নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমনিভাবে বলেছেন, “ছোয়াঁচে বলতে কোন রোগ নাই” তেমনিভাবে তিনি এই বিষয়টি উম্মতদেরকে তা’লিম দেয়ার জন্য, স্বয়ং তিনি সরাসরি আমল দ্বারাও প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম আজমাইন, হযরত তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন রহমাতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারাও সরাসরি আমলের দ্বারা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, ছোঁয়াচে বলতে কোন রোগ নাই।
কিন্তু পরবর্তী যামানায় কেউ কেউ “ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলে কোন রোগ নাই” একথা বলার পরেও ছোঁয়াচের সবব নির্ধারণ করে ইহতিয়াত বা সাবধানতার কথা বলেছেন এবং সববের উপর ভিত্তি করে কেউ কেউ তাওয়াক্কুল পরিপন্থি যুক্তির দ্বারা পূর্ববর্তীগণের সরাসরি আমল ও মতের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন। যা সাধারণ মানুষের ছহীহ আক্বীদার উপর ইস্তিক্বামাত থাকার সহায়ক হয়নি বরং আঘাত দায়ক হয়েছে। যার কারণে তারা ঐ সববের উপর ভিত্তি করে পবিত্র ঈমান ও তাওয়াক্কুলের উপর ইস্তিক্বামাত থাকতে না পেরে, মৃত্যুভীতি ও সববের আশংকা উভয়কেই তাদের অন্তরে স্থান করে নিয়ে কুফরী ও শিরকী করছে। “মূলতঃ ইহতিয়াত ও ইস্তিহবাব হলো ঐ ফাতাওয়া, যার দ্বারা সাধারণ মানুষ সহ সকলের পবিত্র ঈমান ও আক্বীদা রক্ষা হয় এবং হক্কুল্লাহ, হক্কু রাসূলিল্লাহ এবং হক্কুল ইবাদ যথাযথ আদায় করে দুনিয়া ও পরকালে কামিয়াবী হাসিল করতে পারে” তাই একজন মুমিন-মুসলমান কুফরী ও শিরকী অবস্থায় ইন্তিকাল করতে ছোয়াঁচের সবব বিশ্বাস করা এবং ইহতিয়াত বা সাবধানতা মুলক আমল ও খোড়া যুক্তি প্রদর্শন করাই যথেষ্ঠ।
মোদ্দা কথা হলো: মহামারীগ্রস্থ ব্যক্তির সাথে অথবা মহামারী এলাকাতে অবস্থান করা এটা প্রত্যেকের ইখতিয়ারভুক্ত বিষয়। যে ব্যক্তি ধৈর্য্য ও তাওয়াক্কুলের সাথে তথায় অবস্থান করবে উনার যেমন ফযীলত রয়েছে, তেমনি যিনি সেখানে ধৈর্য্য ও তাওয়াক্কুলের সাথে অবস্থান করতে পারবেন না, উনার জন্য সেখান থেকে দূরে সরে যাওয়াটাও জায়েয রয়েছে। কিন্তু সর্বাবস্থাতেই ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
মহান আল্লাহ পাক তিনিই কাউকে রোগাক্রান্ত করেন এবং সুস্থতাও দান করেন
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ
অর্থ: হযরত খলীলুল্লাহ (ইব্রাহীম) আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যখন আমি অসুস্থ হই, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সুস্থতা দান করেন। (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৮০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ لَنْ يُّصِيْبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا
অর্থ: আপনি বলে দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি (রোগ-বিমার, বালা-মসীবত থেকে) যা তোমাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন তা ব্যতিত তোমাদের নিকট কিছুই পৌছবেনা। তিনিই আমাদের একমাত্র অভিবাবক (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৫১)
ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলতে কোন রোগ নাই
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ لَا عَدْوٰى وَلَا طِيَرَةَ وَلَاهَامَةَ وَلَاصَفَرَ
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নাই, কুলক্ষণ বলতে কিছু নাই, পেঁচার মধ্যে কোন কুলক্ষণ নাই ছফর মাসে কোন মন্দ কিছুই নাই। (ইবনে মাজাহ্ শরীফ, হাশিয়াতুস সিন্দী ২/৩৬৩)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুষ্ঠ রোগীর সাথে খাওয়া-দাওয়া করে প্রমাণ করলেন, ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলে কোনো রোগ নেই
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং কুষ্ঠ রোগীকে স্পর্শ করেছেন এবং একই পাত্র মুবারকে আহার মুবারক করিয়েছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وَسَلَّم أَكَلَ مَعَ مَـجْذُوْمٍ فَقَالَ إِيـْمَانًا بِاللهِ وَتَوَكَّلَا عَلَيْهِ
অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুষ্ঠ রোগীর সাথে খাবার গ্রহণ করেছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি পবিত্র ঈমান ও তাওয়াক্কুল বা ভরসা করো। (মুসনাদে বাযযার ১৫/৩৮৪, তাহযীবুল আছার লিত্ব ত্ববারী, ফতহুল বারী ১০/১৫৯, মিরক্বাত শরীফ ৭/২৮৯৮, নাইলুল আওতার লিশ শাওকানী আল ইয়ামানী ৭/ ২২০, যখীরাতুল উক্ববাহ ৩২/২৬৮, নাখবুল আফকার ১৪/৯৩, আল বাহরুল মুহীত্ব ৩৬/৩৫৬)
হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও হযরত তাবেয়ীন রহমাতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা সরাসরি প্রমাণ করলেন যে, ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলে কোনো রোগ নেই
এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
قَالَ حَضْرَتْ عَلِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَيُّـمَا رَجُلٍ نَكَحَ وَبِـهَا بَرَصٌ أَوْ جُنُوْنٌ أَوْ جُذَامٌ أَوْ قَرْنٌ فَزَوْجُهَا بِالْـخِيَارِ مَا لَـمْ يـَمَسَّهَا إِنْ شَاءَ أَمْسَكَ وَإِنْ شَاءَ طَلَّقَ وَإِنْ مَسَّهَا فَلَهَا الْمَهْرُ بِمَا اسْتَحَلَّ مِنْ فَرْجِهَا.
অর্থ: ইমামুল আউয়াল মিন আহলি বাইতি রসূল্লিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি বিবাহ করলো এমন একজন মহিলাকে, যে ধবল রোগীনী বা পাগলী বা কুষ্ঠ রোগীনী অথবা ক্বরন (একধরণের রোগ যা মহিলাদের লজ্জাস্থানে হয়ে থাকে) রোগীনী। উক্ত ব্যক্তি যদি উক্ত মহিলাকে স্পর্শ না করে থাকে, তাহলে তার জন্য ইখতিয়ার বা ইচ্ছাধীন রয়েছে যে, হয়তো সে তাকে স্ত্রী হিসেবে বহাল রাখবে অথবা তাকে তালাক দিয়ে দিবে। তবে যদি স্পর্শ করে থাকে তাহলে শরয়ী বৈধতার জন্য মহর প্রদান করতে হবে। (সুনানে কুবরা লিল বাইহাক্বী, সুনানে সাঈদ ইবনে মানছূর)
এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قَالَ حَضْرَتْ عَمْرٌو رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ كَانَ هَاهُنَا رَجُلٌ اسْمُهُ نَوَّاسٌ وَكَانَتْ عِنْدَهٗ إِبِلٌ هِيْمٌ فَذَهَبَ ابْنُ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا فَاشْتَرَى تِلْكَ الْإِبِلَ مِنْ شَرِيْكٍ لَهٗ فَجَاءَ إِلَيْهِ شَرِيْكُهُ فَقَالَ بِعْنَا تِلْكَ الْإِبِلَ فَقَالَ مِـمَّنْ بِعْتَهَا قَالَ مِنْ شَيْخٍ كَذَا وَكَذَا فَقَالَ وَيـْحَكَ ذَاكَ وَاللهِ ابْنُ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فَجَاءَهٗ فَقَالَ إِنَّ شَرِيْكِيْ بَاعَكَ إِبِلًا هِيْمًا وَلَمْ يَعْرِفْكَ قَالَ فَاسْتَقْهَا قَالَ فَلَمَّا ذَهَبَ يَسْتَاقُهَا فَقَالَ دَعْهَا رَضِيْنَا بِقَضَاءِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَا عَدْوٰى
অর্থ: হযরত আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ঐখানে নাওওয়াস নামক একজন ব্যক্তি ছিলেন, উনার নিকট একটি পিপাসা রুগ্ন একটি উট ছিল। অতঃপর হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি গিয়ে উক্ত রুগ্ন উটকে উনার অন্য একজন শরীকদার থেকে ক্রয় করলেন। কিছুক্ষণ পর হযরত নাওওয়াস রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি আসার পর উনার শরীকদার উনাকে বললেন আমরা উক্ত উটটি বিক্রয় করে দিয়েছি। তখন হযরত নাওওয়াস রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কার কাছে বিক্রয় করলেন। তখন শরীকদার কিছু লক্ষণ বর্ণনা করে বললেন উমুক শায়খ উনার নিকট বিক্রয় করেছি। তখন হযরত নাওওয়াস রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আপনার জন্য আপসোস। তিনি তো হযরত ইবনু ‘উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন। এরপর হযরত নাওওয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার নিকট এলেন এবং বললেন, আমার শরীক আপনাকে চিনতে না পেরে আপনার কাছে পিপাসা রুগ্ন একটি উট বিক্রি করেছে। তিনি বললেন, উটটি নিয়ে যান। তিনি যখন উটটি নিয়ে যেতে উদ্যত হলেন, তখন হযরত ইবনু ‘উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, রেখে দিন। কেননা আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফয়সালা মুবারকে সন্তুষ্ট রয়েছি। তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: ছোঁয়াচে বলে কোনো রোগ নেই। (বুখারী শরীফ)
হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি শাম দেশে না যাওয়ার ঘটনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়, ছোঁয়াচে বলতে কোন রোগ নাই এবং মহামারীও কোন সংক্রামক ব্যাধি নয়:
হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিসসালাম তিনি শামদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে “সারগ” নামক স্থানে গিয়ে জানতে পারলেন যে, শাম দেশে মহামারী ছড়িয়ে পরেছে, তিনি সেখানেই যাত্রা বিরতি করে তিন শ্রেনীর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহুআনহুম উনাদেরকে ডেকে সর্বশেষে পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়কালীন সময়ের হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহুআনহুম উনাদের পরামর্শ গ্রহন পূর্বক সারগ নামক স্থান থেকে প্রত্যাবর্তণ করেন এবং সৈন্য বাহিনীকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় হযরত আবূ উবাইদা ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বললেন আপনারা কি মহান আল্লাহ পাক উনার তাক্বদীর থেকে পলায়ন করতে চান? তখন হযরত হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন
نَعَمْ نَفِرُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ إِلٰى قَدَرِ اللهِ
অর্থ: “হাঁ, আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার, এক তাকদীর থেকে অন্য তাকদীরের দিকে ফিরে যাচ্ছি” (বুখারী শরীফ, আল-মুনতাক্বা শরহে মুয়াত্ত্বা ৭/১৯৯, উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, শরহে বুলূগুল মারাম)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা কখনো ছোঁয়াচে প্রমাণ হয়না বরং উক্ত ঘটনার দ্বারাও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, ছোঁয়াচে বলতে কোন রোগ নাই। কেননা যদি ছোঁয়াচে বলতে কোন রোগ থাকতো তাহলে,
১। হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় অবস্থানকারী হযরত আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার সঙ্গি-সাথীগণের সাথে মিলিত হতেন না, একত্রে বসে আলোচনা করতেন না, বরং দূরত্ব বজায় রাখতেন।
২। কাউকে আলোচনা করা ও পরামর্শ দেয়ার জন্য ডাকতেন না।
৩। শাম অঞ্চলে যাওয়া অথবা অবস্থান করা বা না করার বিষয়ে হযরত মুহাজির, আনছার এবং মাশায়েখে কুরাইশ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা ইখতিলাফ করতেন না। তাছাড়া হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার বক্তব্য-
نَعَمْ نَفِرُّ مِنْ قَدْرِ اللهِ إِلٰى قَدْرِ اللهِ
“হ্যাঁ আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্ধারিত তাক্বদীর থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্ধারিত অন্য তাক্বদীরের দিকে যেতে চাই” এই বক্তব্যের দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, মহামারী এলাকায় অবস্থান করা বা ফিরে যাওয়া উভয়টাই তকদীরের অন্তর্ভূক্ত, যাতে ছোঁয়াচের কোনো সম্পর্ক নাই।
ছোঁয়াচে বিশ্বাসকারীরা জাহিলী যুগের কাফিরদের শিরকী ও কুফরী আক্বীদার অনুসরণকারী ও তাদের চাইতেও মুর্খ :
আইয়্যামে জাহিলিয়্যাত তথা মুর্খ যুগের মুর্খ লোকেরা কুষ্ঠরোগকে ছোঁয়াচে মনে করে শুধুমাত্র কুষ্ঠরোগী থেকে দূরত্ব বজায় রাখত, কিন্তু বর্তমান সময়ের দাজ্জালে কায্যাব, কাফির মুশরিকদের তোশামোদকারী ইহুদী-খৃষ্টানদের তৈরী করা মুনাফিক উলামায়ে ছূঁ এবং তথাকথিত ইসলামী ফাউন্ডেশনের লোকেরা পবিত্র মসজিদে পবিত্র নামায উনার কাতারে সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ থেকে সুস্থ মানুষকে দূরত্ব বজায় রাখার ফাতওয়া দিয়ে মুর্খ যুগের মুর্খতাকেও হার মানিয়েছে!
মহামারী বা কোন রোগকে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক মনে করা এটা জাহিলী যুগের কাফিরদের নিকৃষ্ট কুফরী আক্বীদা। পবিত্র ইসলামী শরীয়তে ছোয়াচে বা সংক্রামক বলতে কোন রোগ নাই, কোন রোগ স্বয়ং নিজে সুস্থ মানুষের উপর আক্রমন করে সুস্থ মানুষকে রোগী বানাবে এরুপ মনে করা এটা জাহিলী যুগের মুশরিকদের শির্ক ও কুফরী আক্বীদা-
‘পবিত্র মুসলিম শরীফ’ উনার শরাহগ্রন্থ ‘আল মু’লিম বিফাওয়াইদিল মুসলিম’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
وَقَوْلُهٗ: لَا عَدْوٰى تَفْسِيْرَهُ أَنَّ الْعَرَبَ كَانَتْ تَعْتَقِدُ أَنَّ الْـمَرَضَ يُعْدِيْ وَيَنْتَقِلُ إِلَى الصَّحِيْحِ فَأَنكَرَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ اِعْتِقَادَهُمْ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’। (এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ) উনার ব্যাখ্যা মুবারক হচ্ছেন, জাহিলী যুগে আরবরা এটা বিশ্বাস করতো যে, রোগ অসুস্থ ব্যক্তির থেকে সুস্থ ব্যক্তির দিকে সংক্রামিত হয়, স্থানান্তরিত হয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের এই বিশ্বাসকে বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (আল মু’লিম বিফাওয়াইদিল মুসলিম ৩/১৭৭, তাহযীবুল আছার লিত্ব-ত্ববারী )
পরবর্তী ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের ইখতিলাফের সমাধান
পূর্ববর্তীগণ উনারা “ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলে কোন রোগ নাই” এ কথা বলার সাথে সাথে সরাসরি আমল করে প্রমাণ করেও দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী যামানায় কেউ কেউ ছোঁয়াচের সবব বা কারণ নির্ধারণ করে ইহতিয়াত বা সাবধাণতার কথা বলেছেন এবং সববের উপর ভিত্তি করে তারা তাওয়াক্কুল পরিপন্থি যুক্তির দ্বারা পূর্ববর্তীগণ উনাদের সরাসরি আমল ও মতের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সকলেই একবাক্যে বলেছেন “ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলে কোন রোগ নাই”। তবে পরবর্তীগণ উনাদের মধ্যে যারা সবব নির্ধারণ করে ইহতিয়াত বা সাবধাণতার কথা বলেছেন এবং সাবধাণতা মূলক আমল করেছেন এবং করতে বলেছেন। ঐ ধরণের সবব, ইহতিয়াত বা সাবধাণতা মূলক আমল এবং যুক্তি সমূহ, তা যেমন পবিত্র ক¦ুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত নয়, তেমনিভাবে ছহীহ রেওয়ায়েতেও বর্ণিত নয়।
তাই একদিকে উনাদের ঐ ধরণের বর্ণনা অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ ও অকাট্যভাবে সরাসরি আমল দ্বারা প্রমাণিত অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ সমূহের খিলাফ বা বিরোধী হয়েছে।
সাথে সাথে ঐ ধরণের সবব বিশ্বাস করা এবং ইহতিয়াত বা সাবধাণতা মূলক আমল ও যুক্তি প্রদর্শন করাটা তাওয়াক্কুল পরিপন্থী, যা সাধারণ মানুষের ছহীহ আক্বীদার উপর ইস্তিক্বামাত থাকার সহায়ক হয় নাই বরং আঘাত দায়ক হয়েছে। যার কারণে তারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় না করে, সরাসরি ছোঁয়াচে কে ভয় করছে। আর এই সুযোগে বাতিল বাহাত্তর ফির্কার মুনাফিক উলামায়ে সূ’রা ঐ ধরণের সবব বিশ্বাস করা এবং ইহতিয়াত বা সাবধাণতা মূলক আমলকে অপব্যাখ্যা করে জনসাধারণকে সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাদের বিরোধীতায় লিপ্ত করেছে। যার ফলে, তারা হক্কুল্লাহ, হক্কু রাসূলিল্লাহ এবং হক্কুল ইবাদের বিরোধীতায় লিপ্ত হয়ে, শিরকী ও কুফরী করতে করতে মারা যাচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! (যেমন: তথাকথিত ছোঁয়াচে রোগ থেকে বাঁচতে পরস্পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, যার কারণে কেউ সাধারণ অসুস্থ হলেও রোগাক্রান্ত হওয়ার সববের আশংকায়, রোগীর সেবা শুশ্রুষা না করে দূরে সরে থাকা ও রোগীকে আরো মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়া, মসজিদণ্ডমাদ্রাসা বন্ধ করা, জামাত ও জুমুয়া নিষিদ্ধ করা, নামাযের কাতারে ফাঁক সৃষ্টি করা, ঈদগাহে পবিত্র ঈদের নামায পড়তে নিষেধ করা, মাস্ক পড়তে বাধ্য করা। আযানের শব্দ পরিবর্তন করা, ইত্যাদি শতশত শিরকী ও কুফরী আক্বীদায় লিপ্ত হয়েছে)। কারণ তারা ঐ সবব এবং ইহতিয়াত মূলক ফাতওয়ার কারণে পবিত্র ঈমান ও তাওয়াক্কুলের উপর ইস্তিক্বামাত থাকতে না পেরে, মৃত্যুভীতি-সববের আশংকা উভয়কেই তাদের অন্তরে স্থান করে নিয়েছে। আর এক জন মুমিন-মুসলমান কুফরী ও শিরকী অবস্থায় ইন্তিকাল করতে ঐ ধরণের সবব বিশ্বাস করা এবং ইহতিয়াত বা সাবধাণতা মুলক আমল ও খোড়া যুক্তি প্রদর্শন করাই যথেষ্ঠ। নাঊযুবিল্লাহ!
মূলকথা হলো: সম্মানিত পবিত্র দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলতে কোন রোগ নাই, ছোঁয়চে বা সংক্রামক রোগ বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যে বা যারা ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বিশ্বাস করেছে তাদেরকে খালিছ তওবা করতে হবে, অন্যথায় কুফরী-শিরকী অবস্থায় ইন্তিকাল করে চির জাহান্নামী হতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে এই সকল শিরকী ও কুফরী আক্বীদা থেকে হিফাযত করুন। আমিন।
-মুহম্মদ ইরফানুর রহমান।