৩২তম ফতওয়া হিসেবে
“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাযহাব পরিবর্তন করা বা এক মাযহাবের অনুসারী হয়ে অন্য মাযহাবের উপর আমল করা জায়িয নেই
সম্মানিত শরীয়ত অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের ফায়ছালা মতে প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসান সকলের জন্য সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোনো একটি সম্মানিত মাযহাব উনাদের অনুসরণ করা যেরূপ ফরয-ওয়াজিব তদ্রƒপ সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাযহাব পরিবর্তন করা বা এক মাযহাবের অনুসারী হয়ে অন্য মাযহাবের উপর আমল করা জায়িয নেই।
নিম্নে এ সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহসমূহ উল্লেখ করা হলো-
(১২৪১)
বিখ্যাত ‘তাফসীরে আহমদী’ নামক কিতাবের ৫২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
فَيَكُوْنُ كُلُّ مِنَ الْـمَذَاهِبِ الْأَرْبَعَةِ حَقًّا بِـهٰذَا الْـمَعْنٰـى فَالْـمُقَلِّدُ إِذَا قَلَّدَ مُـجْتَهِدًا يَـخْرُجُ مِنَ الْوُجُوْبِ وَلٰكِنْ اِذَا قَلَّدَ اَحَدًا اِلْتَزَمَ وَلَايَؤُلُّ إِلٰى اٰخَرٍ
অর্থ: চার মাযহাবের প্রতিটিই যেহেতু হক্ব হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে, তাই যেকোনো একটি অনুসরণ করলেই ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে যে মাযহাব সে অনুসরণ করবে সে মাযহাবের উপরই আজীবন থাকতে হবে। পরিবর্তন করতে পারবেনা।
(১২৪২)
‘তাফসীরে আহমদী’ নামক কিতাবের ৫২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
يَـجِبُ عَلَيْهِ أَنْ يَّدُوْمَ عَلٰى مَذْهَبٍ يَلْتَزِمُه وَلَا يَنْتَقِلُ إِلٰـى مَذْهَبٍ اٰخَرٍ
অর্থ: যে ব্যক্তি কোন এক মাযহাবকে অনুসরণ করবে সবসময় শুধু তাই আঁকড়িয়ে থাকা ফরয হবে অন্য মাযহাবের অনুসরণ করা যাবে না।
(১২৪৩)
‘তাফসীরে আহমাদী’ নামক কিতাবের ৫২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
كَمَا أَنَّه لَا يَـجُوْزُ الْاِنْتِقَالُ اِلٰـى مَذْهَبٍ اٰخَرٍ كَذٰلِكَ لَا يَـجُوْزُ أَنْ يَّعْمَلَ فِيْ مَسْئَلَةٍ عَلٰى مَذْهَبٍ وَفِـىْ اُخْرٰى عَلٰى اٰخَرٍ
অর্থ: যেমন এক মাযহাব পন্থী অন্য মাযহাবে প্রত্যাবর্তন করতে পারবে না। তেমনই যে কোন একটি মাসয়ালায় এক মাযহাব মতে এবং অন্য মাসয়ালায় অন্য মাযহাব মতে চলা নাজায়িয হবে।
(১২৪৪)
ইমামুল মুহাদ্দিছীন মোল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আল মালুমা’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন-
قَالُوْا اَلْوَاجِبُ عَلَى الْـمُقَلِّدِ الْـمُطْلَقِ اِتِّبَاعَ مُـجْتَهِدٍ فِيْ جَـمِيْعِ الْـمَسَائِلِ فَلَا يَـجُوْزُ لَه أَنْ يَّعْمَلَ وَاقِعَةٌ إِلَّا بِتَقْلِيْدِ مُـجْتَهِدٍ أَيْ مُـجْتَهِدٍ كَانَ
অর্থ: বিজ্ঞ আলিমগণ উনারা বলেন কোন ইমামের অনুসরণকারীর প্রতি যাবতীয় বিষয়ে শুধু তারই অনুসরণ করা ওয়াজিব। অতএব, যে কোন বিষয় যে কোন নির্দিষ্ট ইমামের অনুসরণ করা ছাড়া অন্য কারো অনুসরণ করা জায়িয নাই।
(১২৪৫)
ইমাম আল্লামা জালালুদ্দীন মহল্লী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘জামউল জাওয়ামে’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেন-
يَـجِبُ عَلَى الْعَامِّيِّ وَ غَيْرِهٖ مِـمَّنْ لَّـمْ يَبْلُغْ مَرْتَبَةَ الْاِجْتِهَادِ اِلْتَزَمَ مَذْهَبٌ مُّعَيِّنٌ مِنْ مَّذَاهِبِ الْـمُجْتَهِدِيْنَ
অর্থ: যারা সাধারণ লোক অর্থাৎ যারা ইজতিহাদের ক্ষমতা রাখে না তাদের জন্য যে কোন নির্দিষ্ট একজন ইমাম উনার মাযহাবকে আকড়িয়ে ধরা ওয়াজিব।
(১২৪৬)
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘যাজীলুল মাযাহিব’ নামক কিতাবে লিখেন-
قَالَ مِنْ مُفْتِـي الْـمَالِكِيَّةِ الْيَوْمِ مَنْ تَـحُوْلُ مِنْ مَّذْهَبِهٖ فَبِئْسَ مَا صَنَعَه
অর্থাৎ, একজন মালিকী মুফতী বলেন- বর্তমান যুগে যে নিজ মাযহাব থেকে ফিরে গেছে সে অতি নিকৃষ্ট কাজ করেছে।
(১২৪৭)
মুজাদ্দিদুয যামান হযরত মাওলানা শাহ ওয়ালী মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘ইকদুল জিদ’ নামক কিতাবের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
اَلْـمَرْجَعُ عِنْدَ الْفُقَهَاءِ أَنَّ الْعَامِّيَّ الْـمَنْسَبَ لَه مَذْهَبٌ لَا يَـجُوْزُ مُـخَالِفَتُه
অর্থ: ফকীহ উনাদের প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হচ্ছে যে কোন মাযহাব পন্থী সাধারণ ব্যক্তির জন্য সেই মাযহাবের খিলাফ আমল করা জায়িয নয়।
(১২৪৮)
উক্ত কিতাবের ৭৯ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
قَطَعَ الْكِيَالُ هَرَاسِىُّ بِأَنَّه يَـجِبُ عَلَى الْعَامِّيِّ أَنْ يَّلْزِمَ مَذْهَبًا مُعَيِّنًا
অর্থ: আল্লামা কিয়াল হারাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্থির সিদ্ধান্ত করেছেন যে, সাধারণ ব্যক্তির জন্য একটি নির্দিষ্ট মাযহাব অনুসরণ করা ওয়াজিব।
(১২৪৯)
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন-
بَلْ عَلَى الْـمُقَلِّدِ اِتِّبَاعُ مُلَقِّدِهٖ فِيْ كُلِّ تَفْصِيْلٍ فَاِنَّ مُـخَالِفَةً لِّلْمُقَلِّدِ مُتَّفَقٌ عَلٰى كَوْنِهٖ مُنْكَرًا بِـمَنِ الْـمَحَقِّقِيْنَ
অর্থ: প্রত্যেক মুকাল্লিদের জন্য প্রতিটি বিষয়েই একই ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। কেননা বিজ্ঞ সমস্ত আলিমের একই মত যে, নিজ মাযহাবের খিলাফ করা নিষেধ।
(১২৫০)
আল্লামা বাহরুল উলুম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘তাহরীর’ কিতাবে লিখেন-
وَكَذَا لِلْعَامِّيِّ الْاِنْتِقَالُ مِنْ مَّذْهَبٍ إِلٰـى مَذْهَبٍ فِيْ زَمَانِنَا لَا يَـجُوْزُ لِظُهُوْرِ الْـخِيَانَةِ
অর্থ-সাধারণের জন্য বর্তমান যুগে এক মাযহাব ছেড়ে অন্য মাযহাব অবলম্বন করা জায়িয হবে না। কারণ এতে দ্বীনের খিয়ানত ও (ইহানত) প্রকাশ পায়।
(১২৫১)
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সুপ্রসিদ্ধ ‘কিমিয়ায়ে সায়াদাত’ কিতাবেরর ২৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
کم مخالفت صاحب مذہب خود کردن نزد ہیچ کس روا نبود
অর্থ: আপন ইমামের মাযহাবের খিলাফ করা কারও নিকট জায়িয নেই।
(১২৫২)
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-
اتفاق محصلان است کہ ہرکہ بخلاف اجتہاد خود یا بخلاف اجتہاد صاحب مذہب خود کارے کند او عاصمی است پس بحقیقت حرام است
অর্থ: এ ব্যাপারে ইজমা হয়েছে, যে ব্যক্তি নিজ ইজতিহাদ বা নিজ ইমামের ইজতিহাদের খিলাফ কোন কাজ করে সে ব্যক্তি গুণাহগার হবে এবং এটা প্রকৃতপক্ষে হারাম।
(১২৫৩-১২৫৫)
‘সিফরুস সায়াদাত’ নামক কিতাবের ২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قرار داد علماء و مصلحت دید ایشان کم در اخر زمان تعین مذہب وتخصیص مذہب ہست
অর্থ: উলামায়ে কিরাম উনাদের ফতওয়া হচ্ছে আখিরী যামানায় একটি মাযহাব খাছ করে নির্দিষ্ট করে নেয়ার মধ্যে ইহকাল ও পরকালের সর্বপ্রকার ভালাই বা খায়ের বরকত রয়েছে। যা উনারা দেখতে পেয়েছেন। (বুরহান ১৫৩ পৃষ্ঠা, মিজান শারানী ১৭-৩০-৩৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্ঠব্য)।
(১২৫৬)
শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুজাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘ফয়জুল হারামাইন’ নামক কিতাবের ৬৪ পৃষ্ঠায় লিখেন-
وَاسْتُفْتُ عَنْهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلٰثَةَ أُمُوْرٍ خِلَافٌ مَّاكَانَ عِنْدِىْ
অর্থ: আমি আমার মতের বিপরীত তিনটি বিষয় (মুরাকাবা মুশাহিদা কালে) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হতে প্রাপ্ত হয়েছি। এটি খোদার পক্ষ হতে দলীল স্বরূপ হল। আমরা ধারণা করতাম যে কোন এক নির্দিষ্ট মাযহাবে স্থির প্রতিজ্ঞা থাকা আবশ্যক নেই কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুশাহিদার মধ্যে আমাকে বললেন- এক নির্দিষ্ট মাযহাবে স্থির প্রতিজ্ঞা থাকা। আবশ্যক।
(১২৫৭)
আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘ত্ববাক্বায়ে ফুক্বাহায়ে হানাফিয়া’ হানাফিয়া নামক কিতাবে লিখেন-
بَلْ يـَجِبُ عَلَيْهِ (اَلْقَاضِيْ) حَتْمًا اَنْ یُّعَیِّنَ مَذْهَبًا مِّنْ هٰذِهِ الْـمَذَاهِبِ .
অর্থ: কাজী বা বিচারকের জন্য প্রতি বিচারের সময় কোন এক নির্দিষ্ট মাযহাব মতে ফয়ছালা করা অবশ্যই ওয়াজিব।
(১২৫৮)
যেমন- পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ‘সূরা তাওবা শরীফ” উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
يُـحِلُّوْنَه عَامًا وَّيـُحَرِّمُوْنَه عَامًا
অর্থাৎ “কাফিররা একটি মাস এক বৎসরকাল হালাল করত এবং অন্য এক বৎসর হারাম করত।”
আবার মনমত মাযহাব পরিবর্তন করাতে প্রকৃত পক্ষে ইমাম উনাদের অবজ্ঞাও করা হয়। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং এমন মহাবিজ্ঞ আলিম উনাদেরকে সম্মান দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
(১২৫৯)
যেমন মহান আল্লাহ তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّـمَا يـَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের মধ্য থেকে একমাত্র আলিম উনারাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন। (পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮
(১২৬০)
এর আরেকটি অর্থ যেমন ‘তাফসীরে কাশশাফে’ উল্লেখ আছে এবং এ ব্যাপারে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও একমত। তাহলো
وَالْـمَعْنٰى اِنَّـمَا يـُجِلُّهُمْ وَيُعَظِّمُهُمْ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি আলিম উনাদেরকে সম্মান করেন।” সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং এক ইমাম উনার মতে একবার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে বিশেষ কারণ ছাড়া উনাকে ছেড়ে অন্য ইমাম উনাকে ধরলে প্রথম ইমাম যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানের পাত্র ছিলেন তাকে অবমাননা করা হয় যা কুফরী গুনাহ।
(১২৬১)
যেমন আক্বাঈদ উনার কিতাবে উল্লেখ আছে-
اِهَانَةُ الْعُلَمَاءِ كُفْرٌ
অর্থ: আলিম উনাদেরকে ইহানত করা কুফরী। নাউযুবিল্লাহ!
অথচ মাযহাব বিদ্বেষীরা একই ইমাম কেন বরং চার ইমামকেই এবং উনাদের মাযহাবপন্থী লক্ষ লক্ষ বিজ্ঞ আলিম ও কামিল ওলীআল্লাহ উনাদেরকে অবজ্ঞা করতঃ গালাগালী করে এবং তাদের সত্য মাযহাব ছেড়ে নিজ মতে যা ইচ্ছা তাই করে। এতে কি তারাই পথভ্রষ্ট হয়ে ফাসিকী ও কুফরী করছে না?
প্রকাশ থাকে যে, নিজ স্বার্থে পড়ে মাযহাব ছেড়ে বা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাযহাব অবলম্বন করা প্রকৃতপক্ষে খাহেশে নফসানীর পায়রবী করা যা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অতি গোমরাহী।
(১২৬২)
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ أَضَلُّ مِـمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى
অর্থ: যে ব্যক্তি হিদায়াত ছেড়ে নফস বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিকতর গোমরাহ কে আছে? (পবিত্র সূরা ক্বছাছ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫০)
প্রমাণিত হল যে, স্বার্থের বশিভূত হয়ে নিজ মাযহাব ছেড়ে অন্য মাযহাব ধরলে তার ঈমানহারা হয়ে মৃত্যু বরণ করার খুবই আশঙ্কা রয়েছে। যেমন কোন হানাফী ব্যক্তি নিজ বিবিকে তিন তালাক দিয়ে আবার ঐ বিবিকে গ্রহণের স্বার্থে সেই জামায়াতভূক্ত হয়ে যায় যাদের নিকট তিন তালাকে এক তালাক হয়, ফলে পুনঃ ঐ বিবিকে হিলা ব্যতীতই গ্রহণ করতে পারে। যা হারাম ও বাতিল।
(১২৬৩)
যেমন বিখ্যাত ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবে উল্লেখ আছে-
اِنَّ حُكْمَ الْـمُلْفِقِ بَاطِلٌ بِالْاِجْـمَاعِ
অর্থ: “সর্বসম্মতিক্রমে সম্মানিত শরীয়তে মুলফিক্ব বাতিল।”
‘মুলফিক’ ঐ ব্যক্তিকে বলে, যে দুই মাযহাবের মাসয়ালাকে একত্র করে। যেমন কোন হানাফী লোকের অযুর পরে রক্ত বের হয়েছে যা হানাফী মতে অযু ভঙ্গ করে। কিন্তু শাফিয়ী মাযহাব মতে অযু ভঙ্গ করে না। তাই সে সুযোগ পেয়ে শাফিয়ী মাযহাব উনার মত ধরে অযু না করেই নামায পড়া আরম্ভ করল কিন্তু শাফিয়ী মাযহাব মতে যে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়তে হয়, তা হানাফী মত ধরে পড়ল না, তবে ঐ ব্যক্তির নামায বাতিল হবে। কারণ সে নফস পন্থী অর্থাৎ নফসের অনুসারী, দ্বীন উনার অনুসারী নয়। এরূপই শাফিয়ী মাযহাবী লোক বিনা নিয়তে অজু করে (যে নিয়ত তাদের নিকট ফরয) হানাফী সেজে নামায পড়ল কিন্তু ওদিকে আবার ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ল তার নামাযও ইজমা মতে (সর্ব সম্মতিক্রমে) বাতিল।
তদ্রুপই শাফিয়ী মতে কোন বিবাহ জায়িয কিন্তু হানাফী মাযহাব মতে যদি তা না জায়িয হয় তবে কোন হানাফী স্বার্থে পড়ে যদি শাফিয়ী মাযহাবে যায় তবে তার ঐ বিবাহ নাজায়িয হবে। তার ঐ ঔরসে কোন সন্তান হলে তা অবৈধ হবে। এরূপই ক্রয়, বিক্রয়, নিকাহ, বিচার ইত্যাদি সুবিধা ও স্বার্থ বুঝে এদিক ওদিক হলে বড় ফিতনার সৃষ্টি হবে যা মহান আল্লাহ পাক উনার কথায় হত্যাকা- হতেও গুরুতর। সুতরাং এরূপ করা হারাম বরং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী।
(১২৬৪-১২৬৬)
‘ইনছাফ’ কিতাবের ৭০-৭১ পৃষ্ঠায়, তাতারখানিয়া ও ফতওয়ায়ে হাম্মাদিয়া নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, স্বার্থে পড়ে হানাফী মাযহাব ছেড়ে অন্য মাযহাব ধরলে তাকে দোররা মারতে হবে।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেক আলিম ও সাধারণ লোকের জন্য হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী এ সম্মানিত চার মাযহাবের যে কোন একটি নির্দিষ্ট মাযহাব মেনে চলা ওয়াজিব। কখনও এক মাযহাব কখনও অন্য মাযহাব অবলম্বন জায়িয নাই। এতে দ্বীনের খিয়ানত ও ইহানত সূত্রে গুনাহ লাযিম হয়। কেননা এতে কোন বিষয় কখনও হালাল আবার কখনও হারাম করতে হবে। যেমন- কচ্ছপ ও শন্ডাপ্রাণী তা কোন মাযহাবে হালাল আর কোন মাযহাবে হারাম। তাই নিজ গরজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মতে চললে হারাম ও হালাল দুইটাই ব্যবহার করতে হবে। এতে সম্মানিত শরীয়ত অবলম্বী না হয়ে নিশ্চয়ই নফস বা শয়তানের অনুসারী হবে। যা বেদ্বীনী ও কুফরী প্রথা।
অসমাপ্ত
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন