عن ثوبان قال قال رسول الله صلى اله عليه وسلم سيكون فى امتى كذابون ثلثون كلهم يزعم انه نبى الله وانا خاتم النبى لا نبى بعدى.
অর্থঃ- “হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই অতি শিঘ্রই আমার উম্মতের মধ্য হতে ত্রিশজন মিথ্যা বাদী বের হবে, তারা প্রত্যেকেই নিজেদেরকে নবী বলে দাবী করবে অথচ আমিই শেষ নবী, আমার পর আর কোন নবী নেই।” (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
يبعث دجالون كذابون فريب من ثلاثين كلهم يزعم انه رسول الله.
অর্থঃ- প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা প্রত্যেকেই নিজেদেরকে রসূল বলে দাবী করবে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ) উল্লেখ্য, কোন কোন বর্ণনায় ৭০ জনের কথাও উল্লেখ আছে।
মূলকথা হলো, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর বহু লোক নবী দাবী করবে। কিন্তু তারা সকলেই কাট্টা কাফির, চির জাহান্নামী। স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপস্থিতিতেই অনেকে নবী দাবী করেছে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, “আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন স্বপ্নে দেখলেন, তাঁর দুই হাত মুবারকের মধ্যে দুটি বলয় বা বালার মত দুটি জিনিস। স্বপ্নে দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফুঁ দিলেন, দেখা গেল সেই বালা দুটি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে পড়ে গেল। পরের দিন আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের নিকট বললেন, দেখ দুই ব্যক্তি নবী দাবী করবে। একজন মুসাইলামা আর একজন আসওয়াদ আনসি এবং তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।
দেখা গেল, সত্যি কিছুদিনের মধ্যে তাই হলো। মুসাইলামার বাড়ী ছিল ইয়ামামা। সে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করলো। মূলতঃ বাহ্যিকভাবে সে ঈমান আনলো কিন্তু আন্তরিকভাবে নয়। সে বাড়িতে গিয়ে চিঠি দিল যে রসূল মুসাইলামার তরফ থেকে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট চিঠি। চিঠিতে লিখলো যে, আল্লাহ্ পাক আপনাকেও রিসালত দিয়েছেন আমাকেও দিয়েছেন। আপনি এক কাজ করুন; আমাকে শরীক করেন, অর্ধেক রিসালত আমাকে দিয়ে দিন। আল্লাহ্ পাক-এর রসূল তার বিরুদ্ধে শক্ত চিঠি লিখলেন যে, মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ হতে ভন্ড নবী মুসাইলামার নিকট। তুমি এখনও তওবা কর, তোমার সময় আছে, নাহলে তোমার শাস্তি কঠিন ও কঠোর হবে, আর তোমার পরিণতি খুব খারাপ হবে। শেষ পর্যন্ত তাই দেখা গেছে, মুসাইলামা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে লাঞ্ছনার সাথে মারা যায়। হযরত ওহসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে মক্কা বিজয়ের পর মুসলমান হয়েছিলেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, “হে ওহসী! তুমি একটু আড়ালে বস। কারণ তোমাকে দেখলে আমার চাচা হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কথা স্মরণ হয়ে যায়।” এতে হযরত ওহসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খুবই চিন্তিত হলেন এবং ভাবলেন সত্যিই আমি একটি বিরাট অপরাধ করেছিলাম যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিনি, তখন হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শহীদ করে। অবশ্যই এর কাফফারা আমাকে আদায় করতে হবে। তিনি খুব পারদর্শী ছিলেন বল্লম নিক্ষেপের মধ্যে এবং তাঁর নিক্ষেপ লক্ষ্য ভেদ করতো। মুসাইলামার বিরুদ্ধে যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি সেই বল্লম নিলেন যেটা দিয়ে হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শহীদ করেছিলেন এবং ভাবলেন যে, হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাচা এবং ইসলামের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, তার বদলে একজন বিশিষ্ট কাফির মুসাইলামাকে কতল করে তার কাফফারা আদায় করবেন। যখনই তিনি মুসাইলামাকে দেখলেন তখনই নিক্ষেপ করলেন সেই বল্লম; আল্লাহ্ পাক-এর কুদরত, মুসাইলামার এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল এবং সেখানে সে মারা গেল।
আর অপর দিকে দশম হিজরীতে আসওয়াদ আনসী নুবুওওয়াত দাবী করলো। সে ছিল ইয়ামেনের লোক। ইয়ামেনের কিছু অংশ সে মুসলমানদের কাছ থেকে কেড়ে নিল এবং সে যা তা বলতে লাগলো ইসলামের বিরুদ্ধে এবং অনেক লোক সে জমা করে রাখলো। সেখানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে শাসনকর্তা নিয়োগ করেছিলেন তাঁকে সরিয়ে দিল। অতঃপর পরবর্তী সময় তারই এক আত্মীয় তাকে হত্যা করে ফেললো, মূলতঃ এই দুই মিথ্যাবাদী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপস্থিতিতেই নুবুওওয়াত দাবী করেছিল। এরপর আরো দু’জন নবী দাবী করেছে, একজন হল তোলাইহা আর অপর জন সাজা। সাজা ছিল মেয়েলোক। তোলায়হা ও সাজা দু’জনই পরবর্তীতে তওবা করে, যা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময় সংঘটিত হয়। তিনি সম্পূর্ণভাবে ভন্ড নবীদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেন।
আর বর্তমানে যারা নবী দাবী করেছে, তারা হলো- বাহাই সম্প্রদায় ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়। অর্থাৎ মির্জা বাহাউল্লাহ ও মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। তাদের মধ্যে কাদিয়ানীদের তৎপরতা বা কার্যক্রম সবচেয়ে বেশী। তাই নিম্নে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা তুলে ধরা হলো-
কাদিয়ানীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
বৃটিশের দালাল মির্জা গোলাম মুর্তজার ছেলে “মির্জা গোলাম আহমদ”। পাঞ্জাবের ‘কাদিয়ান’ নামক গ্রামে তার জন্ম। সে জন্ম গ্রহণ করে ১৮৩৫ সালে। আর মারা যায় ১৯০৮ সালে। সে মূলতঃ কোর্টের একজন সাধারণ পেশকার ছিল। তার পিতা যেহেতু বৃটিশের দালাল ছিল, সেই সূত্রে তার সাথেও ছিল বৃটিশের ভাল সম্পর্ক। বৃটিশের টাকায় সে প্রথমতঃ ইসলামের দরদমাখা কিছু চটি রেসালা প্রকাশ করে যা মোটামুটি প্রশংসিত হয় এবং সেও কিছুটা জনপ্রিয়তা লাভ করে। যার ফলশ্রুতিতে সে পর্যায়ক্রমে নিজেকে মুজাদ্দিদ, ইমাম মাহ্দী, ঈসা মসীহ ও নবী বলে প্রচার করতে থাকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত সে নিজেকে ‘আল্লাহ’ বলেও দাবী করে। (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) যার কারণে এই জমিনেই তার উপর আল্লাহ পাক-এর গযব অবতীর্ণ হয়। ফলে সে
ইস্তেঞ্জাখানায় বা পায়খানায় পড়ে মারা যায়।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কাদিয়ানী হয় বি,বাড়িয়ার মৌলভীপাড়া গ্রামের জাহিল মৌলভী আব্দুল ওয়াহিদ। সে ১৯১২ সালে পাকিস্তান গিয়ে কাদিয়ানী মত-পথ গ্রহণ করে এবং বাংলাদেশে এসে কাদিয়ানী মত-পথ প্রচার করে।
কাদিয়ানী কেন কাফির?
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে মির্জা গোলাম কাদিয়ানী ও তার অনুসারী কাদিয়ানী সম্প্রদায় কাফির ও চিরজাহান্নামী। কিন্তু প্রশ্ন হলো মির্জা গোলাম কাদিয়ানী ও তার অনুসারীরা কেন কাফির?
মূলতঃ মির্জা গোলাম কাদিয়ানী কাফির হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে- “খতমে নুবুওওয়াত” কে অস্বীকার করা। অর্থাৎ নিজেকে ‘নবী’ বলে দাবী করা। সে শুধু নিজেকে নবী হিসেবেই দাবী করে নাই, সে নিজেকে ইমাম মাহদী, ঈসা মসীহ ও আল্লাহর সন্তান এমনকি আল্লাহ বলেও দাবী করেছে। এছাড়াও আরো বহু কুরআন-সুন্নাহ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস বিরোধী কুফরী আক্বীদা সে পোষণ করতো, যা তার লিখিত কিতাবাদীতেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
নিম্নে কাদিয়ানীর কিতাব থেকে তার কিছু কুফরী আক্বীদা ও বক্তব্য তুলে ধরা হলো-
১. মির্জা গোলাম কাদিয়ানী নিজেকে ‘ইমাম মাহদী’ প্রমাণ করতে গিয়ে তার লিখিত কিতাব “এযালাতুল আওহাম, হাক্বীক্বাতুল মাহদী, শাহাদাতুল কুরআন, জমীমায়ে নুযুলুল মসীহ, ইত্যাদি কিতাব সমূহে ‘ইমাম মাহদী আলাইহিস্ সালাম-এর আগমন ও আলামত সম্পর্কিত সহীহ হাদীছ শরীফ সমূহকে অস্বীকার করেছে ও ক্ষেত্র বিশেষে মনগড়া ব্যাখ্যা করেছে।
যেমন, মির্জা গোলাম কাদিয়ানী তার ‘হাক্বীকাতুল মাহদী” কিতাবের ২০ পৃষ্ঠায় লিখেছে,
ان الاحاديث التى جائت فى المهدى كلها ضعيفة مجروحت بل اكثرها موضوعة.
অর্থঃ- “ইমাম মাহদী আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কে যে সকল হাদীছ শরীফ সমূহ বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোই জঈফ ও দূষিত, বরং তার অধিকাংশই জাল-বানোয়াট।”(নাউযুবিল্লাহ)
২. মির্জা গোলাম কাদিয়ানী তার বহু কিতাবেই নিজেকে ঈসা মসীহ বলে উল্লেখ করেছে। শুধু তাই নয়, সে ফতওয়া দিয়েছে- যারা তাকে ‘ঈসা মসীহ’ মানবে শুধু তারাই মুসলমান আর সকলেই কাফির। যেমন তার “হাক্বীক্বাতুল ওহীর” ১৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………..
অর্থঃ- “দ্বিতীয়তঃ সে ব্যক্তি কাফির যে প্রতিশ্রুত মসীহ (মির্জা গোলাম কাদিয়ানীকে) মানেনা।”
৩. মির্জা গোলাম কাদিয়ানী তার বহু কিতাবেই নিজেকে নবী বলে দাবী করেছে। শুধু তাই নয়, সে তার উক্ত মিথ্যা ও কুফরী দাবীকে প্রমাণ করার জন্যে বহু আয়াত শরীফ ও ছহীহ হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে নিজের উপর ওহী নাযিল হওয়ারও দাবী করেছে।
যেমন “আইনায় কামালাতে ইসলাম” নামক কিতাবের ৪৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فاوحى الله الى.
অর্থাৎ “আল্লাহ পাক আমার প্রতি ওহী নাযিল করেন।” (নাউযুবিল্লাহ)
“হাক্বীক্বাতুন নুবুওওয়াত” নামক কিতাবের ২৭২ পৃষ্ঠায় কাদিয়ানী লিখেছে,
উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………..
অর্থাৎ- “আমার দাবী এই যে, আমি রসূল এবং নবী।” (নাউযুবিল্লাহ)
এছাড়াও মির্জা গোলাম কাদিয়ানী আরো বহু কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিল। যেমন, কাদিয়ানীর কতিপয় কুফরী আক্বীদা হলো-
৪. আল্লাহ পাক-এর সন্তান-সন্ততি রয়েছে, ৫. কাদিয়ানী ত্রীত্ববাদে পূর্ণ বিশ্বাসী ছিল, ৬. আল্লাহ পাক-এর হাত, পা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও আকার-আকৃতি রয়েছে, ৭. হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম খোদার নিশ্বাসের বায়ূ বা চোখের জ্যোতি, ৮. কাদিয়ানী নিজেকে খোদার ন্যায় অদ্বিতীয়, খোদার অংশ, খোদার অবতার ও পূর্ণ খোদা হওয়ার দাবি করেছে, ৯. কাদিয়ানী বলে, আমি স্বপ্নে দেখলাম আমিই খোদা, ১০. কাদিয়ানী নিজেকে কৃষ্ণের অবতার বলেও দাবি করেছে, ১১. কাদিয়ানী হিন্দু ও বৌদ্ধদের মতবাদ জন্মান্তর ও পুনর্জন্মে বিশ্বাসী ছিল। অনুরূপ আরো বহু কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী তথা কুফরী আক্বীদায় সে বিশ্বাসী ছিল।
সেজন্য আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকলের ঐক্যমতে মির্জা গোলাম কাদিয়ানী ও তার অনুসারী কাদিয়ানী সম্প্রদায় কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী। ‘হাক্বীকাতুল ওহী, আল বোশরা, তওজীহে মারাম, জরুরাতুল ইমাম, বারাহীনে আহমদিয়া, আরবাইন, তাজল্লিয়াতে এলাহিয়া, দাফেয়ুল বালা, বদর প্রত্রিকা, জমীমায় আঞ্জামে আথাম, আইনায়ে কামালাতে ইসলাম, তোহফায়ে গোলাজরিয়া, লেকচারে শিয়ালকোট, এস্তেহারে এক গলতিকা ইত্যাদি কিতাব সমূহে কাদিয়ানীর উল্লিখিত আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ উল্লেখ আছে। জায়গার অভাবে পৃষ্ঠা ও খন্ড নম্বর ও ইবারত উল্লেখ করা সম্ভব হলোনা। প্রয়োজনে আমরা তা উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ।
কাদিয়ানী কর্তৃক আয়াত শরীফের অপব্যাখ্যা
মির্জা গোলাম কাদিয়ানী তার মিথ্যা ও কুফরী দাবীকে ছাবেত করার লক্ষ্যে কুরআন শরীফে বর্ণিত خاتم النبين. “খাতামুন্ নাবিয়্যীন”-এর মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়েছে। তার বক্তব্য হলো, আয়াত শরীফে বর্ণিত “খাতামুন্ নাবিয়্যীন-এর অর্থ শেষ নবী নয়। বরং তার অর্থ হচ্ছে, ‘নবীদের ‘মহর’। কারণ আরবী অভিধানে ختم (খতম) শব্দের অর্থ ‘মহর’ লিখা আছে। তাই কাদিয়ানীর মতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী নন। বরং তিনি নবীদের ‘মহর’। (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক)
মূলতঃ কাদিয়ানী আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ হওয়ার কারণেই উক্ত আয়াত শরীফের মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়েছে। তার উক্ত মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যার জবাবে, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমামুছ্ ছরফ ওয়ান্ নাহু রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, ختم (খতম) শব্দটি এরূপ একটি শব্দ যার একাধিক অর্থ রয়েছে। তন্মধ্যে উক্ত ختم (খতম) শব্দের একটি অর্থ যেরূপ ‘মহর’ তদ্রুপ আরেকটি অর্থ হচ্ছে, ‘শেষ’। অর্থাৎ ‘খতম’ শব্দটি স্থান বিশেষে ‘মহর’ অর্থ প্রদান করবে; আবার স্থান বিশেষে ‘শেষ’ অর্থও প্রদান করবে। অর্থাৎ ختم (খতম) শব্দের পরে যদি على (আলা) শব্দ থাকে তবে উক্ত ‘খতম’ শব্দটি ‘মহর’ অর্থ প্রদান করবে।
যেমন পবিত্র কুরআন শরীফে সূরা বাক্বারার ৭নং আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ختم الله على قلوبهم.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক তাদের অন্তর সমূহে ‘মহর’ মেরে দিয়েছেন।”এখানে ‘খতম শব্দের পরে (আলা) শব্দ রয়েছে তাই ‘খতম’ শব্দের অর্থ হয়েছে, ‘মহর’।
আর পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে বর্ণিত,
ولكن رسول الله وخاتم النبين.
এ আয়াত শরীফের অর্থ হচ্ছে, “বরং তিনি আল্লাহ পাক-এর রসূল এবং শেষ নবী।” এখানে ‘খতম’ শব্দের পরে যেহেতু على(আলা) শব্দ নেই। তাই ‘খতম’ শব্দের অর্থ হয়েছে শেষ’। সুতরাং কাদিয়ানী উক্ত আয়াত শরীফের যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম শেষ নবী হওয়ার প্রমাণ
আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অর্থাৎ হানাফী, শাফেয়ী, মালিকী ও হাম্বলী মাযহাবের সকল ইমাম-মুজতাহিদ একমত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “খাতামুন্ নাবিয়্যীন” অর্থাৎ সর্ব শেষ নবী ও রসূল। যা কুরআন শরীফের অসংখ্য আয়াত শরীফ ও অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত।
যেমন, এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
ما كان محمد ابا احد من رجالكم ولكن رسول الله وخاتم النبين.
অর্থঃ- “(হযরত) মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের মধ্যস্থিত কোন পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহ পাক-এর রসূল এবং সর্বশেষ নবী।” (সূরা আহযাব/৪০)
আর হাদীছ শরীফে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فصلت على الانبياء بست اعطيت بجوامع الكلم ونصرت بالرعب واحلت لى العنائم وجعلت لى الارض مسجدا وطهورا وارسلت الى الخلق كافة وختم بى النبيون.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমাকে অন্যান্য নবীগণের উপর ছয়টি বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে, (১) আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলম্ দেয়া হয়েছে, (২) আমাকে রো’ব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আমার নাম শুনলেই কাফিররা দূর থেকে ভয়ে কাঁপতে থাকে, (৩) আমার জন্য গণীমতের মালকে হালাল করা হয়েছে, (৪) আমার জন্য সমস্ত যমীনকে নামাযের স্থান ও পবিত্র করে দেয়া হয়েছে, (৫) আমাকে সমস্ত কায়িনাতের জন্য রসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে, (৬) আমার দ্বারা নবী-রসূল আগমনের ধারাকে বন্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ আমিই সর্ব শেষ নবী ও রসূল।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও ছহীহ হাদীছ শরীফ ছাড়াও আরো বহু আয়াত শরীফ ও ছহীহ হাদীছ শরীফ রয়েছে, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “খাতামুন্ নাবিয়্যীন” অর্থাৎ সর্ব শেষ নবী ও রসূল।
খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সকলেই কাফির
খতমে নুবুওওয়াতের প্রতি ঈমান আনা অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী-রসূল হিসেবে বিশ্বাস করার সাথে সাথে শেষ নবী ও রসূল হিসেবে বিশ্বাস করা প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয। আর “খতমে নুবুওওয়াত”কে অস্বীকার করা অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরে আরো নবী আসবে বলে বিশ্বাস করা এবং নবী দাবী করা কাট্টা কুফরী।
এ প্রসঙ্গে আক্বাইদের বিশ্বখ্যাত কিতাব “ফিক্বহুল আকবরে” উল্লেখ আছে,
دعوى النببوة بعد نبينا كفر بالاجماع.
অর্থাৎ- “আমাদের নবী (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর নবী দাবী করা সকলের ইজমা বা ঐক্যমতে কুফরী।”
সুতরাং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর যে ব্যক্তিই নবী দাবী করবে বা খতমে নুবুওওয়াতকে অস্বীকার করবে সে ব্যক্তিই কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। শুধু তাই নয় এদেরকে যারা সমর্থন ও অনুসরণ করবে তারাও কাফির ও চির জাহান্নামী হবে।
যেমন, কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি সম্প্রদায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী। কারণ তারা নবী দাবী করেছে এবং খতমে নুবুওওয়াতকে অস্বীকার করেছে। এদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা হলো, তাদেরকে তওবা করার জন্য তিন দিন সময় দেয়া হবে। এর মধ্যে তওবা না করলে যদি ইসলামী খিলাফত থাকে তবে তাদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
কাদিয়ানী ফিৎনা মূলোৎপাটনে যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ রাজারবাগ শরীফের
হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলার অবদান
যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী কাদিয়ানীদের হাত থেকে মুসলমানদের ঈমানকে হিফাযত করার লক্ষ্যে সবার চেয়ে বেশী ভূমিকা রাখছেন। তিনি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় তথা সর্বত্র ওয়াজ মাহফিল করে, আর বিশেষ করে যামানার তাজদীদী মূখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফের’ প্রতিটি সংখ্যায় কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে লিখে ও তাতে ছাপিয়ে সারা বিশ্বে প্রচার করে যাচ্ছেন।
হাফিযে হাদীছ, বাহরুল উলূম, আল্লামা রুহুল আমীন বশীরহাটি রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘কাদিয়ানীর কুফরী বক্তব্যগুলো খণ্ডন করে ৬খণ্ডে যে বিশাল কিতাব রচনা করেছিলেন সেই “কাদিয়ানী রদ” কিতাবখানা ধারাবাহিকভাবে হুবহু ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে’ পত্রস্থ করা হচ্ছে। সাথে সাথে পাকিস্তানের আদালতে কাদিয়ানীদের কাফির ঘোষণা করতে গিয়ে যে রায় পেশ করা হয়েছে তা ইংরেজী ভাষায় কিতাব আকারে বের হয়েছে, উক্ত কিতাব খানাও বাংলায় অনুবাদ করে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে’ প্রচার করা হয়েছে। যাতে করে সাধারণ মুসলমানগণ কাদিয়ানীদের কুফরী মতবাদগুলো অবগত হয়ে কাদিয়ানী মত-পথ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে এবং নিজের মূল্যবান ঈমানকে হিফাযত করতে পারে, সাথে সাথে কাদিয়ানী ফিৎনা মূলোৎপাটনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
সুতরাং সকল মুসলমান নর-নারীর ঈমানী দায়িত্ব হলো, ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’ নিয়মিত পাঠ করতঃ কাদিয়ানী ফিৎনা সম্পর্কে অবগত হওয়া, তাদের মত-পথ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, তাদের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক না রাখা, তাদেরকে সমর্থন, সহযোগিতা ও অনুসরণ না করা, আর কেউ যদি না জেনে কাদিয়ানী মত-পথ গ্রহণ করে থাকে তবে তার জন্যে ফরয তওবা করে পুনরায় মুসলমান হয়ে যাওয়া নচেৎ কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে চির জাহান্নামী হতে হবে।
-মুফতিয়ে আ’যম, আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ