[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-২৩৭), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” (২০৩তম সংখ্যা), ৩২. হানাফী মাযহাব মতে নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে ‘আমীন’ অনুচ্চ আওয়াজে বা চুপে চুপে পাঠ করাই শরীয়তের নির্দেশ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১২তম সংখ্যা), ৩৩. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২২০তম সংখ্যা থেকে যা এখনো চলছে) পেশ করার পাশাপাশি-
“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো “উলামায়ে সূ”। ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে মুসলমান উনাদের বিশেষ বিশেষ ফযীলতযুক্ত আমলের রাত ও দিনসমূহ পালন করাকে বিদয়াত, নাজায়িয ও শিরক বলে ফতওয়া দিয়ে মুসলমান উনাদেরকে অশেষ খায়ের, বরকত, নিয়ামত, নাজাত অর্থাৎ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি মুবারক থেকে মাহরূম করছে। যেমন তারা বলে থাকে যে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত, শিরক। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা বিদয়াত। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো অনেক বিষয়কেই তারা বিনা দলীলে মনগড়াভাবে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
অপরদিকে বেদ্বীনী-বদদ্বীনী অর্থাৎ কাফির মুশরিক, ইহুদী, নাছারাদের যত পর্ব বা দিবস রয়েছে সেগুলোকে শুধু জায়িযই নয় বরং নিয়ামত বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যেমন বাইতুল মুকাররমের সাবেক খতীব ওবায়দুল হক্ব প্রকৃতপক্ষে উবাই বলেছিল, “পহেলা বৈশাখ আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত শিরক এবং পহেলা বৈশাখ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাউযুল্লিাহ! তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয বিষয়কে হারাম বা নাজায়িয বলা এবং হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-
استحلال الـمعصية كفر.
অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)
অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।
অনুরূপ উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা থেকে বিরত থাকবে এবং হারাম পহেলা বৈশাখ পালন করবে” তারা অশেষ খায়ের, বরকত ও নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হওয়ার কারণে কঠিন গুনাহগার অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ তারা তাদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি” প্রকাশ করা হলো।
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত, দিবস ও সময়ের গুরুত্ব, ফযীলত ও আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-
ওয়াক্ত অর্থাৎ সময় বা মুহুর্ত সনাক্তকরণ ও উনাদের ফযীলত
পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার দৃষ্টিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায উনার ওয়াক্ত
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পবিত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামায উনাদের মৌলিকভাবে ওয়াক্ত বা সময় বর্ণনা করেছেন। এতে প্রতিটি ওয়াক্তের শুরুর সময়, শেষ সময় ও বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়নি। তবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এবং পবিত্র ফিক্হ ও ফাতাওয়া উনাদের মধ্যে প্রতিটি ওয়াক্ত উনাদের শুরুর সময়, শেষ সময়, মুস্তাহাব সময়, মাকরূহ সময় ও এ সম্পর্কিত বিস্তৃত বিবরণ বর্ণিত রয়েছে। এ সংখ্যায় আমরা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায উনাদের ওয়াক্ত বা সময় আলোচনা করা হয়েছে, তার সংক্ষিত তাফসীর বা ব্যাখ্যাসহ পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদেরকে উল্লেখ করছি।
(১)
মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামীন তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন:
اَقِمِ الصَّلوةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ الى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْانَ الْفَجْرِ انَّ قُرْانَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا.
অর্থ: ছলাত ক্বায়িম করুন সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাতের আঁধার পর্যন্ত এবং ফজরে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করুন। অর্থাৎ ফজর নামায আদায় করুন। নিশ্চয়ই সকালের পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ অর্থাৎ ফজর নামায সাক্ষী হবে। (পবিত্র সূরাতু বাণী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৮)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় পবিত্র তাফসীর শরীফ উনার কিতাব উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে-
{اقم الصلاة} الاية هذه باجماع من المفسرين اشارة الى الصلوات المفروضة، فقال ابن عمرو رضى الله عنه وابن عباس رضى الله عنه وابو بردة رضى الله عنه والحسن رحمة الله عليه والجمهور رحمة الله عليهم: دلوك الشمس زوالها والاشارة الى الظهر والعصر و {غسق الليل} اشير به الى المغرب والعشاء {وقران الفجر} اريد به صلاة الصبح، فالاية على هذا تعم جميع الصلوات.
অর্থ: (ছলাত ক্বায়িম করুন) হযরত মুফাসসিরীন কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা’ মতে, অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ ইশারা করে যে, ইহা দ্বারা ফরয নামায সমূহ উদ্দেশ্য। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত বুরদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও জমহূর উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন: ‘সূর্য ঢলে যাওয়া’ دلوك الشمس যুহর ও আছর নামাযকে ইঙ্গিত করে। (রাতের আঁধার পর্যন্ত) ইহা মাগরিব ও ইশা নামাযকে ইঙ্গিত করে। (এবং ফজরে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করুন। অর্থাৎ ফজর নামায আদায় করুন।) ইহা দ্বারা ছলাতুল ফজর উদ্দেশ্য। অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ সাধারণভাবে সকল প্রকার নামাযের ওয়াক্তকে ইঙ্গিত করে। (আল-মুহাররারুল ওয়াজীয অর্থাৎ তাফসীরে ইবনু আত্বিয়াহ পবিত্র সূরাতু বাণী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৮, লেখক: আবূ মুহাম্মাদ আব্দুল হক্ব বিন গালিব বিন আব্দুর রহমান বিন তাম্মাম বিন আত্বিয়াহ আন্দালুসী মাহারিবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৪২ হিজরী, আত-তাসহীল লিউলূমিত তানযীল অর্থাৎ তাফসীরে ইবনু জুযী, তানবীরুল মাক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, রূহুল বয়ান, রূহুল মায়ানী, তাফসীরুস সামারকান্দী, তাফসীরুল মাদারিক, তাফসীরুল খাযিন, তাফসীরুল বাগবী, তাফসীরুত ত্ববারানী, তাফসীরুল কুরতুবী, তাফসীরুত ত্ববারী, আদ-দুররুল মানছূর, তাফসীরুল জালালাঈন, তাফসীরুল বাইযাবী, তাফসীরুল কাশশাফ)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময়সীমার মূলনীতি প্রমাণিত।
(২)
মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামীন তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন:
فَاصْبِرْ عَلى مَا يَقُوْلُوْنَ وَسَبّحْ بِحَمْدِ رَبّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَا وَمِنْ انَاءِ اللَّيْلِ فَسَبّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضى.
অর্থ: সুতরাং এরা যা বলে সে বিষয়ে ছবর করুন এবং আপনার রব তায়ালা উনার পবিত্রতা ও প্রশংসা করুন সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং রাতের কিছু অংশে। আরো পবিত্রতা বর্ণনা করুন দিনের দুই প্রান্তে অর্থাৎ শুরুতে ও শেষে। অবশ্যই এতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন। (পবিত্র সূরাতু ত্বো-হা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩০)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় পবিত্র তাফসীর শরীফ উনার কিতাব উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে-
}فاصبر على مَا يَقُولُونَ} يا محمد صلى الله عليه وسلم عما يقولون من الشتم والتكذيب نسختها اية القتال {وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ} صل بامر ربك يا محمد صلى الله عليه وسلم {قَبْلَ طُلُوعِ الشمس} صلاة الغداة {وَقَبْلَ غُرُوبِهَا} صلاة الظهر والعصر {وَمِنْ اٰنَاءِ الليل} بعد دخول الليل {فَسَبِّحْ} فصل صلاة المغرب والعشاء {وَاَطْرَافَ النهار} صلاة الظهر والعصر {لَعَلَّكَ ترضى} لكى تعطى الشفاعة حتى ترضى.
অর্থ: (সুতরাং এরা যা বলে সে বিষয়ে ছবর করুন) হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তাদের তিরস্কার ও মিথ্যারোপের ব্যাপারে ধৈর্য্য ধারণ করুন। এ পবিত্র আয়াত শরীফ খানা জিহাদের পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে। (এবং আপনার রব তায়ালা উনার পবিত্রতা ও প্রশংসা করুন) হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার রব তায়ালা উনার আদেশে ছলাত বা নামায আদায় করুন (সূর্যোদয়ের পূর্বে,) ফজরের নামায (সূর্যাস্তের পূর্বে) যুহ্র ও আছর নামায (এবং রাতের কিছু অংশে।) রজনী আগমনের পর (আরো পবিত্রতা বর্ণনা করুন) মাগরিব ও ইশা নামায আদায় করুন (দিনের দুই প্রান্তে।) যুহর ও আছরের নামায আদায় করুন। (অবশ্যই এতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন।) যাতে আপনি শুপারিশের ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। (তানবীরুল মাক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়াফাত মুবারক: ৬৮ হিজরী। পবিত্র সূরাতু ত্বো-হা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩০। সংকলক: হযরত মুহাম্মাদ বিন ইয়া’কূব ফীরোজাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮১৭ হিজরী, তাফসীরুস্ সামারকান্দী, তাফসীরুল মাদারিক, তাফসীরুল বাগবী, তাফসীরুল খাযিন, তাফসীরুত ত্ববারী, তাফসীরুত ত্ববারানী, যাদুল মাসীর লিল্ জাওযী, আত-তাফসীরুল কবীর, রূহুল বয়ান, রূহুল মায়ানী, তাফসীরুল জালালাঈন, আদ-দুররুল মানছূর, তাফসীরুল বাইযাবী, তাফসীরুল কাশশাফ)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময়সীমার মূলনীতি প্রমাণিত।
(৩)
মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামীন তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে
আরো ইরশাদ মুবারক করেন:
فَاصْبِرْ عَلى مَا يَقُوْلُوْنَ وَسَبّحْ بِحَمْدِ رَبّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوْبِ. وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبّحْهُ وَاَدْبَارَ السُّجُوْدِ.
অর্থ: অতএব তারা যা কিছু বলে তজ্জন্য আপনি ছবর করুন এবং আপনার রব তায়ালা উনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করুন সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজরের সময়) ও সূর্যাস্তের পূর্বে (যুহর ও আছরের সময়)। এবং রাতেও (মাগরিব ও ইশার সময়) উনার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং ফরয নামাযের পরেও। (পবিত্র সূরাতু ক্বাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮-৪০)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় পবিত্র তাফসীর শরীফ উনার কিতাব উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে-
}وَلَقَدْ خَلَقْنَا السموت والارض وَمَا بَيْنَهُمَا} من الخلق والعجائب {فِى سِتَّةِ ايَّامٍ} من ايام اول الدنيا طول كل يوم الف سنة من هذه الايام اول يوم منها يوم الاحد واٰخر يوم منها يوم الجمعة {وَمَا مَسَّنَا مِن لُّغُوبٍ} … {فاصبر} يا محمد صلى الله عليه وسلم {على مَا يَقُولُونَ} على مقالة اليهود من الكذب … {وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ} صل بامر ربك {قَبْلَ طُلُوعِ الشمس} وهى صلوة الغداة {وَقَبْلَ الغروب} وهى صلوة الظهر والعصر {وَمِنَ الليل فَسَبِّحْهُ} فصل له صلاة المغرب والعشاء او التهجد {وَاَدْبَارَ السجود} وهى ركعتان بعد الـمغرب.
অর্থ: (আমি আসমানসমূহ ও যমীনসমূহ ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছি) সৃষ্টি হিসেবে (ছয়দিনে) দুনিয়ার শুরুর দিকের দিন সমূহের মত। উক্ত প্রত্যেকটি দিন ছিল দুনিয়ার এক হাজার দিনের মত। উক্ত ছয় দিনের প্রথম দিন ছিল ইয়াওমুল আহাদ বা রবিবার আর শেষ দিনটি ছিল ইয়াওমুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার। (এবং এতে আমাকে কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি।)… (অতএব আপনি ছবর করুন) হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তারা যা কিছু বলে তজ্জন্য) ইয়াহূদীরা যে মিথ্যাচারীতা করে এ ব্যাপারে ধৈর্য ধারন করুন। … (এবং আপনার রব তায়ালা উনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করুন) আপনার রব তায়ালা উনার নির্দেশ অনুযায়ী ছলাত বা নামায আদায় করুন (সূর্যোদয়ের পূর্বে) তা হচ্ছে ফজর নামায (ও সূর্যাস্তের পূর্বে) যুহ্র নামায ও আছর নামায (এবং রাতেও উনার পবিত্রতা বর্ণনা করুন) উনার সন্তুষ্টির জন্য নামায আদায় করুন মাগরিব নামায ও ইশা নামায এবং তাহাজ্জুদ নামায (এবং ফরয নামাযের পরেও) মাগরিব নামাযের ফরযের পর দুই রাকয়াত সুন্নাত মুয়াক্কাদাহ নামায। (তানবীরুল মাক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ওয়াফাত মুবারক: ৬৮ হিজরী পবিত্র সূরাতু ক্বাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮-৪০ সংকলক: হযরত মুহাম্মাদ বিন ইয়া’কূব ফিরোজাবাদী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮১৭ হিজরী)
}وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ} حامدًا ربك والتسبيح محمول على ظاهره او على الصلوة فالصلوة {قَبْلَ طُلُوعِ الشمس} الفجر {وَقَبْلَ الغروب} الظهر والعصر {وَمِنَ اليل فَسَبِّحْهُ} العشاءان او التهجد {وادبار السجود} التسبيح فى اٰثار الصلوات والسجود والركوع يعبر بهما عن الصلوة، وقيل: النوافل بعد المكتوبات او الوتر بعد العشاء.
অর্থ: (আপনার রব তায়ালা উনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করুন) আপনার রব তায়ালা উনার প্রশংসা করার মত প্রশংসা করুন। তাসবীহ প্রকাশ্যভাবে অথবা ইহা দ্বারা নামায উদ্দেশ্য (সূর্যোদয়ের পূর্বে) ফজর নামায (ও সূর্যাস্তের পূর্বে) যুহর নামায ও আছর নামায (এবং রাতেও উনার পবিত্রতা বর্ণনা করুন) মাগরিব নামায ও ইশা নামায এবং তাহাজ্জুদ নামায (এবং ফরয নামাযের পরেও) তাসবীহ হচ্ছে নামায সমূহ, সিজদাহ ও রুকূ’, যাকে নামায হিসেবেই গ্রহণ করা হয়। কেউ বলেন: তা হচ্ছে ফরয নামাযের পর নফল নামায অথবা ইশার নামাযের পর বিত্র নামায পড়া। (মাদারিকুত তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন নাসাফী পবিত্র সূরাতু ক্বাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮-৪০ লেখক: আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী)
}وَسَبّحْ بِحَمْدِ رَبّكَ} اى صَلّ بامرِ ربكَ واحْمَدْهُ {قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوبِ} ارادَ بذلك صلوةَ الفجرِ وصلوةَ العصرِ، وَقِيْلَ: معناهُ قبلَ الغروب الظهرَ والعصرَ {وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبّحْه} يعنى: صلوةَ المغرب والعشاءِ. وسُمِّيت الصلوةُ تَسبيحًا لِمَا فيها من التسبيحِ “سُبْحَانَ رَبى الْعَظِيمِ وَسُبْحَانَ رَبى الاعْلٰى”.
وقولهُ تعالى: {وَاَدْبَارَ السُّجُودِ} يعنى الرَّكعتين بعدَ المغرب وقبلَ الوترِ. وَقِيْلَ: التسبيحُ فى اواخرِ الصَّلوة يُسَبحُونَ اللهَ ثلاثاً وثلاثين ويَحمَدُون ثلاثاً وثلاثين ويُكَبرُونَ ثلاثاً وثلاثين. وعن رسولِ الله صلى الله عليه وسلم: “اَنَّه كَانَ يَقُولُ فِى اٰخِرِ صَلوتِه عِنْدَ اِنْصِرَافِه: {سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ …} اِلٰى اٰخرِ السُّورة”. وعن الشعبىِّ رحمة الله عليه والاوزاعىِّ رحمة الله عليه انَّهما قالا: ادْبَارُ السُّجُودِ: الرَّكْعَتَانِ بَعْدَ الْمَغْرِب وادْبَارُ النُّجُومِ: الرَّكْعَتَانِ قَبْلَ الْفَجْرِ. وقال ابنُ زيدٍ رحمة الله عليه: مَعْنى قَوْلِه {وَاَدْبَارَ السُّجُودِ} وَهُوَ النَّوَافِلُ وَاَدْبَارُ الْمَكْتُوبَاتِ
অর্থ: (আপনার রব তায়ালা উনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করুন) আপনার রব তায়ালা উনার নির্দেশ মত নামায আদায় করুন এবং প্রশংসা করুন (সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে) আয়াত শরীফ দ্বারা এখানে ফজর নামায ও আছর নামাযকে বুঝানো হয়েছে। কেউ বলেন: ক্ববলাল গুরূব অর্থ হলো: যুহর নামায ও আছর নামায। (এবং রাতেও উনার পবিত্রতা বর্ণনা করুন) অর্থাৎ মাগরিব নামায ও ইশা নামায। এখানে নামাযকে তাসবীহ বলা হয়েছে, কেননা নামাযের মধ্যে ‘সুবহানা রাব্বিইয়াল্ আ’যীম ও সুবহানা রব্বিইয়াল আ’লা’ তাসবীহ রয়েছে।
মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ক্বওল শরীফ: (এবং ফরয নামাযের পরেও) অর্থাৎ মাগরিব নামাযের পর দুই রাকয়াত সুন্নাত নামায এবং বিত্র নামাযের পূর্বে ২ রাকায়াত সুন্নত নামায পড়ার বিধান। কেউ বলেন: নামায আদায়ের পর ‘সুবহানাল্লাহ’ তেত্রিশবার, ‘আল্ হাম্দু লিল্লাহ’ তেত্রিশবার এবং ‘আল্লাহু আকবার’ তেত্রিশবার পাঠ করা। নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘নিশ্চয়ই তিনি যে নামাযের পর ফিরে বসতেন তাতে দুয়া’য় বলতেন: সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ইয্যাতি আম্মা ইয়াছিফূন, ওয়া সালামুন আলাল্ মুরসালীন, ওয়াল্ হাম্দু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন’। হযরত ইমাম শা’বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম আওযায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন: আদবারুস্ সুজূদ হচ্ছে: মাগরিব নামাযের ফরযের পর দুই রাকয়াত সুন্নাত নামায এবং আদবারুন্ নুজূম হচ্ছে: ফজর নামাযের ফরযের পূর্বে দুই রাকয়াত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা নামায। হযরত ইবনু যায়েদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আদবারাস্ সুজূদ হচ্ছে: নফল নামায সমূহ এবং ফরয নামায সমূহের পর যা করা হয়। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম লিত্ ত্ববারানী পবিত্র সূরাতু ক্বাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮-৪০ লেখক: আবুল ক্বাসিম সুলাইমান বিন আহমাদ বিন আইয়্যূব বিন মুত্বীর লাখমী শামী ত্ববারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৬০ হিজরী)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ ও উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে- মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, তাহাজ্জুদ, যাবতীয় নফল নামাযের ওয়াক্ত বর্ণনা করেছেন। যা তাফসীরের কিতাব পড়লে স্পষ্ট বুঝা যায়।
(৪)
মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামীন তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন:
وَاَقِمِ الصَّلوةَ طَرَفَى النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ انَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيّئَاتِ ذلِكَ ذِكْرى لِلذَّاكِرِيْنَ.
অর্থ: ছলাত কায়িম করুন দিনের দুই প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে। নিশ্চয়ই নেককাজ পাপকে দূর করে দেয়। যারা সমঝদার বা আল্লাহওয়ালা তাদের জন্য এটি এক মহা উপদেশ। (পবিত্র সূরাতু হূদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় পবিত্র তাফসীর শরীফ উনার কিতাব উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে-
}واقم الصلاة} اى اتممها {طَرَفَىِ النهار} صلاة الفجر والظهر والعصر {وَزُلَفًا مِّنَ اليل} يعنى دخولًا من الليل ساعة بعد ساعة، واحدها زلفة، وهى صلاة المغرب والعشاء {اِنَّ الحسنات يُذْهِبْنَ السيئات} يعنى الصلوات الخمس يكفرن السيئات فيما دون الكبائر {ذلك ذكرى لِلذاكِرِينَ} يعنى الصلوات الخمس توبة للتائبين.
অর্থ: (ছলাত ক্বায়িম করুন) নামায পূর্ণ বা আদায় করুন (দিনের দুই প্রান্তে) ফজর, যুহ্র ও আছর নামায (এবং রাতের প্রথম অংশে।) রাতের প্রারম্ভে এক সময়ের পর আরেকটি। যুলাফুন শব্দটি যুলফাতুন শব্দের বহুবচন। তাহচ্ছে ছলাতুল মাগরিব ও ইশা। (নিশ্চয়ই নেককাজ সমূহ পাপকে দূর করে দেয়।) পাঁচ ওয়াক্ত নামায সমস্ত ছগীরাহ গুনাহকে মোচন করে দেয়, তবে কবীরাহ গুনাহকে মোচন করে না। (যারা সমঝদার বা আল্লাহওয়ালা তাদের জন্য এটি এক মহা উপদেশ।) পাঁচ ওয়াক্ত নামায তাওবাহকারীদের তাওবাহ তুল্য। (বাহরুল উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস সামারকান্দী পবিত্র সূরাতু হূদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪। লেখক: আবুল লাইছ নাছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৭৩ হিজরী)
}وَاَقِمِ الصلاة} اتم الصلاة {طَرَفَىِ النهار} صلاة الغداة والظهر ويقال صلاة الغداة والظهر والعصر {وَزُلَفًا مِّنَ الليل} دخول الليل صلاة المغرب والعشاء {اِنَّ الحسنات} الصلوات الخمس {يُذْهِبْنَ السيئات} يكفرن السيئات دون الكبائر ويقال سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر {ذلك ذكرى لِلذَّاكِرِينَ} توبة للتائبين ويقال كفارات لذنوب التائبين نزلت فى شأن رجل تمار يقال له ابو اليسر بن عمرو.
অর্থ: (ছলাত ক্বায়িম করুন) নামায পূর্ণ বা আদায় করুন (দিনের দুই প্রান্তে) ফজর ও যুহরের নামায, অপর বর্ণনায় ফজর, যহ্র ও আছর নামায (এবং রাতের প্রথম অংশে।) রাতের প্রারম্ভিকে মাগরিব ও ইশা নামায। (নিশ্চয়ই নেককাজসমূহ) পাঁচ ওয়াক্ত নামায (পাপকে দূর করে দেয়।) ছগীরাহ গুনাহ সমূহকে মিটিয়ে দেয়, তবে কবীরাহ গুনাহ সমূহ নয়, অন্য বর্ণনায়: সৎকর্ম দ্বারা উদ্দেশ্য
سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر
তাসবীহ খানা (যারা সমঝদার বা আল্লাহওয়ালা তাদের জন্য এটি এক মহা উপদেশ।) তাওবাহ কারীদের জন্য তাওবাহ। অপর বর্ণনায়: এটি তাওবাহ কারীদের জন্য পাপ মোচনের মাধ্যম। অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ আবুল ইউসার বিন আমর নামক জনৈক ফল ব্যবসায়ীকে উপলক্ষ করে নাযিল হয়েছিল। (তানবীরুল মাক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ওয়াফাত মুবারক: ৬৮ হিজরী পবিত্র সূরাতু হূদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪ সংকলক: মুহাম্মাদ বিন ইয়া’কূব ফীরোজাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮১৭ হিজরী)
অনুরূপ তাফসীর ভাষা ও বর্ণনার তারতম্যে নিম্নোক্ত তাফসীরের কিতাবেও বর্ণিত আছে: তাফসীরুত ত্ববারী, তাফসীরুল কুরতুবী, তাফসীরুত ত্ববারানী, আত-তাফসীরুল কবীর, রূহুল বয়ান, রূহুল মায়ানী, তাফসীরুল মাযহারী, তাফসীরুল মাদারিক, তাফসীরুল খাযিন, তাফসীরুল বাগবী, তাফসীরুল জালালাঈন, তাফসীরুল বাইযাবী, তাফসীরুল কাশশাফ ইত্যাদী।
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে, এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায উনাদের ওয়াক্ত বর্ণনা করা হয়েছে। আর পাঁচ ওয়াক্ত নামায যে জীবনের ছগীরাহ গুনাহ সমূহকে মোচন করে দেয় তাও বলা হয়েছে। তবে খাছ তাওবাহ করলে কবীরাহ গুনাহ সমূহও ক্ষমা হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ।
(৫)
মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামীন তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন:
فَسُبْحَانَ اللهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ. وَلَه الْحَمْدُ فِى السَّموتِ وَالْاَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ.
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার তাসবীহ পাঠ করুন, যখন আপনারা সন্ধ্যায় উপনীত হন এবং যখন আপনারা সকাল করেন এবং উনারই প্রশংসা আসমান সমূহে ও যমীন সমূহে এবং বৈকালে: আর যখন আপনারা দ্বিপ্রহরে পৌঁছেন। (পবিত্র সূরাতুর রূম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭-১৮)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় পবিত্র তাফসীর শরীফ উনার কিতাব উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে-
}فسبحان الله} فصلُّوا لله سبحانه {حين تمسون} يعنى صلاة المغرب والعشاء الاخرة {وحين تصبحون} صلاة الفجر { وعشيًّا} يعنى صلاة العصر {وحين تظهرون} يعنى صلاة الظُّهر.
অর্থ: (মহান আল্লাহ তায়ালা উনার তাসবীহ পাঠ করুন) মহান আল্লাহ সুবহানাহূ তায়ালা উনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন (যখন আপনারা সন্ধ্যায় উপনীত হন) অর্থাৎ ছলাতুল্ মাগরিব ও ইশা (এবং যখন আপনারা সকাল করেন) ফজর নামায (এবং বৈকালে:) অর্থাৎ ছলাতুল আছর (আর যখন আপনারা দ্বিপ্রহরে পৌঁছেন।) অর্থাৎ ছলাতুয্ যুহ্র আদায় করুন। (আল-ওয়াজীয ফী তাফসীরিল কিতাবিল আযীয অর্থাৎ তাফসীরুন নীসাবূরী পবিত্র সূরাতুর রূম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭-১৮ লেখক: আবুল হাসান আলী বিন আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন আলী ওয়াহিদী নীসাবূরী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৪৬৮ হিজরী, তানবীরুল মাক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর, রূহুল বয়ান, রূহুল মায়ানী)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময়সীমার মূলনীতি প্রমাণিত।
(৬)
মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামীন তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন:
وَالْفَجْرِ. وَلَيَالٍ عَشْرٍ. وَالشَّفْعِ وَالْوَتْرِ. وَاللَّيْلِ اِذَا يَسْرِ.
অর্থ: শপথ ফজরের। শপথ দশ রাতের। শপথ তার- যা জোড় ও শপথ তার- যা বিজোড়। এবং শপথ রাতের যখন তা গত হতে থাকে। (পবিত্র সূরাতুল্ ফজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৪)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় পবিত্র তাফসীর শরীফ উনার কিতাব উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে-
قوله تعالى: {والفجر} هو قسم وجوابه: ان ربك لبالمرصاد اقسم الله تعالى بالفجر يعنى الصبح. … ويقال: اراد به اول يوم من المحرم.
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ইরশাদ মুবারক: (শপথ ফজরের,) ইহা হচ্ছে ফজরের ক্বসম। যার জাওয়াব হলো- অত্র সূরাহ শরীফ উনার ১৪ নম্বর আয়াত শরীফ-
ان ربك لبالـمرصاد
‘নিশ্চয়ই আপনার রব তায়ালা তিনি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন’। এখানে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ফজর অর্থাৎ ছুবহি ছাদিক্বের ক্বসম করেছেন। … কেউ বলেন: ইহা দ্বারা পবিত্র মুর্হারমুল হারাম মাসের পহেলা তা’রীখকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। (বাহরুল উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস্ সামারকান্দী পবিত্র সূরাতুল্ ফজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৪ লেখক: হযরত আবুল লাইছ নছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৭৩ হিজরী)
قوله تعالى: {والفجر} … قال شيخنا على بن عبيد الله رحمة الله عليه: الفجر ضوء النهار اذا انشق عنه الليل، … ومن هذا سمى الفاجر فاجرًا لانه خرج عن طاعة الله.
وللمفسرين رحمة الله عليهم فى الـمراد بهذا الفجر ستة اقوال:
احدها: انه الفجر الـمعروف الذى هو بدء النهار، قاله علىٌّ عليه السلام. وروى ابو صالح رحمة الله عليه عن ابن عباس رضى الله عنهما قال: هو انفجار الصبح كل يوم، وبهذا قال عكرمة رحمة الله عليه وزيد بن اسلم رحمة الله عليه والقرظى رحمة الله عليه.
والثانى: صلاة الفجر، رواه عطية عن ابن عباس رضى الله عنهما.
والثالث: النهار كلُّه فعبَّر عنه بالفجر لانه اوله، وروى هذا الـمعنى ابو نصر رحمة الله عليه عن ابن عباس رضى الله عنهما.
والرابع: انه فجر يوم النحر خاصة، قاله مجاهد رحمة الله عليه.
والخامس: انه فجر اول يوم من ذى الحجة، قاله الضحاك رحمة الله عليه.
والسادس: انه اول يوم من المحرم تنفجر منه السنة، قاله قتادة رحمة الله عليه.
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ইরশাদ মুবারক: (শপথ ফজরের,) … আমাদের শায়েখ হযরত আলী বিন উবাইদুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: রাতকে বিদূরিত করে আগত দিনের আলোই হচ্ছে ফজর। … এ জন্যই ফাজিরকে ফাজির বা গুনাহগার নামকরণ করা হয়, যেহেতু সে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার আনুগত্যতা থেকে বের হয়ে গিয়েছে।
হযরত মুফাসসিরীন কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ‘আল-ফজর’ শব্দ মুবারক উনার ব্যাখ্যায় ছয় খানা মতামত ব্যক্ত করেছেন: প্রথম: তা হচ্ছে ফজরের ওয়াক্ত। যা দিনের শুরু হিসেবে পরিচিত। এ ব্যাখ্যাটি করেছেন হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম। হযরত আবূ ছালিহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: তা হচ্ছে প্রতিটি দিনের আগত সকাল। আর ইহাই বলেছেন হযরত ইকরামাহ, যায়েদ ইবনে আসলাম ও কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহিম। দ্বিতীয়: ছলাতুল্ ফজর, যা বর্ণনা করেছেন হযরত আত্বিয়্যাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে। তৃতীয়: সকল দিনই ফজর, এমন ব্যাখ্যা করার কারণ হলো- কেননা, প্রত্যেকটি দিন ফজর দিয়ে শুরু হয়। চতুর্থ: ইহা হচ্ছে বিশেষভাবে ইয়াওমুন্ নাহ্র অর্থাৎ যুল্ হিজ্জাহ মাসের দশম তা’রীখের সকাল। ইহা বলেছেন হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি। পঞ্চম: ইহা হচ্ছে যুল্ হিজ্জাহ মাসের পহেলা তা’রীখ বা দিনের সকাল। ইহা হযরত দ্বহ্হাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন। ষষ্ঠ: ইহা হচ্ছে মুর্হারমুল হারাম মাসের পহেলা তা’রীখ বা দিন, কেননা এই দিনের মাধ্যমে হিজরী বছর শুরু হয়। ইহা হযরত ক্বতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন। (যাদুল মাসীর ফী ইলমিত্ তাফসীর অর্থাৎ তাফসীরুল্ জাওযী পবিত্র সূরাতুল্ ফজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৪ লেখক: হযরত জামালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ জাওযী হাম্বালী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৯৭ হিজরী)
অত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে- দিন, তা’রীখ, সময়, মুহুর্ত, বিশেষ বিশেষ সময়ের আলোচনা মহান আল্লাহ তায়ালা তিনিই ব্যক্ত করেছেন। যা জেনে আমল করা এবং উদ্যাপন করা বান্দাহ ও উম্মাত উনাদের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য।
(৭)
মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামীন তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন:
وَالْعَصْرِ.
অর্থ: শপথ আছরের অর্থাৎ সময়ের বা যুগের বা আছর নামাযের ওয়াক্তের। (পবিত্র সূরাতুল্ আছর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১) অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় পবিত্র তাফসীর শরীফ উনার কিতাব উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে-
قوله تعالى: {والعصر} فيه ثلاثة اقوال:
احدها: انه الدهر، قاله ابن عباس رضى الله عنهما وزيد بن اسلم والفراء وابن قتيبة رحمة الله عليهم، وانما اقسم بالدهر لان فيه عبرة للناظر من مرور الليل والنهار.
والثانى: انه العشى وهو ما بين زوال الشمس وغروبها، قاله الحسن وقتادة رحمة الله عليهما.
والثالث: صلوة العصر، قاله مقاتل رحمة الله عليه.
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ইরশাদ মুবারক: (শপথ আছরে) এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তিনটি ক্বওল রয়েছে: প্রথম: আছর হচ্ছে যুগ, যামানা, সময়, মুহুর্ত, কাল বা মহাকাল। ইহা বলেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, হযরত যায়েদ বিন আসলাম, হযরত ফাররা ও হযরত কুতাইবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম। এখানে মহান আল্লাহ তায়ালা যুগের ক্বসম করেছেন, যাতে করে রাত ও দিনের চলমান পরিবর্তন হওয়া অবলোকন করে পর্যবেক্ষকগণ তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারেন। দ্বিতীয়: আছর হচ্ছে বিকেল বেলা। যা সূর্য পশ্চিমাকাশে ডলে পড়া থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়। ইহা বলেছেন হযরত হাসান বছরী ও ক্বতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা। তৃতীয়: আছর হচ্ছে ছলাতুল আছর তথা পবিত্র আছর নামায। ইহা হযরত মুক্বাতিল রহমাতুল্লহি আলাইহি তিনি বলেছেন। (যাদুল মাসীর ফী ইলমিত্ তাফসীর অর্থাৎ তাফসীরুল জাওযী পবিত্র সূরাতুল্ আছর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১ লেখক: হযরত জামালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ জাওযী হাম্বালী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৯৭ হিজরী)
অত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে- আছর হচ্ছে: যুগ, যামানা, সময়, মুহুর্ত, কাল বা মহাকাল, বিকেল, ছলাতুল আছর বা আছর নামায, পবিত্র আছর নামায উনার ওয়াক্ত ইত্যাদী। যার ক্বসম বা শপথ করেছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি। এর থেকে বুঝা যায় যে, বিশেষ বিশেষ সময়, মুহুর্ত, কাল, যুগকে গুরুত্ব দেয়া কত জরুরী। এজন্যই মূলত: এই ফাতাওয়া প্রদানের প্রয়াস।
উল্লেখিত ৭ খানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায উনাদের মৌলিক ওয়াক্তের কথা আলোচিত হয়েছে। তবে ছলাতুল জুমুয়াহ সম্পর্কে কোন কিছু সরাসরি আলোচিত হয়নি। মূলত: পবিত্র ছলাতুয যুহ্র উনার ওয়াক্তই হচ্ছে ছলাতুল জুমুয়াহ উনার ওয়াক্ত বা সময়।
পরবর্তী সংখ্যায় পাঁচ ওয়াক্ত নামায উনাদের শুরুর সময়, শেষ সময়, মুস্তাহাব সময় ও মাকরূহ সময় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। ইনশাআল্লাহ।
অসমাপ্ত
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন