يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِىْ الصُّدُوْرِ. وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ
তরজমা: “হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন মহান নছীহতকারী, অন্তরের মহান আরোগ্য দানকারী, মহান হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য মহান রহমত দানকারী। (অতএব, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ফদ্বল ও সম্মানিত রহমতস¦রূপ আপনাকে যে তারা পেয়েছে, সেজন্য তাদের প্রতি কর্তব্য তথা ফরয হচ্ছে খুশি প্রকাশ করা। এই খুশি প্রকাশের ইবাদত হবে তাদের সমস্ত ইবাদত বা আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭, ৫৮)
তাফসীর: উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করার জন্য আদেশ মুবারক করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, উক্ত খুশি মুবারক প্রকাশ করার ফযীলত কতখানি সে বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে “প্রখ্যাত মুফাসসির ও মুআররিখ আল্লামা হযরত ইবনু কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ৩৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন, খাতিমুল মুহাজিরীন হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে আবু লাহাব স্বপ্নে বললো, ‘(হে ভাই!) অবশ্যই এ কঠিন আযাব ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) উনার দিন লাঘব করা হয়, আল্লামা হযরত সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্য সকলেই বলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছুয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি যখন আবু লাহাবকে হযরত খাজা যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার “মহাসম্মানিত আওলাদ” নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সুসংবাদ দেন তৎক্ষণাৎ সে খুশিতে উনাকে মুক্ত করে দেয়। আর এ কারণেই তার আযাব লাঘব হয়ে থাকে।” (মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খণ্ড ৮৩ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা আহমদ শিহাবুদ্দীন হাইতামী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আদম’ কিতাবের ৭ পৃষ্ঠায় এবং হযরতুল আল্লামা আব্দুল আউওয়াল জৈনপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আন্ নাফহাতুল আম্বারিয়্যাহ্ লিইছবাতিল কিয়াম ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ’ কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় লিখেন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন-
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبَبًا لِّقِرَائَتِهٖ لايَـخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلَّا بِالْاِيْـمَانِ وَيَدْخُلُ الْـجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ.
অর্থ : যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলেন অর্থাৎ সে উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করলেন, তিনি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবেন এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
উক্ত ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উইলদি আদম’ কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় এবং ইয়ানাতুত ত্বলিবীন কিতাবের ৩য় খণ্ড ৩৪৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে, সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَظَّمَ قَدْرَهٗ فَقَدْ فَازَ بِالْاِيـْمَانِ.
অর্থ : যে ব্যক্তি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আয়োজনে উপস্থিত হলেন এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করলেন। তিনি উনার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবেন অর্থাৎ তিনি সম্মানিত জান্নাতবাসী হবেন।” সুবহানাল্লাহ!
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, ফক্বীহ ও যুগশ্রেষ্ঠ আলিম, যিনি এই উপমহাদেশে পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের ব্যাপক প্রচার-প্রসারকারী, যিনি শতাধিক কিতাবের সম্মানিত মুছান্নিফ বা প্রণেতা, যিনি প্রত্যহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক লাভে ধন্য হতেন এবং যিনি সুপ্রসিদ্ধ ক্বদিরিয়া তরীক্বার বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
مَنْ عَظَّمَ لَيْلَةَ مَوْلِدِهٖ بِـمَا اَمْكَنَهٗ مِنَ التَّعْظِيْمِ وَالْاِكْرَامِ كَانَ مِنَ الْفَائِزِيْنَ بِدَارِ السَّلَامِ.
অর্থ : “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসকে সাধ্য সামর্থ অনুযায়ী তা’যীম করবেন এবং সে উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করবেন; তিনি চির শান্তিময় জান্নাতের অধিকারী হবেন।” সুবহানাল্লাহ! (খুতবায়ে ইবনে নুবাতা)