তাফসীরুল কুরআন হক্ব ও বাতিলের মাপকাঠি

সংখ্যা: ১১৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

-পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা

يايها الذين امنوا ان تتقوا الله يجعل لكم فرقانا ويكفر عنكم سياتكم ويغفرلكم والله ذوالفضل العظيم.

অর্থঃ- “হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে ভয় কর, তবে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দিবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন আর তোমাদের ক্ষমা করবেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি অতিশয় মঙ্গলময়।” (সূরা আনফাল/২৯)  তাশরীহ্ঃ ‘হে বিশ্বাসীগণ’ এই অমীয় আহ্বানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অন্তর্ভুক্ত নন এবং মুনাফিকরাও অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ “امنوا” অর্থ- যে ঈমান আনে বা গ্রহণ করে; কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো কোন বান্দার নিকট হতে ঈমান গ্রহণ করেননি বরং তিনি ঈমান দান করেন। ঈমানের একপার্শ্ব হল নেয়া বা গ্রহণ করা যা আমাদের দ্বারা ক্বায়িম আছে এবং অপরপার্শ্ব হল দান করা যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক ক্বায়িম আছে। মুনাফিকরা যেহেতু সত্যিকার অর্থে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট হতে ঈমান গ্রহণ করেনি বরং শুধু ইসলাম প্রকাশ করেছে, সুবিধাদি ভোগ করার জন্য।

যেমন, আল্লাহ্ পাক তাদের মুখোশ উন্মোচন করে বলেন, قل لم تؤمنوا ولكن قولوا اسلمنا.

অর্থঃ- “বলুন, তোমরা (অন্তর দিয়ে) ঈমান গ্রহণ করনি বরং বাহ্যিকভাবে ইসলামের কথা বলে বেড়াচ্ছ (মাত্র)।” (সূরা হুজুরাত/১৪)

অতএব, ‘হে বিশ্বাসীগণ!’ দ্বারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত ঈমানদারকে সম্বোধন করা হয়েছে, যদিও নুযূল খাছ কিন্তু এর ইবারত বা আহবান আম। ঈমান যেহেতু সমস্ত আমলের অগ্রগামী তাই এখানে প্রথমেই ঈমানের কথা বলা হয়েছে আর তাক্বওয়া বা খোদাভীরুতা যেহেতু ঈমানের অলংকার তাই তাক্বওয়ার কথা ঈমানের পরে আনা হয়েছে।

ঈমান যেমন ইল্মুল ইয়াক্বীন, আইনুল ইয়াক্বীন ও হক্কুল ইয়াক্বীন ইত্যাদি রকমের হয়ে থাকে; তেমনি তাক্বওয়ারও প্রকারভেদ আছে। যথা- তাক্বওয়ায়ে যাহিরী বা শারীরিক তাক্বওয়া এবং তাক্বওয়ায়ে বাতিনী বা আত্মিক তাক্বওয়া। গুনাহ্ থেকে আত্মরক্ষা করা আর নেকীর কাজে আত্মনিয়োগ করা এ দু’টো হল শারীরিক তাক্বওয়ার রোকন বা স্তম্ভ। আর শায়ায়িরুল্লাহ্ বা আল্লাহ্ পাক-এর নিদর্শনাবলীর প্রতি তা’যীম-তাকরীম বা ভক্তি-শ্রদ্ধা হল আন্তরিক তাক্বওয়ার স্তম্ভ।

যেমন, আল্লাহ্ পাক বলেন,

ومن يعظم شعائر الله فانها من تقوى القلوب.

অর্থঃ- “কেউ আল্লাহ্ পাক-এর নামযুক্ত বস্তুসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার অন্তরে ধারণকৃত আল্লাহ্ভীতি প্রসূত।” (সূরা হজ্ব/৩২)

আলোচ্য আয়াতে কারীমায় এই ধরণের তাক্বওয়া অবলম্বন করার কথাই বলা হয়েছে। যারা এই তাক্বওয়া অবলম্বন করবেন আল্লাহ্ পাক তাঁদেরকে তিনটি বিনিময় বা পুরস্কার দান করবেন। যথা- প্রথম পুরস্কারঃ يجعل لكم فرقانا  অর্থাৎ- “তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা আর হক্ব ও বাতিল পার্থক্য করার শক্তি দিব।” অর্থাৎ তোমাদেরকে এমন অন্তর্দৃষ্টি বা ফিরাসাত তথা হৃদয় জুড়ে উদ্ভাসিত একটি নূর বা জ্যোতির্ময় আলো দান করব; সেই ফিরাসাতের মাধ্যমে তোমরা ন্যায়-অন্যায় কাজ এবং ঈমানদার ও মুনাফিকদের পার্থক্য করতে পারবে।

হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

اتقوا فراسة المؤمن اى المتقى فانه ينظر بنور الله.

অর্থঃ- “তোমরা মুত্তাক্বী বা খোদাভীরু ঈমানদার ব্যক্তির অন্তরদৃষ্টিকে ভয় কর; কারণ তিনি আল্লাহ্ পাক-এর (প্রদত্ত) নূরের মাধ্যমে দেখে থাকেন।”  (বুখারী, তিরমিযী)

অন্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

استفت نفسك استفت قلبك.

অর্থাৎ- “(মুফতীর ফতওয়া দান সত্ত্বেও) তুমি তোমার অন্তরের ফতওয়া অন্বেষণ কর।”

তাছাউফের পরিভাষায় নফ্সের ফানা সংঘটিত হওয়ার পরেই কেবল ক্বলবের ফতওয়া প্রদানের অধিকার জন্মে এবং ঐ ফতওয়া মকবুল বা গ্রহণযোগ্যও হয়ে থাকে। আবার নফ্সের ফানার একমাত্র মাধ্যম ক্বলবী যিকির যা সমস্ত ঈমানদার নারী-পুরুষের উপর দায়িমী ফরযের অন্তর্ভুক্ত।

তাফসীরুল কুরআন : উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪

তাফসীরুল কুরআন উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪

তাফসীরুল কুরআন: মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে যারা শয়তান; তারাই  নবী-রসূল ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের শত্রু