তাফসীরুল কুরআন: হিদায়তে আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী

সংখ্যা: ১২৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

            আর মোহরযুক্ত অন্তর বিশিষ্ট মানুষের বাহ্যিক অবস্থার পরিচয় প্রদান করেছেন আমাদের প্রাণের আঁকা, রসূলে খোদা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে,

اسود مربادا كالكوز مجنيا لا يعرف معروفا ولاينكر منكرا الا ما اشرب من هواه.

অর্থাৎ “কয়লার মতো কালো অন্তর, ঠিক উপুড় হওয়া পাত্রের ন্যায়, যাতে কিছুই ধারণ করার ক্ষমতা থাকে না। ওটা ভালকে ভাল  জানার এবং মন্দকে মন্দ জানার ক্ষমতা রাখে না। ফলে কেবলমাত্র তাই গ্রহণ করে, যা তার প্রবৃত্তির চাহিদা হয়।” (মুসলিম শরীফ) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 من كان فى قلبه مثقال ذرة من كبر لايدخل الجنة.

অর্থঃ- “যার  অন্তরে বিন্দু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে বেহেশ্তে যেতে পারবেনা।”  হাদীছে কুদসীতে মহান আল্লাহ পাক ঘোষণা  করেন,

الكبرياء ردائى العظمة اذارى فمن نازعنى واحدا منهما القيته فى جهنم ولا ابالى

অর্থঃ- “অহংকার আমার চাদর, মহত্ব ও বড়ত্ব আমার ইযার (পোশাক বিশেষ)। অতএব, যে এতদুভয়ের যে কোন একটি নিয়ে আমার সাথে টানাটানিতে লিপ্ত হবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। আমি কাউকে পরওয়া করি না।”       সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ইবনে হুসাইন ইবনে আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কারো অন্তরে কম-বেশী যতটুকু অহংকার ঢুকবে, ঠিক ঐ পরিমাণে তার বুদ্ধি-বিবেক হ্রাস পাবে।       সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এক ব্যক্তিকে গোড়ালির নিচে লুঙ্গী ছেড়ে চলতে দেখে বললেন, “শয়তানের কিছু ভাই-বেরাদার আছে।” কথাটি তিনি তিনবার বললেন।           কাজেই নাহক্ব অহংকার করা হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। কারণ, অহংকারের পরিণতি খুবই ভয়াবহ। এর সবচেয়ে বড় মেছাল হলো ইবলিস। ইবলিস ছয় লক্ষ বছর ইবাদত করেছিল, লক্ষ লক্ষ বছর ফেরেশ্তাদেরকে তা’লীম দিয়েছিল, তাবলীগ করেছিল, এরপরেও শুধুমাত্র অহংকারবশতঃ আল্লাহ্ পাক-এর একটি আদেশ না মানার কারণে সে মালউন, মরদুদ, রজীম অর্থাৎ লা’নতপ্রাপ্ত, বিতাড়িত ও অভিশপ্ত হয়ে গেল।

 আদেশটি ছিল এই, আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

واذ قلنا للملئكة اسجدوا لادم فسجدوا الا ابليس ابى واستكبر.

অর্থঃ- “আমি ফেরেশ্তাদেরকে বললাম যে, তোমরা (ইবলিস সহ) হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সিজদা কর। তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল। সে সিজদা করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার করল।

আল্লাহ পাক তাকে বললেন,

ما منعك الاتسجد اذ امرتك.

অর্থঃ- “হে ইবলিস! আমি তোকে সিজদা করার জন্য আদেশ করেছি এরপরও কোন্ জিনিস তোকে সে আদেশ পালনে বিরত রাখল?” সে বললো, انا خير منه. “আমি তো হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে শ্রেষ্ঠ।” কেননা,

خلقتنى من نار وخلقته من طين.

“আপনি হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে আর আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে।”  মাটির স্বভাব হলো নীচে থাকা আর আগুনের স্বভাব হলো উপরে থাকা। সুতরাং ইবলিস কি করে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সিজদা করতে পারে? আল্লাহ পাক-এর হুকুমকে প্রাধান্য না দিয়ে ইবলিসের নিজস্ব মনগড়া এই কিয়াস তার অহংকার থেকেই তৈরী হয়েছিল।   উল্লেখ্য, অহংকার এবং এ জাতীয় ধ্বংসাত্মক বদ্ খাছলত যেমন- রিয়া, কিনা, হিংসা, বিদ্বেষ ইত্যাদি তা ক্বলব বা অন্তরের সৃষ্ট বিষয়। তাই কেবলমাত্র তাযকিয়ায়ে ক্বলব বা অন্তর শুদ্ধির মাধ্যমে এ সব বদ্ খাছলত থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আর তাযকিয়ায়ে ক্বলবের ইল্ম ও আমল হচ্ছে ইল্মে তাছাউফ তথা ক্বলবী যিকির এবং এর প্রশিক্ষণদাতা বা উস্তাদ হচ্ছেন পীরানে তরীক্বত বা হক্কানী-রব্বানী ওলী-আউলিয়াগণ।        কাজেই প্রত্যেকের উচিত ওলীগণের নিকট বাইয়াত হয়ে তাঁদের ছোহবত ইখতিয়ার করে ইলমে তাছাউফ অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে (জাহির ও বাতিন) ইছলাহ বা পরিশুদ্ধ করা।  (অসমাপ্ত)

 তাফসীরুল কুরআন ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারকের বুযুর্গী

 তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী

তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী

তাফসীরুল কুরআন

তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল