কথা হচ্ছিল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে ‘সাইফুল্লাহ’ লক্বব প্রাপ্ত অবিসংবাদিত মুসলিম সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “আমরা আগে মারামারি করতাম, কাটাকাটি করতাম, অপরাধ আর অরাজকতায় লিপ্ত থাকতাম।”
কিন্তু এরপর আমাদের মাঝে আবির্ভূত হলেন উসওয়াতুন হাসানা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তার নছীহতে, রূহানী সংস্পর্শে আমরা শুদ্ধ হয়ে গেলাম।”সত্যিই তারা এমনই সংশোধিত, পরিচ্ছন্ন পরশমনি হয়েছিলেন যে স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন “আমার প্রত্যেক ছাহাবায়ে কিরাম তারকা সদৃশ। তাদের যে কোন একজনকে যে অনুসরণ করবে সেই নাযাত পাবে।” হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর রূহানী পরশে পরবর্তীতে ইসলামের স্বর্ণযুগ রচিত হয়। অর্ধ পৃথিবী মুসলমানগণের করতলগত হয়। লাখ লাখ, কোটি কোটি অমুসলমান মুসলমান হয়। এমনও দৃশ্য রচিত হয় যে, যাকাত দেয়ার লোক খুজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।
আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সোহবত ধন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তাদের চারিত্রিক মাধুর্য্যকে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে বিকশিত করে দিয়েছেলেন।
উল্লেখ্য, পরবর্তীতে এর দায় বর্তায় আলিম সমাজের উপর। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের আলিম সম্প্রদায় বণী ইস্রাইলের নবীদের মত। তিনি আরো বলেন, আলিমরা নবীদের ওয়ারিছ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এক হিসাব মতে সারাদেশে সব মিলিয়ে দেশে আধা বা পুরো আলিম, হাফিয, ক্বারী, ইমাম, মুয়াজ্জিন, মৌলভী ছাহেব ইত্যাদির সংখ্যা ৫০ লক্ষাধিক।
সে হিসাব অনুপাতিক হারে দাঁড়ায় যে, বাংলাদেশে প্রায় ২৫ জন মুসলমানের জন্য ১ জন আলিম দাবীদার রয়েছে।
আলিমের কার্যকারিতা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে- শয়তানের মোকাবেলায় একজন আলিম এক হাজার দরবেশের চেয়েও শক্তিশালী। এ দিকে একজন দরবেশই শত শত সাধারণ লোককে হিদায়েতের দাবীদার।
তাহলে সহস্র দরবেশের ক্ষমতা সম্পন্ন একজন আলিম সে কমপক্ষে এক লাখ লোককে হিদায়েতের ক্ষমতা রাখে তা বলা যেতে পারে।
দেশের আলিম দাবীদার রয়েছে প্রায় ৫০ লাখ। তাহলে এত আলিমের তাছির কোথায় গেল? পত্রিকান্তরে রিপোর্ট হয়েছে,
(ক)
দুর্নীতিতে টানা ৩ বছর শীর্ষ বাংলাদেশ
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০০৩ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বে আবারও দুর্নীতিপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ চিহ্নিত হয়েছে। দুর্নীতির মানদণ্ডে এ দেশ শীর্ষ অবস্থানে এবার হ্যাটট্রিক করল। পরপর দুটি সরকারের শাসনামলে টানা তিন বছর এই অবস্থান দেশটির ভাবমূর্তিকে সারাবিশ্বে আবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ২০০৩ সালের দুর্নীতির ধারণাসূচকে (করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স-সিপিআই) বাংলাদেশের এই অবস্থান চিহ্নিত হয়েছে। এ বছর এই সূচকে বিশ্বের মোট ১৩৩টি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিলো। (প্রথম আলো, ৮ অক্টোবর-২০০৩)
(খ)
পত্রিকান্তরে একটি বিশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে এক বছরের দুর্নীতি ও অপচয়ের একটি খতিয়ান দিয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেশে দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে বেশ কয়েকটি খাতে বছরে দেশের লোকসান হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অঙ্কটি শিউরে ওঠার মতো তাতে কোন সন্দেহ নেই।
ঘুষ-দুর্নীতি সম্পর্কে সম্প্রতি টিআইবি’র পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে যে, গত এক বছরে শুধু সরকারের ৯টি খাতে ঘুষ আদায় হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। পাশাপাশি আর একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে শুধু দুর্নীতির কারণে বছরে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন কম হচ্ছে। দেশের যে ক’টি খাত দুর্নীতির কারণে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছে সেগুলো হচ্ছে- বিদ্যুৎ, গ্যাস, পেট্রোলিয়াম সরকারি ক্রয়ে ঘুষ, বন্দর অব্যবস্থাপনা, বিমান খাত ও ব্যাংকিং খাত।
এই তথ্যে সরকারের যে ক’টি খাতে দুর্নীতি ও অপচয় চলছে তার খাতওয়ারি অপচয়ের অঙ্কও তুলে ধরা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে বছরে চুরি হয় ৪০০ কোটি টাকা, সিস্টেম লস বাবদ প্রতিবছর ক্ষতি হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা, বিদ্যুতের অব্যবস্থার ফলে শিল্পখাতে লোকসান হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা, গ্যাস খাতে লোকসান ৪০০ কোটি টাকা, সরকারি ক্রয়ে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে মুদ্রা পাচারের ঘটনা ঘটছে এবং এ খাতে বছরে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকা। এছাড়া সর্বস্তরে ঘুষ লেনদেন হয় প্রতিবছর ৮ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনায় লোকসান হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা এবং বিমান পরিবহনে অদক্ষতার ফলে বৈদেশিক মুদ্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থা ও অদক্ষতার কারণে প্রতিবছর দেশকে লোকসান দিতে হচ্ছে ৮ হাজার কোটি টাকা। (জনকণ্ঠ, ২১ জুলাই-২০০৫)
(গ)
দুর্নীতিতে বাংলাদেশ শীর্ষে
দুর্নীতিতে বাংলাদেশ আবার র্শীষে স্থান পেয়েছে। ১১৭টি দেশের ওপর পরিচালিত জরিপে দুর্নীতি সূচকে এভাবেই চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ।
আর্ন্তজাতিক প্রেক্ষাপটে ও আঞ্চলিক বিচারে এসব দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য পরিবেশ মূল্যায়নের জন্যই এই জরিপ চালানো হয়। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (দাভোস বৈঠক বলে সর্বাধিক পরিচিত)-এর অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশে এই জরিপ চালায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এই ফোরাম ১৯৭৬ সাল থেকে সারা বিশ্বে এ ধরনের সমীক্ষা চালিয়ে আসছে। তবে বাংলাদেশে জরিপ চালানো হচ্ছে ২০০১ সাল থেকে। গতকাল একযোগে সারাবিশ্ব থেকে এই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
একই ধরনের সমীক্ষায় গত বছর ১০৪টি দেশের মধ্যে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০২ নম্বরে। এ বছর ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১০-এ। গত বছরের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশের অবস্থান নিচে নেমে গেছে। সরকারের ব্যয় মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে দুর্নীতিকে অন্যতম বড় দিক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ….”
প্রদত্ত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে কাফির মুশরিকরা দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। কিন্তু বাংলাদেশ মুসলমান প্রধান দেশ হওয়ার পরও দুর্নীতিতে শীর্ষে।
উল্লেখ করা আবশ্যক যে, এদেশের অর্থনীতি যেমন কৃষি নির্ভর তেমনি এদেশের মানুষের ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুভূতিও তেমনি মসজিদ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক।
সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যখন দেখে মসজিদের ইমামই মসজিদ ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করে, মাদ্রাসা শিক্ষকই বিবিধ দুর্নীতি করে, ইসলামের নামে রাজনীতিকরা হাজারো দুর্নীতিতে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করে তখন দুর্নীতির প্রতি বিবেকের দংশন তারা হারিয়ে ফেলে।
এত বড় মাওলানা, মুফতি, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, খতীবই যদি ইসলামের নাম বিক্রি করে খেতে পারে, দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারে তবে আমাদের আর দোষ কি? সাধারণ মানুষ তখন ইবলিসের এই ধোঁকায় খুব সহজেই আটকে যায় । পাশাপাশি নিজেরাই দুর্নীতিতে জরাগ্রস্ত থাকায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওয়াজও এখন খুবই কম হয়। তার পাশাপাশি রাজনীতিক শিল্পপতি আমলাদেরকে দুর্নীতি থেকে বিরত থাকার জন্য চারপাশের মসজিদ মাদ্রাসায় স্বচ্ছ ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন আলিম নেই বললেই চলে।
কাজেই দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বারবার প্রথম স্থান অধিকার করে এর জন্য ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আলিমদাবীদাররাই মূলত: দায়ী।
হাদীছ শরীফে এদের সংশোধনের ফায়দা সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, আমার উম্মতের দু’সম্প্রদায় ১. আলিম দাবিদার ও ২. শাসকগোষ্ঠী যদি ঠিক হয়ে যেত তাহলে গোটা উম্মাহ সংশোধন হয়ে যেত তথা সুফল পেত।”
উল্লেখ্য, আলিম দাবীদারদের বারবার নছীহত করার পরও যখন তারা নিজেরা হিদায়েত হয়না তখন তাদেরকে হাদীছ শরীফে উল্লিখিত নিকৃষ্ট জীব হিসেবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে।
সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা তাদের কাছে যেয়োনা, তাদেরকেও তোমাদের কাছে আসতে দিওনা। তবে তারা তোমাদের গোমরাহ করতে পারবে না।”
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫