[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন উনার শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করার পর-
৩২তম ফতওয়া হিসেবে
“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয
পূর্ব প্রকাশিতের পর
পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ‘আত-তাক্বলীদু গাইরুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত বহির্ভুত অনুসরণ’ উনার বিষয়ে পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম
পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস উনাদের দলীল-আদিল্লাহ উনাদের বিপরীতে নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো শায়তান ও তাগূতী যাবতীয় বাতিল মত-পথ মেনে চলাকে ‘আত-তাকলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা শারীয়াত বহির্ভুত অনুসরণ’ বলে। একে ‘তাকলীদুন নাফ্স’ ও ‘তাকলীদুল হাওয়া’ তথা প্রবৃত্তির অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।
নি¤েœ পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ‘আত-তাক্বলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা শরীয়াত বহির্ভূত অনুসরণ’ উনার সম্পর্কে পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উল্লেখ করে উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম বা বিধি-বিধান আলোচনা করা হলো-
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ৯
وَلَا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَه عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ اَمْرُه فُرُطًا.
অর্থ: ওই সমস্ত লোকের ইতায়াত (আনুগত্য) করবেন না, (যার বদআমলের দরুন) তার ক্বলবকে আমার যিক্্র থেকে গাফিল করে দিয়েছি। (আর আমার যিক্র থেকে গাফিল হওয়ার কারণেই) সে নাফ্সের পায়রবী করে থাকে। আর তার কাজগুলো শরীয়াত উনার খিলাফ। (পবিত্র সূরাতুল্ কাহ্ফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮)
অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ
তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
(৬২৩)
}وَلاَ تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَه عَن ذِكْرِنَا} عن توحيدنا {واتبع هَوَاهُ} فى عبادة الاصنام {وَكَانَ اَمْرُه} قوله {فُرُطًا} ضائعًا.
অর্থাৎ: (ওই সমস্ত লোকের আনুগত্য করবেন না, যার বদআমলের দরুন তার ক্বলবকে আমার যিক্্র থেকে গাফিল করে দিয়েছি) আমার তাওহীদ থেকে গাফিল হয়েছে। (আর আমার যিক্র থেকে গাফিল হওয়ার কারণেই সে নাফ্সের পায়রবী করে থাকে) প্রতিমা-মূর্তির উপাসনার মাধ্যমে। (আর তার কাজগুলো) তার কথা-বার্তা বা বক্তব্যগুলো (শরীয়াত উনার খিলাফ) অর্থাৎ নষ্ট হয়েছে। (তানবীরুল মাক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ওয়াফাত: ৬৮ হিজরী পবিত্র সূরাতুল্ কাহ্ফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮ সংকলক: মুহাম্মাদ বিন ইয়া’কূব ফীরোযাবাদী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮১৭ হিজরী)
(৬২৪)
}وَلاَ تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَه عَن ذِكْرِنَا} اى عن القراٰن {واتبع هَوَاهُ} فى عبادة الاصنام {وَكَانَ اَمْرُه فُرُطًا} اى ضياعًا، وقال السدى رحمة الله عليه: هلاكًا، قال ابو عبيدة رحمة الله عليه: ندمًا. قال المفسرون رحمة الله عليهم: اى سرفًا، وقال الزجاج رحمة الله عليه: تفريطًا وهو العجز.
অর্থাৎ: (ওই সমস্ত লোকের আনুগত্য করবেন না, যার বদআমলের দরুন তার ক্বলবকে আমার যিক্্র থেকে গাফিল করে দিয়েছি) অর্থাৎ পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার অনুসরণ থেকে। (আর আমার যিক্র থেকে গাফিল হওয়ার কারণেই সে নাফ্সের পায়রবী করে থাকে) প্রতিমা-মূর্তির উপাসনার মাধ্যমে। (আর তার কাজগুলো সম্মানিত শরীয়াত উনার খিলাফ) অর্থাৎ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হযরত সুদ্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: তার আমল সমূহ হালাক বা ধ্বংস। হযরত আবূ উবাইদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: অনুতাপ বা লজ্জায় নিপতীত। হযরত মুফাসসিরূন কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন: সময় অপচয়। হযরত যুজাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: বাতিল। (বাহরুল উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস সামারকান্দী পবিত্র সূরাতুল্ কাহ্ফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮ লেখক: হযরত আবুল লাইছ নছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৭৩ হিজরী)
(৬২৫)
}من اغفلنا قبله} جعلناه غافلًا عما يجب عليه من ذكرنا وعبادتنا {وكان امره فرطًا} اى ضياعًا وهلاكًا.
অর্থাৎ: (যার বদ আমলের দরুন তার ক্বলবকে আমার যিক্্র থেকে গাফিল করে দিয়েছি) আমরা তাকে গাফিল করেছি, অথচ আমার যিক্র করা ও ইবাদত করা তার জন্য ওয়াজিব ছিল। (আর তার কাজগুলো সম্মানিত শরীয়াত উনার খিলাফ) অর্থাৎ বিপরীত ও ধ্বংস। (আইসারুত্ তাফাসীর লিকালামিল আলিয়্যিল্ কাবীর পবিত্র সূরাতুল্ কাহ্ফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮ লেখক: হযরত জাবির বিন মূসা বিন আব্দুল ক্বাদির বিন জাবির আবূ বকর জাযায়িরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি)
(৬২৬)
وَقَوْلُه فِىْ هٰذِهِ الْاٰيَةِ الْكَرِيمَةِ: مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَه، يَدُلُّ عَلٰى اَنَّ مَا يَعْرِضُ لِلْعَبْدِ مِنْ غَفْلَةٍ وَمَعْصِيَةٍ.
অর্থাৎ: ‘যার বদ আমলের দরুন তার ক্বলবকে আমার যিক্র থেকে গাফিল করে দিয়েছি’ অত্র পবিত্র আয়াত কারীমাহ প্রমাণ করে যে, এখানে বান্দার গাফলাতী ও নাফরমানীকে প্রকাশ করা হয়েছে। (আদ্ওয়াউল্ বয়ান ফী ঈদ্বাহিল কুরআন বিল্ কুরআন পবিত্র সূরাতুল্ কাহ্ফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ আমীন বিন মুহাম্মাদ মুখতার বিন আব্দুল ক্বাদির জাকনী শানক্বীতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১৩৯৩ হিজরী)
(৬২৭)
}وَلا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَه عَنْ ذِكْرِنَا} اى جعلنا قلبه غافلا عن ذكرنا يعنى عيينة بن حصن، وقيل: امية بن خلف {وَاتَّبَعَ هَوَاهُ} اى مراده فى طلب الشهوات {وَكَانَ اَمْرُه فُرُطًا} قال قتادة ومجاهد رحمة الله عليهما: ضياعا، وقيل: معناه ضيع امره وعطل ايامه، وقيل: ندما، وقال مقاتل ابن حيان رحمة الله عليه: سرفا، وقال الفراء رحمة الله عليه: متروكا، وقيل باطلا، وقيل: مخالفا للحق، وقال الاخفش رحمة الله عليه: مجاوزا للحد، قيل: معنى التجاوز فى الحد هو قول عيينة رحمة الله عليه.
অর্থাৎ: (ওই সমস্ত লোকের আনুগত্য করবেন না, যার বদ আমলের দরুন তার ক্বলবকে আমার যিক্্র থেকে গাফিল করে দিয়েছি) অর্থাৎ আমরা তার ক্বলবকে আমরা যিক্র থেকে গাফিল করে দিয়েছি। অর্থাৎ সে ব্যক্তি হলো উয়াইনা বিন হিছান, কারো মতে: সে উমাইয়াহ বিন খল্ফ। (আর আমার যিক্র থেকে গাফিল হওয়ার কারণেই সে নাফ্সের পায়রবী করে থাকে) অর্থাৎ এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে শাহাওয়াত অন্বেষণকারী। (আর তার কাজগুলো সম্মানিত শরীয়াত উনার খিলাফ) হযরত ক্বতাদাহ ও মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বলেন: ধ্বংসে নিপতীত। কেউ বলেন: উনার অর্থ হলো, তার কাজ ধ্বংস হয়েছে ও তার দিনগুলো বেকার গেছে। কেউ বলেন: অনুতাপ-পরিতাপময়। হযরত মুক্বাতিল বিন হাইয়ান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: তার আমলগুলো অযথা। হযরত ফাররা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: বর্জিত কাজ। কেউ বলেন: বাতিল কাজ। কেউ বলেন: হক্ব উনার খিলাফ কাজ। হযরত আখফাশ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: সীমা লঙ্ঘিত কাজ। কেউ বলেন: সীমানার মধ্যে অতিক্রান্ত কাজ। ইহা হযরত উয়াইয়াহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্তি। (মায়ালিমুত্ তানযীল অর্থাৎ তাফসীরুল্ বাগবী পবিত্র সূরাতুল্ কাহ্ফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮ লেখক: মুহইস্ সুন্নাহ হযরত আবূ মুহাম্মাদ হুসাঈন বিন মাসঊদ বাগবী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫১০ হিজরী)
(৬২৮)
}اَغْفَلْنَا قَلْبَه عَن ذِكْرِنَا} اى جعلنَاهُ غافلًا عن القُرْاٰنِ والاسلام، قَوْلُه تَعَالٰى: {وَكَانَ اَمْرُه فُرُطًا} اى ضَيَاعًا ونَدَمًا، وَقِيْلَ: هلاكًا، وَقِيْلَ: مُخالفًا للحق، وَقِيْلَ: بَاطلًا، وَقِيْلَ: معناه: ضَيَّعَ امرَه وبطلَ ايامه.
অর্থাৎ: (যার বদ আমলের দরুন তার ক্বলবকে আমার যিক্্র থেকে গাফিল করে দিয়েছি) অর্থাৎ আমরা তাকে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও দীন ইসলাম থেকে গাফিল করে দিয়েছি। মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ইরশাদ মুবারক: (আর তার কাজগুলো শরীয়াত উনার খিলাফ) অর্থাৎ নষ্ট ও অনুতাপময়। কেউ বলেন: ধ্বংস। কেউ বলেন: হক্ব উনার খিলাফ কাজ। কেউ বলেন: বাতিল কাজ। কেউ বলেন: ফুরুত্বা উনার মর্মার্থ হলো- তার কাজ সমূহ নষ্ট হয়েছে এবং তার বিগত দিনের আমলসমূহ বাতিল বা বাদ। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম লিত্ ত্ববারানী পবিত্র সূরাতুল্ কাহ্ফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮ লেখক: হযরত আবুল ক্বাসিম সুলাইমান বিন আহমাদ বিন আইয়্যূব বিন মুত্বীর লাখমী শামী ত্ববারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৬০ হিজরী)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে যা প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে: মহান আল্লাহ তায়ালা ও নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের যিক্র থেকে, পবিত্র তাওহীদ, পবিত্র রিসালাত, পবিত্র নুবুওওয়াত, পবিত্র বিলায়াত, পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ, পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস, পবিত্র দীন ইসলাম ও পবিত্র শারীয়াত উনাদের থেকে যারা গাফিল তারাই তাদের নাফ্স-শাহাওয়াত বা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তারাই গাফিল, বাতিলের অনুসারী এবং তাদের আমল বা কাজ সমূহ অগ্রহণযোগ্য। এমন লোকদেরকে অনুসরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ইহাই মূল মর্মকথা।
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ১০
ووصينا الانسان بوالديه حسنا وان جاهداك لتشرك بى ما ليس لك به علم فلا تطعهما الى مرجعكم فانبئكم بما كنتم تعملون.
অর্থ: আমি মানুষদেরকে পিতা-মাতা উনাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে জোর নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু যদি তারা (পিতা-মাতা) তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব, যা কিছু তোমরা করতে। (পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮)
অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ
তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
(৬২৯)
قوله عز وجل: {وَوَصَّيْنَا الانسان بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا} يعنى ووصينا الانسان ان يفعل بوالديه ما يحسن يعنى براً بهما. وقال الكلبى رحمة الله عليه: نزلت الاية فى سعد بن ابى وقاص رضى الله عنه لما اسلم قالت له امه: يا سعد رضى الله عنه بلغنى انك صبوت الى دين محمد صلى الله عليه وسلم، فوالله لا يظلنى سقف بيت، وان الطعام والشراب على حرام حتى تكفر بمحمد صلى الله عليه وسلم، وترجع الى دينك الذى كنت عليه فابى عليها ذلك، فثبتت على حالها لا تطعم ولا تشرب ولا تسكن بيتًا، فلما خلص اليها الجوع لم تجد بداً من ان تأكل وتشرب، فحثّ الله سعد رضى الله تعالى عنه بالبر الى امه، ونهاه ان يطيعها على الشرك فقال: {وَاِن جاهداك لِتُشْرِكَ بِىْ مَا لَيْسَ لَكَ بِه عِلْمٌ} اى ما ليس لك به حجة يعنى الشرك {فَلاَ تُطِعْهُمَا} فى الشرك، ثم حذّره ليثبت على الاسلام فقال: {اِلَىَّ مَرْجِعُكُمْ} يعنى: مصيركم فى الاٰخرة {فَاُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُوْنَ} يعنى اخبركم بما كنتم تعملون فى الدنيا من خير او شر، واثيبكم على ذلك.
অর্থ: মহান আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা উনার ইরশাদ মুবারক: (আমি মানুষদেরকে পিতা-মাতা উনাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে জোর নির্দেশ দিয়েছি।) অর্থাৎ আমরা মানুষদেরকে আদেশ করেছি যে, তারা যেন পিতা-মাতাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে তথা সদাচরণ করে। হযরত কালবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয় ছাহাবী হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার ইসলাম গ্রহণকে কেন্দ্র করে। যখন হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি দীন ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন উনার মাতা উনাকে বললেন: হে হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু! আমার কাছে সংবাদ পৌঁচেছে যে, আপনি দীনে মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহণ করেছেন। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ক্বসম! তিনি যেন আমাকে এই বাড়ীর ছাদের নিচে ছায়া না গ্রহণ করান এবং খাদ্য-পানীয় আমার জন্য হারাম; যতক্ষণ না আপনি হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অস্বীকার না করছেন এবং আপনার পূর্ব ধর্মে ফিরে না আসছেন। হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি মায়ের এই শর্তকে অস্বীকার করলেন। তাই উনার মাতা না খাওয়া, না পান করা ও বাড়ীতে বসবাস না করার মধ্যে অবিচল থাকল। যখন তাকে ক্ষুধা কঠিন ভাবে ধরে বসল এবং খাওয়া-পান করা ছাড়া কোন পথ থাকল না, তখন মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে স্বীয় মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করতে উৎসাহিত করলেন এবং উনাকে নিষেধ করলেন যে- তিনি যেন উনার মাতার র্শিকমূলক কাজের অনুসরণ না করেন। অতপর তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: (কিন্তু যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই,) যার দলীল তথা শিরকের প্রমাণ তোমার কাছে নেই। (তবে তাদের আনুগত্য করো না।) র্শিকমূলক কাজের ব্যাপারে। অতপর তিনি তাকে সতর্ক করেছেন, যাতে সে দীন ইসলাম উনার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: (আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন।) অর্থাৎ তোমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল আখিরাত। (অতপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব, যা কিছু তোমরা করতে।) অর্থাৎ আমি তোমাদের দুনিয়ায় কৃত ভাল-মন্দ আমলের ব্যাপারে খবর নিব এবং তা অনুযায়ী তোমাদেরকে প্রতিদান দিব। (বাহরুল উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস্ সামারকান্দী পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ-৮ লেখক: হযরত আবুল লাইছ নছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৭৩ হিজরী)
(৬৩০)
}فلاتطعهما} فى ذلك فانه لاطاعة لمخلوق فى معصية الخالق كما ورد فى الحديث ويدخل فيه الاستاذ والامير اذا امرا بغير معروف وهو ما انكره الشارع عليه.
অর্থ: (তবে তাদের আনুগত্য করো না) র্শিক ব্যাপারে। কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে- ‘মহান খালিক আল্লাহ তায়ালা উনার নাফরমানী করে কোন মাখলূকের আনুগত্য করা জায়িয নেই।’ এ হুকুমের মধ্যে উস্তায বা শিক্ষক ও আমীর বা রাজা-বাদশারাও প্রবিষ্ট। সম্মানিত শারীয়াত প্রণেতা যা অপছন্দ করেন তার বিপরীতে অন্যায় কোন রায় প্রদান করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল্ হাক্কী পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ-৮ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা ইস্তাম্বূলী খালওয়াতী বারূসাবী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)
(৬৩১)
يَاْمُرُ الله تَعالى عِبَادَهُ الـمُؤْمِنينَ بالاحسانِ الى الوَالِدينِ لاَنَّهُما سَبَبُ وُجُودِ الاِنْسَانِ وَلَهُمَا عَلَيهِ الفَضْلُ الكَبيرُ. وَلكِنْ اِذا كَانَ الوَالِدَانِ مُشْرِكَينِ واَمَرا وَلدَهُما الـمُؤْمِنَ بِمَا فِيهِ كُفْرٌ وَمَعْصِيَةٌ للهِ تَعَالى اَوْ اَمَراهُ باَن يُّشْرِكَ باللهِ مَا لا عِلمَ لَه باُلُوهِيَّتِه (مَا لَيسَ لَكَ بِه عِلْمٌ) فَعَلَيهِ اَنْ لاَ يُطِيعَهُما لاَنّ حَقَّ اللهِ اَعظَمُ مِنْ حَقِّ الوَالِدينِ اِذْ “لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فى مَعصِيَةِ الخَالِقِ” كَمَا جاءَ فى الحَدِيثِ الصَّحِيحِ.
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার মু’মিন-মুসলমান বান্দাদেরকে তাদের পিতা-মাতা উনাদের প্রতি সদয় হতে আদেশ করেছেন। কেননা, উনারা দু’জন মানুষ অস্তিত্ত্বে আসার মাধ্যম বা উপকরণ এবং এজন্য সন্তানের কাছে উনাদের দু’জনের বড় মর্যাদা রয়েছে। কিন্তু যখন পিতা-মাতার দু’জনেই মুশরিক হয় এবং তাদের মু’মিন-মুসলমান সন্তানকে কুফরী ও মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সাথে নাফরমানীর আদেশ দেয় অথবা তারা দু’জন উক্ত সন্তানকে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সাথে শরীক করতে আদেশ করে যে উলূহিয়্যাত সম্পর্কে তাদের কোন ইল্ম নেই; তখন উক্ত সন্তানের উপর ফরয-ওয়াজিব হয়ে যায় যে, উক্ত পিতা-মাতা উভয়কে অনুসরন না করা। কেননা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার হক্ব বা অধিকার পিতা-মাতার হক্ব বা অধিকারের থেকেও অনেক বড়। যেমনটি পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে: ‘মহান খালিক বা ¯্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা উনার নাফরমানী করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা জায়িয নেই’। (আইসারুত্ তাফাসীর পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ-৮ লেখক: আসয়াদ হাওমাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি)
(৬৩২)
ومعناها: ووصَّينا الانسانَ بالبرّ والاحسانِ الى وَالِدَيهِ وقُلنا له: وانْ طَلَبَا منكَ ان تُشْرِكَ بى ما ليسَ لك بهِ عِلْمٌ فلا تُطِعْهُمَا، فانَّ طاعتَهما فى الاشْرَاكِ والمعصيةِ “ليس” من باب الحسن بل هى قبيحةٌ. قال رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِى مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ.
অর্থ: অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাৎপর্য এই যে: আমরা মানুষদেরকে আদেশ করেছি যে, তারা তাদের পিতা-মাতাদের সাথে সৎ ও সদয় আচরন করবে। আমরা তাকে বা সন্তানকে বলব যে: যদি পিতা-মাতা তোমার থেকে আমার সাথে শরীক করার মত কোন কিছু তলব করে, যার ইল্ম তোমার কাছে নেই, তবে তুমি তাদের দু’জনের কাউকে অনুসরণ করবে না। কেননা, এমতাবস্থায় তাদের অনুসরনের মধ্যে শিরকী ও নাফরমানী রয়েছে। যা কোন মঙ্গলময় কাজ নয়, বরং তা লাঞ্চনাময় কাজ। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: মহান খালিক বা ¯্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা উনার নাফরমানী করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা জায়িয নেই। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম লিল্ ত্ববারানী পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ-৮ লেখক: হযরত আবুল ক্বাসিম সুলাইমান বিন আহমাদ বিন আইয়্যূব বিন মুত্বীর লাখমী শামী ত্ববারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৬০ হিজরী)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে যা প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে: মহান আল্লাহ তায়ালা ও উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানী করে অর্থাৎ উনাদের আদেশ লঙ্ঘন করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা জায়িয নেই। তাই পিতা-মাতা যদি কাফির, মুশরিক ও যেকোন বিধর্মী হয় তাহলে তাদেরকে কখনোই অনুসরণ করা যাবে না। তবে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে হবে এবং তাদের ভরণ-পোষণ ঠিকমত দিতে হবে। বাহ্যিকভাবে তাদেরকে কোন কষ্ট দেয়া যাবে না। পাশাপাশি তাদেরকে দীন ইসলাম উনার পথে আসার জন্য নছীহত অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু পিতা-মাতা যদি মু’মিন-মুসলামান পরহেযগার-মুত্তাক্বী ও আলিম-আলিমাহ হন, তাহলে উনারদের খিদমত করতে হবে এবং উনাদের সম্মানিত শারীয়াত সম্মত আদেশ-নির্দেশ মান্য করতে হবে। এটাই পবিত্র শারীয়াত উনার হুকুম।
পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ১১
وان جاهدك على ان تشرك بى ما ليس لك به علم فلا تطعهما و صاحبهما فى الدنيا معروفا.
অর্থ: পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না। কিন্তু দুনিয়াতে তাদের সাথে সৎ আচরণ করে চলবে। (পবিত্র সূরাহ লুক্বমান শরীফ-১৫)
অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ
তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
(৬৩৩-৬৩৪)
فلا يجوز للولد ان يطيعهما فى المعصية.
অর্থ: কোন সন্তানের জন্য নাফরমানীমূলক কাজে তার পিতা-মাতাকে অনুসরণ করা জায়িয নেই। (বাহরুল উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস্ সামারকান্দী পবিত্র সূরাহ লুক্বমান শরীফ-১৫ লেখক: হযরত আবুল লাইছ নছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৭৩ হিজরী, রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী)
(৬৩৫)
فيجب على المسلم نفقة الوالدين ولو كانا كافرين وبرهما وخدمتهما وزيارتهما الا ان يخاف ان يجلباه الى الكفر وحينئذ يجوز ان لا يزورهما ولا يقودهما الى البيعة لانه معصية ويقودهما منها الى المنزل.
অর্থ: পিতা-মাতা কাফির হলেও তাদের জন্য অর্থ-সম্পদ খরচ করা মুসলিম সন্তানের উপর ওয়াজিব বা ফরয। তাদের সাথে সদাচরণ করতে হবে, তাদের খিদমত করতে হবে ও তাদেরকে দেখা-শুনা করতে হবে। কিন্তু তাদের সাক্ষাৎ করতে গেলে যদি কুফরীর দিকে ঝুঁকে যাওয়ার ভয় থাকে, এমতাবস্থায় সাক্ষাৎ না করাও জায়িয রয়েছে। তাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য তাদের উপাসনালয়ে গিয়ে বসবে না, কেননা এটা একটি নাফরমানী। তবে তাদের ঘরে তাদের কাছে বসতে পারবে। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল্ হাক্কী পবিত্র সূরাহ লুক্বমান শরীফ-১৫ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা ইস্তাম্বূলী খালওয়াতী বারূসাবী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)
(৬৩৬)
}وَصَاحِبْهُمَا فِى الدُّنْيَا مَعْرُوفًا} اى صحبة احسان اليهما بالمعروف، واما اتباعهما وهما بحالة الكفر والمعاصى فلا تتبعهما.
অর্থ: (দুনিয়াতে তাদের সাথে সদাচরণ করে চলবে) অর্থাৎ তাদের সাথে উত্তমভাবে দয়াদ্রতার সাথে চলবে। কিন্তু অনুসরণের ব্যাপারে তারা কুফরী ও নাফরমানী হালতে থাকাবস্থায় তাদেরকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করবে না। (তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান অর্থাৎ তাফসীরুস সা’দী পবিত্র সূরাহ লুক্বমান শরীফ-১৫ লেখক: হযরত আব্দুর রহমান বিন নাছির বিন আব্দুল্লাহ সা’দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত:১৩৭৬ হিজরী)
(৬৩৭)
ان الاٰية قد تضمنت النهى عن صحبة الكفار والفساق والترغيب فى صحبة الصالحين فان المقارنة مؤثرة.
অর্থ: অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে কাফির ও ফুস্সাক্ব তথা যাবতীয় গুনাহগারদের ছুহবতকে নিষেধের অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর ছালিহীন তথা নেককার-পরহেযগার-ওয়ালীআল্লাহ উনাদের ছুহবত অর্জন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা, উনাদের সাহচর্য মানুষকে ভাল হতে ক্রিয়া করে। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল্ হাক্কী পবিত্র সূরাহ লুক্বমান শরীফ-১৫ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা ইস্তাম্বূলী খালওয়াতী বারূসাবী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)
(৬৩৮)
قال ابراهيم قدس سره دواء القلب خمسة: قراءة القراٰن بالتدبر واخلاء البطن وقيام الليل والتضرع الى الله تعالى عند السحر ومجالسة الصالحين.
অর্থ: হযরত ইবরাহীম কুদ্দিসা সিররুহূ তিনি বলেছেন: ক্বলব বা অন্তরের ঔষধ পাঁচ প্রকার। যথা: (১) উপলব্ধির সাথে পবিত্র কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা। (২) পেট খালী রাখা। (৩) রাত্রিবেলা তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামায পড়া। (৪) শেষ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে বিনয়ের সাথে ডাকা বা যিক্র করা বা দুয়া’ করা। (৫) ছালিহীন তথা ওয়ালীআল্লাহ উনাদের মাজলিসে ছুহবতে বসা। সুবহানাল্লাহ। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল্ হাক্কী পবিত্র সূরাহ লুক্বমান শরীফ-১৫ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা ইস্তাম্বূলী খালওয়াতী বারূসাবী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে যা প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে: কোন সন্তানের জন্য নাফরমানীর ব্যাপারে তার পিতা-মাতাকে অনুসরণ করা জায়িয নেই। পিতা-মাতা কাফির হলেও তাদের জন্য অর্থ-সম্পদ খরচ করা মুসলিম সন্তানের উপর ওয়াজিব বা ফরয। তাদের সাথে সদাচরণ করতে হবে, তাদের খিদমত করতে হবে ও তাদেরকে দেখা-শুনা করতে হবে। কিন্তু তাদের সাক্ষাৎ করতে গেলে যদি কুফরীর দিকে ঝুঁকে যাওয়ার ভয় থাকে, এমতাবস্থায় সাক্ষাৎ না করাও জায়িয রয়েছে। তাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য তাদের উপাসনালয়ে গিয়ে বসবে না, কেননা এটা একটি নাফরমানী। তবে তাদের ঘরে তাদের কাছে বসতে পারবে। এছাড়াও প্রমাণিত হয়েছে যে, ছালিহীন বা ওয়ালীআল্লাহ উনাদের ছুহবত অর্জন করা সকলের জন্য ফরয এবং নিজের ইছলাহিয়্যাতের কারণ। সুবহানাল্লাহ।
‘আত-তাক্বলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা শরীয়াত বহির্ভূত অনুসরণ’ উনার সম্পর্কে গত কয়েকটিসহ বর্তমান সংখ্যায় প্রকাশিত মোট ১১ খানা পবিত্র আয়াত শরীফ উল্লেখ করে উনাদের ছহীহ তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম বা বিধি-বিধান থেকে যা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হল, তার মূল বিষয় হচ্ছে: পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ বা পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস উনাদের খিলাফ কোন কাজ করা যাবে না এবং উনাদের খিলাফ কাজ করে এমন কোন ব্যক্তিকে অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবে না। যেহেতু এমন অনুসরণ হারাম ও নাজায়িয। কারণ, এমন অনুসরণকেই ‘আত-তাকলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা শারীয়াত বহির্ভুত অনুসরণ’ বলে। একে ‘তাকলীদুন নাফ্স’ ও ‘তাকলীদুল হাওয়া’ তথা প্রবৃত্তির অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।
আয় মহান আল্লাহ তায়ালা! আপনি আমাদেরকে ‘আত-তাকলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা শারীয়াত বহির্ভুত অনুসরণ’ করা থেকে হিফাযত করে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শারীয়াত সম্মত অনুসরণ’ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
অসমাপ্ত
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন