[‘মুনাফিক’ আর ‘উলামায়ে ‘ছু’ তথা ‘ধর্মব্যবসায়ী’ দু’টোর মধ্যে রয়েছে গভীর সম্পৃক্ততা। তবে সব মুনাফিক উলামায়ে ‘ছূ’ নাও হতে পারে। কিন্তু সব উলামায়ে ‘ছূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ী অবশ্য অবশ্যই মুনাফিক।
মুনাফিকের চিহ্ন হিসেবে হাদীছ শরীফে চারটি আলামত উল্লেখ করা হয়েছে (১) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে (২) আমানতের খিয়ানত করে (৩) ওয়াদা করলে খিলাফ করে (৪) ঝগড়া করলে অশ্লীল গালিগালাজ করে।
মুনাফিকদের উপরোক্ত শর্তগুলোর মাঝে প্রথম শর্তেই আবদ্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের সব ধর্মব্যবসায়ী দল। পেপার-পত্রিকায় বোমা হামলা ইসলাম সম্মত নয় বলে বিবৃতি দিলেও তার বিপরীতে দেখা গিয়েছে তথাকথিত শাইখুল হাদীছ ছাহেবই বোমাবাজকে ছাড়িয়ে দেবার জন্য তদবীর করেছে। মুফতে আমিনী তথা কমিনীই মাদ্রাসায় অভিযান চালালে হুঙ্কার ছাড়ছে। জঙ্গী হান্নান মাহিউদ্দীনের সম্পৃক্ততার কথা বলছে। জঙ্গীরা তাবলীগ চিল্লার মাঝে মিশে যাওয়ার কথা বলছে।
তথাকথিত বাংলা ভাই ওরফে বাংলা সন্ত্রাসী, আব্দুর রহমান তথা আব্দুশ্ সন্ত্রাসীর কাহিনী ঘেটে জানা যায়, তাদের রাজাকারগিরি তথা জামাত শিবিরের সম্পৃক্ততার প্রমাণ।
এছাড়া পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট তথা জঙ্গীদের স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে প্রতিভাত হয়, ধৃত জঙ্গীদের প্রায় ষাট ভাগই জামাত। বাকিরা তথাকথিত ইসলামীঐক্যজোট, শাসনতন্ত্র আন্দোলন, লা-মাযহাবী গ্রুপ, ইসলামের নামধারী অন্যান্য রাজনৈতিক দল তথা ধর্মব্যবসায়ী। অর্থাৎ রসুনের গোড়ার মত। রসুন কোয়া কোয়া থাকলেও গোড়া যেমন এক তেমনি ধর্মব্যবসায়ীরা আলাদা আলাদা নামে থাকলেও জঙ্গী সম্পৃক্ততায় বা সমর্থনে তারা সবাই অপরাধী। কারণ জঙ্গীবাদের ভিত্তি হলো মৌলবাদ। আর তারা সবাই মৌলবাদে বিশ্বাসী। এদের খবর বা কাহিনী সংক্ষেপেই এ নিবন্ধের আলোচনা। ]
পত্রিকায় পাতায় পত্রস্থঃ
সাতক্ষীরায় জামাত নেতার বাড়ী থেকে
দু’টি তাজা বোমা উদ্ধার ॥ পুত্র আটক
সাতক্ষীরার আলীপুর ঢালীপাড়ায় এক জামাত নেতার বাড়ী থেকে দু’টি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় জেএমবি সন্দেহে এক জামাত নেতার পুত্রকে আটক করা হয়েছে। (দৈনিক ইনকিলাব, ৮ জানুয়ারী/২০০৬, ১ পৃষ্ঠা)
দৌলতপুরে জঙ্গী তৎপরতা ও প্রশিক্ষণ চললেও পুলিশ গোয়েন্দা আমলে নেয়নি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গী তৎপরতা ও প্রশিক্ষণ চললেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে তা আমলে নেয়নি। ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার জঙ্গী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দৌলতপুর উপজেলার নির্জনপল্লী কিশোরীনগর। ওই গ্রামে কমপক্ষে ১৫০ জেএমবি প্রশিক্ষিত সদস্য আছে। এদের মধ্যে ১৭ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা সদরে বোমা বিস্ফোরণের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে এ এলাকার জঙ্গী কমান্ডার সামছুল আলম (৩৮)। পরে তার স্বীকারোক্তিতে আকবর নামে আরও এক জঙ্গীকে আটক করে পুলিশ। এলাকাবাসী জানায়, সামছুল দীর্ঘদিন ধরে জামাত শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিল।
(দৈনিক জনকণ্ঠ, ৭ জানুয়ারী/২০০৬, ৪ পৃষ্ঠা)
মুন্সীগঞ্জে শিবির ও জেএমবির
নামে বোমাহালার হুমকি
মুন্সীগঞ্জ সদর বাজারে জেএমবি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নামে বোমা হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। গতকাল শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বরাবরে পাঠানো চিঠিতে এই হুমকি দেয়া হয়। চিঠিটি ছাত্র শিবিরের সমর্থক ফরম, চাঁদার রশিদ ও ঠিকানার ফরমে লেখা। (দৈনিক আমাদের সময়, ৬ জানুয়ারী/২০০৬, ৪ পৃষ্ঠা)
খুলনায় আটক জেএমবি কমান্ডার ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল ॥ রিমান্ডে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি
খুলনা পুলিশের রিমান্ডে থাকা জেএমবির বিভাগীয় সেকেন্ড ইন কমান্ড জিয়াউর রহমান সাগর ওরফে সাব্বির স্বীকার করেছে যে, সে জামাতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। শিবিরের সদস্য থাকা অবস্থায় সে জেএমবিতে যোগ দেয় এবং ২০০৪ সালে এহসার পদ (নেতৃস্থানীয়) লাভ করে।
খুলনায় ১৭ আগস্টের বোমা হামলার জন্য বোমাগুলো সে অন্যদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলো বলে জানায়। (দৈনিক ভোরের কাগজ, ২ জানুয়ারী/২০০৬, ১২ পৃষ্ঠা)
আফগান যুদ্ধের সিডিসহ পাবনায়
শিবির নেতাকে ধরেছে র্যাব
জেএমবি’র সদস্য ইসলামী ছাত্রশিবির নেতা এ্যাডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র রফিকুল আলম ওরফে রিপনকে (২৫) র্যাব- ৫ সদস্যরা শনিবার দুপুরে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত রিপনের কাছ থেকে আফগান ও কাশ্মীর যুদ্ধের সিডিসহ বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে। (দৈনিক জনকণ্ঠ, ১২ ডিসেম্বর/২০০৫, ১ পৃষ্ঠা)
কুষ্টিয়ায় বোমা ও জিহাদী বইসহ শিবিরকর্মীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ ॥
৫ জেলায় গ্রেফতার আরো ১০ জঙ্গী
কুষ্টিয়ায় জেএমবির জঙ্গী সন্দেহে বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও জেহাদী বইসহ এক শিবির কর্মীকে ধরে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় একটি সংবাদপত্র অফিসের নিরাপত্তা কর্মীরা। এদিকে চট্টগ্রাম, ফেনী, রাঙ্গামাটি, গোপালগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে ধরা পড়েছে আরো ১০ জঙ্গী। অন্যদিকে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীসহ ফরিদপুরের ১৮ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দিয়েছে জেএমবি। শেরপুরে আটক ২ জঙ্গীকে রিমান্ড শেষে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। (দৈনিক ভোরের কাগজ, ২৩ ডিসেম্বর/২০০৫, ১২ পৃষ্ঠা)
শিবির নেতা থেকে যেভাবে
জঙ্গী ময়মনসিংহের পনির
জঙ্গী সংগঠন জেএমবি’র সামরিক কমান্ডার ও জঙ্গী নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের ছোট ভাই আতাউর রহমন সানির সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আসাদুজ্জামান পনির (২০) ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই গ্রামের চৌধুরী বংশের সন্তান।
জেআইসিতে জিজ্ঞাসাবাদে থাকা জঙ্গী নেতা পনির ২০০০ সালে জামাত নিয়ন্ত্রিত আল হেরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি, ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০২ সালে মানবিক শাখায় দ্বিতীয় বিভাগে এইচএসসি পাস করে। ২০০৩ সালে আনন্দমোহন কলেজে ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হয়।
আল হেরা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার সময় সে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। নম্র, ভদ্র ধর্মভীরু আসাদুজ্জামান পনির স্কুল জীবনে নামায রোজা করার জন্য বন্ধুবান্ধবকে উপদেশ দিতো। ২০০৩ সালে উপজেলা সদরে আহলে হাদিছ মসজিদে নামায আদায় করার সময় এক বৃদ্ধ জঙ্গী তাকে জেএমবিতে যোগদানের দাওয়াত দেয়। পনির কবুল বলে জেএমবিতে যোগদান করে। শুরু হয় জঙ্গীজীবন। জেএমবিতে যোগদানের পর সিরাজগঞ্জে তাবলীগ জামাতে এক চিল্লা দেয়। (দৈনিক যুগান্তর, ২৩ ডিসেম্বর/২০০৫, ১৫ পৃষ্ঠা)
শুধু জামাত শিবির নয় জঙ্গীদের সাথে ঐক্যজোট কানেকশনঃ
খুলনায় ঐক্যজোট নেতা গ্রেফতার মংলা বন্দরের চিকিৎসককে জেরা ॥ তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ গ্রেফতার ৫০
জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষ ছয় জঙ্গী প্রশিক্ষকের অন্যতম সন্দেহে ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের নেতা খুলনা জেলা কমিটির সহ সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দিন ফারুকীকে (৪৮) গ্রেফতার করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত জঙ্গী সংগঠক (এমও) ডা. লিয়াকত আলীকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়।
দেশজুড়ে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা গত দুই দিনে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহীর বাগমারাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গী সন্দেহে আরো ৫০ জনকে গ্রেফতার ও আটক করেছে। এদের মধ্যে ফেনীতে তিনজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীও রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মহিউদ্দীন গোটা দক্ষিণাঞ্চলে জঙ্গীদের প্রধান প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলো। সে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছে। তার নেতৃত্বে আফগানিস্তান ফেরত অন্তত ৩০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধা রয়েছে। এরা দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে। মহিউদ্দীন দীর্ঘদিন প্রকাশ্য রাজনীতির আড়ালে জঙ্গী তৎপরতা চালিয়ে আসছে। গোয়েন্দা ও পুলিশের হাতে এ ব্যাপারে তথ্য থাকলেও নিশ্চিত না হওয়ায় তাকে এত দিন গ্রেফতার করতে পারেনি।
বরিশাল কোতায়ালি থানা পুলিশ জানায়, মাওলানা মহিউদ্দিনের বাড়ি আগৈলঝাড়া উপজেলার চেঙ্গুটিয়া গ্রামে। তাকে ১৭ আগস্ট বোমা হামলা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কোতোয়ালি থানা ওসি জিল্লুর রহমান বলেন, মহিউদ্দিন আগে হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে জড়িত ছিলো। পরে জেএমবির প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়। (দৈনিক প্রথম আলো, ৮ ডিসেম্বর/২০০৫, ১ পৃষ্ঠা)
যে কথা এ লেখার প্রথমে বলা হয়েছিল। সব মুনাফিক উলামায়ে ‘ছু’ নাও হতে পারে কিন্তু প্রত্যেক উলামায়ে ‘ছু’ অবশ্যই অবশ্যই মুনাফিক। পত্রস্থ রিপোর্টে তাই প্রমাণিত হয়।
ইসলামের নামধারী জামাতটির নেতারা বোমা হামলার সাথে জড়িত নয় দাবী করলেও পত্রিকান্তরে প্রকাশিত ডজন ডজন দলীল প্রমাণিত করে তারা কতবড় মিথ্যা বাদী তথা মুনাফিক। যা মৌলবাদী জঙ্গীবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের অবিচ্ছেদ্য চরিত্র বটে।ষ
-মুহম্মদ মাহবুবে ইলাহী, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫