দিনের সূর্যের পর রাতের আধার- একথা যেমন কাউকে বলতে হয়না তেমনি কাউকে নতুন করে শোনাতে হয় না পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের সহযোগী হিসেবে জামাত, রাজাকার, আলবাদর ও আশ শামসদের হাতে প্রাণ দিয়েছে কত নিরীহ বাঙ্গালী।
আজকে কুখ্যাত মইত্যা রাজাকার যতই বিকৃত ও বিভ্রান্ত বক্তব্য দিক না কেন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী কোটি কোটি বাঙ্গালী ছাড়াও কয়েকজন পাকিস্তানী জেনারেল এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির তৎকালীন প্রধান জেড এ ভুট্টো এসব নৃশংতার সঙ্গে জামাতের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। এছাড়া এর বড়ো প্রমাণ জামাতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামসহ অবরুদ্ধ বাংলাদেশের নয় মাসের পত্রপত্রিকা এবং বিদেশী সাংবাদিকদের ভাষ্য।
যার থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, কুখ্যাত নেতা বিশেষ করে জামাতের দুই প্রাক্তন মন্ত্রী মইত্যা রাজাকার ও মুইজ্যা-রাজাকারের বক্তৃতা বিবৃতি ও কর্মকা- গণহত্যার সহায়ক হয়েছিলো। দৈনিক সংগ্রামে বর্ণিত এ দুই নেতার কিছু বক্তৃতা ও বিবৃতি এখানে উদ্ধৃত করা হলো। স্বাধীনতা যুদ্ধ যারা দেখেছেন তারা তো জানেনই আর যারা এ প্রজন্ম রয়েছেন তারা এসব বিবৃতি পাঠ করেই বুঝতে পারবেন কুখ্যাত মইত্যা মুজাহিদ ওরফে মুইজ্যা রাজাকার আসলেই স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে না স্বাধীনতা যুদ্ধকারী তথা মুক্তিযোদ্ধাদের কচুকাটা করে কুখ্যাত হয়েছে।
১৯৭১ সালের মাঝামাঝি দেশব্যাপী ঘাতক শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী গঠন সম্পন্ন হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠে আলবাদর ও আল শামস। রাজাকার, আলবাদর বাহিনীর সংগঠনে জামাতের এই দুই প্রাক্তন মন্ত্রী দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যান। ২৫ জুলাই নিজামী বরিশাল টাউন হলে ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় বক্তৃতায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে ছাত্র-যুবক সবাইকে দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী) দমনে সহযোগিতা করার আহবান জানান। (দৈনিক সংগ্রাম, ২৬-০৭-৭১)। একই দিন পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের তৎকালীন সভাপতি মুজাহিদ এক বিবৃতিতে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী ও সহযোগিতাকারীদের অভিনন্দন জানান। (দৈনিক সংগ্রাম, ২৬-০৭-৭১)। মুুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের আহবানে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামীরা এসএসসি পরীক্ষা বর্জন করলেও পাকিস্তান সরকার মুলতঃ ইসলামী ছাত্রসংঘের সহযোগিতায় মাত্র এক-দশমাংশ ছাত্রের উপস্থিতিতে প্রহসনমূলক পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করে।
আগস্ট মাসে মুক্তিবাহিনী ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেশ কিছু সফল অভিযান পরিচালনা করলে পাক বাহিনীর সাথে তাদের দোসররাও অধিক তৎপরতা হয়ে উঠে। ১০ আগস্ট ময়মনসিংহে ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় সভাপতির ভাষণে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী দেশের শত্রুদের (মুক্তিযোদ্ধা) খুঁজে বের করা এবং তাদের তালিকাভুক্ত করার কাজে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য দেশপ্রেমিক জনসাধারণকে আহবান জানান। দৈনিক সংগ্রাম, ১১-০৮-৭১)
অবশ্য তিনি আবেদন করেই দাযিত্ব শেষ করেনি। বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে মুলতঃ জামাতের দেয়া দেশপ্রেমিক বাঙ্গালীর তালিকার ভিত্তিতেই পাকিস্তানী হানাদাররা তাদের হত্যা করে। ১১ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের এক অভিযানে দালাল মাও. মাহমুদ মোস্তফা মাদানী নিহত হলে এর প্রতিবাদে পরের দিন নিজামী বিবৃতি দেয়। সে বলে, ইসলামী আন্দোলনের দুই একজন নেতাকে হত্যা করে পাকিস্তানে ইসলামী জীবন স্তব্ধ করা যাবে না এবং দুস্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) এর পরিণাম ভোগ করতেই হবে। (দৈনিক সংগ্রাম, ১২-০৮-৭১)
১৪ আগষ্ট পাকিস্তানের আজাদী দিবস। সেদিন কেউ এ দিবস পালন না করলেও ব্যতিক্রম ছিলো জামাত ও ইসলামী ছাত্রসংঘ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংঘ সভা করে ও পরে যে মিছিল হয় তাতে নেতৃত্ব দেয় নিজামী সেদিন সভাপতির ভাষণে সে বলে, পাকিস্তান ভূখ-ের নাম নয়, একটি আদর্শের নাম। এই ইসলামী আদর্শের প্রেরণাই পাকিস্তান সৃষ্টি করেছে এবং এই আদর্শই পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম। ইসলামপ্রিয় ছাত্রসমাজ বেঁচে থাকলে পাকিস্তানের অস্তিত্ব টিকে থাকবে। (দৈনিক সংগ্রাম, ১৬-০৮-৭১)
একই সূরে ২২ আগস্ট মাওলানা নিজামী অন্য এক বক্তৃতায় বলে এসব পাকিস্তান বিরোধী (মুক্তিযোদ্ধারা) ব্যক্তিরা শুধু পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন নয় এর মাধ্যমে ইসলামকে উৎখাত করতে চায়। (দৈনিক সংগ্রাম, ২৩-০৮-৭১) ২৭ আগস্ট যুব সমাজের প্রতি নিজামী আহবান জানিয়ে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের মতো আবার আত্মপ্রত্যয় সঞ্চয় করার পরামর্শ দেন এবং বলে, ১৯৬৫ সালের পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ভারতকে চরম জবাব দিয়েছিলো এবার শিক্ষা দিবে তাদের অনুচরদের। (মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ) (দৈনিক সংগ্রাম ২৮-০৮-৭১)
পরের মাসে অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধীর মতো নিজামীও তৎপর হয়ে উঠেন। সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে সে পাকিস্তান বিমানবাহনীর শিক্ষানবিস রশিদ মিনহাজের বাবার কাছে তারবার্তা পাঠান। পশ্চিম পাকিস্তানের কর্মরত অবস্থায় বিমান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে আসার সময় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান শহীদ হন হানাদার বাহিনীর সহযোগী রশিদ মিনহাজের অপতৎপরতায়।
ফ্লাইট লেপটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্বাধীনতার পর তার এই বীরত্বের জন্য ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত হন। অথচ নিজামী ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রধান হিসেবে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে ভারতীয় এজেন্ট হিসেবে উল্লেখ করে শোকবার্তায় মিনহাজের পিতাকে জানায়, ভারতীয় হানাদার ও এজেন্টদের মোকাবেলা করতে গিয়ে মিনহাজ প্রাণ দিয়েছে। মিনহাজের এই আত্মত্যাগ পাকিস্তানের অখ-তায় বিশ্বাসী সবাই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে। (দৈনিক সংগ্রাম, ৪.৯.৭১) একই মাসের ৭ তারিখে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী দিবসে কার্জন হলে দেয়া এক বক্তৃতায় নিজামী বলে, ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রতিটি কর্মী দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এমনকি তারা পাকিস্তানের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হিন্দুস্থানের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতেও প্রস্তুত। (দৈনিক সংগ্রাম, ৮.৯.৭১)
এরপর কয়েকদিনের জন্য সাংগঠনিক সফরে নিজামী যশোরে যায়। ১০ সেপ্টেম্বরে সেখানে রাজাকার সদর দফতরে সমবেত রাজাকারদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সে পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা তওবার ১১১ ও ১১২ নং আয়াত শরীফের আলোকে জাতির এই সঙ্কটজনক মুহূর্তে প্রত্যেক রাজাকারদের ঈমানদারীর সাথে তাদের উপর অর্পিত জাতীয় কর্তব্য। সচেতন হওয়ার আহবান জানান। (দৈনিক সংগ্রাম, ১৫-৯-৭১)
১৬ সেপ্টেম্বর যশোরে ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় বক্তৃতাকালে সে বলে, দেশের সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে আমরা পাকিস্তানের সেবায় এগিয়ে এসেছি, তেমনি সরকারের উচিত হবে আমাদের খাঁটি সৈনিকরূপে গড়ে তোলা। (দৈনিক সংগ্রাম, ১৫-৯-৭১)
অপর এক বক্তৃতায় সেখানে তিনি বলেন, সম্প্রতি যারা পাকিস্তান ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো, আল্লাহ পাক তাদের প্রত্যেকে লাঞ্ছিত করেছেন। পাকিস্তানকে যারা আজিমপুর গোরস্তান বলে শ্লোগান দিয়েছিলো তাদেরকে পাকিস্তানের মাটি গ্রহণ করেনি। তাদের জন্য কলকাতা আর আগরতলার শ্মশানই যথেষ্ঠ। (দৈনিক সংগ্রাম, ১৫-৯-৭১)
পরেরদিনও নিজামী অপর এক বক্তৃতায় তথাকথিত বঙ্গদরদীদের স্বরূপ উদঘাটন করে সাহসের সাথে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলার আহবান জানিয়ে বলেন, দুনিয়ার কোন শক্তিই পাকিস্তান ধ্বংস করতে পারবে না। (দৈনিক সংগ্রাম, ১৬-৯-৭১)
নিজামী ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা আলীয়া মাদ্্রাসায় আলবাদর ক্যাম্প পরিদর্শন করে এবং ছাত্রসংঘকে এক চা চক্রে বলেন, মাদ্্রাসা ছাত্ররা দেশ রক্ষায় একযোগে এগিয়ে এসেছে। কারণ তারা ইসলাম ভালবাসে। পাকিস্তানকে ভালবাসে। অথচ এই মাদ্্রাসা ছাত্ররাই সবচাইতে অবহেলিত। পক্ষান্তরে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা সত্ত্বেও পাকিস্তানকে ধ্বংস করার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে চরম অবহেলিত মাদ্্রাসা ছাত্ররা একবাক্যে পাকিস্তানের জন্য প্রাণ দিতে এগিয়ে এসেছে। (দৈনিক সংগ্রাম, ২৪-৯-৭১)
পরের মাসে নিজামীর পাশাপাশি তার সহকর্মী আলী আহসান মুজাহিদ ওরফে মুইজ্যা রাজাকার বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফরে বের হয়। ২৫ অক্টোবর মুজাহিদ ইসলামী একাডেমী হলে প্রাদেশিক সদস্যদের এক সম্মেলনের ভাষণে পাকিস্তানের ছাত্র জনতাকে দুষ্কৃতিকারী (মুক্তিযোদ্ধা) খতম করার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানায়। (দৈনিক সংগ্রাম, ২৬-১০-৭১) একই মাসের ২৭ তারিখ রংপুর জেলা ছাত্রসংঘের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে মুজাহিদ সবাইকে জিহাদি মনোভাব নিয়ে পাকিস্তান বাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানায়। (দৈনিক সংগ্রাম, ২৮-১০-৭১)
৭১-এর নভেম্বর মাসে মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন রণাঙ্গনে সাফল্য লাভ করে একের পর এক এলাকা শুত্রুমুক্ত করতে থাকে। অন্যদিকে নিজামী-মুজাহিদের নেতৃত্বাধীন আলবাদর বাহিনীও তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। ১৪ নভেম্বর জাঁকজমক ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বাদর বাহিনী ‘বদর দিবস’ পালন করে। এ উপলক্ষে ঐ দিন দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত হয় নিজামীর সাম্প্রদায়িক ও উত্তেজনাকর একটি সম্পাদকীয়। বাদর বাহিনীর সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার জন্য আগের বক্তৃতার পাশাপাশি এ লেখাটাই যথেষ্ট।
‘বদর দিবস’ পাকিস্তান ও আলবাদর’ শিরোনামে নিজামী তার লেখায় বলে, আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে, পাক সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এদেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আল বাদর বাহিনী গঠন করেছে। বদর যুদ্ধে মুসলিম যোদ্ধাদের সংখ্যা ছিলো তিনশত তের। এই স্মৃতিকে অবলম্বন করে তারাও ৩১৩ জন যুবকের সমন্বয়ে এক ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস সেদিন আর খুব বেশি দূরে নয় যেদিন আল বাদরদের তরুণ যুবকেরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হিন্দবাহিনীকে পর্যদুস্ত করে হিন্দুস্তানের অস্তিত্বকে খতম করে সারাবিশ্বে ইসলামের পতাকা উড্ডয়ন করবে। আর সেদিনই পূরণ হবে বিশ্ব মুসলমানদের অপূর্ণ আকাঙ্খা। (দৈনিক সংগ্রাম, ১৪-১১-৭১)
ইসলাম ও পাকিস্তানকে একসূত্রে গ্রথিত করতে ১৬ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামের ‘শবে ক্বদর একটি অনুভূতি শীর্ষক নিজামীর উপ-সম্পাদকীয়তে কিভাবে ধর্মকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার কাজে ব্যবহার করা হয় তার প্রমাণ মেলে। এতে সে বলে, খোদায়ী বিধান বাস্তবায়নের সেই পবিত্র ভূমি পাকিস্তান ঘর। আল্লাহ পাক-এর পূত পবিত্র ঘরে আঘাত হেনেছে খোদাদ্রোহী কাপুরুষের দল। এবারের শবে কদরে সামগ্রিকভাবে ইসলাম ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত উল্লিখিত যাবতীয় হামলা প্রতিহত করে সত্যিকারের শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার এই তীব্র অনুভূতি আমাদের মনে সত্যিই জাগবে কি?
ডিসেম্বর ৩ তারিখে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হলে নিজামী তার সুযোগ্য সহকর্মী মুজাহিদও পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা করে। ১, ৩, ৪ ডিসেম্বর পর পর তিন দিন ছাপা হয় দৈনিক সংগ্রামে নিজামীর ‘হিন্দুস্তানী মামলার পটভূমি ও আমাদের দায়িত্ব‘ শীর্ষক নিবন্ধ। ৪ ডিসেম্বর সে নিবন্ধে লেখে, ….. তথাকথিত স্বাধীন বাংলা আন্দোলনের নামে ভারতের পোষ্যপুত্ররা (স্বাধীনতাকামী ও যুক্তিযোদ্ধা) ৫৪ হাজার বর্গমাইলের এই ভূখ- পূর্ব পাকিস্তানকে কৌশলে ভারতের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলো। সহজে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় এবার ভারত ভেতরে সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী পাঠিয়ে এবং বাইরে থেকে সর্বাত্মক হামলা চালিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে গ্রাস করার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। (দৈনিক সংগ্রাম, ৪-১২-৭১) একই দিনে হানাদার হিন্দুস্তানী বাহিনীর হামলার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য মুজাহিদ পাকিস্তানী বাহিনীকে অভিন্দন জানায়। সে পাকিস্তান সরকারকে প্রতিশ্রুতি দেয়, ছাত্রসমাজ ইস্পাত কঠিন শপথ নিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর পাশাপাশি লড়ে যাবে। (দৈনিক সংগ্রাম, ৫-১২-৭১)
উল্লেখ্য এতসব লিখিত দলীল প্রমাণ থাকার পরও “আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি” কুখ্যাত মইত্যা রাজাকার এ বক্তব্যটি দিয়ে ভালই করেছে। গত ২৫শে/০৭ মে একটি বেসরকারী টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সে বলেছে, “এদেশ আমরা স্বাধীন করেছি যুদ্ধ করে।” (সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ ২৬মে/০৭)
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে বাক্যে বর্ণিত ‘আমরা’ শব্দের সাথে কুখ্যাত মইত্যা রাজাকার নিজেকে সংযুক্ত করেছে অবলিলাক্রমে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এত বড় মিথ্যা আর দোসরা কোন ব্যক্তি বলেনি, বলতে পারেনি।
উল্লেখ্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ধর্মব্যবসায়ীরা সৃষ্টির নিকৃষ্ট। সাধারণ ভাষায় আমরা বলে থাকি খারাপ, খুব খারাপ, অতি খারাপ।
কিন্তু নিকৃষ্ট কাকে বলা হয়? খারাপের মধ্যে যে সর্বশেষ পর্যায়ের বা সবচেয়ে বেশী খারাপ, যার পরে আর খারাপি হতে বা খারাপ হতে পারে না তাকেই বলা হয় নিকৃষ্ট।
রাজাকার, আল বাদর হোতা কুখ্যাত মইত্যা রাজাকার যে কুখ্যাত ধর্ম ব্যবসায়ী তা সবারই জানা।
তবে হাদীছ শরীফ মোতাবেক সে যে নিকৃষ্ট এবং নিকৃষ্টরূপে তার মুল্যায়ণ সাধারণের অনেকেই করতে ব্যর্থ হয়।
রাধুনীর জন্য ভাত একটা টিপলেই যথেষ্ট। কাজেই কুখ্যাত মইত্যা রাজাকারের স্বাধীনতা যুদ্ধকালের রোজ নামচা বর্ণনার জন্য এতটুকু বর্ণনাই যথেষ্ট।
তবে কুখ্যাত রাজাকার স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অংশগ্রহণ দাবী করার দ্বারা যে কাজটি করেছে তাহলো রাজাকারের পাশাপাশি এখন সে গোয়েবলসের চেয়েও কুখ্যাত মহামিথ্যাবাদী হিসেবে নিজের স্থান স্পষ্ট করেছে।
উল্লেখ্য মিথ্যা বলা কবীরাহ গুনাহ। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মিথ্যা সব পাপের মুল। আর আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত। (সূরা আল ইমরান)
তাই বলতে হয়, কখ্যাত মইত্যা রাজাকার নিকৃষ্ট ধর্মব্যবসায়ী ও মহা মিথ্যাবাদী। সব পাপের আধার। তার প্রতি আল্লাহ পাক-এর লা’নত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লা’নত। গোটা আসমানবাসী, যমীনবাসী সবাইরই লা’নত। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
-খন্দকার মুহম্মদ মুসলিম, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২