হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার তাঁর দরস মাহফিলে সে জামানার ধর্মব্যবসায়ী মাওলানাদের দোষত্রুটি তুলে ধরছিলেন। এক পর্যায়ে এক ছাত্র দাঁড়িয়ে বললো, ‘হুযূর! বেয়াদবি মাফ করবেন। এসব সমালোচনা না করে কিছু হাদীছ শিক্ষা দিলে ভাল হতো না।’ সাথে সাথে তিনি গর্জে উঠলেন, বললেন- ‘কিছুক্ষণ সময় দুনিয়াদার ধর্মব্যবসায়ী মাওলানাদের দোষত্রুটি তুলে ধরা ষাট বছর বে-রিয়া নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ উল্লেখ্য, পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, এসব নামধারী উলামারা তথা উলামায়ে ‘ছূ’রাই নবী-রসূল তথা আউলিয়ায়ে কিরামগণের বিরোধিতা করে থাকে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বর্তমান জামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর বিরোধিতা যারা করে থাকে তাদের প্রত্যেকের আমল খারাপ। প্রসঙ্গত: এ ধরনের ধর্মব্যবসায়ীদের কিছু উদাহরণ এখানে দেয়া গেলো- দায়িত্ব হস্তান্তর নিয়ে দ্বন্দ্ব ॥ বেগমগঞ্জে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে সহকর্মীদের পিটুনি নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী বেগমগঞ্জের চন্দ্রগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ ছেড়ে দেয়ার জন্য মাওলানা ফয়েজ আহাম্মাদকে (৫০) তার কক্ষেই পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন গতকাল সোমবার মাওলানা নোমানের নেতৃত্বে চার-পাঁচজন শিক্ষক। (প্রথম আলো, ৫ এপ্রিল-২০০৫, ৫ পৃষ্ঠা) প্রক্সি দিতে গিয়ে মাদ্রাসা ছাত্রী ও সুপার আটক ॥ পালানো আরেক ছাত্রী সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: চলমান দাখিল পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে আসা এক ছাত্রী ও এই কাজে সহায়তার জন্য হাতেনাতে ধরা পড়েছেন সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার সুপার। গতকাল গণিত পরীক্ষা চলাকালে এই ঘটনা ঘটে সাতক্ষীরা আয়েনউদ্দিন মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্রে। কর্তৃপক্ষ জানায়, তালার পাটকেলঘাটার আজিজুর রহমানের কন্যা আয়েশা খাতুন একই উপজেলার খাতুনে জান্নাত মাদ্রাসার ছাত্রী জনৈক নিজামউদ্দিনের কন্যা নাজমা খাতুন হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিল। নাজমার প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডে আয়েশার ছবি সাঁটা ছিল। একই মাদ্রাসার আরেক ছাত্রী মাহমুদা শাম্মির প্রক্সি দেয় কেনাবপুরের রেনুকা পারভিন। তারও প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডে রেনুকার ছবি সাঁটা ছিল। গতকাল পরীক্ষা চলাকালে ম্যাজিস্ট্রেট এ ব্যাপারে গোপনসূত্রে খবর পান। কিন্তু ছবিতে গরমিল না হওয়ায় তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেননি তিনি। পরীক্ষা শেষের ৫ মিনিট আগে প্রক্সিদাতা আয়েশা ও রেনুকাকে অফিসে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা স্বীকার করে প্রক্সি দেয়ার বিষয়টি। তারা জানায়, খাতুনে জান্নাত মাদ্রাসার সুপার খসরু আলম ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই কাজ করিয়েছেন। (ভোরের কাগজ ২০ মার্চ-২০০৫, ৮ পৃষ্ঠা) ফরিদপুরে ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ॥ মাদ্রাসা শিক্ষক পলাতক স্টাফ রিপোর্টার, ফরিদপুর: ফরিদপুর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত শাহ ফরিদ হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হাফিয নিজাম উদ্দিনের (৩৫) বিরুদ্ধে ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী একই মাদ্রাসার ছাত্র নূর মুহম্মদ (১৪) বলাৎকারের শিকার নূর মুহম্মদ জানিয়েছে, মাদ্রাসার আরও অনেকেই লম্পট শিক্ষকের বিকৃত লালসার শিকার হয়েছে। ঘটনাটি জানাজানি হলে লম্পট শিক্ষক শনিবার মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়েছে। (জনকণ্ঠ, ১৮ এপ্রিল-২০০৫, ১২ পৃষ্ঠা) মিঠাখালী মাদ্রাসা অধ্যক্ষের দুর্নীতি প্রতিনিধি, পিরোজপুর: পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার মিঠাখালী সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ওই অধ্যক্ষ চাকরি থেকে অবসরে গেলেও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আরও দু’বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক চাকরি নেন। এ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে তিনি তার দুর্নীতি ও আত্মসাতের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। মাওলানা বাহাউদ্দিন প্রায় মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করেন। মাদ্রাসার বাউন্ডারির জন্য জায়গা কেনার কথা থাকলেও তিনি তা নিজের নামে দলির করে নিয়েছেন। মাদ্রাসার নামে বরাদ্দকৃত টিন ও পার্টিশনের টিন নিজের বাড়ির ঘরে লাগিয়েছেন। মাদ্রাসার প্রায় ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র নিয়ে গেছেন নিজ বাড়িতে। এমপির বরাদ্দ ২ টন ও জেলা প্রশাসকের বরাদ্দ ৫শ’ কেজি চাল বিক্রি করে তা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। মাদ্রাসার ভোকেশনাল শাখায় নিয়োগ দিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা পকেটস্থ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত ৫ হাজার টাকার কোন হদিস নেই। এছাড়াও মাদ্রাসার জায়গায় ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। (সংবাদ, ১১ এপ্রিল-২০০৫, ১৫ পৃষ্ঠা) মহেশখালীতে মাদ্রাসা সুপারকে দুর্নীতির জন্য পিটিয়েছে ছাত্ররা কক্সবাজার প্রতিনিধি: মহেশখালীর হোয়ানকে এক মাদ্রাসা সুপারকে উত্তেজিত ছাত্রছাত্রীরা বের্ধক পিটিয়ে অপহরণ করে ইউএনও’র কাছে নিয়ে আসার পথে পুলিশ উদ্ধার করেছে। উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের চেষ্টা চালানোর ফলে উত্তেজিত ছাত্রছাত্রীরা এ ঘটনা ঘটায়। (যুগান্তর, ১৯ জুন-২০০৫, ১৬ পৃষ্ঠা) শরণখোলার রায়েন্দা বাজার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ॥ সুপার ও জামাত নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শরণখোলা প্রতিনিধি: বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও জামাত নেতা মাওলানা জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাত ও জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা এসব অভিযোগে গত ১৭ জুন সকালে শরণখোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সম্মেলনে কমিটির সদস্য আবুল কালাম হাওলাদার তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সুপার জয়নাল আবেদীন মাদ্রাসার সহকারি মৌলভী পদে চাকরিরত অবস্থায় বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপার মাওলানা ওহাবকে চাকরিচ্যূত করেন। মাওলানা ওহাব এ ব্যাপারে আদালতে মামলা দায়ের করায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ২০০২ সালে নিয়োগ দেখিয়ে জয়নাল আবেদীন সুপার পদে আসীন হন। পরবর্তী সময়ে তিনি প্রস্তাবিত আলিম মাদ্রাসার নামে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটির কোনও সভা ছাড়াই রেজুলেশন ও অধ্যক্ষ পদে জাল নিয়োগপত্র তৈরি করেন। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত বছর মাদ্রাসার লাইব্রেরী থেকে মূল্যবান মালামাল ও নগদ টাকা রাতের অন্ধকারে সুপার নিজেই চুরি করে প্রতিপক্ষ ও কমিটির সদস্যদের জব্দ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। পরবর্তী সময়ে তদন্তে তিনি নিজেই ফেঁসে যান। এছাড়া বিভিন্ন সময় শিক্ষক নিয়োগের নামে ডোনেশন ও সরকারি অনুদানের লাখ লাখ টাকা মাদ্রাসা উন্নয়নে ব্যয় না করে নিজে আত্মসাত করেন। গত বছর বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তার ছেলে হাফিজ শ্যালক বেলায়েতকে দিয়ে চুরি করিয়ে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিক্রি করেন। (আজকের কাগজ, ১৯ জুন-২০০৫, ৭ পৃষ্ঠা) অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জুতামিছিল রাঙ্গুনিয়ায় ছাত্রী ধর্ষণকারী প্রধানশিক্ষক মৌলভী মহসিনের অপসারণ ও বিচার দাবি ওমর ফারুক ইকবাল (কাউখালী) রাঙ্গুনীয়া থেকে ফিরে: একের পর এক ছাত্রী ধর্ষণকারী দুর্নীতিবাজ প্রধানশিক্ষকের মৌলভী মহসিনুল হকের (৩৫) বিরুদ্ধে এবার আন্দোলনে নেমেছে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা। (আজকের কাগজ, ৯ জুন-২০০৫, ১৬ পৃষ্ঠা) স্ত্রী শিশু কন্যাকে জবাই ॥ নীলফামারীতে মাদ্রাসা সুপার গ্রেফতার নীলফামারী, ১০ জুন, নিজস্ব সংবাদদাতা: স্ত্রী ও ৪৮ দিনের শিশু কন্যাকেজবাই করে হত্যার দায়ে অবশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে মাদ্রাসা সুপার আজিুল ইসলামকে (৪৫)। শুক্রবার দুপুরে শহরের ফুলতলায় সিআইডির এক ইন্সপেক্টর তাকে গ্রেফতার করে। (জনকক্ত, ১১ জুন-২০০৫, ১২ পৃষ্ঠা) উল্লেখ্য, উপরে বর্ণিত খবরগুলো কোন বিচ্ছিন্ন চিত্র নয়। বলতে গেলে, তাছাউফ বিহীন, ক্বালবী যিকির বিহীন, হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহর ছোহবত বিহীন সব নামধারী মাওলানারাই এরূপভাবে নফসের গোলামীতে, শয়তানের ফাঁদে আবদ্ধ। কাজেই তাদের জন্য ঐরূপ ফাসিক হওয়াই স্বাভাবিক। আর এসব ধর্মব্যবসায়ী আলিমদের সমালোচনাই আল বাইয়্যিনাত-এ করা হয়। কারণ, এরাই দ্বীন ইসলামের শত্রু। এদের কারণে সাধারণ মানুষ দ্বীনদারী থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এরাই ইসলামের ক্ষতি করছে সবচেয়ে বেশী। কাজেই এদের চিহ্নিত করতে পারলেই মানুষ এদের থেকে দূরে থাকবে, ঘৃণা করতে শিখবে। ফলত: তাদের ঈমান হেফাজত হবে। মহান আল্লাহ পাক উত্তম হিফাযতের মালিক।
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫