– হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
মুজাদ্দিদুয্ যামান সম্পর্কে
আক্বলী ও নক্বলী দলীলঃ
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামূশ্ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আশরাফুল আওলিয়া, হাকিমুল ইসলাম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী পনের হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ। তিনি এক হাজার পাঁচশ’ বা দেড় হাজার বছরের মুজাদ্দিদও বটে। যার জন্য তিনি ইমাম-মুজতাহিদ, আলিম-উলামা, ছূফী-দরবেশগণের নিকট “মুজাদ্দিদে আ’যম” লক্ববেও সু-পরিচিত।
“মুজাদ্দিদুয্ যামান” প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه فيما اعلم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله عزو جل يبعث لهذه الامة على رأس كل ما ئة سنة من يجدد لها دينها.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক প্রত্যেক (হিজরী) শতকের শুরুতে এই উম্মতের মাঝে এমন একজন ব্যক্তিকে পাঠান যিনি দ্বীনের তাজদীদ বা সংস্কার করেন।” (আবূ দাউদ শরীফ- ২/২৪১)
তাঁর প্রতিশ্রুতি মুতাবেক বর্তমান পনের শতকের মুজাদ্দিদ-এর খিলাফতকাল। গত শতক তথা চৌদ্দ শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন কুতুবুল আলম, সুলতানুল আওলিয়া, মুজাদ্দিদুয্ যামান, শাহ ছূফী হযরত মাওলানা আব্দুলাহিল মা’রুফ মুহম্মদ আবূ বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁর খিলাফতকাল পূর্ণ হয়েছে। তিনি হিজরী ১২৬৩ সালে দুনিয়াতে তাশরীফ রাখেন এবং ১৩৫৮ সালে রফীকে আ’লা-এর দীদারে মিলিত হন।
উল্লেখ্য যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফে “মুজাদ্দিদুয্ যামান” এর আমভাবে পরিচয় দেয়া হয়েছে অর্থাৎ প্রত্যেক শতকে “মুজাদ্দিদুয্ যামান” থাকবে তা দলীলে ক্বেত্বয়ী বা অকাট্ট দলীল দ্বারা ছাবিত। কিন্তু তিনি কে? তাঁর পরিচয় কি? তা দলীলে যন্নী দ্বারা ছাবিত।
তবে সেই দলীলে যন্নী আহলে ইলমগণের নিকট এমন সুস্পষ্ট ব্যাপকতা লাভ করে যে, তা মুতাওয়াতির-এর পর্যায় পৌছে যায়। ফলে, তা ইয়াক্বীনী-এর ফায়দা দান করে। কারণ “মুজাদ্দিদুয্ যামান”-এর তাজদীদ বা সংস্কারমূলক কাজের দ্বারা তাঁর যাহিরী (বাহ্যিক) পরিচয় ফুটে উঠে। আর বাতিনী (আভ্যন্তরীণ) দিক সেই যামানার ইমাম-মুজতাহিদ হক্কানী আলিম, গাউছ, কুতুব, আবদাল, মু’মিন মুত্তাকী ব্যক্তিবর্গের নিকট ফুটে উঠে। তাঁরা তাঁর “মুজাদ্দিদুয্ যামান” হওয়ার ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত হন। কারণ কাশ্ফ, মুরাকাবা-মুশাহাদা ইত্যাদির মাধ্যমে তাঁর পরিচয় পান। তাঁদেরকে “মুজাদ্দিদুয্ যামান” সম্পর্কে সুসংবাদ দেয়া হয়। আবার ইচ্ছা করলে তাঁরা “লৌহ মাহফুয” দেখেও নির্ণয় করতে পারেন।
তাছাড়া আফযালুল আওলিয়া, ইমামুল মুজতাহিদীন, গাউছে সাক্বালাইন, ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “মুজাদ্দিদুয্ যামান” হচ্ছেন সেই যামানার সবচেয়ে সম্মানিত এবং মর্যাদাবান ব্যক্তিত্ব। যার ওসীলায় সেই যুগের সকল কুতুব, আবদাল, আওতাদ, নুজাবা, নুকাবাসহ সকল উম্মত ফয়েজ ও নূর লাভ করে থাকেন। (মাকতুবাত শরীফ)
সঙ্গতকারণে সকলের নিকট তিনি পরিচিতি লাভ করেন। সবার নিকটেই তিনি স্মরণীয়-বরণীয় হন। তবে বেদ্বীন-বিজাতীয়, ফাসিক-ফুজ্জার এবং উলামায়ে ‘ছূ’ দুনিয়াদার মাওলানা; যারা দ্বীনের বিনিময়ে দুনিয়া হাছিল করে তারা সেই হুকুমের আওতাভূক্ত নয়। কারণ তারা মুজাদ্দিদুয্ যামানের প্রতিবিশেষভাবে শত্রুতা পোষণ করে থাকে।
মূলতঃ তাদের বিরোধিতা, মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুজাদ্দিদ হওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাহ্যিক (যাহিরী) দলীল বলা যেতে পারে। যেমনিভাবে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মি’রাজ শরীফ যে স্বশরীরে হয়েছে তার আক্বলী দলীল হিসেবে পেশ হয় কুরাইশদের অস্বীকার বা বিরোধীতা।
কাজেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধীতা যে শ্রেণীর লোক করতো তাদের উত্তরসূরীরাই তাঁর নায়িব তথা “মুজাদ্দিদুয্ যামান”-এর বিরোধীতায় লিপ্ত হয়। এবং মুজাদ্দিদ-এর তাজদীদের কাজে বিরোধীতা করে। (অসমাপ্ত)