-পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা
يايها الذين امنوا ان تتقوا الله يجعل لكم فرقانا ويكفر عنكم سياتكم ويغفرلكم والله ذوالفضل العظيم.
অর্থঃ- “হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর, তবে আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দিবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন আর তোমাদের ক্ষমা করবেন এবং আল্লাহ্ পাক অতিশয় অনুগ্রহশীল।” (সূরা আনফাল/২৯) স্মর্তব্য যে, ক্বল্বী যিকিরে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য ঐ আলিমে বিল্লাহ্র প্রতি মুহব্বত প্রয়োজন যার ক্বল্ব মুবারকের সাথে আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্বল্ব মুবারকের সাথে যথাযথ সংযোগ আছে। যেমন, সমস্ত পাথর গুনাহ্ টানেনা বরং ঐ পাথরটিই গুনাহ্ টানে যা বাইতুল্লাহ্ শরীফের সাথে লেগে আছে।
আলোচ্য আয়াত শরীফে তাক্বওয়াকে বান্দার সাথে আর ফুরক্বানকে রব তায়ালার দিকে নিসবত দেয়া হয়েছে। কারণ আল্লাহ্ পাক যখন কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন তাকে নিজের পছন্দনীয় উপযুক্ততা প্রদানের জন্যই তার অন্তরকে আলমে কুদ্সীর নূরানী চেরাগে পরিণত করে দেন। যার দ্বারা ঐ খাছ বান্দা তখন হক্ব ও বাতিল, অস্তিত্ব ও শুন্যতা, নতুন ও পুরাতন ইত্যাদির মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য করতে পারেন। এমনকি ঐ নূর দ্বারা নিজের দোষ-ত্রুটি ও কলঙ্কসমূহ দেখতে পান এবং সকল প্রকার স্খলন ও সন্দেহের দোদুল্যমানতা থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে সক্ষম হন। হেকায়েতঃ সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকালে জনৈক ব্যক্তি একবার আমীরুল মু’মিনীন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দরবার শরীফে হাযির হলেন এমতাবস্থায় যে, পথে তাঁর কোন এক বেগানা মহিলার প্রতি দৃষ্টি পড়ে গিয়েছিল; ফলে দরবার শরীফে হাযির হতেই খলীফা বললেন, কোন কোন ব্যক্তি আমাদের এখানে এমন অবস্থায় এসে থাকেন যে, তাদের চোখে ব্যাভিচারের আছর (প্রভাব) পরিলক্ষিত হয়। তৎক্ষনাত সেই ব্যক্তি চমকে উঠে বললেন, ‘কি ব্যাপার! ওহী কি বন্ধ হয়ে যায়নি!’ খলীফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, এটা ওহী নয় বরং মু’মিনের ফেরাসাত বা অন্তর্দৃষ্টি তথা বিচক্ষণতা।
দ্বিতীয় পুরস্কারঃ ويكفر عنكم سياتكم.
অর্থঃ- “তোমাদের পাপ মোচন করবেন।” এখানে يكفر কলেমাটি كفر কলেমা থেকে এসেছে। অর্থ- গোপন করা, মুছে ফেলা, অস্বীকার করা। كافور কর্পূর নামক এক প্রকার তীব্র ঘ্রাণযুক্ত ঔষধ আছে যার অত্যধিক খুশবুর কারণে তার আশপাশের অন্যান্য সকল খুশবু ম্লান বা অদৃশ্য হয়ে যায়। যেহেতু তাতে গোপন করার বা মিটিয়ে ফেলার অর্থ বিদ্যমান।
আর আয়াত শরীফে এই كفر শব্দটির পরে عن (হতে) গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে পাপের বা গুনাহ্র কিছুই অবশিষ্ট না থাকে।
বুঝা গেল, তাক্বওয়া হাছিলের মহান বরকতে গুনাহ্সমূহ মাফ হয়ে যায়। যেমন, আল্লাহ্ পাক বলেন,
ان الحسنات يذهبن السبئات.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই নেকীসমূহ বা তাক্বওয়া পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয়।” (সূরা হুদ/১১৪) স্বেচ্ছাকৃত গুনাহ্কে ‘সাইয়্যিয়াহ্’ আর অনিচ্ছাকৃত গুনাহকে ‘খতা’ বলা হয়। (রুহুল বয়ান) কখনও কখনও গুনাহ্ েছগীরাহ্ বা ছোট গুনাহ্কে ‘সাইয়্যিয়াহ্’ বলা হয়।
যেমন, আল্লাহ্ পাক বলেন,
ان تجتنبوا كبائر ما تنهون عنه نكفر عنكم سيئاتكم.
অর্থঃ- “যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গুনাহ্গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দিব।” (সূরা নিসা/৩১)
তাফসীরুল কুরআন : উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪
তাফসীরুল কুরআন উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪
তাফসীরুল কুরআন: মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে যারা শয়তান; তারাই নবী-রসূল ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের শত্রু