৩২তম ফতওয়া হিসেবে
“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোনো একটি মাযহাব অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব
সম্মানিত শরীয়ত অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের ফায়ছালা হলো- প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসান সকলের জন্য সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোনো একটি সম্মানিত মাযহাব উনাদের অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। যে বা যারা সম্মানিত মাযহাব অস্বীকার করে বা অনুসরণ করেনা সে বা তারা বিদয়াতী, গুমরাহ ও জাহান্নামী। এ ব্যাপারে সম্মানিত ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের মধ্যে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নি¤েœ এ সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহসমূহ উল্লেখ করা হলো-
(১২০৭)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَاسْاَلُوْآ أَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
অর্থ: যদি তোমরা না জান তবে আহলে যিকির উনাদের কাছ থেকে জেনে নাও (পবিত্র সূরা নহল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)
লামাযহাবী মৌলভী ফছিহ উদ্দিন ও মৌলভী ইলাহি বকস ‘দুররায়ে মুহাম্মদী’ নামক পুস্তকের ৪৯ পৃষ্ঠায় সাধারণ লোককে ধোঁকা দেয়ার জন্য লিখেছে, “উক্ত আয়াতে আহলে যিকির দ্বারা ইহুদী ও খ্রিস্টান আলিমদেরকে বুঝানো হয়েছে, তাই হানাফীগণ এর অর্থ ইমাম মুজতাহিদ নিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অর্থ পরিবর্তন করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!
মূলত উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আহলে যিকির কারা? সে ব্যাপারে বিজ্ঞ আলিম ও বিখ্যাত তাফসীরকারকদের কি মত দেখুন। উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা যদিও খ্রিষ্টান ও ইহুদী আলিমদের উপলক্ষে নাযিল হয়েছিল তবে নাযিলের কারণ খাছ হলেও এর হুকুম আম। যা সমস্ত উছূলের কিতাবেই উল্লেখ আছে।
(১২০৮)
ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘বুখারী শরীফের’ ৪ খ- ১৪৪ পৃষ্ঠায় লিখেন, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা মুসলমান কাজী ও বিচারপতি উনাদের ক্ষেত্রে নাযিল হয়েছে।
(১২০৯)
এজন্য বুখারী শরীফ উনার বিখ্যাত টীকাকার আল্লামা ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘ফতহুল বারী’ কিতাবের ১১ খ- ৯৬ পৃষ্ঠায় লিখেন-
وَيَظْهَرُ اَنْ يُّقَالَ اِنَّ الْاٰيَاتِ وَ اِنْ كَانَ سَبَبَهَا اَهْلُ الْكِتَابِ وَلٰكِنَّ عُمُوْمَهَا يَتَنَاوَلُ غَيْرَهُمْ
অর্থাৎ, “স্পষ্ট কথা এই যে, পবিত্র আয়াত শরীফ খ্রিষ্টান ও ইহুদীদের কারণে নাযিল হলেও উনাদের সাধারণ মর্ম অন্যান্য সকলের জন্যই প্রযোজ্য।”
এখন কি লামাযহাবীরা বলবে যে, ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অর্থ পরিবর্তন করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!
(১২১০)
বিখ্যাত ‘তাফসীরে ইবনে জারীর’ ১৪শ খ- ৬৮/৬৯ পৃষ্ঠায় উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে, হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তাওরাত শরীফ ও ইঞ্জিল শরীফ কিতাব তত্ত্ববিদগণের মধ্যে যারা মুসলমান হয়েছিলেন উনারাই আহলে যিকির। ইমাম আবু জাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, আমরা মুসলমানগণ আহলে যিকির। ইবনে জায়েদ বলেছেন, পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে যেহেতু যিকির বলা হয়েছে সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ তত্ত্ববিদ উনাদেরকেই আহলে যিকির বলা হয়েছে।”
(১২১১)
‘তাফসীরে নীশাপুরী’ ১৪ খ- ৬৮/৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, তাওরাত শরীফ তত্ত্ববিদকে আহলে যিকির বলা হয়েছে। হাজ্জায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে কোন ব্যক্তি বিদ্যা ও সুক্ষ্ম জ্ঞানে পান্ডিত্ত্ব লাভ করেছেন উনারাই হলেন আহলে যিকির উনাদের নিকট মাসয়ালা জিজ্ঞাসা কর।
(১২১২)
বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে কবীর’ ৫ খ- ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, আহলে যিকির চার প্রকার। যথা: ১. তাওরাত শরীফ তত্ত্ববিদ ২. তাওরাত শরীফ ও ইঞ্জিল শরীফ তত্ত্ববিদ ৩.প্রাচীন ইতিহাস তত্ত্ববিদ এবং ৪. বিদ্যান ও সূক্ষ্মজ্ঞানে সুদক্ষ ব্যক্তি অর্থাৎ ইমাম মুজতাহিদগণ। এসব জ্ঞানে অভিজ্ঞ ব্যক্তির নিকট সম্মানিত শরীয়ত উনার মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করো।
(১২১৩)
উক্ত তাফসীরে উক্ত পবিত্র আয়াত উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে-
لَمَّا لَـمْ يَكُنْ اَحَدُ الْـمُجْتَهِدِيْنَ عَالِـمًا وَجَبَ عَلَيْهِ الرُّجُوْعُ اِلَـى الْـمُجْتَهِدِ الْاٰخَرِ الَّذِيْ يَكُوْنُ عَالـِمًا لِقَوْلِهٖ تَعَالٰی فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
অর্থাৎ “একজন মুজতাহিদ যদি কোন বিষয় অবগত না থাকেন তবে অন্য যে মুজতাহিদ এটা অবগত আছেন উনাকে জিজ্ঞাসা করা ওয়াজিব। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি তোমরা না জান তবে যারা আহলে যিকির উনাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।”
(১২১৪)
‘তাফসীরে ইবনে কাছীর’ ৫ম খ- ৩৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আমাদের মতে আহলে যিকির হচ্ছেন, আহলে কিতাব গ্রন্থধারী সম্প্রদায় এবং আব্দুর রহমান ইবনে জায়িদ রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র কুরআন শরীফ তত্ত্ববিদকে আহলে যিকির বলেছেন।”
(১২১৫-১২১৬)
তাফসীরে ‘রুহুল মায়ানী’ ৪ খ- ৩৭৭/৩৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, আবূ ছাইয়ান ‘তাফসীরে বাহরে মুহীতে’ লিখেছেন, হযরত আবূ জাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে জায়িদ রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র কুরআন শরীফ তত্ত্ববিদকে আহলে যিকির বলেছেন। এ সূত্রে মুসলমান উনারাও আহলে যিকির।”
(১২১৭-১২১৮)
উক্ত তাফসীরে আরো উল্লেখ আছে-
وَاسْنُدِيْهَا عَلٰى وُجُوْبِ الْـمُرَاجِعَةِ لِلْعُلَمَاءِ فِيْمَا لَا يَعْلَمُ وِفِـيْ الْاِکْلِیْل لِلْجَلَالِ الدِّيْنِ السُّيُوْطِيِّ اَنَّه اِسْتَدَلَّ بِـهَا عَلٰى جَوَازٍ تَقْلِيْدَ الْعَامِ فِـي الْفُرُوْعِ اِلٰـي عَنْ جَلَالِ الدِّيْنِ لِـمَحَلِّىِّ اَنَّه يَلْزِمُ غَيْرَ الْـمُجْتَهِدِ عَامِيًا كَانَ اَوْ غَيْرَ التَّقْلِيْدِ لِلْمُجْتَهِدِ لِقَوْلِهٖ تَعَالٰی فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ اَلصَّحِيْحُ اَنَّه لَا فَرْقَ بَيْنَ الْـمَسْئلَةِ الْاِعْتِقَادِيَّةِ وَ غَيْرِهَا وَبَيْنَ اَنْ يَّكُوْنَ الْـمُجْتَهِدُ حَيًّا اَوْ مَيِّتًا الخ –
অর্থ: উল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, যে বিষয় জানা নেই তা বিদ্যানগণের নিকট জিজ্ঞাসা করা ওয়াজিব। (এটাই তাকলীদ) আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘ইকলীল’ নামক কিতাবে লিখেন, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আমলী মাসয়ালায় উম্মি লোকের জন্য মুজতাহিদ উনাদের মাযহাব অবলম্বন করা ওয়াজিব এবং উনার উস্তাদ ইমাম জালালুদ্দীন মহল্লী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইজতিহাদ শক্তি সম্পন্ন না হন তিনি আলিম হউন আর জাহিল হন উনার জন্য মুজতাহিদ উনাদের মাযহাব অবলম্বন করা ওয়াজিব। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, যদি তোমরা না জান তবে, যারা জানেন উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করো। তাই ছহীহ মত এই যে আক্বাঈদ (ঈমান) বিষয় হোক আর আমলের বিষয় হোক জীবিত মুজতাহিদ হোক আর মৃত মুজাতাহিদ হোক উনার তাক্বলীদ করা ওয়াজিব।
(১২১৯)
“তাফসীরে বায়জাবী” ৩য় খ- ১৮৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَفـِى الْاٰيَةِ دَلِيْلٌ عَلٰى وُجُوْبِ الْـمُرَاجِعَةِ لِلْعُلَمَاءِ فِيْمَا لَا يَعْلَمُ
অর্থাৎ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার
فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ
দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অজ্ঞাত বিষয়ে আলিম উনাদের অনুসরণ করা ওয়াজিব।
(১২২০)
‘তাফসীরে আযীযী’ ১২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
کسانیکہ انھا بحکم خدا فرض است شش کروہ اند و ازاں جماع مجتھدین شریعت وشیوخ طریقت اند کہ حکم ایشان بطریق واجب مخیر لازم الاتباع ست بر عوام زیراکہ فھم اسرار شریعت ودقائق طریقت ایشاں را میسر است .فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ অনুযায়ী ছয়দল লোকের হুকুম মান্য করা ফরয। তন্মধ্যে সম্মানিত শরীয়ত উনার ইমামগণ ও তরীক্বতের মাশায়িখ উনাদের মধ্যে কোন একজনের অনুসরণ করা সাধারণ মানুষের জন্য ওয়াজিব। কেননা সম্মানিত শরীয়ত উনার গুপ্তভেদ ও ত্বরীক্বতের সূক্ষ্ম তত্ত্বগুলি বুঝা মুজতাহিদগণের পক্ষেই সম্ভব। “যদি তোমরা না জান তবে যিনি জানেন অর্থাৎ আহলে যিকির উনাকে জিজ্ঞাসা কর।”
(১২২১)
‘মুসাল্লাম’ নামক কিতাবের টিকায় ৬৩২ পৃষ্ঠায় উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে-
غَيْرُ الْـمُجْتَهِدِ الْـمُطْلَقِ وَلَوْ عَالِـمًا يَلْزِمُهُ التَّقْلِيْدُ اِسْتَدَلَّ عَلَى الـْمُخْتَارِ بِقَوْلِهٖ تَعَالٰى فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি কামিল মুজতাহিদ নন যদিও তিনি আলিম হন তবুও উনার জন্য মুজতাহিদ উনার মত অবলম্বন করা ওয়াজিব।
(১২২২)
‘তাওজীহ’ নামক কিতাবের ৩০০ পৃষ্ঠায় উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে-
واِنْ لَـمْ يَكُوْنُوْ مُـجْتَهِدِیْنَ وَلَـمْ يَعْلَمِ الْـحُكْمَ الْـمَذْكُوْرَ يـَجِبُ عَلَيْهِمُ السُّوَالَ مِنْ اَهْلِ الْعِلْمِ وَالْاِجْتِهَادِ لِقَوْلِهٖ تَعَالٰى: فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
অর্থাৎ, ‘যদি তারা (আদেশ দাতা) হাকিমগণ উনারা মুজতাহিদ না হন এবং হুকুমটির বিষয়ে জানা না থাকে তবে আলিম মুজতাহিদ উনার নিকট জিজ্ঞাসা করা ওয়াজিব। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, যদি না জান তবে যিনি জানেন উনাকে জিজ্ঞাসা করো।
(১২২৩)
আল্লামা সাইয়্যিদ ছামহুদী “ইক্বদুল ফরীদ” গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
دَلِيْلٌ وُجُوْبُ تَقْلِیْدِ غَيْرِ الْـمُجْتَهِدِ قَوْلُه تَعَالٰى: فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
অর্থাৎ, যিনি মুজতাহিদ নন তার জন্য কোন মুজতাহিদ উনার মাযহাব অবলম্বন করা ওয়াজিব, এর প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এ পবিত্র আয়াত শরীফ- “তোমরা যারা জাননা, যারা জানেন উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করো।”
(১২২৪)
শায়খ ইবনুল মুল্লা ফারুক মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘ক্বওলুস সাদীদ’ গ্রন্থে লিখেছেন-
وَمَنْ لَّـمْ يَكُنْ لَّه قُدْرَةٌ وَجَبَ عَلَيْهِ اِتِّباَعُ مَنْ اَرْشَدَ اِلٰـى مَاكَلَّفَه مِـمَّنْ اَهْلُ النَّظْرِ وَالْاِجْتِهَادِ وَالْعَدَالَةِ لِقَوْلِهٖ تَعَالٰى: فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ وَهِىَ اَصْلٌ فِـىْ اِعْتِقَادِ التَّقْلِيْدِ كَمَا اَشَارَ اِلَيْهِ الْـمُحَقِّقُ اِبْنُ هُمَامٍ.
অর্থ: যে ব্যক্তির ইজতিহাদের শক্তি নেই তার জন্য সূক্ষ্ম তত্ত্ববিদ ইজতিহাদ শক্তি সম্পন্ন, দ্বীনদার উনার আদেশ পালন করা ওয়াজিব। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, যদি তোমরা না জান তবে তিনি জানেন অর্থাৎ আহলে যিকির উনাকে জিজ্ঞাসা কর। তিনি বলেন, তাকলীদের প্রতি পূর্ণ আস্থা স্থাপন করার পক্ষে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা মূল দলীল। যেমন সুক্ষ তত্ত্ববিদ ইমাম ইবনে হুমাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন।
(১২২৫)
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘নিহায়াতুল উছুল’ গ্রন্থে লিখেন-
اَلْـمُخْتَارُ اَنَّ الْـمُحَصِّلَ لِعِلْمٍ مُعْتَبَرٍ اِذَا لَـمْ يَبْلُغْ رُتْبَةَ الْاِجْتِهَادِ يَلْزِمُهُ التَّقْلِيْدُ لِقَوْلِهٖ تَعَالٰى: فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
অর্থ: যতক্ষণ পর্যন্ত ইজতিহাদের শক্তি প্রাপ্ত না হয়, ততক্ষণ তার জন্য মুজতাহিদ উনার অনুসরণ করা ওয়াজিব। এর দলীল মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন- যদি তোমরা না জান তবে যিনি জানেন অর্থাৎ আহলে যিকির উনাকে জিজ্ঞাসা কর।
(১২২৬)
খোদ লামাযহাবীদের কিতাব “তাযকীরুল ইখওয়ান” গ্রন্থের ১৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
ھاں قرآن وحدیث کی بات جو جانتا نھیں وہ واقف کار لوگوں سے دریافت کرے یہ بھی اللہ ھی کا حکم ہے. فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিষয়ে না জানে সে যেন বিজ্ঞ আলিম উনার নিকট হতে অবগত হয়। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ। “যদি তোমরা না জান তবে যিনি জানেন অর্থাৎ আহলে যিকির উনাকে জিজ্ঞাসা কর।”
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উল্লিখিত নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ইমাম মুজতাহিদ উনাদের মাযহাব অবলম্বন করা অবশ্য ওয়াজিব। এটাই তাক্বলীদ। আরো প্রমাণিত হলো যে, মাযহাব বিদ্বেষীদের উক্ত আয়াতের অর্থ পরিবর্তন দাবি সম্পূর্ণ বাতিল। কেননা সমস্ত বিখ্যাত তাফসীরকারকদের বিপরীত শুধু তাদের মনগড়া তাফসীর মোটেই গ্রহণীয় হতে পারে না।
(১২২৭)
‘মিশকাত শরীফ’ উনার ৫৫ পৃষ্ঠায় হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
قَتَلُوْهُ قَتَلَهُمُ اللهُ اِلَّا سَائَلُوْا اِذَا لَـمْ يَعْلَمُوْا اَنَّـمَا شِفَاءُ الْعَيِّ السُّوَالُ –
অর্থাৎ, তারা একটি লোককে না জেনে ফতোয়া দিয়ে হত্যা করেছে।
মহান আল্লাহ পাক তাদেরকে হত্যা করুন। যখন তারা অজ্ঞাত ছিল তখন তারা জিজ্ঞাসা করে জানল না, কারণ জিজ্ঞাসাই অজ্ঞাত ব্যক্তির জন্য শিফা।
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা অবশ্য প্রমাণিত হয় যে, অল্প বিদ্যা যাদের রয়েছে, উনাদের জন্য মুজতাহিদ ইমামদের অনুসরণ করা ওয়াজিব। এটাই মাযহাব বা তাকলীদ।
অসমাপ্ত-
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন