– হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
মুজাদ্দিদ আগমনের প্রেক্ষাপট
‘আলো আসলে অন্ধকার বিদায় নেয়। আলোর বিদায়ে অন্ধকার আসে।’ ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘প্রতি বৎসর ইল্ম কমে আর জিহালতী বৃদ্ধি পায়।”
‘বুখারী শরীফের’ উদ্বৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন, “মারফু হাদীছ শরীফ হিসেবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
لا ياتى على امتى زمان الا الذى بعده شر منه.
অর্থঃ- “আমার উম্মতের মাঝে এমন যুগ আসবেনা যাতে পূর্বের তুলনায় বেশী খারাপের প্রচলন হবেনা।” (বুখারী শরীফ, মিরকাত-১/৩০২)
তিবরানী তাঁর ‘কাবীর’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মারফু সনদে বলেন,
ما من عام الا وينعقص الخير فيه ويز يد الشر.
অর্থঃ- “এমন কোন বৎসর অতিক্রান্ত হবেনা যাতে ভাল বিষয়ের কমতি হবেনা এবং খারাপ কাজ বৃদ্ধি পাবেনা। অর্থাৎ প্রতি বৎসরেই কল্যাণকর কাজ কমে যাবে এবং মন্দ কাজ বৃদ্ধি পাবে।” (মিরকাত ১/৩০২)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
مامن عام الا ويحدث الناس بد عةويميتون سنة تما ت السنن وتحيا البدع.
অর্থঃ- “প্রত্যেক বৎসরেই মানুষ নতুন নতুন বিদ্য়াতের প্রচলন করবে। আর সুন্নতগুলো বিলীন হবে। এমনকি এক পর্যায়ে সমস্ত সুন্নতগুলো বিলীন হবে এবং সমস্ত বিদ্য়াতগুলো জারী হবে।” (মিরকাত- ১/৩০২)
একশত বৎসরে তা প্রকট আকার ধারন করে। সেই ঘোর অন্ধকারকে দূরীভূত করার জন্য একজন মুজাদ্দিদের প্রয়োজন হয়। মূলত: প্রত্যেক মুজাদ্দিদের এ আগমনের প্রেক্ষাপট বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা এরূপই হয়ে থাকে।
আর হাল যামানার যিনি মুজাদ্দিদ- ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, গাউছুল আযম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর তাজদীদের প্রেক্ষাপট বা পারিপার্শ্বিক অবস্থার ব্যতিক্রম হবে এমনটা আশা করা যায়না। বরং সেই চিরসত্য আরো সুস্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যত বেশী সময় অতিবাহিত হবে ততবেশী গোমরাহী প্রকাশ পাবে। চৌদ্দশত হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, কুতুবুল আলম, সুলত্বানুল আরিফীন, হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবু বকর ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ পূর্ববর্তী মুজাদ্দিগণের চেয়ে (আগমন ১২৬৩ হিজরী, বিদায় ১৩৫৮ হিজরী) পনের শতকের মুজাদ্দিদকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে সেটাই স্বাভাবিক।
ইমামে রব্বানী, গাউছে ছাকালাইন, আফযালুল আওলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সময় আবুল ফজল, ফৈজী, মোল্লা মুবারক নাগরীসহ তাবৎ উলামায়ে ‘ছূ’রা যেমন সম্মিলিতভাবে নাজায়িয-হারাম কাজগুলোকে হালাল করেছিলো। তেমনি আজকের তথাকথিত উলামা, ছূফী, দরবেশ, পীর, মাশায়িখ, শাইখুল হাদীছ, শাইখুত্ তাফসীর, মুফতী, মুহাদ্দিছ সকলেই হারাম ও নাজায়িয কাজগুলোকে হালাল করেই চলছে। এ ব্যাপারে তাদের বিস্তর প্রতিযোগিতা চলছে।
রক্ষকই যখন ভক্ষক হয় তখন মুসলিম উম্মাহ্ কি ভয়ানক অবস্থার সম্মুখীন হয় তা সহজেই অনুমেয়।
সঙ্গত:কারণেই মুজাদ্দিদের আগমন ঘটে। তাঁর দ্বারা সকলে ফায়দা লাভ করে। ইমামে রব্বানী, আফযালুল আওলিয়া, ইমামুল মুজতাহিদীন, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “মুজাদ্দিদ ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যার ওসীলায় সেই যুগের কুতুব, আবদাল, আওতাদ, নুজাবা, নুকাবা নির্বিশেষে সকল উম্মত ফয়েজ ও নূর হাছিল করে থাকে।’ (মাকতুবাত শরীফ, ২য় খণ্ড, ৪র্থ মাকতুব)
(চলবে)