তাফসীরুল কুরাআন: কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনার বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-৩

সংখ্যা: ১৭৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

واذا قيل لهم اتبعوا ما انزل الله فالوا بل نتبع ما الفينا عليه اباءنا او لوكان اباؤهم لايعقلون شيئا ولا يهتدون.

তরজমা: যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন তা তোমরা অনুসরণ কর। তখন তারা বলে, কখনই নয়, বরং আমরা আমাদের বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষদেরকে যার উপর পেয়েছি তার অনুসরণ করবো। যদিও তাদের বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষদের কোনই জ্ঞান ছিলনা এবং তারা সৎ পথে পরিচালিত ছিলনা। (সূরা বাক্বারা-১৭০)

কুরআন-সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলার অর্থ হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন এবং তাঁর হাবীব, যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়ের আদেশ ও নিষেধ অনুযায়ী চলা। অর্থাৎ তাঁরা যা করার আদেশ করেছেন তা করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা না করা বা তা থেকে বিরত থাকা। এ মর্মে আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন অর্থাৎ ‘কুরআন ও সুন্নাহ’ তার হুকুম-আহকাম তোমরা দৃঢ়তার সাথে পালন কর এবং তিনি তোমাদেরকে যা করতে নিষেধ করেছেন বা বিরত থাকতে বলেছেন তা হতে তোমরা বিরত থাক। আর এ বিষয়ে তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠোর শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর-৭)

হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাবধানবাণী উচ্চারণ করে উম্মতদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, “তোমরা জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আমাকে কুরআন শরীফ দেয়া হয়েছে এবং সেই সাথে তার অনুরূপ সুন্নাহ বা হাদীছ শরীফও দেয়া হয়েছে। আরো জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর হাবীব যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ পাক যা হারাম করেছেন তারই অনুরূপ।” (আবূ দাউদ, মিশকাত, মিরকাত, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ)

হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করে জানিয়ে দিয়েছেন, “তোমরা জেনে রাখ, আমি আল্লাহ পাক-এর শপথ করে বলছি! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনেক বিষয় আদেশ দিয়েছি, উপদেশ দিয়েছি এবং অনেক বিষয় নিষেধও করেছি, নিশ্চয়ই আমার এ সমূদয় বিষয়ও কুরআন শরীফের বিষয়ের সমান।”  (আবূ দাউদ, মিশকাত, মিরকাত, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ)

প্রতিভাত হলো যে, আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়ের আদেশ-নিষেধের গুরুত্ব একই। উভয়েরই আদেশ-নিষেধ মান্য করা ফরয। অস্বীকার বা অমান্য করা কুফরী। আর এই কুফরীতে যারা লিপ্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা শরীয়তের নির্দেশ। এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তাদেরকে কতল করুন বা তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন; যারা আল্লাহ পাক-এর প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না এবং সেই সমস্ত বিষয়কে হারাম মানে না যে সমস্ত বিষয়কে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হারাম করেছেন। এবং সত্য দ্বীন-ইসলামকে দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করে না।” (সূরা তওবা-২৯)

উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক উম্মতে মুহম্মদীকে দ্বীন ইসলাম তথা ‘কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলার জন্য আদেশ করেছেন। আল্লাহ পাক-এর সে আদেশ যারা পালন করবে তারা মহান প্রতিদান লাভ করবে। ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত করবে অবশ্যই সে বিরাট সফলতা লাভ করবে।” (সূরা আহযাব-৮১)

আর যারা উক্ত আদেশ পালন না করে অন্য কোন বিধান বা নিয়ম-নীতি গ্রহণ করবে পরিণামে তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।

এ প্রসঙ্গে কালাম পাকে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম, বিধান বা নিয়ম-নীতি তালাশ করবে বা পালন করবে সেটা তার থেকে কখনই কবুল করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে তথা জাহান্নামী হবে।” (সূরা আলে ইমরাণ-৮৫)

একইভাবে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে আদেশ করেছেন ‘ছবি না তোলার জন্য। যারা তাঁর আদেশ মান্য করে ছবি তোলা হতে বিরত থাকবে তারা রহমতপ্রাপ্ত হবে এবং উনার শাফায়াত-সুপারিশ লাভ করতঃ জান্নাতে প্রবেশ করবে।  যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

كل امتى يدخلون الجنة الا من ابى.

অর্থঃ “আমার আদেশ অমান্যকারী উম্মত ব্যতীত সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী শরীফ)

আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশকে না মেনে যারা ছবি তুলবে তারা জাহান্নামী হবে।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

كل مصور فى النار.

অর্থঃ “যারা ছবি তুলবে প্রত্যেকেই জাহান্নামী হবে। (মুসলিম শরীফ) (চলবে)

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৪

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৫

তাফসীরুল কুরআন: যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৬

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৭

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৮