প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “শাসক হিসেবে নয়, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার।”
প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, জনগণের সেবক দাবি করলে- জনমতকে মূল্যায়ন ও শ্রদ্ধা করা এবং জনশক্তি সম্পর্কে সচেতন থাকা ও জনশক্তির প্রাধান্য স্বীকার করা প্রধান ও প্রথম কর্তব্য। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, সরকারি চাকরি করে মোট ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪ শত ৩৮ জন। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ পদই বর্তমানে খালি। অর্থাৎ পার্সেন্টস হিসেবে ১ পার্সেন্টেরও কম। বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৭০ হাজার জন অর্থাৎ ২ লক্ষেরও কম। পার্সেন্ট হিসেবে দশমিক ৩ ভাগেরও কম। অপরদিকে সেবা প্রতিষ্ঠানের লোকবল আরো কম। ভেজালের বেড়াজালে বন্দি দেশের ২০ কোটি মানুষ, অথচ ভেজাল বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেটও নেই। একইভাবে মারাত্মক ও চরম লোকবল সঙ্কটে ভুগছে দুদক, ট্রাফিক বিভাগ, বাজার মনিটরিং সেলসহ সরকারের অন্যান্য সব সেবা বিভাগ। মাদকাসক্ত প্রায় দেড় কোটি লোকের জন্য মাত্র কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট।
প্রতিভাত হচ্ছে, এত নগণ্য লোক দিয়ে কিছুতেই সরকার জনগণকে সেবা দিতে পারে না, পারছে না এবং পারবে না। সুতরাং সত্যিই সেবা নিশ্চিত করতে চাইলে জনগণকেই সচেতন ও সক্রিয় করতে হবে। তার বিপরীতে সরকার নিজস্ব ক্ষমতা বলে যদি সমাধান করার কথা ভাবে অথবা নিজস্ব ক্ষমতার উপর নির্ভর করে মনগড়া সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়; তখন জনমতকে উপেক্ষা করা হয়। জনশক্তিকে অবহেলা করা হয়। সরকার নিজেও বলেছে, আইন করে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কিন্তু সরকার এ কথা অন্যত্র প্রতিফলিত করেনি। চিন্তা করেনি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সরকারিভাবে এবার (২০১৬ সাল) ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে মাত্র ১১৫০টি স্থানে কুরবানী করার জন্য নির্ধারণ করা হয়। অপরদিকে পশু জবাইয়ের জন্য চট্টগ্রামে ৩৭০টি স্পট নির্ধারণ করা হয়। তবে নির্ধারিত স্থানে কুরবানী করার কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি নগরবাসীর। সবগুলো স্পটই ফাঁকা ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, সরকার ভেবেছিলো এসব নিধারিত স্থানে কুরবানী করা হলে সরকারের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজ ও সংক্ষিপ্ত হবে। সঙ্গতকারণেই আমাদের ঝাঁঝালো প্রশ্ন- সরকার নিজেই প্রচার করে জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। সংবিধানেও জনগণকেই রাষ্ট্রের মালিক বলা হয়েছে। তাহলে সে জনশক্তিকে উপেক্ষা করে সরকার নিজেদেরকেই কুরবানীর বর্জ্য অপসারণের জন্য নির্ধারিত করে নেয় কেন? সরকার দেশে বিশাল জনশক্তি তথা অদম্য ও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর যুবশক্তিকে অগ্রাহ্য করে নিজেদের সঙ্কটাপন্ন লোকবল নিয়ে কুরবানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সীমাবদ্ধ থাকতে চায় কেন? এবং এই ক্ষুদ্র পরিসরেই কুরবানীকে আবদ্ধ রাখতে চায় কেন? সরকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারবে না বিধায় তার জন্য জনগণ কুরবানী করতে পারবে না- এই নির্দেশ জারির দ্বারা সরকার নিজেকে স্বেচ্ছাচারী ও অজ্ঞ এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ভাষায় জাহেল ও গুমরাহ শাসক বলে নিজেদের প্রতিপন্ন করলো নাকি? কারা সরকারকে এহেন হঠকারী কা- ঘটানোর জন্য প্ররোচিত করেছে- তা টিকে থাকার স্বার্থেই সরকারকে উদঘাটন করতে হবে। এবং তাদেরকে যুগপৎভাবে বরখাস্ত ও কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে।
দৈনিক আল ইহসান শরীফ উনার অনুসন্ধানে জানা গেছে, দশমিক শূন্য শূন্য এক শতাংশ লোকও সরকারের নির্দিষ্ট স্থানে কুরবানী করেনি। জনগণের সেবক দাবিদার সরকারের এভাবে নিজেকে জনবিচ্ছিন্ন প্রমাণ করার দরকার কী খুব বেশি ছিল?
অপরদিকে পশু কুরবানীর জন্য উপযুক্ত করে স্থানগুলো তৈরিও করে দিতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। বেশ কিছু স্থানে শামিয়ানা টাঙিয়ে দেয়া হলেও বিস্তৃতি ছিল খুবই কম। কিছু স্থানে কাদাপানি থাকায় তা পশু কুরবানীর সম্পূর্ণ অনুপযোগী ছিল।
তাহলে সরকারকে এভাবে ঠুনকো ও ব্যর্থ প্রমাণ করার ষড়যন্ত্র কারা করেছিল, তা যদি সরকার বের করতে না পারে ও ব্যবস্থা নিতে না পারে; তবে সরকারকেই পস্তাতে হবে।
জনগণের অংশগ্রহণ ও স্বতঃস্ফুর্ত সহযোগিতা ছাড়া যে কোনো কাজ করা যায় না, তা সরকারকে বিলক্ষণ বুঝতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক বলেছে, ‘৪৮ ঘণ্টার কথা বললেও আমরা ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই কুরবানীর বর্জ্য অপসারণ করেছি। আর এ সফলতা অর্জনে নগরবাসীর সহযোগিতা পেয়েছি।
অপরদিকে বন্দর নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের বর্জ্য ঘোষিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে বলে জানা যায়। বিষয়টিকে নজিরবিহীন সাফল্য বলেও দাবি করছে সংশ্লিষ্টরা। তবে এটা এজন্যই সম্ভব হয়েছে, যখন এলাকায় কুরবানীদাতাদের স্ব স্ব উদ্যোগে জবাইকৃত পশুর নাড়ি-ভুঁড়ি-বর্জ্য পরিষ্কার করতে দেখা গেছে।
সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি, জনগণকে বাদ দিয়ে সরকারের একলা চলো নীতি পরিহার করার সময় চূড়ান্ত। তবে সরকার যদি জনগণকে পাশে চায়, তাহলে জনমত, জনভাবনা, জনচিন্তা, জনমূল্যবোধ, জনদ্বীনীবোধ-এর প্রতি সরকারকে শ্রদ্ধাশীল ও প্রতিশ্রুতিশীল হতে হবে। এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের ক্ষেত্রে সরকারকে মুসলিম মূল্যবোধ তথা ইসলামী অনুভব ও ইসলামী দর্শনের প্রতি নিবেদিত হতে হবে। সেক্ষেত্রে কুরবানী বাধাগ্রস্ত করা, কুরবানীর পশুর হাট কমিয়ে আনা, কুরবানীর স্থান নির্দিষ্ট করা- এসব জনবিরোধী তথা মুসলিমবিরোধী কথা সরকারের জন্য আর ঘুর্ণাক্ষরেও চিন্তা করা ঠিক হবে না। সরকার এক্ষেত্রে নিজেদের দুর্বল ভাবলে জনগণের সাহায্য চাইতে পারে। কুরবানীর ক্ষেত্রে ইসলামী ফযীলতের কথা বলে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করতে পারে। সরকারের নিজস্ব দলেও স্বেচ্ছাসেবক নামক অঙ্গসংগঠন আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার এ ধরনের ঘোষণা দিলে কোটি কোটি নিবেদিত মুসলিম জনতা বিশেষতঃ যুবক গোষ্ঠী পাবে। সেক্ষেত্রে সরকারের জনসংযোগ ও জনসংহতি বাড়বে। তা না করে এবারো গুমরাহী ও জিহালতী সিদ্ধান্ত নিয়ে ও নির্দেশ দিয়ে সরকার নিজেকে যেভাবে ব্যর্থ ও জনবিচ্ছিন্ন প্রমাণ করেছে, আগামীতে সে একই পথে হাটলে সরকারের জন্য ভয়ঙ্কর বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। খুব জোরালোভাবেই এবারো প্রমাণিত হয়েছে যে, কুরবানীর বর্জ্য অপসারণের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে কুরবানী আবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। বরং এক্ষেত্রে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করলে ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলেই প্রত্যাশার চেয়ে বহুগুণ প্রাপ্তি সম্ভব। ইনশাআল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মু’মিন কখনো এক গর্তে দু’বার পড়ে না। এবারের গর্তে পড়ার ঘটনা থেকে সরকারও নছীহত গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি। ‘পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’- এ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সরকারের কাছে এ প্রত্যাশা সম্পূর্ণই সঙ্গত।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালিউর রহমান, ঢাকা
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০