– হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
‘পীরে কামিল’ শব্দের প্রয়োগ কামিল পীর ছাহেবকে সলফে সালিহীন তথা ইমাম-মুজতাহিদ এবং আউলিয়ায়ে কিরামগণ শায়খ বলে থাকেন,
من ليس له الشيخ فشيخه الشيطان.
অর্থাৎ- “যার শায়খ (পীর ছাহেব) নেই; তার শায়খ হচ্ছে শয়তান।” (তাফসীরে রুহুল বয়ান) ‘শায়খ’ শব্দের অর্থঃ উস্তায, হক্কানী-রব্বানী আলিম, সম্প্রদায়ের সর্দার এবং ঐ সমস্ত ব্যক্তিদেরকে শায়খ বলা হয় যারা ইল্ম-আমল, ফাযায়েল-ফযীলত,মর্যাদা-মর্তবা, বুযূর্গী-সম্মান ইত্যাদির দিক দিয়ে সকলের ঊর্ধ্বে। (আল্ মুনজিদ/৫৫০) উল্লেখ্য যে, কোন বিষয়ের হাক্বীক্বী (সঠিক) ইল্ম হাছিলের জন্য শাব্দিক অর্থই যথেষ্ট নয়। বরং শাব্দিক অর্থের পাশাপাশি ব্যবহারিক অর্থ জানা আবশ্যক। কারণ, স্থান-কাল-পাত্র এবং ভাষার তারতম্যের কারণে শব্দের পারিভাষিক তথা ব্যবহারিক অর্থ বিভিন্ন রকম হতে পারে। সুতরাং একথা সহজেই অনুধাবনীয় যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফে যাকে ওলী-আওলিয়া, মুর্শিদ এবং শায়খ-মাশায়িখ বলা হয়েছে, উর্দূ, ফার্সী এবং বাংলা ভাষায় তাঁকে ‘পীরে কামিল’ বলা হয়ে থাকে। ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর একটি লক্বব মুবারক হচ্ছে ‘পীরে কামিল।’ ওলী-আউলিয়া, মুর্শিদ এবং শায়খকে পীর ছাহেব বলা হয় কেন? আল্লাহ পাক বলেন,
ولكل قوم هاد.
অর্থঃ- “প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য হাদী বা হেদায়েতকারী রয়েছে।” (সূরা রা’দ/৭) প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য তাদের নিজস্ব ভাষায় নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামকে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন,
وما ارسلنا من رسول الا بلسان قومه ليبين لهم.
অর্থঃ- “আমি প্রত্যেক রসূল আলাইহিমুস্ সালামকে তাঁর আপন সম্প্রদায়ের ভাষায় পাঠিয়েছি যেন তিনি তাদের কাছে আল্লাহ পাক-এর আহকামকে সুস্পষ্টভাবে বয়ান (বর্ণনা) করতে পারেন।” (সুরা ইব্রাহীম/৪) আর এটা শতসিদ্ধ কথা যে, ‘নিজ ভাষায় যত সুন্দর ও সহজভাবে মনের ভাব ব্যক্ত করা যায় অন্য ভাষায় তা সম্ভব নয়।’ তবে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে। আল্লাহ পাক-এর যেরূপ মেসাল বা তুলনা নেই, তিনি একক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সেরূপ কোন মেছাল বা তুলনা নেই। তিনিও মাখলুকাতের মধ্যে একক। কায়েনাতের সকলের নবী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
وما ارسلناك الا كافة للناس بشيرا ونذيرا ولكن اكثر الناس لايعلمون.
অর্থঃ- “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।” (সূরা সাবা/২৮) তিনি সমস্ত নবী আলাইহিস্ সালামগণের নবী এবং সমস্ত রসূল আলাইহিস্ সালামগণেরও রসূল। (অসমাপ্ত)