[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-২৩৭), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” (২০৩তম সংখ্যা), ৩২. হানাফী মাযহাব মতে নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে ‘আমীন’ অনুচ্চ আওয়াজে বা চুপে চুপে পাঠ করাই শরীয়তের নির্দেশ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১২তম সংখ্যা), ৩৩. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২২০তম সংখ্যা থেকে যা এখনো চলছে) পেশ করার পাশাপাশি-
“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো “উলামায়ে সূ”। ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে মুসলমান উনাদের বিশেষ বিশেষ ফযীলতযুক্ত আমলের রাত ও দিনসমূহ পালন করাকে বিদয়াত, নাজায়িয ও শিরক বলে ফতওয়া দিয়ে মুসলমান উনাদেরকে অশেষ খায়ের, বরকত, নিয়ামত, নাজাত অর্থাৎ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি মুবারক থেকে মাহরূম করছে। যেমন তারা বলে থাকে যে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত, শিরক। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা বিদয়াত। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো অনেক বিষয়কেই তারা বিনা দলীলে মনগড়াভাবে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
অপরদিকে বেদ্বীনী-বদদ্বীনী অর্থাৎ কাফির মুশরিক, ইহুদী, নাছারাদের যত পর্ব বা দিবস রয়েছে সেগুলোকে শুধু জায়িযই নয় বরং নিয়ামত বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যেমন বাইতুল মুকাররমের সাবেক খতীব ওবায়দুল হক্ব প্রকৃতপক্ষে উবাই বলেছিল, “পহেলা বৈশাখ আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত শিরক এবং পহেলা বৈশাখ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাউযুল্লিাহ! তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয বিষয়কে হারাম বা নাজায়িয বলা এবং হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-
استحلال الـمعصية كفر.
অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)
অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।
অনুরূপ উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা থেকে বিরত থাকবে এবং হারাম পহেলা বৈশাখ পালন করবে” তারা অশেষ খায়ের, বরকত ও নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হওয়ার কারণে কঠিন গুনাহগার অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ তারা তাদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি” প্রকাশ করা হলো।
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত, দিবস ও সময়ের গুরুত্ব, ফযীলত ও আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-
ওয়াক্ত অর্থাৎ সময় বা মুহুর্ত
সনাক্তকরণ
এখানে আমরা ওয়াক্ত বর্ণনার ক্ষেত্রে আমাদের সম্মাণিত হানাফী মাযহাব উনার ফিক্হ ও ফাতাওয়া উনাদের কিতাব থেকে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করলাম। তবে এখানে হানাফী মাযহাব উনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ কিতাব ‘আল-মুখতাছারুল কুদূরী’ থেকে ইবারতগুলো উপস্থাপিত হয়েছে। অনুরূপ রায় বা মতামত ভাষা ও বর্ণনার তারতম্যে সমস্ত হানাফী মৌলিক কিতাব ও শরাহ গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে। যার একটি তালিকা লেখার শেষের দিকে উপস্থান করা হয়েছে।
পবিত্র আযান উনার ওয়াক্ত বা সময়
اَلْاَذَانُ سُنَّةٌ لِلصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ وَالْجُمُعَةِ دُوْنَ مَا سِوَاهَا … وَلَا يُؤْذَنُ لِصَلَاةٍ قَبْلَ دُخُوْلِ وَقْتِهَا اِلَّا فِى الْفَجْرِ عِنْدَ اَبِىْ يُوْسُفَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ.
অর্থ: পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও জুমুয়াহ নামায উনাদের জন্য আযান দেয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। ইহা ব্যতীত অন্যান্য নামাযের জন্য কোন আযান নেই। … ওয়াক্ত আসার পূর্বে কোন নামাযেরই আযান দেয়া জায়িয হবে না। তবে হযরত ইমাম আবূ ইঊসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই ফজর নামায উনার আযান দেয়া জায়িয হবে। (মুখতাছারিল কুদূরী, অধ্যায়: নামায, পরিচ্ছেদ: আযান তথা পবিত্র নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার জন্য নামাযীকে আহ্বান, লেখক: হযরত ইমাম আবুল হুসাঈন আহমদ বিন মুহম্মদ বিন জা’ফর বিন আহমদ বাগদাদী কুদূরী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বিলাদত: ৩৬২ হিজরী, ওয়াফাত: ৪২৮ হিজরী)
(قَوْلُه: سُنَّةٌ لِلصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ) اى سُنَّةٌ مُؤَكَّدَةٌ (قَوْلُه: وَالْجُمُعَةُ) فَاِنْ قِيلَ هِىَ دَاخِلَةٌ فِي الْخَمْسِ … (قَوْلُهُ: دُونَ مَا سِوَاهَا) كَالْوِتْرِ وَالتَّرَاوِيحِ وَصَلَاةِ الْجنَازَةِ وَالْعِيدِ وَالْكُسُوفِ.
অর্থ: (হযরত ইমাম কুদূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্তি: পাঁচ ওয়াক্ত নামায উনার জন্য আযান দেয়া সুন্নাত) অর্থাৎ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ (হযরত ইমাম কুদূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্তি: এবং জুমুয়াহ নামায উনার জন্য আযান দেয়া সুন্নাত) যেহেতু ছলাতুল জুমুয়াহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায উনাদের মধ্যে প্রবিষ্ট অর্থাৎ তা জুমুয়ার দিন ছলাতুয্ যুহ্র উনার স্থলাভিষিক্ত। … (হযরত ইমাম কুদূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্তি: ইহা ব্যতীত অন্যান্য নামাযের জন্য কোন আযান নেই) বিত্র, তারাবীহ, জানাযা, দু’ ঈদ, সূর্য গ্রহণের নামায ইত্যাদী। (আল-জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ আলা মুখতাছারিল কুদূরী, অধ্যায়: নামায, পরিচ্ছেদ: আযান তথা পবিত্র নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার জন্য নামাযীকে আহ্বান, লেখক: হযরত আবূ বকর বিন আলী বিন মুহম্মদ হাদ্দাদী আব্বাদী ইয়ামানী যাবীদী হানাফী মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ওয়াফাত: ৮০০ হিজরী)
)قَوْلُه: وَلَا يُؤَذِّنُ لِصَلَاةٍ قَبْلَ دُخُولِ وَقْتِهَا) فَاِنْ فَعَلَ اَعَادَ فِى الْوَقْتِ لِاَنَّ الْاَذَانَ لِلْاِعْلَامِ وَهُوَ قَبْلَ دُخُولِ الْوَقْتِ تَجْهِيلٌ.
অর্থ: (হযরত ইমাম কুদূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্তি: ওয়াক্ত আসার পূর্বে কোন নামাযেরই আযান দেয়া জায়িয হবে না) যদি কেউ ওয়াক্তের পূর্বে আযান দেয়, তাহলে তাকে ওয়াক্তের ভিতরে আবার আযান দিতে হবে। কেননা, আযান দেয়ার উদ্দেশ্য হল নামায উনার ওয়াক্তের কথা জানিয়ে দেয়া। অতএব, ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে আযান দেয়া হল মূলত: মানুষকে বিভ্রান্ত করা। (আল-জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ আলা মুখতাছারিল কুদূরী, অধ্যায়: নামায, পরিচ্ছেদ: আযান তথা পবিত্র নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার জন্য নামাযীকে আহ্বান, লেখক: হযরত আবূ বকর বিন আলী বিন মুহাম্মাদ হাদ্দাদী আব্বাদী ইয়ামানী যাবীদী হানাফী মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ওয়াফাত: ৮০০ হিজরী)
উল্লেখিত ৩ খানা ইবারত থেকে প্রমাণিত হল যে, আযানের ওয়াক্ত বা সময় হল নামায উনার ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর। ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে আযান দেয়া জায়িয নেই। কেউ দিলে আযান বাতিল হবে। ওয়াক্ত হওয়ার পর আবার আযান দিতে হবে।
পবিত্র ছলাতুল ফজর উনার ওয়াক্ত বা সময়
اول وقت الصبح إذا طلع الفجر الثانى وهو البياض المعترض فى الأفق وآخر وقتها ما لم تتطلع الشمس.
অর্থ: ফজরে ছানী তথা ছুবহি ছাদিক্ব উদিত হলেই ফজর নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর পূর্বাকাশের সাদা আভাকে ছুবহি ছাদিক্ব বলা হয়। সূর্যোদয়ের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত ফজর নামাযের শেষ ওয়াক্ত বা সময়। (মুখতাছারুল কুদূরী অধ্যায়: নামায)
ويستحب الإسفار بالفجر.
অর্থ: ফজর নামায পূর্বাকাশ আলোকিত অবস্থায় আদায় করা মুস্তাহাব। (মুখতাছারুল কুদূরী অধ্যায়: নামায)
পবিত্র ছলাতুয যুহর উনার ওয়াক্ত বা সময়
واول وقت الظهر اذا زالت الشمس وآخر وقتها عند ابى حنيفة رحمة الله عليه اذا صار ظل كل شىء مثليه سوى فىء الزوال
অর্থ: সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া মাত্রই যুহ্র নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। ইমাম আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে: ফাইউয্ যাওয়াল তথা প্রকৃত ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যুহ্র নামায উনার শেষ ওয়াক্ত থাকে। (মুখতাছারুল কুদূরী অধ্যায়: নামায)
والإبراد بالظهر فى الصيف وتقديمها فى الشتاء.
অর্থ: গ্রীষ্মকালে যুহ্র নামায সূর্যের আলো তেজহীন হলে অর্থাৎ দেরী করে আদায় করা মুস্তাহাব। শীতকালে ওয়াক্তের শুরু ভাগেই পড়া মুস্তাহাব। (মুখতাছারুল কুদূরী, অধ্যায়: নামায)
হানাফী মাযহাব: ইমাম আ’যম হযরত আবূ হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, যিল্লু কুল্লি শাইয়িন মিছলাইহি অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার ছায়ায়ে আছলী বা প্রকৃত ছায়া ব্যতীত দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত ছলাতুয্ যুহর উনার ওয়াক্ত বাকী থাকে। প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার ছায়ায়ে আছলী বা প্রকৃত ছায়া ব্যতীত দ্বিগুণ পূর্ণ হলেই পবিত্র আছর নামায উনার ওয়াক্ত শুরু হয়।
মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বালী মাযহাব: হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে, প্রত্যেক বস্তুর ছায়া যখন তার প্রকৃত ছায়া ব্যতীত একগুণ হবে তখন পবিত্র ছলাতুয্ যুহ্র উনার ওয়াক্ত শেষ হবে এবং সাথে সাথেই পবিত্র আছর উনার ওয়াক্ত শুরু হবে। হযরত ইমাম সুফ্ইয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ছাহিবাঈন তথা হযরত ইমাম আবূ ইঊসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাও এই মত পোষণ করেন।
পবিত্র ছলাতুল জুমুয়াহ উনার ওয়াক্ত বা সময়
ছলাতুয্ যুহর উনার ওয়াক্তই হচ্ছে ছলাতুল্ জুমুয়াহ উনার ওয়াক্ত। যা উপরে আলোচিত হয়েছে।
পবিত্র ছলাতুল আছর উনার ওয়াক্ত বা সময়
وأول وقت العصر إذا خرج وقت الظهر على القولين وآخر وقتها ما لـم تغرب الشمس.
অর্থ: আলোচ্য উভয় মত অনুযায়ী যুহ্র নামায উনার ওয়াক্ত চলে যাবার পর আছর নামায উনার ওয়াক্ত শুরু হয়। আর সূর্যাস্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত আছর নামায উনার ওয়াক্ত থাকে। (মুখতাছারুল কুদূরী অধ্যায়: নামায)
وتأخير العصر ما لـم تتغير الشمس.
অর্থ: আছর নামায সূর্যের আলো পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ হলুদ বর্ণ হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করা মুস্তাহাব। (মুখতাছারুল কুদূরী, অধ্যায়: নামায)
পবিত্র ছলাতুল মাগরিব উনার ওয়াক্ত বা সময়
واول وقت الـمغرب اذا غربت الشمس وآخر وقتها ما لـم يغب الشفق وهو البياض الذى فى الافق بعد الحمرة عند أبى حنيفة رحمة الله عليه.
অর্থ: সূর্যাস্ত হওয়া মাত্রই মাগরিব নামায উনার ওয়াক্ত শুরু হয়। পশ্চিমাকাশে শাফাকে আহমার তথা লাল আভার পর শাফাকে আবইয়াদ তথা সাদা আভা অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত মাগরিব নামায উনার ওয়াক্ত থাকবে। এটাই ইমাম আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত। (মুখতাছারুল কুদূরী, অধ্যায়: নামায)
وتعجيل الـمغرب.
অর্থ: মাগরিব নামায তাড়াতাড়ি করে অর্থাৎ সর্বদাই শুরুর ওয়াক্তে পড়া মুস্তাহাব। (মুখতাছারুল কুদূরী অধ্যায়: নামায)
হানাফী মাযহাব: ইমাম আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, সূর্য ডুবার পর থেকে শফ্ক বিলীন হওয়া পর্যন্ত মাগরিব উনার ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে। শফ্ক বিলীন হলেই পবিত্র ইশা উনার ওয়াক্ত আরম্ভ হয়। হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দৃষ্টিতে, পশ্চিমাকাশে রক্তিম রেখার পর আগত সাদা রেখা। যা বিলীন হলেই পবিত্র ইশা উনার ওয়াক্ত আরম্ভ হয়।
পবিত্র ছলাতুল ইশা উনার ওয়াক্ত বা সময়
واول وقت العشاء اذا غاب الشفق وآخر وقتها ما لـم يطلع الفجر الثانى.
অর্থ: শাফাক (তথা পশ্চিমাকাশে হুম্রাহ তথা লালিমার পর আগত বিয়াদ তথা সাদা আভা) চলে যাওয়া মাত্রই ছলাতুল্ ইশা উনার ওয়াক্ত শুরু হয়। আর ফজরে ছানী তথা ছুবহি ছাদিক্ব উদয় হওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত ইশার ওয়াক্ত বাকী থাকে। (মুখতাছারুল কুদূরী, অধ্যায়: নামায)
وتأخير العشاء إلى ما قبل ثلث الليل.
অর্থ: ছলাতুল্ ইশা রাতের এক তৃতীয়াংশের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করা মুস্তাহাব। (মুখতাছারুল কুদূরী, অধ্যায়: নামায)
পবিত্র ক্বিয়ামুল লাইল তথা ছলাতুত্
তারাবীহ উনার ওয়াক্ত বা সময়
يستحب أن يجتمع الناس في شهر رمضان بعد العشاء فيصلى بهم إمامهم خمس ترويحات فى كل ترويحه تسليمتان ويجلس بين كل ترويحتين مقدار ترويحة.
অর্থ: পবিত্র রমাদ্বান মাস উনার মধ্যে পবিত্র ছলাতুল ইশা আদায় করার পর সকল নামাযীকে একত্রিত হওয়া মুস্তাহাব। অতপর উনাদের ইমাম উনাদেরকে নিয়ে পাঁচ তারবীহাত নামায আদায় করবেন (এক তারবীহাহ্ সমান চার রাকায়াত তারবীহ নামায)। প্রত্যেক তারবীহাহ্-এ দুই সালাম ফিরাবেন। প্রত্যেক দুই তারবীহাহ্ উনার মাঝখানে এক তারবীহাহ্ পরিমাণ বসবে অর্থাৎ প্রত্যেক চার রাকায়াত নামায আদায়ের পরে চার রাকায়াত নামায আদায় করতে যতক্ষণ সময় লেগেছে ততক্ষণ বসে দুরূদ শরীফ দুয়া’-ইস্তিগফার করবেন। (মুখতাছারুল কুদূরী, অধ্যায়: নামায, পরিচ্ছেদ: পবিত্র শাহরু রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যে তারাবীহ নামায আদায় প্রসঙ্গে)
পবিত্র ছলাতুল বিত্র উনার ওয়াক্ত বা সময়
وأول وقت الوتر بعد العشاء وآخر وقتها ما لـم يطلع الفجر.
অর্থ: ছলাতুল্ ইশা উনার (নামায আদায় করার) পর পরই বিত্র নামায উনার প্রথম ওয়াক্ত শুরু হয়। আর ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত শেষ ওয়াক্ত বাকী থাকে। মুখতাছারুল কুদূরী অধ্যায়: নামায)
ويستحب فى الوتر لـمن يألف صلاة الليل أن يؤخر الوتر إلى آخر الليل فإن لـم يثق بالانتباه أوتر قبل النوم.
অর্থ: যার তাহাজ্জুদ নামায পড়ার অভ্যাস আছে তার জন্য বিত্র নামায বিলম্ব করে শেষ রাতে পড়া মুস্তাহাব। আর যদি শেষ রাতে জাগরিত হওয়ার নিশ্চয়তা না থাকে তাহলে ঘুমের আগেই বিত্র নামায পড়ে নেয়াই আবশ্যক। মুখতাছারুল কুদূরী অধ্যায়: নামায)
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যে বিত্র নামায উনার ওয়াক্ত ও হুকুম: এ সম্পর্কে ফিক্হ ও ফাতাওয়া উনার কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে-
يستحب ان يجتمع الناس فى شهر رمضان بعد العشاء فيصلى بـهم امامهم خمس ترويحات … ثم يوتر بـهم ولا يصلى الوتر بجماعة فى غير شهر رمضان.
অর্থ: পবিত্র রমাদ্বান মাস উনার মধ্যে পবিত্র ছলাতুল ইশা আদায় করার পর সকল নামাযীকে একত্রিত হওয়া মুস্তাহাব। অতপর উনাদের ইমাম উনাদেরকে নিয়ে পাঁচ তারবীহাত নামায আদায় করবেন (এক তারবীহাহ্ সমান চার রাকায়াত তারবীহ নামায)। … তারপর তারাবীহ নামায (বিশ রাকায়াত) আদায় শেষ করে বিত্র নামায পড়ায়ে দিবেন। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ছাড়া বিত্র নামায জামায়াতে আদায় করাবেন না। (মুখতাছারুল কুদূরী অধ্যায়: নামায পরিচ্ছেদ: পবিত্র শাহরু রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যে তারাবীহ নামায আদায় প্রসঙ্গে)
পবিত্র নফল (সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ও সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ) নামায উনাদের
ওয়াক্ত বা সময়
السنة فى الصلاة ان يصلى ركعتين بعد طلوع الفجر واربعا قبل الظهر وركعتين بعدها واربعا قبل العصر وان شاء ركعتين وركعتين بعد الـمغرب واربعا قبل العشاء واربعا بعدها وانشاء ركعتين.
অর্থ: ফজর উদয় হওয়ার পর (ফজর উনার ফরযের পূর্বে) দুই রাকায়াত নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। পবিত্র যুহ্র নামায উনার ফরযের পূর্বে চার রকায়াত ও ফরযের পর দুই রাকায়াত নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। পবিত্র আছর নামায উনার ফরযের পূর্বে চার রকায়াত নামায পড়া সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ, তবে ইচ্ছা করলে দুই রাকায়াতও পড়তে পারে। পবিত্র মাগরিব নামায উনার ফরযের পর দুই রাকায়াত নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। পবিত্র ইশা নামায উনার ফরযের পূর্বে চার রাকায়াত নামায পড়া সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ এবং ফরযের পর চার রাকায়াত নামায অর্থাৎ তার মধ্যে দুই রাকায়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ও দুই রাকায়াত নফল। ইচ্ছা করলে শুধুমাত্র দুই রাকায়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়তে পারবে। অর্থাৎ দুই রাকায়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়তে হবে। আর নফল না পড়লেও চলবে। (মুখতাছারুল কুদূরী, অধ্যায়: নামায, পরিচ্ছেদ: নফলসমূহ তথা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ ও যাবতীয় নফল নামায উনাদের প্রসঙ্গে)
পবিত্র নামায উনার মাকরূহ ওয়াক্ত বা সময়
لا تجوز الصلاة عند طلوع الشمس ولا عند قيامها فى الظهيرة ولا عند غروبها ولا يصلى على جنازة ولا يسجد للتلاوة الا عصر يومه عند غروب الشمس ويكره ان يتنفل بعد صلاة الفجر حتى تطلع الشمس وبعد صلاة العصر حتى تغرب الشمس ولا بأس بان يصلى فى هذين الوقتين الفوائت ويسجد للتلاوة ويصلى على الجنازة ولا يصلى ركعتى الطواف ويكره ان يتنفل بعد طلوع الفجر باكثر من ركعتى الفجر ولا يتنفل قبل الـمغرب.
অর্থ: সূর্যোদয়, সূর্য মধ্য আকাশে ও সূর্যাস্তের সময় কোনো নামায আদায় করা জায়িয নেই। তবে সেই দিনের আছর নামায না আদায় করে থাকলে সূর্যাস্ত চলাবস্থায় আদায় করা মাকরূহ তানযীহীর সাথে জায়িয। উল্লেখিত সময়ে জানাযা নামায আদায় করা যাবে না এবং পবিত্র কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত উনার সিজদাহ্ও করা যাবে না। পবিত্র ফজর নামায আদায় করে অবসর হওয়ার পর সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং পবিত্র আছর নামায আদায় করে অবসর হওয়ার পর সূর্যাস্তের পূর্বে কোন নফল নামায পড়া মাকরূহ। তবে এই দুই ওয়াক্তে ক্বাযা নামায পড়তে, পবিত্র কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত উনার সিজদাহ করাতে এবং জানাযা নামাযও পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ মাকরূহ তানযীহীর সাথে আদায় হয়ে যাবে। আর (এ দুই ওয়াক্তে) পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করার পর দুই রাকায়াত নফল নামায পড়া যাবে না। ফজর উদয় হওয়ার পর অর্থাৎ ফজর নামায উনার ওয়াক্ত হওয়ার পর ফজর উনার দুই রাকায়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ উনার বেশী নফল পড়া মাকরূহ এবং পবিত্র মাগরিব নামায উনার পূর্বেও নফল নামায পড়া মাকরূহ। (মুখতাছারুল কুদূরী, অধ্যায়: নামায, পরিচ্ছেদ: পবিত্র নামায উনাদের মাকরূহ ওয়াক্তসমূহ প্রসঙ্গে)
এছাড়াও নিম্নে বর্ণিত কিতাব সমূহেও ভাষা ও বর্ণনার তারতম্যে একই মতামত ব্যক্ত হয়েছে:
ফাতাওয়ান নাওয়াযিল লিস সামারকান্দী, বিদায়াতুল মুবতাদী, আল-হিদায়াহ আলাল বিদায়াতিল মুবতাদী, ফাতহুল ক্বদীর আলাল্ হিদায়াহ, কিফায়াহ আলাল হিদায়াহ, ইনায়াহ আলাল্ হিদায়াহ, আল-বিনায়াহ আলাল হিদায়াহ, আইনুল হিদায়াহ আলাল হিদায়াহ, আল-বিকায়াহ, শরহুল বিকায়াহ, আন-নিক্বায়াহ, শরহুন্ নিক্বায়াহ, জামিউর রুমূয আলান নিক্বায়াহ, আত-তানবীরুল আবছার, আদ-দুররুল মুখতার আলাত্ তানবীরিল আবছার, রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার আলা তানবীরিল আবছার (ফাতাওয়াশ শামী), হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ দুররিল মুখতার, গাইয়াতুল আওতার আলাদ দুররিল মুখতার আলা তানবীরিল আবছার, নূরুল ঈদ্বাহ, মারাকিউল ফালাহ আলা নূরিল ঈদ্বাহ, হাশিয়াতুত্ ত্বহত্বাবী আলাল মারাকিইল ফালাহ আলা নূরিল ঈদ্বাহ, আল-ফাতাওয়াল আলামগীরিয়াহ, আল-ফাতাওয়া ক্বাদ্বী খান, ফাতাওয়াল বায্যাযিয়াহ, ফাতাওয়াত তাতার খানিয়াহ, কিতাবু মাযাহিবিল আরবায়াহ ইত্যাদী।
অসমাপ্ত- পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন