পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার গুরুত্বপূর্ণ  ও নির্ভরযোগ্য কিতাব “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আদম” নিয়ে বাতিল ফিরকার কিছু চিরাচরিত আপত্তির খণ্ডমূলক জাওয়াব এবং এ প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

সংখ্যা: ২৬৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

এক শ্রেণীর মানুষ দুনিয়ায় সব সময়ই ছিলো এবং আছে যাদেরকে চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করে দেখালেও তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে সত্য বলে মেনে নেয়নি এখনো মানবে না। নূরে মুজাসসাম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মান মুবারক তারা সহ্য করতে পারে না। নাউযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান আগমন উপলক্ষে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করাকেও তারা সহ্য করতে পারে না। নাউযুবিল্লাহ।

পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ বা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর লিখিত অন্যতম একটি কিতাব হচ্ছে “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আদম”। লেখক হচ্ছেন বিখ্যাত মুহাদ্দিছ অসংখ্য কিতাবের মুছান্নিফ হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহতুল্লাহি আলাইহি। এ কিতাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম, হযরত তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম, মাযহাব উনার ইমাম ও বিখ্যাত অনেক আলিম উনাদের কওল শরীফ বিদ্যমান রয়েছে। বিরোধীতাকারীদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে এখানেই। কারন এ কিতাবকে যদি মেনে নেয়া হয় তবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার আর বিরোধীতা করার অবকাশই থাকে না।

সূতরাং তারা উক্ত কিতাবের বিরোধীতা শুরু করে। তাদের কতিপয় ভিত্তিহীন আপত্তি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, তাদের কিছু আলোচনা কর্ণগোচর হয়েছে। তার জবাবগুলো এখানে সংক্ষেপে দেয়া হবে। আর এ বিষয়ে সম্মানিত রাজারবাগ দরবার শরীফ উনার গবেষনাগার থেকে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিস্তারিত কিতাব আকারে প্রকাশ হবে ইনশাআল্লাহ।

“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবকে অস্বীকার করতে গিয়ে তারা কিছু আপত্তি উঠিয়েছে। সেখান থেকে কিছু বিষয় নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ!

১নং আপত্তি: পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ ৭ম হিজরী থেকে শুরু হয়েছে বাদশা মালেক মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময় থেকে। যদি তাই হয় তবে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা কিভাবে পালনের কথা বলেন?

জবাব: পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ ৭ম হিজরী থেকে শুরু হয়েছে কথাটা চরমমূর্খতা সূচক হয়েছে। তাদের উছূল অনুযায়ীও যদি দেখা যায় তাহলেও জাতীয়ভাবে আরো আগে থেকে পালন হচ্ছে। এ বিষয়ে হাফিযে হাদীছ হযরত ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وكان يعمل بمولد رسول الله صلي الله عليه و سلم في كل سنة، ويحضر عند صاحب الموصل والاكابر، وكان نور الدين يحبه ويكاتبه

অর্থ: হযরত নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতিবছর ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতেন। এবং এ সময় মওছূলের শাসক ও নেতৃস্থানীয়রা উপস্থিত থাকতেন। হযরত নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে মুহব্বত করতেন ও পত্র লিখতেন। (ইকদুল জুমান ফী তারীখি আহলিয যামান ১৬৩ পৃষ্ঠা, লেখক : হযরত বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি)

হযরত নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইরবিলের বাদশা হযরত মালিক মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চাচাশশুড় ছিলেন। পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ধারাবাহিকতা হযরত মালিক মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আগেই বাদশা হযরত নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শুরু করেন। সুবহানাল্লাহ!

বাদশা মুজাফফর আবূ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আগে থেকেই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাঁকজমকের সাথে পালিত হতো। হযরত মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন যফার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৯৭- ৫৬৫ হিজরী) তিনি উনার “আদ দুররুল মুনায্যাম” গ্রন্থে লিখেন-

وقال العلامة ابن ظفر رحمه الله تعالى بل فى الدر المنظم: وقد عمل الـمحبون للنبى صلى الله عليه وسلم فرحا بمولده الولائم، فمن ذلك ما عمله بالقاهرة المعزية من الولائم الكبار الشيخ ابو الحسن المعروف بابن قفل قدس الله تعالى سره، شيخ شيخنا ابى عبد الله محمد بن النعمان، وعمل ذلك قبل جمال الدين العجمي الهمدانى وممن عمل ذلك على قدر وسعه يوسف الحجار بمصر وقد راى النبى صلى الله عليه وسلم وهو يحرض يوسف الـمذكور على عمل ذلك

অর্থ: হযরত আল্লামা ইবনে যফার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বরং আদ দুররুল মুনায্যাম কিতাবে উল্লেখ আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আশিকগন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের খুশিতে খাওয়া দাওয়া ও দাওয়াতের আয়োজন করে আসছেন। (মিশরের রাজধানী) কায়রোর যে সকল ব্যক্তি বড় বড় দাওয়াতের আয়োজন করেছেন, তাদের মধ্যে শায়েখ আবুল হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি মশহুর ছিলেন ইবনে কুফুল কাদ্দাসাল্লাহু তায়ালা সিররাহূ নামে। তিনি আমাদের শায়েখ আবূ আব্দুল্লাহ ইবনে নুমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। এই বরকতময় আমল হযরত জামালুদ্দীন আযমী হামদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি করেছেন। মিশরে হযরত ইউসুফ হাজ্জার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও ব্যাপক পরিসরে উদযাপন করেছেন। এরপর তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখলেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইউসুফ হাজ্জার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উল্লেখিত আমলের জন্য উৎসাহ প্রদান করছেন। সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সিরাতে খাইরিল ইবাদ ১ম খন্ড ৩৬৩ পৃষ্ঠা)

ইতিহাস সাক্ষী বাদশা মুজাফফর আবূ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আগে থেকেই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবীল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হতো। আয়োজন করা হতো। দাওয়াত করে মানুষদেরকে খাওয়ানো হতো। সুবহানাল্লাহ!

এখানেই শেষ নয়, কিতাবে উল্লেখ আছে, ৩৯৪ হিজরীতে মিশরে মাসব্যাপী পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবীল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হতো। আপত্তিকারীদের দেয়া সনের প্রায় ২০০ বছর আগে।

বিখ্যাত আলিমে দ্বীন ইমাম মিকরিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “তাজুল হুনাফা” কিতাবে এ প্রসঙ্গে লিখেন-

سنة اربع وتسعين وثلثمائة

তিনশত চুরানব্বই হিজরী

وفي ربيع الاول الزم الناس بوقود القناديل بالليل فى سائر الشوارع والازقة بمصر

অর্থ: “পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ মাসে (সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে) সব মানুষকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করে দেয়া হলো, সম্পূর্ণ মাস সমস্ত রাস্তায় রাস্তায় এবং রাস্তার অলি গলিতে বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হবে।” সুবহানাল্লাহ! (তাজুল হুনাফা ২/৪৮, আলজামিউ ফিল মাওলূদ ৩/১২)

সূতরাং প্রমাণিত হলো যে, ৭ শত হিজরীতে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম শুরু  হয়েছে, কথাটি মোটেও ঠিক নয়। ৪ শত হিজরীতেও আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয়ভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হয়েছে। আরো পিছনের দিকে যদি দৃষ্টিপাত করা হয় তবে দেখা যায় ৩শত হিজরী শতকেও পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা হতো।

মুফাসসির আন নাক্কাস রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৬৬-৩৫১ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থানে প্রতি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ দুপুরে দোয়া করা হতো।” (আল ফাসি শিফা আল গারাম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৯)

হিজরী ৩য় শতকের পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মুসলিম ইতিহাসবিদ আল আজরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২১৯ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেন-

فَمِنْهَا الْبَيْتُ الَّذِي وُلِدَ فِيهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ دَارِ ابِىْ يُوسُفَ، وَلَمْ يَزَلْ هَذَا الْبَيْتُ فِى الدَّارِ حَتَّى قَدِمَتِ الْخَيْزُرَانُ اُمُّ الْخَلِيفَتَيْنِ مُوسٰى، وَهَارُونَ، فَجَعَلَتْهُ مَسْجِدًا يُصَلَّى فِيْهِ،

অর্থ: অতঃপর “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই ঘর মুবারকে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সেই ঘর মুবারকখানা ছিলেন হযরত আবূ ইউসুফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়ির অন্তর্ভুক্ত। বাড়ির ঐ ঘর মুবারকে সার্বক্ষণিক (এমন বরকতময় ছিলেন যে, তা হাছিলের জন্যে) সেখানে খলীফা মুসা (হাদী) ও খলীফা হারুনুর রশীদ উভয়ের মাতা খায়জুরান রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি তাশরীফ আনেন। সেই জায়গায় নামায আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মক্কাহ, ৪র্থ খণ্ড, ৫ পৃষ্ঠা)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেখানে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সেখানে নামায আদায় হতো। অর্থাৎ সেখানে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা হতো।

এখন আপনারাই বলুন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ কি ৭ম হিজরীতে হয়েছে?

এভাবে পর্যয়ক্রমে উপরের দিকে গেলে দেখা যায় খাইরুল কুরুন থেকেই পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন হয়ে আসছে। এই আমলতো আর আকষ্মিকভাবে হয়নি। স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই পালন করেছেন। সুবহানাল্লাহ।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ সৃষ্টির শুরু থেকেই হয়ে আসছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরা ইউনূস শরীফ ৫৮ নং আয়াত শরীফ উনার দলীল। আর বিশুদ্ধ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ قَتَادَةَ الاَنْصَارِىِّ رَضِىَ الله عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم … وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ قَالَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيْهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ اَوْ اُنْزِلَ عَلَىَّ فِيْهِ.

অর্থ: “হযরত আবূ ক্বতাদা আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ ও ইয়াওমুল খ্বামীস রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, এদিন (ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ) আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, আর এদিনই আমার উপর পবিত্র ওহী বা পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭, আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৮, সুনানে কুবরা লি বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮২১৭, ইবনে খুযাইমা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২১১৭, মুসনাদে আবি আওয়ানা : হাদীছ শরীফ নং ২৯২৬, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২২৬০৩)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে যে বিষয়গুলো পরিষ্কার হচ্ছে সেটা হলো-

১) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই নিজের পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষ্যে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেছেন।

২) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন উপলক্ষে তিনি শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রেখেছেন।

৩) এতটাই গুরুত্ব¡ দিয়েছেন যে, প্রতি সপ্তাহে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষ্যে উনার যে বার অর্থাৎ পবিত্র ইছনাইনিল আযীম শরীফ সেদিন নির্দিষ্ট করে নিয়ে পালন করেছেন।

৪) অতএব পরবর্তী উম্মত যদি পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে তবে উক্ত আমল মুবারক সুন্নাতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হবে।

৫) কেউ যদি পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা বিদয়াত বলে তাহলে একটি খাছ সুন্নতকে বিদয়াত বলার কারণে কুফরী হবে।

৬) কেউ যদি বলে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবীল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাইরুল কুরুনে ছিলো না, কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা হবে।

৭) কেউ যদি বলে ৬০০ হিজরীর পরে ঈদে মীলাদে হাবীবীল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চালু হয়েছে সেটাও ডাহা মিথ্যা বলে গণ্য হবে।

যেহেতু ইবাদতের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করতে হয় তাই কেউ যদি ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন উপলক্ষে ছলাত- সালাম পাঠ করে, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, পবিত্র যিকির করে, মানুষকে খাবার খাওয়ায়, দান ছদ্কা করে, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে আলোচনা করে সবই গ্রহণযোগ্য। কারন প্রতিটিই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে রোযা রেখে শুকরিয়া আদায় করে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের বিষয়টা স্পষ্ট করে দিলেন। এখন উম্মত সম্মানিত শরীয়ত সম্মত যেকোন উপায়ে শুকরিয়া আদায় করতে পারবে। সবচাইতে বড় কথা এই বিশেষ দিবসসমূহ পালনের আদেশ স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি দিয়েছেন। বিশেষ দিনসমূহ স্মরন সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللّٰـهِ ۚ اِنَّ فِى ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ

অর্থ: তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার দিনসমূহ স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ধৈর্য্যশীল শোকরগুযার বান্দা বান্দিদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিবস কতটা তাৎপর্যপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ। এই দিন হচ্ছেন অন্য সকল দিনের চাইতেও শ্রেষ্ঠ। আর এমন দিনের স্মরন করানোর আদেশ মুবারক মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক অনুযায়ী এই বিশেষ দিন স্মরন করা, সে দিনের বিশেষ ঘটনাবলী আলোচনা করা, সে দিন যে মহান ব্যক্তিত্ব উনার কারণে শ্রেষ্ঠ হলেন উনার ছানা ছিফত মুবারক করা, শুকরিয়া মুবারক আদায় করা এটা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক উনার অন্তর্র্ভুক্ত। আর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা যে উক্ত দিবস পালন করতে বলবেন, উনার ফযীলত তুলে ধরবেন এটাইতো স্বভাবিক।

আর এদিন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা ও শুকরিয়া আদায় করা একমাত্র ধৈর্য্যশীল ও শোকরগুজার বান্দাদের পক্ষেই সম্ভব। কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিদ্বেষী বিদয়াতি ওহাবীদের পক্ষে সম্ভব নয়।

২নং আপত্তি: বাদশা হযরত আবু সাঈদ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেহেতু চালু করেছেন তাই এটা বিদয়াত। এমনকি অনেক উলামায়ে কিরাম এই অনুষ্ঠানকে বিদয়াতে হাসানাও বলেছেন।

জাওয়াব: বাদশা হযরত আবু সাঈদ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে প্রথম সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেননি তার দলীল আমরা ইতিপূর্বে দিয়েছি। মূলত বাদশা হযরত মালিক মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই অনুষ্ঠানকে বিদায়াতে হাসানাহ বলার কারণ হচ্ছে তিনি সমস্ত দেশের মানুষকে নিয়ে জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠান করে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেছেন। এই পদ্ধতি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের যামানায় ছিলো না তাই এটা বিদয়াতে হাসানাহ বলেছেন। মূল অনুষ্ঠান বা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন নিয়ে কারো কোন আপত্তি নেই।

উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তারাবীহ নামায নিয়মিতভাবে জামায়াতে পড়ার আমল জারী বা উদ্ভাবন করার পর তিনি নিজেই বলেন-

نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هٰذِه.

এ পদ্ধতিটি উত্তম বিদ্‘য়াতের অন্তর্ভুক্ত। (বুখারী শরীফ : হাদীছ শরীফ ২০১০, বায়হাক্বী শরীফ ৪৭৮৬)

এখন এই বিদয়াত লেখা দেখে যদি বলা হয় তারাবীহর নামায বিদয়াত। এ নামায পড়া যাবে না তাহলে কি সেটা সঠিক হবে? স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই তারাবীহ উনার নামায পড়েছেন। তাহলে বিদয়াত বলা হলো কেন? বিষয়টা হচ্ছে, যেহেতু আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত জামায়াতে পড়া নির্দিষ্ট করেছেন তাই এই কাজকে বিদয়াতে হাসানাহ বলা হয়েছে। মূল তারাবীহ বিদয়াত হয়ে যায়নি।

বিদয়াত শব্দ হলেই যদি গোমরাহী বা পরিত্যাজ্য হয় তবে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আমল কি গোমরাহী ছিলো? নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!! নাউযুবিল্লাহ! মোটেও নয়, বরং তা বরকতময় সুন্নত। হাফিয ইবনে রজব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন, “বিদয়াত ঐ বিষয়কে বলা হয়, যার ভিত্তি পবিত্র শরীয়ত উনার মধ্যে নেই। সুতরাং সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে যে বিষয়সমূহের ভিত্তি রয়েছে, সম্মানিত শরীয়ত মুতাবিক তা বিদয়াত নয়, যদিও আভিধানিক অর্থে বিদয়াত বলা হয় ।” (জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম পৃঃ১৯৩, ইরশাদুল উনূদ পৃঃ১৬১)

বর্তমান বিরোধীতাকারীদের মুরুব্বী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী তার ফতওয়ায়ে রশীদিয়াতে লিখেছে, “বিদয়াত কখনো হাসানা হয় না, যাহাই হাসান বলা হয় তাই সুন্নত নামে অভিহিত। ইহা এস্তেরাহেব প্রকারভেদ মাত্র, কিন্তু উভয়ের মর্ম একই। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া ২৮৮ পৃষ্ঠা)

সূতরাং যেটা প্রমাণ হলো, বাদশা হযরত আবূ সাঈদ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি আলাইহি তিনি যা করেছেন তার পদ্মতি বিদায়াতে হাসানাহ কিন্তু মূল আমল বা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সেটা বিদয়াত নয়। যা আমরা উপরোক্ত আলোচনায় দেখেছি। এখানে একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে-

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজীবুর রহমান জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়োজন করেন এবং ছুটি ঘোষনা করেন। বর্ণিত আছে, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম হাক্বানী আলিম উলামাদের সুসংগঠিত করে পবিত্র ইসলাম উনার সঠিক রুপরেখা জনগণের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহন করেন। তাঁর দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় সীরাত মজলিস নামে ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পবিত্র শাহরুলূ আ’যম রবীউল আওয়াল শরীফ মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথ বৃহত্তর আঙ্গিকে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচী গ্রহন করে। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু বাইতুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন । সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয়ভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের উদ্বোধন উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রতি বছর জাতীয়ভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপন হয়ে আসছে। পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, পবিত্র শবে ক্বদর, পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি ঘোষনাও করেন। (তথ্যসূত্রঃ আবু তাহের মুহম্মদ মানজুর, ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান,ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা জানুয়ারী-মার্চ-২০০৯ পৃ-৪১, মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান,মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও ইসলাম সম্প্রসারণে শহীদ বঙ্গবন্ধু শহীদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবদান)

এখন এ কারনে যদি বলা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চালু করেছেন, এর আগে এই আমল ছিলো না তা যেমন গ্রহনযোগ্য হবে না, তেমনিভাবে একই কারনে বাদশা হযরত মালিক মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি আলাইহি তিনিও সর্বপ্রথম পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চালু করেছেন সেটাও গ্রহনযোগ্য হবে না। মূলত পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম থেকেই ছিলো বাদশা হযরত মালিক মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি আলাইহি তিনি জাতীয়ভাবে আয়োজনের ব্যবস্থা করেছেন মাত্র।

৩ নং আপত্তি:  তুরষ্কের মাকতাবায়ে হাক্বীকা এটা প্রকাশ করেছে। ইতিপূর্বে এই ধরনের কোন বর্ণনা আর কোন কিতাবে দেখা যায় না। আর ২০০০, জুন মাসে প্রথম আল বাইয়্যিনাত শরীফে এসেছে খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র হাদীছ শরীফ। এছাড়া উক্ত জাল কিতাবের রেফারেন্স কেউ দেয় নাই।

জবাব: হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরিচিতি সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি উনার যামানায় অনুসরণীয় হক্কানী-রব্বানী আলিমে দ্বীন ছিলেন। তিনি মিসরের বিশিষ্ট ফক্বীহ ও গবেষক হিসেবে খ্যাত ছিলেন। উনার প্রজ্ঞাময় ফতওয়া দ্বারা শাফিয়ী মাযহাব সমৃদ্ধি লাভ করেছে। উনার বিশেষ উপাধি হচ্ছে শায়খুল ইসলাম। মিসরের পশ্চিম প্রান্তে ‘আবুল হাইতাম’ নামক মহল্লায় উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ (জন্ম) হয়। উনার বিলাদত সন ৮৯৯ হিজরী মতান্তরে ৯০৯ হিজরী। আর পবিত্র মক্কা শরীফ এ উনার বিছাল শরীফ (ইনতিকাল) হয়। উনার ইনতিকাল সন ৯৭৪ হিজরী। তিনি পৃথিবীর অন্যতম বিদ্যাপীঠ মিসরের আল আজহার বিশ্ব বিদ্যালয়ে লেখা পড়া সম্পন্ন করেন।

আল্লামা মুছ্তফা আব্দুল্লাহ কুস্তান্তানী রূমী হানাফী মাশহূর মুল্লা কাতিবুল্ জালী হাজী খলীফাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি (জন্ম: ১০১৭ হিজরী ইন্তিকাল: ১০৬৭ হিজরী) উনার বিখ্যাত কিতাব কাশফুয্ যুনূন আন্ আসামিল্ কুতুবি ওয়াল্ ফুনূন ৫ম খন্ড ১২১ পৃষ্ঠায় হযরত আহমদ বিন মুহম্মদ বিন মুহম্মদ বিন আলী বিন হাজার শিহাবুদ্দীন হাইতামী (হাইছামী) মাক্কী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আলোচানা করেছেন। সেখানে উনার লিখিত ৫৮টি কিতাবের তালিকা দেয়া আছে। সেখানে দুইটা উল্লেখযোগ্য কিতাবের নাম হচ্ছে (১) আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম বিমাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আদাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (২) ইতমামুন্ নি’মাতিল কুবরা আলাল আলাম বিমাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আদাম।

পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্ম্পকে দলীল দিতে গিয়ে আমরা “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাব থেকে দলীল দিই। কিন্তু যারা বিরোধিতা করে তারা বলে নি’মাতুল কুবরা কিতাবটা জাল কিতাব যা তুরষ্কের “মাকতাবায়ে হাক্কীকাহ” বের করেছে। আমরা যখন উক্ত কিতাব পেশ করি তখন একশ্রেণীর উগ্রপন্থী মানুষ উক্ত কিতাবকে অস্বীকার করে অনেক আপত্তিকর বক্তব্য দেয়। তারা বলে নি’মাতুল কুবরা কিতাবে এমন কোন বক্তব্য নাই। নাঊযুবিল্লাহ। তারা বলে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে এমন কোন বক্তব্য অন্য কোন কিতাবেও পাওয়া যায়নি। আর সুমহান রাজারবাগ দরবার শরীফ থেকে প্রকাশিত মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে সেটা প্রচার করা হচ্ছে। এখন আমরা দেখবো পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ সংশ্লিষ্ট বর্ণনাগুলো কি শুধু তুরষ্কের মাকতাবায়ে হাক্কীকাহ প্রকাশনীর নি’মাতুল কুবরা আর আল বাইয়্যিনাত শরীফেই আছে নাকি পূর্ববর্তী আরো অনেক বিখ্যত কিতাবসমূহেও আছে।

মাকতাবায়ে হাক্কীকা নি’মাতুল কুবরা বই বের করেছে সর্বোচ্চ ২৫/৩০ বছর আগে।

আপনারা জানেন পবিত্র মীলাদ শরীফের দলীল বিষয়ে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইবনে হাজার হায়ছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আন নি’মাতুল কুবরা আলাম” কিতাবে অনেক দলীল রয়েছে। এমনকি সেখানে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বক্তব্যও রয়েছে। অথচ আমরা এই দলীল অন্যান্য অসংখ্য নির্ভযোগ্য কিতাবে দেখেছি। আপনারা অনেকে বিখ্যাত আলিমে দ্বীন, হাদীয়ে বাঙ্গাল হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম শুনেছেন। উনার জন্ম ১২১৫ হিজরী এবং ওফাত ১২৯০ হিজরী। অর্থাৎ ওফাত থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ১৪৯ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। উনার এক আওলাদ হাফিজ আব্দুল আউয়াল জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন বিখ্যাত আলিম। উনার লিখিত একটা কিতাব হচ্ছে “নাফহাতুল আম্বরিয়া”। সে অনুপাতে হিসাব করলে ১৭০/১৮০ বছর আগের কিতাব। সেখানে পবিত্র মীলাদ শরীফ সর্ম্পকে খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের বর্ণনাগুলোতো আছেই বরং স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে সরাসরি একটি বর্ণনাও আছে। “নাফহাতুল আম্বরিয়া” কিতাবে ৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হলো-

قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من عظم مولدى كنت شفيعا له يوم القيامة من انفق درهما فى مولدى فكانما انفق جبلا من ذهب فى سبيل الله تعالى

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করলো সে ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভ করবে এবং যে মীলাদ শরীফ পালন করতে এক দিরহাম খরচ করবে সে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমান স্বর্ণ দান করার ফযীলত লাভ করবে। (নাফহাতুল আম্বরিয়া পৃষ্ঠা ৮)

এরপর ধারাবাহিকভাবে খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের বর্ণনাসমূহ সংকলন করেছেন।

এখন কথা হচ্ছে যদি এসব বর্ণনার কোন ভিত্তিই না থাকতো তাহলে বিখ্যাত আলিমে দ্বীন, বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, আল্লামা হযরত আব্দুল আউয়াল জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত বরেণ্য আলিম কি কিতাবে বর্ণনা করতেন?

আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাব ছাড়াও হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের বর্ণনাসহ একখানা মারফু হাদীছ শরীফও যে অন্য কিতাবে বিদ্যমান যা আমার উপরে দেখলাম। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার সুন্নীরা সবাই কমবেশি “মাওলুদে বারজাঞ্জি” শরীফের নাম শুনেছি। যার লেখক হচ্ছেন বিশিষ্ট হাদীছ শরীফ বিশারদ, মুহাদ্দিছ, আল্লামা সাইয়্যিদ জাফর ইবনু হাসান ইবনু আব্দুল করীম আল বারজাঞ্জি শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১১৭৭ হিজরী)। যিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার শাফিয়ী মুফতী ছিলেন। আমাদের দেশসহ এই উপমহাদেশে পবিত্র মীলাদ শরীফে যে তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করা হয় সেটা “মাওলুদে বারজাঞ্জি”। হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “বরাহিনুল কতেয়া ফি মাওলিদে খাইরুল বারিইয়্যাহ” কিতাবেও এই তাওয়াল্লুদ শরীফ এনেছেন।

পৃথিবী বিখ্যাত এই কিতাবের অনেকগুলো শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ হয়েছে। একটা ব্যাখ্যাগ্রন্থের নাম হচ্ছে “মাদারেজ আস সউদ”। লেখক, আল্লামাতুশ শায়খ হযরত নূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। এই কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায়ও রয়েছে-

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

من عظم مولدى كنت شفيعا له يوم القيامة من انفق درهما فى مولدى فكانما انفق جبلا من ذهب في سبيل الله تعالى

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, যে পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করলো সে ক্বিয়ামতো দিন আমার শাফায়াত লাভ করবে, এবং যে মীলাদ শরীফ পালন করতে এক দিরহাম খরচ করবে সে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমান স্বর্ণ দান করার ফযিলত লাভ করবে। (মাদারেজ আস সউদ ১৫ পৃষ্ঠা)

এরপর ধারাবাহিক ভাবে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের বর্ণনা গুলো বর্ণিত আছে।

এখন আপনারাই বলুন এই বর্ণনা গুলো কি মাকতাবায়ে হাক্কীকার বানানো কথা? যদি এসব বর্ণনার কোন ভিত্তিই না থাকতো তাহলে কি উলামায়ে কিরামগন মাকতাবায়ে হাক্কীকা প্রকাশনী সৃষ্টি হওয়ার শতাধিক বৎসর পূর্বে উনাদের কিতাবে বর্ণনা করতেন?

এখানেই কি শেষ?

নিয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবে বিরোধীদের জন্য আরেকটি তোহফা। তাদের বক্তব্য পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার ফযিলত নিয়ে বক্তব্য প্রথম মাকতাবায়ে হাকীকাহ থেকে প্রকাশিত কিতাবে পাওয়া যায় । অন্য কোথাও এর অস্তিত্ব দেখা যায় না। অথচ আমরা একের পর এক দলীল দেখিয়ে প্রমাণ করছি অন্য অনেক কিতাবেও অস্তিত্ব আছে। এখন আরেকটা দলীল দেখুন,

এই কিতাবটি মিশর থেকে প্রকাশিত, বিশ্ব বিখ্যাত মাওলুদে বারজাঞ্জি উনার শরাহ। কিতাবে নাম হচ্ছে, “তালহীনুছ ছাননাজ”। লেখক হচ্ছেন, আব্দুর রহীম সূয়ুতি আল মালেকী রহমতুল্লাহি আলাইহি। প্রকাশকাল ১৩২১ হিজরী। আজ থেকে ১১৮ বছর আগের।

উক্ত কিতাবের ৫ পৃষ্ঠায়ও লেখা আছে-

قوله صلى الله عليه و سلم من عظم مولدى كنت شافعا له يوم القيامة ومن انفق درهما فى مولدى فكانما انفق جبلا من ذحب احمر فى سبيل الله تعالى

অর্থ: যে পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করলো সে ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভ করবে, এবং যে মীলাদ শরীফ পালন করতে এক দিরহাম খরচ করবে সে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমান স্বর্ণ দান করার ফযীলত লাভ করবে। ।” (তালহীনুছ ছাননাজ ৫ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন হচ্ছে যদি নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবে ভিত্তিই না থাকতো তাহলে এসব বর্ণনা কিভাবে কিতাবে আসে? তাও আবার মাকতাবায়ে হাকীকার প্রতিষ্ঠার শতাধিক বছর আগে প্রকাশকালে?

অনেকে আবার বলতে পারেন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের বর্ণনাগুলোর সনদ কোথায়?

এর উত্তর হচ্ছে, আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবখানা কোনো হাদীছ শরীফ উনার কিতাব না। এটা পবিত্র মীলাদ শরীফ ও বিশেষ ঘটনাবলী নিয়ে রচিত কিতাব। এসব কিতাবে কলেবর বৃদ্ধির কারনে কেউ সনদ বর্ণনা করেন না। ফযীলত উনার আমলের জন্য সরাসরি বর্ণনা করেন। শুধু যা বিভিন্ন সীরাতের কিতাব সমূহেও দেখতে পাই। সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে ইমাম হযরত ইবনে হাজার হাইতামী রহতুল্লাহি আলাইহি হচ্ছেন বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিছ। নিজেও ছিকাহ হিসাবে সামাদৃত। উনি যখন বর্ণনা করছেন অবশ্যই সনদ আছে। আর উনার মত মুহাদ্দিছ সনদবিহীন বক্তব্য বর্ণনা করবেন না।

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ইসলামী গবেষক, বিশিষ্ট কাজী, বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, অসংখ্যা কিতাবের মুছান্নিফ হযরত ইউসুফ আন নাবেহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব “জাওয়াহিরুল বিহার” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ৩৪৯-৩৫০ পৃষ্ঠায় লিখা আছে-

(ومن جواهره رضى الله عنه) هذا الـمولد النبوى الشريف، وهو من اجمع المولد واصحها.

অর্থ: মশহুর ও মহানতম ইমাম হযরত শিহাবুদ্দীন হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জাওহার বা মণিমুক্তা সাদৃশ্য বিষয়সমূহের মধ্যে অন্যতম বিষয় হচ্ছেন নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার বিষয়।

উক্ত মীলাদ শরীফ সংক্রান্ত সকলের সংগৃহিত বিষয়সমূহকে সর্বাধিক ছহীহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

كما جمعت ذالك فى كتاب (سميته النعمة الكبرى على العالم بمولد سيد ولد ادم) باسانيده التى نقلها ائمة السنن والحديث الـموصوفون بحفظ الاتقان، والجلالة والبرهان فى القديم والحديث مما هو سالم من وضع الوضاعين، وانتحال الملحدين والمفترين لا كاكثر المولد التى بايدى الناس فان فيها كثيرا من الموضوع الكذب المختلق المصنوع، لكن فى ذالك الكتاب بسط لا يتم معه قراءته فى مجلس واحد، فاختصرته هنا بحذف اسانيده وغرائبه واقتصرت منه علي ما بسنده منابع، او عاضد روما للتسهيل علي المادحين، وقصدا لحيازتهم معرفة تلك المزايا، والكرامات لينتظموا بذالك في سلك الـمحبين.

অর্থ: যেমন মীলাদ শরীফ সংক্রান্ত বর্ণনাসমূহ আমি সনদ সহকারে একখানা কিতাবে একত্রিত করেছি। (আমি উক্ত কিতাবখানার নাম দিয়েছি আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম বিমাওলিদি সাইয়্যিদে উইলদে আদাম)

যেই সনদগুলো সুনান ও হাদীছ শরীফের ইমামগণ নকল করেছেন। যেই ইমামগণ উনারা সকলেই প্রখর স্বরণ শক্তি সম্পন্ন, দক্ষ, মর্যাদাসম্পন্ন ও দলীলনির্ভর সম্পন্ন ইত্যাদি গুণে ভূষিত প্রবীণ ও নবীন সকল ইমামগণের মাঝে। আর উক্ত বর্ণণাসমূহ বানোয়াটি বর্ণনা থেকে মুক্ত এবং ধর্মত্যাগী বা নাস্তিক ও মিথ্যাবাদীদের বর্ণনা থেকেও মুক্ত। আর উক্ত ইমামগণের বর্ণণাসমূহ ঐ সকল বর্ণনার মতও নয় যা মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে বর্ণিত আছে। কেননা মানুষের মাঝে যেগুলো ব্যাপকভাবে বর্ণিত আছে, তার অধিকাংশগুলোই বানোয়াট, মিথ্যা, সৃষ্ট, তৈরীকৃত। কিন্তু এ কিতাবের মধ্যে বিস্তর বর্ণনা রয়েছে। যা একটা মজলিসে পাঠ করে শেষ করা যাবেনা। তাই আমি এ কিতাব থেকে সনদগুলো এবং দুর্বোধ্য বিষয়গুলো বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত করেছি। এমনকি সনদ কর্তৃক উৎস ও সমর্থিত বিষয়গুলো থেকে আরো সংক্ষিপ্ত করেছি এই উদ্দেশ্যে যে, যাতে করে ছানা-ছিফতকারীদের জন্য সহজ হয় এবং উনাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়। আর পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার বৈশিষ্ট্য ও বুযুর্গীসমূহ জেনে মুহিব্বীনগণের তরীক্বা অনুযায়ী পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলের ইন্তিজাম করেন।”

সূতরাং বোঝা গেলো সনদ মতন সব ঠিকই আছে। কিন্তু বিরোধিতাকারীরা বক্র অন্তরের অধিকারী হওয়ায় তা মানতে পারে না। পবিত্র বুখারী শরীফেও এমন অনেক হাদীছ শরীফ আছে যা মুরসাল, মুয়াল্লাক। তাই বলে কি বুখারী শরীফ গ্রহনযোগ্য নয়?

আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের বর্ণনার পরে বিখ্যাত তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি , হযরত মারূফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল হাসান সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনায়িদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত জালালউদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের ক্বওল শরীফ আছে। বাতিল ফির্কার বক্তব্য আর কেউ এ বর্ণনাগুলো উল্লেখ করেননি। শুধু মাত্র ২৫/৩০ বছর আগে তুরষ্কের মাকতাবায়ে হাকীকাই প্রকাশ করেছে!!! নাঊযুবিল্লাহ।

আজ থেকে প্রায় ১৭০ বছর আগের একটা কিতাব যার নাম “হাশিয়ায়ে ই’য়ানাতুত ত্বলিবীন”। যা সৌদি আরব, মিশর, লেবানন সহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ হয়েছে। লেখক হচ্ছেন: আল্লামা সাইয়্যিদ আবু বকর মক্কী আদ দিময়াতী আশ শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১৩০০ হিজরী)

উক্ত কিতাবের ৩য় খন্ড ৩৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন-

قال الحسن البصرى رحمة الله عليه وَدِدْتُّ لَوْ كَانَ لِىْ مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهْبًا فَاَنْفَقْتُه عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: ‘আমার একান্ত ইচ্ছা হয়, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবীল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ব্যয় করতাম।’ সুবহানাল্লাহ!

হযরত মারূফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত জালালউদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ফযীলত সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো এর পরে রয়েছে। তাই “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” এর বর্ণনাগুলোকে নিঃসঙ্গ বর্ণনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নাই। তাদের মধ্যে অনেকে এটাও বলে যে ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শরহুস শামায়িল নামক কোন কিতাব নেই। তাদেরকে “হাশিয়ায়ে ই’য়ানাতুত ত্বলিবীন” কিতাবখানা দেখে নেয়ার জন্য বলা হলো।

শুধু তাই নয় বাংলাদেশের সরকারী প্রকাশনা ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা “সবুজ পাতা” জানুয়ারী, ২০১৩ সংখ্যায় উক্ত হাদীছ শরীফ সমূহ বর্ণনা করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে ওহাবীদের চক্রান্তে সেই সংখ্যা বাজার থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। আমাদের কাছে সেই সংখ্যা এখনো মওজুদ আছে। সুবহানাল্লাহ! অতএব প্রমাণিত হলো পবিত্র আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবখানা সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য, গ্রহনযোগ্য। যারা এর বিরোধীতা করে তারাই গন্ডমূর্খ জাহিল।

৫ নং আপত্তি:  হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নামে দারুল কুতুবুল মিছরিয়াতে মূল কিতাব পান্ডুলিপি মওজুদ আছে। মিশরের সেই পান্ডুলিপিতে ওই হাদীছ শরীফের এর লেশমাত্র নেই।

জাওয়াব: মিশরে পান্ডুলিপিটা ছহীহ এটার দলীল কি? যদি এটা ছহীহ হতো তাহলে বিরোধীতাকারীদের অন্যতম মাসিক আল কাওছারের আব্দুল মালেক ২০০০ সাল থেকে শুরু করে এত বিরোধিতা করতে পারলো, এত বই লিখতে পরলো। ২০০৭ সালে মার্চ সংখ্যায় আল কাউছার পত্রিকায় ৪ পৃষ্ঠাব্যাপী বিরোধিতা করতে পারলো। অথচ তাদের ছহীহ কিতাবটা ছাপাতে পারলো না? তাদের কাছে নাকি মিশরের সেই পান্ডুলিপির ফটোকপি আছে। তবে কেন সেই পান্ডুলিপিটা প্রকাশ করতে পারলো না? কোথায় এত ভয়? তার মানে তাদের কাছে এর সঠিক কোন ভিত্তি নেই। এরা ঘরে বসে বসে এতবছর পান্ডুলিপির নামে কিসের ফটোকপি তুলে তুলে দেখায় মুসলমানরা জানতে চায়। বাতিল ফির্কারা যে নকল এক পান্ডুলিপি বানিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে না তার প্রমাণ কি? এটা বরং তাদের মজ্জাগত অভ্যাস, তাদের সিলসিলাগত অভ্যাস। তারা কিতাব কাটছাট করে। মনমত না হলে ইবারত বাদ দিয়ে দেয়।

তারা মীলাদ শরীফ উনার দলীল হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আদ দুররুছ ছামীন কিতাব যা দেওবন্দ থেকে ১৪১৫ হিজরীতে প্রকাশিত সেটা থেকে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার সেই বিখ্যাত ঘটনা বাদ দিয়ে দিয়েছে। অথচ তারও ১০৩ বছর আগে প্রকাশিত আদ দুররুছ ছামীন সে ঘটনা আজও বিদ্যমান রয়েছে। জালিয়াত কারা?

জালিয়াতি প্রকৃতপক্ষে কারা করে তার প্রমাণ দেখুন, পবিত্র নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবের বিরোধীতাকারী সিলসিলার এক লেখক নাম মুফতী আশরাফ আলী তালেবী। সে একটা বই লিখেছে “দাওয়াতে তাবলীগ”। উক্ত কিতাবের ৮০ পৃষ্ঠায় লিখেছে , “মক্কা শরীফে এক রাকাত নামায পড়লে এক লক্ষ রাকাত নামাযের ছাওয়াব। মদীনা শরীফে নামায পড়লে পঞ্চাশ হাজার রাকাত রাকাতের ছাওয়াব। বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফে নামায পড়লে পঁচিশ হাজার রাকাত নামাযের ছাওয়াব। কিন্তু বিশ্ব ইজতিমা এসে নামায পড়লে উনপঞ্চাশ কোটি রাকাত নামাযের ছাওয়াব হয়। নাঊযুবিল্লাহ! বিশ্ব ইজতিমা আসার দরুন অন্তরে দ্বীনি মেহনতের জযবা সৃষ্টি হয়। এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিমুখী লোকজনের মাঝে আল্লাহ মুখী প্রেরণা জাগ্রত হয়। আরো অনেক লাভ সম্মুখে রেখে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে মানুষ বিশ্ব ইজতিমায় শরীক হয়।” (ইবনে মাজাহ ১৯৮ পৃষ্ঠা, আবু দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ৩৩৮ পৃষ্ঠা) (লা’হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ)

(দলীল: দাওয়াতে তাবলীগ, পৃষ্ঠা ৮০, লেখক: আশরাফ আলী তালেবী, প্রকাশনা: আফতাবিয়া লাইব্রেরী, ৩৬ বাংলাবাজার, ঢাকা- ১১০০)

সকল বিবেকবানদের কাছে প্রশ্ন বিশ্ব ইজতিমা এমন অদ্ভুত ফযীলতের কথা কোথায় আছে? এই লেখক ইবনে মাজাহ ও আবু দাউদ শরীফের রেফারেন্স দিয়েছে। অথচ উক্ত সিয়াহ ছিত্তার কিতাবে এমন জঘন্য বক্তব্য আছে কি? পবিত্র মক্কা শরীফ, পবিত্র মদীনা শরীফ, পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনাকে ইহানত করে টঙ্গীর ইজতিমাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সিয়াহ সিত্তার কিতাবের রেফারেন্সে এমন জাল বর্ণনা কিতাবে উদ্বৃতি দেয়ার নজীর পৃথিবীতে কোথাও আছে কিনা আমাদের জানা নাই। লা’নত তাদের প্রতি।

তারা মিশরে সংরক্ষিত পান্ডুলিপির কথা বলে অথচ সেই পান্ডুলিপিটা আজ অবধি প্রকাশ করতে পারেনি। আমরা মিশরে যোগাযোগ করে সেই পান্ডুলিপির ছবি পাঠাতে বলি। সেখান থেকে কিছু ছবি তুলে পাঠানো হয়। পান্ডুলিপির কয়েকটা পৃষ্ঠা দেখেই স্পষ্ট বোঝা গেলো এটা মিথ্যা একটা পান্ডুলিপি। যা কিনা হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম ব্যবহার করে বাতিল ফির্কার লোকেরা চালিয়ে আসছে। তথাকথিত পান্ডুলিপি দেখে একটু পড়া লেখা জানা লোকই বলতে পারবে কেউ একজন হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নামে লিখে দারুল কুতুবিল মিছরীয়াতে সাজিয়ে রেখেছে। উক্ত পান্ডুলিপির একজায়গায় বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এক জায়গায় বিদায়াতে হাসানাহ সামঞ্জস্যহীন বক্তব্য রয়েছে। অনেক জায়গায় নিজের নামের আগেই একাধিকবার শায়েখ লেখা আছে। যা স্পষ্ট বিভ্রান্তি। আর ২০০৭ সালে প্রকাশিত হাবীবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন লিখিত “ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎপত্তি, ভিত্তি ও আপত্তি” নামক কিতাবের শেষের দিকে তথাকথিত “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” পান্ডুলিপির দুই পৃষ্ঠার অষ্পষ্ট ছবি ছেপেছে। মিশর থেকে আমরা যে ছবি এনেছি আর উক্ত কিতাবে সংযোজিত ছবি কোনটাই একটা অপরটার সাথে মিলে না। না বক্তব্যে, না চেহারায়। অর্থাৎ পান্ডুলিপি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা এটা নেহায়েত একটা প্রতারণা বৈ কিছুই না। ভুয়া মিথ্যা পান্ডুলিপি নিজেরাই বানিয়ে সেটা সেই শেয়ালের কুমিড়ের বাচ্চা প্রর্দশনের মত জোচ্চুরী করে মনুষকে বিভ্রান্ত করা চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে নি’মাতুল কুবরা কিতাবে বর্ণিত হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্বওল শরীফ উনার সমর্থনে অনেক কিতাবে দলীল মওজুদ আছে, সেখানে ভিত্তিহীন জাল পান্ডুলিপি দিয়ে চক্রান্ত করে ধোঁকা দিয়ে পার পাওয়া যাবে কি?

আরো উল্লেখ্য ২০০৭/০৮ ঈসায়ী সালের দিকে পবিত্র রাজারবাগ দরবার শরীফ উনার প্রতিনিধি হিসাবে সে সময় কর্ণেল যুবায়েরুল্লাহ সাহেব (অব.) মাসিক আল কাউছারের প্রধান আব্দুল মালেকের কাছে যান। তিনি তাদের সে তথাকথিত পান্ডুলিপিটা দেখতে চান ও তার একটি ফটোকপিও চান। সেসময় তারা বলে কপিটি তাদের কাছে নাই। অন্য কোথাও আছে, পরে আসলে দেখাতে পারবেন। যুবায়েরুল্লাহ সাহেব কিছুদিন পরে আবারও সেখানে যান কিন্তু তারা এবারও বিভিন্ন কারন দেখিয়ে পান্ডুলিপি দেখাতে ব্যর্থ হয়। তিনি পান্ডুলিপিটার কপি পাঠানোর জন্য ঠিকানা ও ফোন নম্বর দিয়ে আসলেও আজ অবধি তারা যোগাযোগ করেনি। কথা হচ্ছে তাদের যদি সৎ সাহস থাকতোই, পান্ডুলিপি যদি ছহীহই হতো তবে এত গড়িমসি কেন? কেন সেটা তারা দেখালো না? কেন যোগাযোগ করলো না? এর একটাই কারন তাদের ছলচাতুরী ধরা পরে যাবে।

৬ নং আপত্তি: আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবে খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্বওল শরীফে ‘ক্বিরাআতুল মাওলিদ’ (قِرَاءَةِ مَوْلِدِ) শব্দে বোঝা যায় এটা কারো বানানো বক্তব্য। পবিত্র মীলাদ শরীফ-এ কিভাবে কিরাআত পাঠ করা হয়? পবিত্র কুরআন শরীফ যেমন ক্বিরাআত করা হয় মীলাদ শরীফ কি তা করা যায়?

জাওয়াব: এখানে একটা বিষয় পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়া মানে কি এটা বুঝতে হবে। আরব দেশে মাওলিদ পাঠ বলতে আমরা যে তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করি সেটা বোঝানো হয়। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার সময় কি কি ঘটনা ঘটেছিলো সে বিষয় বর্ণনা করা। বিলাদত শরীফ উনার ঘটনা সম্বলিত অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ ছিহাহ সিত্তাহ সহ ছহীহ হাদীছ শরীফের অনেক কিতাবে বর্ণিত আছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ‘কিরাআতু মাওলিদ’ করেছেন-

انى دعوت ابراهيم عليه السلام وبشارة عيسى عليه السلام ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضائت لها منه قصور الشام.

অর্থ: “আমি হলাম হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দোয়া, হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ এবং আমার মাতা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার দেখা সুস্বপ্ন ও অলৌকিক ঘটনার বাস্তব প্রতিফলন। আমার মাতা আমার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার সময় দেখেছিলেন যে, এক খণ্ড বরকতময় “নূর” মুবারক যমীনে তাশরীফ নিলেন এবং সে নূর মুবারক উনার আলোর প্রভাবে শাম দেশের বালাখানাসমূহ উনাদের চূড়া দৃষ্টিগোচর হলো।” (শরহুস সুন্নাহ, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত, মুসনাদে তয়লাসী ১২৩৬, আল মুজামুল কবীর লিত ত্ববারানী ১৫০৩৩)

এখানে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই মীলাদ শরীফ উনার ঘটনা পাঠ করলেন। তদ্রুপ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনও পাঠ করেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মাওলিদ শরীফ পাঠ করা হতো, যেমন- ইমাম হযরত বারজাঞ্জি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত মাওলুদে বারজাঞ্জি, হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি উনার রচিত মাওলূদে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ বিভিন্ন মাওলিদ শরীফ। অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান তাশরীফ আনান সময়কার বিষয় পাঠ করে শুনানো হয়। এটাই হচ্ছে ‘কিরাআতু মাওলিদ’। সূতরাং এই বিষয় নিয়ে অজ্ঞের মত আপত্তি তুলে হাসির খোরাক হওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না।

৭ নং আপত্তি: আরবীগত ভুল থেকে বোঝা যায় এটা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের বক্তব্য হতে পারে না।

জবাব: কি হাস্যকর কথা। নাস্তিক উইলিয়াম ক্যাম্পবেল মার্কা কথা হয়ে গেলো। সে বলেছিলো কুরআন শরীফে ব্যাকরনগত ভুল আছে। নাউযুবিল্লাহ। সে বিভিন্ন মনগড়া রেফারেন্সও দেয়। তাই বলে কি কেউ এখন বলবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ব্যাকরনগত ভুল আছে তাই পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ বাদ দিতে হবে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! মূল কথা হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ভাষাগতভাবে এত উন্নত, এত ব্যাপক যে সাধারণ কিতাবী জ্ঞান দিয়ে সেটা সঠিক বেঠিক মাপা যাবে না। সবচাইতে বড় কথা আরবীগত কোন ভুলটাকে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করে তারা এই হাদীছ শরীফ উনাকে অগ্রাহ্য করলো সেটাই পরিষ্কার করলো না। এদের কথা শুনে যে প্রবাদ মনে পড়ে যায় সেটা হলো, চোরের মার বড় গলা।

৮ নং আপত্তি: আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবে বর্ণনাগুলোর কোন সনদ, সূত্র নাই।

জবাব: সনদ সূত্র উল্লেখ করা না থাকলেই সেটা পরিত্যাজ্য হয়ে যায় না। অসংখ্য হাদীছ শরীফ আছে যা অনেকে সনদ বর্ণনা করেননি। উদাহরন স্বরূপ দেওবন্দীদের মুরুব্বী মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন লিখিত “স্বপ্নযোগে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” কিতাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এমন অনেক দলীল সেখানে আছে যাতে দেখা যায় অনেক বূযূর্গ আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলিইহিমগণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। উনারা সনদ বাদ দিয়েই সরাসরি জিজ্ঞাসা করে জেনে নিয়েছেন। একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, উক্ত কিতাবের ৫৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে, ‘মাশারিকুল আনওয়ার’ নামক বহুল প্রচলিত একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব আছে। যেখানে ২২৪৬টি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। কিতাব সংকলনের সময় কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ সর্ম্পকে সন্দেহ দেখা দিলে সংকলক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক লাভ করে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিষয়ে জেনে নিতেন। এরপর উক্ত কিতাবের ৬৮, ৮৮ পৃষ্ঠায়ও একই পন্থায় পবিত্র হাদীছ শরীফ যাচাই করার আরো ঘটনা উল্লেখ আছে। ৯৫ পৃষ্ঠায় ইয়াওমুস সাবত ও ইয়াওমুল আরবিয়াতে শিঙ্গা লাগালে কুষ্ঠরোগ হয় এই মর্মে পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে। যারা এ বর্ণনা ছহীহ নয় বলে মানেননি তাদের কুষ্ঠ হয়ে যায়, পরবর্তীতে উনারা ক্ষমা চেয়ে আরোগ্য লাভ করেন। শেষে এ কথাও লেখা আছে, কোন বিষয়ের সাথে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নাম মুবারক সংশ্লিষ্ট হয়ে গেলে তা বরকতময় ও পবিত্র হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

মজার বিষয় হচ্ছে “স্বপ্নযোগে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” কিতাবে শুরুতে লেখকের আরয শিরোনামের অধীনে মাহিউদ্দীন লিখেছে, প্রাপ্ত ঘটনাবলী সর্ম্পকে আমাকে পূর্ণ সচেতনতা অবলম্বন ও যথেষ্ট যাচাই বাছাই করতে হয়েছে। মনে সামান্য সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে এমন ঘটনা আমি পাঠকগণের নিকট পৌঁছানোর দুঃসাহস করিনি।”

তারমানে মাহিউদ্দীন যা লিখেছে তা ছহীহ ও নির্ভযোগ্য পন্থা অবলম্বন করেই লিখেছে। এখানেতো আজ মাহিউদ্দীনের সিলসিলার ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে বিরোধিরাতো সনদ নাই, জাল, এ পন্থায় হাদীছ শরীফ যাচাই করা যাবে না ইত্যাদি বলে প্রতিবাদের ঝড় উঠায়নি। তবে কেন দ্বিমুখী নীতি?

এটার কি জবাব দেবে বাতিল ফির্কারা? যদি না থাকে তবে চোখ বুজে পরিত্যাজ্য বলা থেকে সাবধান থাকতে হবে। নচেৎ পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকার করে জাহান্নামী হতে হবে। আর তাছাড়া ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে সনদ সর্ম্পকে ৩নং আপত্তির জবাবে দলীল উল্লেখ করা হয়েছে।

৯ নং আপত্তি: মাকতাবায়ে হাকীকা প্রকাশনা মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছে।

জাওয়াব: গরম ভাতে বিলাই বেজার বলে একটা কথা আছে। মাকতাবায়ে হাকীকা প্রকাশনা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদার অনেক বই প্রকাশ করে এবং বাতিল ফিরকার মুখোশ উন্মোচন করে বই প্রকাশ করে বলে তারা এই প্রকাশনার বিরোধিতা করছে। ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপারের ডাইরি এই প্রকাশনাই বের করেছিলো। যার মাধ্যমে আব্দুল ওহাব নজদীর হাক্বীক্বত প্রকাশ হয়ে গিয়েছিলো। যেহেতু মুরুব্বীদের বদ চরিত্র প্রকাশ করে দিচ্ছে এই প্রকাশনা তাই বাতিলদের কাছে এই প্রকাশনা খারাপ হয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ!

১০ নং আপত্তি: মাকতাবায়ে হাক্কীক্বাহ থেকে নি¤œমানের কগজ থেকে জাল ও ভিত্তিহীন কথা ছাপা হয়। তাই তাদের প্রকাশিত কিতাব গ্রহনযোগ্য নয়।

জবাব: দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত অনেক কিতাব আমাদের কাছে আছে যার কাগজের মান অত্যান্ত নি¤œমানের। তাহলে কাগজ দিয়ে বিচার করে ওই কিতাব জাল বলে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেন। কাগজের মান দিয়ে যে কিতাব ছহীহ, গায়রে ছহীহ হয়ে যায় এমন তামাশামূলক কথা সম্ভবত প্রথম শোনা গেলো। তবে শুধু মাকতাবায়ে হাক্কীক্বাহ থেকেই আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম প্রকাশিত হয়নি। মিশরের মাকতাবায়ে ইস্তিক্বামাত প্রকাশনী থেকেও এই কিতাব ছাপা হয়। সুতরাং শুধূ তুরষ্কের মাকতাবায়ে হাক্কীক্বাকে অকারণে দোষারোপ করা কি ঠিক হবে?

১১ নং আপত্তি:  সর্বপ্রথম রাজারবাগ দরবার শরীফ থেকে এই ধরনের বর্ণনা প্রচার করা হয়েছে, যা নতুন কথা, আল বাইয়্যিনাত শরীফে লেখা হয়েছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন মীলাদ শরীফ পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

জাওয়াব: সর্বপ্রথম রাজারবাগ দরবার শরীফ থেকে এসেছে হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণ পালন করেছেন এ কথা সঠিক নয়। ছহীহ হাদীছ শরীফে আছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করছেন। তাও আবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং খুশি প্রকাশ করেছেন। ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে রয়েছে, যা হযরত তিবরানী ও হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বর্ণনা করেন-

عن خريم بن اوس رضى الله تعالى عنه قال هاجرت الى رسول الله صلى الله عليه وسلم منصرفه من تبوك، فسمعت العباس يقول يارسول الله صلى الله عليه وسلم انى اريد ان امتدحك. قال: قل لَايُفَضْفِضُ اللهُ فَاكَ فَقَالَ:

من قبلها طبت فى الظلال وفى+  مستودع حيث يخصف الورق.

 ثم هبطت البلاد لا بشر + انت ولا مضغة ولا علق

بل نطفة تركب السفين وقد + الجم نسرأ وأهله الغرق

تنقل من صالب الى رحم + اذا مضى عالم بدا طبق

وردت نارا الخليل مستترا فى + صلبه أنت كيف يحترق حتى احتوى بيتك الـمهيمن + من خندف علياء تحتها النطق

وانت لـما ولدت اشرقت الارض + وضاءت بنورك الأفق

فنحن فى ذلك الضياء وفى + النور وسبل الرشاد تخترق

অর্থ: হযরত খারীম ইবনে আউস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন তাবুক জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন, তখন আমি উনার ছোহবত মুবারক-এ গেলাম। এ সময় হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি আপনার ছানা-ছিফত করতে চাই। তিনি বললেন, বলুন, মহান আল্লাহ পাক আপনার যবান মুবারককে হিফাযত করুন। অতঃপর তিনি বললেন:

১। (দুনিয়াতে আসার) আগে আপনি ছায়ায় দিনাতিপাত করতেন এবং এমন সুমহান স্থানে (জান্নাতে) অবস্থান করতেন, যেখানে পাতা মিলিত করা হয়। (হযরত ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে)

২। অতঃপর আপনি যমীনে (হযরত ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে) তাশরীফ নিলেন। তখন আপনার মানুষের আকৃতি ছিলো না, না ছিলেন নূরী গোশত পিন্ড, না নূরী জমাট রক্ত খণ্ড।

৩। আপনি সেই নূর মুবারক যা নৌকায় আরোহণ করেছিলেন এবং নসর (প্রতিমা) ও নসর পূজারীদেরকে ওই পানি গ্রাস করেছিলো। (হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে)।

৪। আপনি এমনিভাবে জিসিম মুবারক থেকে রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত হতে থাকেন এবং যা শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হয়েছিলো।

৫। হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন আগুনে অবস্থান করেন, তখন আপনি উনার জিসিম মুবারক-এ ছিলেন। এমতাবস্থায় অগ্নির কি সাধ্য ছিলো যে, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে স্পর্শ বা পোড়াতে পারে।

৬। অবশেষে আপনার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। আপনার রূহ মুবারক খন্দকের উচ্চস্থানকে ঘিরে নিলো, যার নিচে অন্যান্য পাহাড়ের মধ্যবর্তী অংশ আছে।

৭। আপনি যখন যমীনে তাশরীফ নিলেন তখন সারা পৃথিবী আপনার নূর মুবারক-এ আলোকিত হয়ে গেলো।

৮। এখন আমরা সেই মহান নূর মুবারক উনার ছোহবতে আছি। আমাদের সম্মুখে হিদায়েতের পথ উন্মুক্ত। সুবহানাল্লাহ! (দলীল: মুসতাদরেকে হাকিম ৩/৩৬৯ : হাদীস ৫৪৬৮, দালায়েলুন নবুয়াত ২/৯৮৩: হাদীছ ২০২০, মা’রিফাতুছ ছাহাব লি আবু নুয়াইম ২৫৩১, খাছায়িছুল কুবরা, সিয়ারু আলাম আননুবালা ৩/৮৬, সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১/৭০, সিরাতুন নববিয়্যাহ লি ইবনে কাছীর ১/১৯৫, বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/৩১৭, তারিখুল ইসলাম লি ইমাম যাহাবী ১/৪৩, মুখতাসারু তারিখুত দিমাষ্ক ১/১২১)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাতে দেখতে পেলাম, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমণ বিষয়ে বর্ণনা করেন এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশি প্রকাশ করেন। অর্থাৎ ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ পালন করলেন।

অতএব সুমহান রাজারবাগ দরবার শরীফ থেকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের কথা বলেছেন তা মনগড়া নয় বরং ছহীহ হাদীছ শরীফেই এটা বিদ্যমান। সুবহানাল্লাহ।

১২ নং আপত্তি: হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত এত উঁচু দরজার মুহাদ্দিছ এমন জাল রেওয়ায়েত বর্ণনা করতে পারেন না।

জবাব: এই কথা তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে গেছে। তারা কি হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দলীল মানে? মানলে উনার বিখ্যাত কিতাব ফতোয়ায়ে হাদিছিয়্যাহর নূর মুবারক সংশ্লিষ্ট পবিত্র হাদীছ শরীফ সর্ম্পকে কি বলবে?

হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে বর্ণনা করেন-

اخرج عبد الرزاق بسنده عن جابر بن عبد الله الانصارى رضى الله عنهما قال : ” قلت : يا رسول الله صلى الله عليه وسلم بابي انت وامى اخبرنى عن اول شىء خلقه الله قبل الاشياء ؟ قال : يا جابر ان الله خلق قبل الاشياء نور نبيك

অর্থ: ইমাম হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সনদ সহকারে বর্ণনা করেন, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ইয়া রসূল্লাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমাকে সংবাদ দিন সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক তিনি কি সৃষ্টি করেছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। (ফতোয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ ১ম খন্ড ১২৫ পৃষ্ঠা)

হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে বর্ণনা করেছেন, হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি সনদ সহকারে উনার কিতাবে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে নূর মুবারক উনার হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। অথচ “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের বিরোধীতাকারীরা হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য মোতাবেক মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক কিতাবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অস্তিত্ব এবং সনদ থাকা দুইটাই অস্বীকার করে। হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করলেই তাদের কাছে বিষয়টা ছহীহ হয়না বরং তাদের নফস যা বলে সে অনুযায়ী তারা আমল করে। হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে নূর মুবারক বিষয়ক বর্ণনা যেমন তারা মানে না তদ্রুপ “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের বর্ণনাও তারা মানে না। মাঝখান থেকে সাধারণ জনগনকে ধোঁকা দেয়ার জন্য বলে থাকে উনার মত মুহাদ্দিছ এটা বর্ণনা করতে পারেন না। নাউযুবিল্লাহ।

অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শুকরিয়া জানাই প্রানের আঁকা যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, হুজ্জাতুল ইসলাম, রসূলে নুমা, সুলত্বানুল আরিফীন, সুলত্বানুল আউলিয়া ওয়াল মাশায়িখ, ইমামুল আইম্মাহ, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদুর রসূল রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রতি। উনাকে পাওয়ার কারনে আজ বিশ্ববাসী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ছহীহ বিষয়টা জানতে পারছে, বদ আক্বীদা থেকে ফিরে এসে ছহীহ আক্বীদা গ্রহণ করছে। আমল হচ্ছে পবিত্র সুন্নত উনার রঙ্গে রঞ্জিত। বাতিল শক্তি হচ্ছে পরাজিত। ইবলীসের দলের চক্রান্ত নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীবাসী সবার উচিত উনার পাক ক্বদম মুবারকে এসে বাইয়াত হওয়া এবং উনার ছোহবত মুবারকে এসে আল্লাহওয়ালা হওয়া। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

খাজা মুহম্মদ নুরুদ্দীন পলাশ।

-:দৈনিক আল ইহসানের বিশেষ ব্যানার হেডিং তথা তাজদীদের ধারাবাহিকতায় মুজাদ্দিদে আ’যমের মুবারক সংযোজন:- ইসলাম- বিধর্মীদের ধর্ম পালনে কোন বাধা দেয় না। কারণ, প্রত্যেকেই তার নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীন। ইসলাম- মুসলমানদের জন্যও বিধর্মীদের কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়ার অনুমোদন করে না। পাশাপাশি মুসলমানদেরকে বিধর্মীদের অনুষ্ঠানে যেতে বিধর্মী কর্তৃক উৎসাহিত করাটাও শরীয়তসম্মত নয়। কেননা, মুসলমানরা বিধর্মীদেরকে ইসলাম পালনে বাধ্য করে না।

সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, ইমামুল আতক্বিয়া, হাদিউল আওলিয়া, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ উপলক্ষে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন প্রসঙ্গে

মিছবাহুদ্ দুজা, মিফতাহুদ্ দারা, খইরুল ওয়ারা, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্রতম দেহ মুবারক, ঘাম মুবারক ও থুথু মুবারক-এর সৌরভের কাছে যত রকমের খুশবু আছে সবই ম্লান হয়ে যায়

আকমালুল মাওজূদাত, আজমালুল মাখলূক্বাত, আল্মুওয়াইইয়াদু বিওয়াদ্বিহিল বাইয়্যিনাত, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বৈশিষ্ট্য থেকেই সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরামগণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়েছেন

আখলাকুহূ হামীদাহ, আফয়ালুহূ জামীলাহ, আলত্বাফুহূ কারীমাহ, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সদাচরণ হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের সাথে