকেও স্পর্শ করবে এবং আপনাদের জন্য আল্লাহ পাক ছাড়া কোন অভিভাবক নেই। অতএব আপনাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। আর দিনের দুই প্রান্তে নামায কায়েম করবেন এবং রাতের প্রথম ভাগেও। নিশ্চয়ই সৎকাজ দূর করে দেয় অসৎ কাজ। যারা উপদেশ গ্রহণ করে তাদের জন্য এটি এক মহান উপদেশ। (সূরা হুদ-১১১, ১১২, ১১৩ ও ১১৪)

তায়াল্লুকঃ ১. পূর্বে উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে প্রতিশ্রুতি ও শাস্তি সংক্রান্ত দীর্ঘ আলোচনার পর এখানে নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলমানদেরকে শান্ত¡না প্রদান করে বলা হচ্ছে যে, কাফিরদের চাল-চলন, মুনাফিকদের ধোঁকাবাজী এবং মুরতাদদের অসার বাগাড়ম্বরে বিস্মিত ও ব্যথিত না হয়ে আহকামে ইলাহীর উপর অটল বা ইস্তিক্বামত থাকুন।

২. ইতোপূর্বে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছিলেন যে, সবাইকেই তাদের আমলের যথাযথ ফল দেয়া হবে, আর এখানে বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ পাক তাঁর মহান ইলম্ ও কুদরতের দ্বারা সকলের সমস্ত আমল দেখছেন। অর্থাৎ যিনি এখন দেখতে সক্ষম বা ক্বাদির; তিনি যে পুরোপুরিভাবে জাযা বা সাযা দিতেও ক্বাদির ও মুখতার হবেন, তা তো বলাই বাহুল্য।

৩. পূর্ববর্তী আয়াত শরীফসমূহে বর্ণিত হয়েছিল যে, হক্ব বা সত্য হওয়া সত্বেও কাফির ও মুনাফিক গোষ্ঠী আপনাদের দলে আসেনি, আপনাদের গ্রহণও করেনি। এখানে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, আপনারাও তাদের দিকে ঝুঁকে পড়বেন না বরং মহীয়ান গরীয়ান, অনন্ত অসীম দয়াবান আল্লাহ পাক-এর প্রতি নিবেদিত হবেন। আর তাঁর দিকে ঝুঁকে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো নামাযের পাবন্দী।

উল্লেখ্য, কালামুল্লাহ শরীফের প্রতিটি আয়াত শরীফেরই নুযূল খাছ কিন্তু তার হুকুম আম। অর্থাৎ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি এবং তাঁর যামানায়ই কিন্তু তার হুকুম ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আবার অনেক আয়াত শরীফ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবা আজমাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে সম্বোধন করে নাযিল করা হয়েছে বটে তবে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সমস্ত উম্মত অর্থাৎ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উম্মত।  স্মরণীয়, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই শারি’ বা শরীয়ত প্রণেতা। কাজেই আদেশ পালনের নির্দেশ হচ্ছে উম্মতের প্রতি। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যদিও উম্মত কিন্তু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবতের কারণে তাঁরা এমন মর্যাদা হাছিল করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাকই তাঁদের পথকে অনুসরণ করতে বলেছেন, তাঁদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করেছেন, তাঁদের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন এবং কাফির-যালিমদের প্রতি তাঁরা ঝুঁকে পড়া তো দূরের কথা বরং কঠোর ছিলেন তাও ঘোষণা করে দিয়েছেন। সুতরাং তাদের সীমালঙ্ঘনের প্রশ্নই আসতে পারে না। কাজেই, সূরা হুদে উল্লিখিত ১১২ ও ১১৩ নম্বর আয়াত শরীফে ইস্তিক্বামত থাকা, সীমালঙ্ঘন না করা, যালিমদের প্রতি ঝুঁকে না পড়ার আদেশ করা হয়েছে, অন্যথায় জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করার কথা বলা হয়েছে। তা সম্পূর্ণরূপেই পরবর্তী উম্মতের জন্য। (অসমাপ্ত)

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা শরীয়ত ও চরিত্র ধ্বংসের মূল হোতা

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা