আল্লামা ইবনে জারীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা ইবনে হাতিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম তাবারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম বাইহাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং আল্লামা ইবনে কাছীর প্রমুখ মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বর্ণনা করেন, একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ কাট্টা মুনাফিক ছা’লাবা ইবনে হাতিব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। এটি একটি ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত, যার বিবরণ এই যে, সে অতি গরীব ও নি:স্ব ব্যক্তি ছিলো। একদা সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম খিদমত মুবারকে এসে আবেদন করল, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আমার জন্য দোয়া মুবারক করুন, তিনি যেন আমার মাল-সম্পদ বৃদ্ধি করে দেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন –
اَمَا لَكَ فِىْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهٖ لَوْ أَرَدْتُّ اَنْ تَسِيْرُ الْـجِبَالُ مَعِىْ ذَهَبًا لَسَارَتْ
অর্থ : তোমার জন্য কি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম জীবনী মুবারক উনার মধ্যে আদর্শ মুবারক নেই? ঐ মহাপবিত্রতম সত্তা মুবারক উনার কসম! যেই মহান উজুদ পাক উনার মহাপবিত্রতম কুদরতী হাত মুবারকে আমার মহাপবিত্রতম প্রাণ মুবারক! আমি যদি ইচ্ছা করি পাহাড়গুলো আমার সাথে স্বর্ণ হয়ে চলাচল করবে, তবে অবশ্যই তারা আমার সাথে স্বর্ণ হয়েই চলবে। সুবহানাল্লাহ! এই পবিত্রতম বাণী মুবারক শ্রবণ করে ছা’লাবা সেই দিন আর কিছু না বলে চলে গেল।
এর অল্প কিছুদিন পর সে আবার এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্রতম খিদমত মুবারকে তার সম্পদ বৃদ্ধির জন্য পবিত্রতম দোয়া মুবারক করার আবেদন করে বলল, যিনি আপনাকে সত্য নবী ও রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করে পাঠিয়েছেন উনার শপথ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সম্পদশালী করলে আমি অবশ্যই প্রত্যেক হক্বদারকে তার হক্ব দিয়ে দেবো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য পবিত্রতম দোয়া মুবারক করে বললেন-
اَللّٰهُمَّ ارْزُقْ ثَعْلَبَةَ حَقًّا
অর্থ: আয় মহান আল্লাহ পাক ! ছা’লাবাকে যথাযথ রিযিক তথা সম্পদ দিন। রাবী বলেন, ছা’লাবা তখন একটি বকরী নিল তা পঙ্গপালের ন্যায় বৃদ্ধি পেতে লাগল। ফলে পবিত্রতম মদীনা শরীফ উনার শহরাঞ্চল তার জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেল এবং কোন এক উপত্যকায় সে চলে গেল। তার সে ছাগপাল পঙ্গপালের মতো বেড়েই চলছিল।
এই ছা’লাবার যখন কোন সম্পদ ছিলনা তখন পবিত্রতম মদীনা শরীফে মহাপবিত্রতম মসজিদে নববী শরীফে পাঁচ ওয়াক্ত নামায নূরে মজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্রতম মুবারক ইমামতিতে আদায় করতে তার গাফলতি হতো না। বকরীর পাল অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির পর এই সময় পবিত্র ছলাতুয যুহর ও পবিত্র ছলাতুল আছর উনার নামায পবিত্রতম মদীনা শরীফে মহাসম্মানিত মসজিদে নববী শরীফে এসে আদায় করতে পারলেও অন্যান্য ওয়াক্তের পবিত্র নামায বকরী পালের কাছে আদায় করতো।
এরপর তার বকরী পালের সংখ্যা এতই বৃদ্ধি পেতে লাগল, জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে অনেক দূরে চলে গেল। পবিত্র জুমুয়া নামায ব্যতীত আর কোন নামাযই তার পক্ষে পবিত্রতম মদীনা শরীফ মহাপবিত্রতম মসজিদে নববী শরীফে এসে পড়া সম্ভব হতো না। বকরীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেলে তার পক্ষে পবিত্র জুমুয়ার নামাযেও পবিত্র মদীনা শরীফে মহাপবিত্রতম মসজিদে নববী শরীফে এসে উপস্থিত হওয়াও সম্ভব হতো না। নাউযুবিল্লাহ! তখন সে পবিত্র জুমুয়া উনার দিন বের হয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার খবরাখবর নিত ।
একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন-
مَا فَعَلَ ثَعْلَبَةُ
ছা’লাবা কী করছে? ছা’লাবার খবর কি? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তার বকরী সংখ্যা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে এক বিশাল উপত্যকায় তার স্থান সংকুলান হতে পারে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন-
يَا وَيْحُ ثَعْلَبَةَ يَا وَيْحُ ثَعْلَبَةَ يَا وَيْحُ ثَعْلَبَةَ
হায়! ছা’লাবার দুর্ভাগ্য! হায় ছা’লাবার দুর্ভাগ্য ! হায় ছা’লাবার বদনসীব! অর্থাৎ ধ্বংস ছা’লাবার। নাউযুবিল্লাহ!
এরপর পবিত্রতম যাকাত সংক্রান্ত পবিত্রতম আয়াত শরীফ-
خُذْ مِنْ اَمْوَالِـهِمْ صَدَقَةً
অর্থ: আপনি তাদের অর্থাৎ উম্মতের মাল- সম্পদের পবিত্র যাকাত গ্রহণ ও বন্টন করুন। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ: ১০৩)
এই পবিত্রতম আয়াত শরীফ নাযিল হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু সুলাইম গোত্রের এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও জুহাইনা গোত্রের এক ছাহাবী রদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনাদের দু’জনকে সম্মানিত যাকাত উনার বিধান লিখে দিয়ে ছা’লাবা ইবনে হাতিব ও সুলাইম গোত্রের এক ব্যক্তির সম্পদের পবিত্র যাকাত আদায়ের জন্য প্রেরণ করলেন। মহাপবিত্রতম নির্দেশ পেয়ে উভয় ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা ছা’লাবার কাছে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্রতম ফরমান মুবারক পড়ে শুনালেন এবং পবিত্র যাকাত দাবী করলেন। সে সবকিছু শুনে বলল, এতো জিযিয়াই, এতো জিযিয়ারই সমগোত্রীয়, এতো জিযিয়ারই মতো। নাউযুবিল্লাহ! আপনারা অন্যের কাছে যান কাজ শেষ করে আমার কাছে আসুন আমি ভেবে দেখছি কী করা যায়। নাউযুবিল্লাহ! উনারা সুলাইম গোত্রের একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনার কাছে গেলেন তিনি অত্যন্ত খুশী হয়ে তা’যীম-তাকরীম করে পবিত্র যাকাত দিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! অত:পর স্বত:স্ফুর্তভাবে উনার দেয়া পবিত্র যাকাত নিয়ে ছা’লাবার কাছে আসলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাঠানো মহাপবিত্রতম ফরমান মুবারক পড়ে-পূর্বের কথাই বলল, এতো জিযিয়াই দেখতে পাচ্ছি, এতো জিযিয়ারই অনুরূপ নাউযুবিল্লাহ! অতপর সে বললো, আপনারা চলে যান আমি বিষয়টি ভেবে দেখি কি করা যায় নাউযুবিল্লাহ!
অতঃপর ঐ দু’ জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা পবিত্র মদীনা শরীফে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করার পূর্বেই তিনি পূর্বের বাণী মুবারক উচ্চারন করলেন-
يَا وَيْحُ ثَعْلَبَةَ يَا وَيْحُ ثَعْلَبَةَ يَا وَيْحُ ثَعْلَبَةَ
অর্থ: হায় দুর্ভাগ্য ছা’লাবার! হায় আফসূস ছালাবার! হায় ধ্বংস ছালাবার! এই মহা পবিত্রতম বাণী মুবারক তিনি তিনবার উচ্চারণ মুবারক করলেন। অতপর ঐ দু’জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্øাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছা’লাবার সব ঘটনা অবহিত করার পর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্রতম এই আয়াত শরীফ নাযিল করলেন।
وَمِنْهُم مَّنْ عَاهَدَ اللهَ لَئِنْ اَتَانَا مِن فَضْلِهٖ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُوْنَنَّ مِنَ الصَّالِحِيْنَ. فَلَمَّا اتَاهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ بَخِلُوا بِهٖ وَتَوَلَّوا وَّهُم مُّعْرِضُوْنَ. فَأَعْقَبَهُمْ نِفَاقًا فِيْ قُلُوبِهِمْ إِلٰى يَوْمِ يَلْقَوْنَهٗ بِمَا أَخْلَفُوا اللهَ مَا وَعَدُوْهُ وَبِمَا كَانُوا يَكْذِبُوْنَ.
অর্থ : তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে অঙ্গীকার করেছে যে, যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের সম্পদ দান করেন, তাহলে আমরা অবশ্যই দান খয়রাত করবো এবং অবশ্যই নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হবো। অতঃপর যখন (মহান আল্লাহ পাক তিনি) তাদেরকে সম্পদ দান করলেন, তখন তারা এই বিষয়ে বখীলী তথা কার্পণ্য করল ও মুখ ফিরিয়ে নিল এবং তারা অস্বিকারও করলো। নাউযুবিল্লাহ! এর পরিণামে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের অন্তরে শাস্তিস্বরূপ মুনাফিকী সৃষ্টি করে দিলেন তথা বদ্ধমুল করলেন মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ দিবস পর্যন্ত। (অর্থাৎ মুনাফিকদের সাথে কস্মিনকালেও মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ হবেনা। কাজেই মুনাফিকদের শাস্তি অনন্তকাল পর্যন্ত চলতেই থাকবে) কারণ তারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে যে অঙ্গীকার তথা ওয়াদা করেছিল তা ভঙ্গ করেছিল এবং এই কারণে যে তারা মিথ্যা বলত। (পবিত্র সূরাহ তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ: ৭৫, ৭৬, ৭৭)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের সময় ছা’লাবার এক আত্মীয় একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি উপরোক্ত ঘটনা ছা’লাবাকে জানালে, ছা’লাবা তখন সম্মানিত যাকাত উনার মাল-সম্পদ নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে তা গ্রহণের জন্য আবেদন জানালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন জওয়াব মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন- (হে ছা’লাবা)
اِنَّ اللهَ مَنَعَنِـىْ اَنْ اَقْبَلَ مِنْكَ صَدَقَتَكَ
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে তোমার যাকাত তথা যাকাতের মাল গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!
এটা শুনে ছা’লাবা তখন মাথায় মাটি মাখাতে শুরু করলো এবং মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কান্নাকাটি করতে লাগলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন-
هٰذَا عَمَلُكَ قَدْ اَمَرْتُكَ لَـمْ تُطِعْنِـىْ
(হে ছা’লাবা তোমার জন্য আফসুস!) এটা তোমার আমলেরই পরিণাম! তোমার আমলেরই বদলা। আমি তোমাকে বলেছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে মান্য করনি। তুমি গুরুত্ব দাওনি! সময়মত তুমি আমার কাছে পবিত্র যাকাত পাঠাওনি! তোমার যাকাত আর গ্রহণ করা হবেনা! আর গ্রহণ করা হবেনা! এরপর সে ফিরে গেল।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহা পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর এই ছা’লাবা পরবর্তীতে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস, তারপরে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস, তারপরে সাইয়্যিদুনা হযরত যুননুরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের পবিত্রতম খিলাফতকাল পর্যন্ত তার যাকাতের অনেক মাল সম্পদ নিয়ে এসে তা গ্রহণের জন্য কান্না করলেও উনারা কেউই তার কাছ থেকে যাকাত গ্রহণ করেননি। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু তার যাকাত গ্রহণ করেননি, যেহেতু সে জীবন্ত ও কুখ্যাত মুনাফিক হিসাবে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা ঘোষিত। আর কাফির মুশরিক ও মুনাফিকদের কাছ থেকে যাকাত গ্রহণ করাও হারাম এবং তাদেরকে প্রদান করাও হারাম।
অবশেষে সাইয়্যিদুনা হযরত যুননুরাইন আলাইহিস উনার পবিত্রতম খিলাফতকালে এই কুখ্যাত জীবন্ত মুনাফিক ছা’লাবা ইবনে হাতিবের মৃত্যু হয়। আল্লামা ছাবুনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ছা’লাবা নামে যে একজন বদরী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন- তিনি নন বরং এই ছা’লাবা এক কুখ্যাত ও জীবন্ত মুনাফিক ছিলো। সে ছা’লাবা নিঃস্ব ও গরীব ছিল। পরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম দোয়া মুবারক উনার বদৌলতে অতি অল্প সময়ে সে অনেক সম্পদের মালিক হয়ে যায়। পরে পবিত্র যাকাত উনার পবিত্রতম আয়াত শরীফ নাযিল হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিঠি মুবারক লিখে দু’জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদেরকে পবিত্র যাকাত আদায়ের জন্য পাঠালে তখন এই ছা’লাবা পবিত্র যাকাতকে জিযিয়া করের সাথে তুলনা করে না দেয়ার জন্য বিভিন্ন টাল-বাহানা শুরু করে। সে বলতে থাকে পরে আসেন এখন না অন্যদের কাছে যান- ভেবে দেখি কী করা যায়। পরিশেষে আবার তার কাছে আসলে সে বলে আপনারা চলে যান এটাতো জিযিয়ার মতোই, জিযিয়া, এটাতো জিযিয়ারই মতো মনে হচ্ছে- ভেবে দেখি কী করা যায়। নাউযুবিল্লাহ! এইরুপ চরম বেয়াদবী, পবিত্র যাকাত নিয়ে টাল-বাহানা, প্রতারণা, না শোকরের ফলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিনভাবে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে ছা’লাবাকে জীবন্ত কুখ্যাত মুনাফিক ঘোষনা করে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন। পরে হাজারো কান্নাকাটি করেও তার কোন ফল হয়নি। যাকাত নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। নাউযুবিল্লাহ! এই ঘটনা কায়িনাতবাসীদের জন্য এক বিরাট ইবরত ও নছীহত।
বিশেষভাবে স্মরনীয় যে, সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, খলীফায়ে আ’যম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীকত, ইমামুদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ, আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম, কুদরতে ইলাহী, মু’জিযায়ে রসূল, রসূলে নো’মা, মুস্তাজাবুদ দাওয়াত, জামিউন নিসবত, জামিউন নিয়ামত, জামিউল মাক্বামাত, জামিউল আলক্বাব, হাবীবুল্লাহ, আখাছছুল খাছ আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা ইমাম প্রাণের আকা- ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা কা’বা আলাইহিস সালাম তিনি হাক্বীক্বী মিছদাকে রসূল ও ক্বায়িম মাক্বামে রহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু পবিত্রতম অনুস্মরণ ও অনুকরণে হযরত খুলাফায়ে রাশিদ্বীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী মিছদাক্ব হিসেবে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র যাকাত ব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে কায়িমের লক্ষে চিঠি লিখে এবং প্রতিনিধি পাঠিয়ে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াত উনার পন্থায় অভূতপূর্ব তাজদীদ মুবারক- পবিত্র যাকাত আদায়ে যে সাড়া জাগানো আহবান মুবারক তথা ডাক মুবারক দিয়েছেন, এই বিশাল আঞ্জামে যারা সাড়া দিবেনা, যারা পবিত্র ফরয যাকাত প্রদান করবে না, প্রদানে অস্বীকার করবে, পাঠানো প্রতিনিধির সাথে প্রতারণা করবে, তাদের উচিত কুখ্যাত জীবন্ত মুনাফিক ছা’লাবা ইবনে হাতিবের ঘটনাকে মর্মে মর্মে স্মরণ করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা কা’বা আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা আমাদের সবাইকে তা থেকে হিফাযত করুন। (আমীন) –
-মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন।
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-১৬
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-১৬
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৪৭