আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ভক্তি-আনুগত্যের পরিণাম ফলই আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত -পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “বলুন, তোমরা যদি আল্লাহ পাককে প্রকৃতই মুহব্বত করো, তাহলে আমাকেই অনুসরণ করো, আমাকে অনুসরণ করলেই আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুনাহখাতাসমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ পাক অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”(সূরা আলে ইমরান/৩১) শানে নুযুলঃ (১) মদীনা মুনাওওয়ারার আহলে কিতাবগণ প্রথম দিকে আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নুবুওওয়াত ও রিসালতকেই অস্বীকার করতো কিন্তু যখন অখ-নীয় দলীলসমূহ ও মু’জিযাসমূহ তাঁর রিসালতকে সুপ্রমাণ করে দিল, তখন নিরুপায় হয়ে তারা বলতে লাগলো, আপনি নবী বটে, তবে আপনার নুবুওওয়াতের আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা نحن ابناء اله واحباؤه. অর্থাৎ- আমরা আল্লাহ পাক-এর পুত্র এবং তাঁর প্রিয় পাত্র। বণী ইসমাঈল এ দু’ বৈশিষ্ট্য থেকে বঞ্চিত। ওদেরই প্রয়োজন আপনার নুবুওওয়াতের। ঐ হতভাগ্য আহলে কিতাবদের মনগড়া এ বক্তব্যের খ-নে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়। (২) আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এ হাদীছ শরীফ ইরশাদ করলেন,
من قال لا اله الا الله دخل الجنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি এ কথা স্বীকার করবে যে, আল্লাহ পাক ব্যতীত আর কোন ইলাহ বা মা’বুদ নেই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” তখন ইহুদী-নাছারারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তো ঘোষণা করেছেন, “যে ব্যক্তি এক আল্লাহ পাককে ইলাহ হিসেবে মানবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতএব, আমরাও জান্নাতে প্রবেশ করবো। কারণ আমরা আল্লাহ পাককে ইলাহ হিসেবে মেনে থাকি। তাদের এ কথা শুনে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাওয়াব প্রদানের জন্য ওহী নাযিলের অপেক্ষা করতে লাগলেন, কেননা,
وما ينطق عن الهوى ان هوا الا وحى يوحى.
তিনি ওহী ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেননা। তখন উল্লিখিত আয়াত শরীফ নাযিল হয়। তাশরীহঃ এ আয়াত শরীফে ঈমানদারকে আল্লাহ পাক-এর সান্নিধ্য ও নৈকট্য ধন্য হওয়ার পথ বলে দেয়া হয়েছে। যদ্বারা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিরবচ্ছিন্ন সুমহান মর্যাদা ও তাঁর উম্মতের জন্য ওসীলা বা মাধ্যমের অনস্বীকার্য প্রয়োজনীয়তা খুব ভালভাবেই প্রকাশ পাচ্ছে।
ان كنتم تحبون الله.
অর্থাৎ- যদি সত্য সত্যই আল্লাহ পাককে মুহব্বত করো তাহলে فاتبعونى আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করো। বলাবাহুল্য যে, মুহব্বত তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যথাঃ নফসানী- যেমন, সন্তান-সন্ততির প্রতি মুহব্বত জিসমানী- যেমন, মাতা-পিতার প্রতি মুহব্বত। আর ঈমানী- যেমন, আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মুহব্বত। এখানে ঈমানী মুহব্বতকেই বুঝানো হয়েছে, যা অনন্তকাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এজন্যই আল্লাহ পাককে শুধু রিযিকদাতা ও প্রতিপালক হিসেবে মুহব্বত করলেই চলবে না। বরং আল্লাহ পাক যে আমাদের হিদায়েত ও তাযকিয়ার জন্য নবী প্রেরণ করেছেন, কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, দোযখ থেকে রক্ষা পাবার উপায় বলে দিয়েছেন। এটাই কামিল ঈমানী মুহব্বত। আর এই মুহব্বত পেতে হলে নবীয়ে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইত্তিবা বা অনুসরণ সর্বান্তকরণে মেনে নিতে হবে। কেননা, মুহব্বত যেহেতু আল্লাহ পাক-এর দান আর সকল দানের মাধ্যম যেহেতু নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাই তাঁর ইত্তিবা বা অনুসরণের মাধ্যম ব্যতিরেকে মুহব্বত পাওয়া সম্ভব নয়। উপরোন্ত তাঁর আনুগত্যতাকেই হিদায়েত লাভের একমাত্র মাপকাঠিও করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, وان تطيعوه تهتدوا “তোমরা তাঁর (আমার মাহবুব নবী, ত্বাহা নবী, ইয়াসীন নবী, মুয্যাম্মিল নবী, মুদ্দাছছির নবী মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর) আনুগত্যতা করলেই হিদায়েত বা সৎপথ পাবে। (সূরা নূর/৫৪) তবে একথা সত্য যে, কারো আনুগত্য বা অনুসরণ ভয়, লালসা ও মুহব্বত-এ তিনটি কারণে হয়ে থাকে। যেমন চাকর তার মুনিবের প্রতিটি কথা মান্য করে বেতনের লালসায়, প্রজাগণ বাদশাহর আনুগত্য প্রকাশ করে জেল-হাজতের ভয়ে, নেক্কার সন্তান স্বীয় বৃদ্ধ পিতা-মাতার আনুগত্য প্রকাশ করে মুহব্বতের কারণে। এ তিন প্রকারের আনুগত্যের মধ্যে মুহব্বতের আনুগত্যটা খুবই শক্তিশালী ও চিরস্থায়ী। ইসলামে এ মুহব্বতের কথাই বলা হয়েছে। কারণ লিঞ্ঝা ও ভয়ের আনুগত্যতা মুনাফিকরা বা ভ- বিশ্বাসীরাও দেখাতো কিন্তু ওরা ছাহাবী তো দূরের কথা, মু’মিনও হতে পারেনি। এজন্যই আয়াত শরীফে تخافون الله (যদি আল্লাহ পাককে ভয় করো) অথবা تطمعون (যদি আল্লাহ পাক থেকে কিছু লাভের লিঞ্ঝা করো) বলা হয়নি বরং বলা হয়েছে, ان كنتم تحبون الله অর্থাৎ- যদি সত্য সত্যই আল্লাহ পাককে ভয় করো তাহলে فاتبعونى আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করো। কবির ভাষায় চমৎকার অনুরণিত হয়েছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..
অর্থঃ- আল্লাহ পাককে যে পেতে চায়, আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবেসে (যা আনুগত্যের ও অনুসরণের পূর্বশর্ত) লৌহ ও কলম তথা সারা জাহান না চাইতে পেয়েছে সে। উল্লেখ্য যে, হাদীছ শরীফে এই আনুগত্যতা ও অনুসরণের প্রমাণ দেয়া হয়েছে এভাবে,
لو كان موسى حيا ما وسعه الا اتباعى.
অর্থাৎ- যদি হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও জীবিত থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো। বুঝাই যাচ্ছে যে, আসমানী কিতাব তাওরাত শরীফের ধারক ও বাহক সাইয়্যিদুনা হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম কেও যদি আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করতে বাধ্য হতে হয় তাহলে আমাদের কি তাঁকে অনুসরণ করা অপরিহার্য শর্ত হবে না? অতঃপর আল্লাহ পাক বলেন,
ويغفر لكم ذنوبكم واله غفور رحيم.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক তোমাদের সমস্ত গুনাহখাতা ক্ষমা করে দিবেন এবং আল্লাহ পাক অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” এটা আল্লাহ পাক-এ দ্বিতীয় ওয়াদা যা প্রথম ওয়াদার সাথে সংযুক্ত। অর্থাৎ তোমরা আবার মাহবুবে আকবার ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্যিকার অনুসারী হতে পারলেই তোমাদের জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিব। ঠিক তখনই তোমাদের জন্য আমার ক্ষমাকারী শান প্রকাশ পাবে। আর তোমাদের গুনাহসমূহ থেকে আমার ক্ষমা অনেক অনেক বেশী। হাদীছে কুদসী শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
سبقت رحمتى على غضبى.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক বলেন, আমার রহমত আমার গোস্বার উপর অগ্রগামী হয়েছে।” হযরত বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হওয়ার পর মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার সঙ্গীদের বললো, দেখেছো, মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর আনুগত্যকে আল্লাহ পাক-এর আনুগত্য হিসেবে চালিয়ে দিতে চায়। ভাবখানা এই যেন আমরা তাঁকে ঐ রকম মুহব্বত করি যেমন খ্রীষ্টানরা হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে মুহব্বত করে। তখনই অবতীর্ণ হলো,
قل اطيعوا الله والرسول فان تولوا فان الله لا يحب الكفرين.
অর্থাৎ- (হে আমার অনিন্দ্য সুন্দর হাবীব, পেয়ারা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু মুনাফিকরা চুঁ চেরা করেছে অতঃপর আপনি আবার) বলুন! আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুগত হও। বুঝা গেল, আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ ও আনুগত্য সমার্থক। যেহেতু এক اطيعواশব্দটি উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণই আল্লাহ পাক-এর অনুসরণ এজন্যেই বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার সকল উম্মত জান্নাতী, আস্বীকারকারীরা ছাড়া। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আরয করলেন, হে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। স্বীকারকারী কারা? তিনি বললেন, যারা আমার সুন্নতের আনুগত্য করবে তারাই জান্নাতী আর যারা মানবেনা তারা অস্বীকারকারী। আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে আমাদের মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর অতলান্তিক ফিরাসাত ও ফয়েজের বরকতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত মুবারকের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসারী হওয়ার তাওফিক দান করেন। এতেই দ্বীন-দুনিয়া উভয় জাহানের সর্ববিধ কামিয়াবী নিহিত রয়েছে। আজ যুগের মুসলমানরা উন্নতির জন্য চারদিকে ধর্না দিচ্ছে কিন্তু এদিকে মনোনিবেশ করছেনা, যেটার মধ্যে উন্নতি, কামিয়াবী ও সফলতার মূল উৎস লুকায়িত আছে। কবি বলেন,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..
অর্থাৎ- আমাদের মধ্যে যারা তাঁর যথাযথ গোলাম ছিলেন তাঁরা সৃষ্টি জগতের ইমাম ছিলেন। তাঁর দিক থেকে যারা ফিরে গেছে তারা অকৃতকার্য হয়েছে।
তাফসীরুল কুরআন ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারকের বুযুর্গী
তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী
তাফসীরুল কুরআন: হিদায়েত আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী
তাফসীরুল কুরআন: হিদায়তে আসার পরও অহংকারবশতঃ যারা হিদায়েত গ্রহণ করলনা তারা জাহান্নামী
তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল