‘কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর আলোকে পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহকাম’ সম্পর্কে ইমামে আ’যম, মুজাদ্দিদে আ’যম, সুলতানুল ওয়ায়েজীন, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আফযালুল আউলিয়া, ছাহিবু সুলতানিন নাছির, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসুল, রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী, উনার ওয়াজ শরীফ ধারাবাহিকভাবে ৯৬তম সংখ্যা থেকে ১৪১তম সংখ্যা মোট ৪৬ সংখ্যাব্যাপী পত্রস্থ হয়।
তš§ধ্যে এপ্রিল-২০০৪ ঈসায়ী তথা ১২৮তম সংখ্যায় প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ হয়েছে,
æযেটা বলা হয়েছে, ‘হুরমতে মুছাহিরাহ’ অর্থাৎ হারাম হয়ে যাওয়া শরীয়তের একটা হুকুম রয়েছে। আল্লাহ পাক না করুন, যদি কোন শ্বশুর তার ছেলের স্ত্রীর প্রতি কোন খারাপ দৃষ্টি দেয় যেটাকে হুরমতে মুছাহিরাহ বলা হয় তাহলে পিতার জন্য যেমন সে ছেলের স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে তেমন ছেলের জন্যও তার স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে।
কাজেই ছেলের স্ত্রী তার পিতার খিদমত করবে অর্থাৎ শ্বশুরের খিদমত করবে, সেটা ঠিক ততটুকু খিদমত করবে যতটুকু সাধারণভাবে করা সম্ভব। হ্যাঁ, পাক-শাক করে খাওয়াতে পারে, তার অন্যান্য খিদমতের আঞ্জাম দিতে পারে, তবে সরাসরি এমন কোন কাজ করবেনা, তার সামনে বেশিক্ষণ থাকবেও না এবং সরাসরি তার হাত, পা-তে হাত দিয়ে কোন কাজ করে দিবেনা, হাত-পা টিপে দেয়া, তেল দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি যা কিছু রয়েছে সেটা থেকে সতর্ক থাকবে। যদি কারো মনে কোন ওয়াসওয়াসা এসে যায়, যদি শ্বশুরের মনে কোন ওয়াসওয়াসা এসে যায়, খারাপ দৃষ্টি তার প্রতি পড়ে যায়, তাহলে সেটা হুরমতে মুছাহিরাহ এর কারণে শ্বশুরের জন্য যেমন তার ছেলের স্ত্রী হারাম, ঠিক ছেলের জন্যও সে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে। হয়ত অনেকে জানবেনা, বুঝবে না, কিন্তু অজান্তেই সেটা হয়ে যাবে। যার ফলশ্রুতিতে দেখা যাবে, ঐ ছেলের ঘরে যে সন্তানগুলো জন্মগ্রহণ করবে একটাও বৈধ হবে না।
ঠিক এখানে আবার আরেকটা বিষয় রয়েছে। সেটা হচ্ছে, পিতার জন্য তার যে মেয়ে রয়েছে সেখানেও তাকে সাবধান থাকতে হবে। যেটা শরীয়তের ফায়সালা করা হয়েছে, দশ বছরের বয়স যখন পার হয়ে যাবে, তখন কোন মেয়ে যেন তার পিতার সাথে একই বিছানায় না থাকে। সেখানেও হুরমতে মুছাহিরাহ ছাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কাজেই শরীয়তের যে মাসয়ালা-মাসায়িল রয়েছে, স্বামীর এক হুকুম। তারপর পিতা এরপর বিশেষ করে স্বামীর যে পিতা রয়েছে যদিও তার সামনে যাওয়া জায়িয রয়েছে, কিন্তু এরপরও ব্যতিক্রম রয়েছে।
ঠিক অনুরূপ যদি কোন শাশুড়ী অর্থাৎ স্ত্রীর মা; যারা মেয়ের জামাই রয়েছে, তাদের জন্য শাশুড়ীর সামনে কম যাওয়াটা হুকুম রয়েছে। যদি শাশুড়ীর বয়স কম হয়; যেতে পারবে, দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে, অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় যেন কথাবার্তা না বলে, অতিরিক্ত দেখা-সাক্ষাৎ না করে। যদি শাশুড়ীর বয়স কম হয়, তাহলে দেখা দেয়াটাই মাকরূহ এর অন্তর্ভুক্ত ফতওয়া দেয়া হয়েছে। তাহলে দেখা দেয়াটাই মাকরূহ বলা হয়েছে, যদি শাশুড়ীর বয়স কম হয়। মেয়ের জামাই তার দৃষ্টি যদি তার শাশুড়ীর প্রতি পড়ে যায় এবং সেখানে যদি খারাপ কিছু সৃষ্টি হয়ে যায় যেটার মাধ্যমে ‘হুরমতে মুছাহিরাহ’ ছাবিত হয়ে যায় তাহলে সেই মেয়ের জামাই-এর জন্য মেয়েও হারাম হয়ে যাবে।
কাজেই শরীয়তের যে হুকুম-আহকাম আল্লাহ পাক দিয়েছেন, খুব সূক্ষ্ম, খুব তাহক্বীক্ব, খুব ফিকির করে সে আমল করতে হবে। পর্দার হুকুম খুব সূক্ষ্ম। পর্দার খিলাফ করার কারণেই আমাদের সমাজে, সারা বিশ্বে ফিৎনা-ফাসাদ। ছেলে-মেয়ে অবাধ্য, পিতা-মাতার কথা শুনেনা, এলোমেলো কাজ করে থাকে, বেশরা-বিদয়াত কাজ করে থাকে, যদিও কিছু তাদেরকে দ্বীনী শিক্ষা দেয়া হয় এরপরও তারা বেশরা-বিদয়াত চলে থাকে। দ্বীনী শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়না, আমল দেয়না। এর মূল কারণ হচ্ছে তাদের মূলের মধ্যে গ-গোল রয়েছে। যখন মূলের মধ্যে গ-গোল থেকে যাবে তার বাইরে দিয়ে, সেখানে যতই সুসজ্জিত করা হোক না কেন সেটা টিকবেনা। তার হাক্বীক্বী বদ তাছীর বের হবেই হবে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এ পর্দা সম্পর্কে বিশেষত শ্বশুর-পুত্রবধূ বা জামাই-শাশুড়ীর দেখা সাক্ষাৎ সম্পর্কে এরকম সূক্ষ্ম বিধিনিষেধ পড়ে অনেক সাধারণ পাঠক বিস্ময়বোধ করেছে।
তাদের অনুভূতিতে আশ্চর্যবোধক প্রশ্ন জেগেছে যে, স্ত্রী-শ্বশুর তো পিতা-কন্যা অথবা জামাই-শাশুড়ী তো মা-ছেলের সম্পর্ক। তাদের মাঝে আবার পর্দা করতে হবে কেন?
কিন্তু আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, ‘আমি যা জানি তোমরা তা জাননা।’
বলাবাহুল্য, আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার সে গোপন ইলম পূর্ণরূপে লাভ করেছেন বা পরিপূর্ণ ইলমে লাদুন্নী হাছিল করেছেন- মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী।
তাই কুরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত সূক্ষ্ম মাসয়ালাগুলো তিনিই তুলে ধরেছেন। আর এ তাজদীদী মাসয়ালা যে অনিবার্য সমাজে তার প্রমাণও অজস্র।
প্রসঙ্গত গত ১৩ই এপ্রিল/২০১০ ঈসায়ী ‘দৈনিক মানবজমিন’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবর এখানে উল্লেখ করা হলো-
æনির্মম, নিষ্ঠুর নিয়তি সুমি’র। যে মা তাকে ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করেছেন সেই মায়ের হাতেই খুন হতে হলো তাকে। শুধু তাই নয়, একদিন যে স্বামীর ঘরে লাল বেনারসি পরে গিয়েছিল, যে স্বামী ছিল তার সবচেয়ে আপন- সেই স্বামীও আবির্ভূত হয়েছে তার ঘাতক হিসেবে। মা ছকিনা বেগম আর স্বামী মোশারেফ হোসেনের পরকীয়ার বলি হতে হলো সুমিকে। গতকাল ভোরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মটবী গ্রামের মাইদ্দের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ শাশুড়ী ছকিনা বেগম ও জামাই মোশারেফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে গোটা লক্ষ্মীপুরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শ’ শ’ নারী-পুরুষ থানায় ভিড় জমায় তাদের এক নজর দেখতে। মাত্র দেড় বছর আগে শিউলী বেগম সুমি’র সঙ্গে একই জেলার দত্তপাড়া গ্রামের মোশারেফ হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসার সুখেই চলছিল। সুমি’র পিতা নূর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী। এ কারণে সুমিও বেশির ভাগ সময় মায়ের সঙ্গে পিতার বাড়ি থাকতো। ওদিকে মোশারেফও তার শ্বশুরবাড়ি প্রায়ই থাকতো। এ অবস্থায় জামাই মোশারেফ আর শাশুড়ি ছকিনা বেগম জড়িয়ে পড়ে পরকীয়ায়।
এলাকাবাসী জানায়, তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। তবে কি নিয়ে ঝগড়া হতো তা তারা বলতে পারে না।
ওদিকে গ্রেপ্তারকৃত মোশারেফ ও ছকিনা পুলিশকে জানিয়েছে, রোববার রাতে সুমি ও মোশারেফ ঘুমিয়ে ছিল। এ ফাঁকে মোশারেফ শাশুড়ি ছকিনা বেগমের ঘরে আসে। তারা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। এ অবস্থায় তাদের দেখে ফেলে সুমি। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় সুমি তাদের জানায়, এ অপকর্মের কথা সে তার পিতাকে জানাবে। এ কথা শুনে তারা ভড়কে যায়। তখনই তারা সিদ্ধান্ত নেয় সুমিকে হত্যার। দেরি না করে ক্ষুব্ধ মোশারেফ ও ছকিনা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সুমিকে। পরে সুমি আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালায়। তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে এলাকাবাসী ১৪নং মান্দারী ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল করিম দীপুকে খবর দেয়। তিনি এসে তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ব্যাপারে চৌকিদার আবদুল মতিন বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে।”
বলাবাহুল্য, আজকে ‘হুরমতে মুছাহিরাহ’ সম্পর্কিত শরীয়তের এই মাসয়ালার ইলম ও আমল যদি সমাজে জারি থাকতো তাহলে যে, সুমির জামাই ও মা পরকীয়া ও ব্যভিচারে লিপ্ত হতো না। সুমির মা পৃথিবীর নিকৃষ্ট কলঙ্কিনী মা’তে পরিণত হতো না।
শুধু তাই নয়, পাশাপাশি সুমির জীবনটাও শেষ হতো না।
শুধু নিকৃষ্ট কলঙ্গিনীই নয়, নিজ মেয়েকে হত্যা করার মত নির্মম আত্মজা ঘাতকও সুমির মা হতো না।
সমাজে এ রকম নিকৃষ্ট ও নির্মম উদাহরণ তৈরি হতো না।
সঙ্গতকারণেই এ উদাহরণ থেকে সবারই উচিত শিক্ষা নেয়া।
মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে হিফাজত করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০