তারা সমস্যার কথা যতটা জানবেন তার চেয়ে অনেক কম সমালোচনা করবেন। কিম্ভূত কিমাকার সাহিত্য রচনা করবেন আপাত এবং বিকৃত সমাধানের পথ খুঁজবেন। কিন্তু সত্যিকার সমাধানের পথে যাবেন না। ইসলামের দিকে ঝুঁকবেন না। তাদের দৃষ্টিতে ইসলামে পর্দার কথা বলা আছে এজন্যই যেন পর্দাপালন প্রগতি বিরোধী। তথাকথিত নারীবাদীরা নিজেদের খুব প্রগতিবাদী ভাবেন। তথাকথিত নারী অধিকার বাস্তবায়নে ইউরোপ-আমেরিকা তাদের তীর্থভূমি। কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকায় নারী অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত এমন প্রচারণা জোরদার থাকলেও নারীরা মূলত: সেখানেও একান্ত গপ্য হিসেবেই বিবেচিত। এ দেশটিতে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারীকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়, তা কোনভাবেই নারী জাতির মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পরিচয় নয়। মজার ব্যাপার হলো, আমেরিকায় নারীর ক্ষমতায়ন কিংবা মর্যাদা কোনটাই নারীবাদীদের ধারণানুযায়ী নয়। মার্কিনীরা সারা দুনিয়ায় নারীবাদী ভূমিকা পালন করলেও তাদের দেশেই গর্ভপাতকে সরকারিভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই গর্ভপাতের সহায়তাদানকারী জন্মনিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর জন্য সাহায্য বন্ধ করে দেন। আমেরিকান সমাজের উচ্চ পর্যায়েও নারী নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটে তা তৃতীয় বিশ্বের জন্যও লজ্জাদায়ক। সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের কন্যাও ছিলেন নির্মম নির্যাতনের শিকার। রিগ্যান কন্যা মোরিনের বিয়ে হয়েছিলো ওয়াশিংটনের এক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে। এক সময়ের গায়িকা ও অভিনেত্রী মোরিনা নিজেই বলেছেন, তার দুর্ভোগের কথা। তার ভাষায়: ১৯৬১ সাল। আমার বয়স তখন ২০। আমি আমার চেয়ে ১০ বছরের বেশি বয়স্ক এক ব্যক্তিকে বিয়ে করি। আমার প্রথম স্বামী আমাকে নিষ্ঠুরভাবে প্রায়ই প্রতিদিন প্রহার করতো। তার শারীরিক অত্যাচারের জন্য আমি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিলাম। কোন কোন রাতে আমার প্রতি তার শারীরিক অত্যাচার শুরু না হলেও আমি জেগে অপেক্ষা করতাম কখন অত্যাচার শুরু হবে। অত্যাচারের মধ্যে কিল, ঘুষি, লাথি, চপেটাঘাত নিয়মিত। ব্যাপার ছিলো আমি তার ভয়ে সর্বদা ভীত অবস্থায় বাস করতাম। মোরিন তার জবানীতে বলেছেন, সে দিনটার কথা আমার আজো মনে পড়ে। বরফ পড়ছে। খারাপ আবহাওয়ার জন্য রাস্তায় গাড়ি ও বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আমার কর্মস্থল থেকে বাড়ি পৌঁছাতে এক ঘণ্টা দেরি হলো। আমার স্বামী অত্যন্ত রেগে গেলেন, সন্দেহ করলেন আমি অন্য কোন পুরুষের সাথে সময় কাটিয়েছি। আমি যত বুঝাতে চাইলাম সে আরো বেশি রেগে যেতে লাগলো। এক পর্যায়ে আমাকে সে কিল, ঘুষি মারতে লাগলো। আমি অবাক হয়ে গেলাম ও প্রতিবাদ করার শক্তি হারিয়ে ফেললাম। সারা রাত চোখে-মুখে প্রচ- ব্যথা অনুভব করলাম। আমি সে রাতে ঘুমোতে ব্যর্থ হই। তবু পরদিন সকালের খাবার টেবিলে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু ফল হলো উল্টো। গ্লাস দিয়ে সে আমার মাথায় প্রচ- আঘাত করলো। মোরিন বলেছেন, তার স্বামী এক রাতে তাকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করেছিলো। এক পর্যায়ে মেঝেতে ফেলে পিটাতে লাগলো এবং বলতে থাকলো, কোন পুরুষই আর তোর দিকে ফিরে তাকাবে না। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, মোরিন স্বামীর অত্যাচার সম্পর্কে তার পিতা প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানকে জানানো সত্ত্বেও তিনি মেয়ের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাননি। প্রসঙ্গত: পশ্চিমা সমাজ নারীর মর্যাদাকে কোনপর্যায়ে নিয়ে গেছে তা আমেরিকার লাসভেগাস শহরের দিকে তাকালে উপলব্ধি করা যায়। এ শহরটি কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সংরক্ষিত। লাসভেগাস পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে নগ্ন রমণী শিকার অভিযানের জন্য। যারা জীবনেও কোন দিন বন্দুক হাতে পশুপাখি শিকার করে দেখেনি- তারাও অতি সহজে অংশ নিতে পারেন এই রমণী শিকারের খেলায়। এজন্য অবশ্য পকেটে থাকতে হবে হাজার হাজার ডলারের নোট। এয়ারগান দিয়ে বেলুন শ্যুট করার মতই যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষরা রমণী শিকারী পুরুষের হাতে থাকে বন্দুক বা এয়ারগানের বদলে পেইন্ট গান। বিবস্ত্র নারীদের গুপ্ত অঙ্গকে ধরা হয় টার্গেট। আর সর্বোচ্চ পরিধি থাকে বুক পর্যন্ত। কাঙ্খিত জায়গায় ঘণ্টায় দু’কিলোমিটার বেগে পেইন্ট গান দিয়ে বল ছোঁড়া হয়। লম্পট পুরুষদের জন্য ‘মজার’ এ খেলায় টার্গেট মত বলের আঘাত করার জন্য দিতে হয় ২ হাজার ৫শ’ ডলার। ব্যর্থ হলেও এ অর্থদ- থেকে রেহাই নেই। শিকার হিসেবে ব্যবহৃত রমণীরা পেইন্ট গান দিয়ে ছোঁড়া গুলি বা বলের আঘাতে কিছুটা ব্যথা পেলেও টাকার জন্য তা নীরবে হজম করে। রমণী শিকারের এ খেলা নিয়ে সারা বিশ্বে ঝড় উঠেছে। সমালোচনার মুখে ‘চ্যানেল- এইট’ এক ভাষ্যে মন্তব্য করেছে এই খেলা কয়েকজন রমণীকে অন্তত যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ খেলার বদৌলতে তারা বেশকিছু ডলার আয় করেছে। নতুবা তাদের হয়তো দেহ বিক্রি করেই জীবিকা অর্জন করতে হতো। উল্লেখ্য, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার মার্কিন স্টাইল এরকমই।
উল্লেখ্য, ইসলাম বিরোধী ইহুদী মিডিয়া ও তথাকথিত নারীবাদীরা ইসলামী জ্ঞান ও আমল শূন্য কোন মুসলমানের দ্বারা কোন নারী নিগৃহের স্বীকার হলে সেটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে খুব বড় করে ও ব্যাপক হারে প্রচার করে। কিন্তু তাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারী যে কত অবলা, কত অনিশ্চয়তা এবং ঠুনকো ও ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে বিরাজ করে তা তারা আদৌ আলোচনার বিন্দুতে আনে না। আর আমাদের মুসলিম নামধারী তথাকথিত প্রগতিবাদী-নারীবাদীরাও এসব তথ্য সম্পর্কে রহস্যজনক অজ্ঞতা ও নীরবতায় আশ্রয় নেন।
কাজেই আজকে সময় এসেছে ইতিহাসের সিঁড়িতে নারী বঞ্চনার এই যুগে, নারী মর্যাদা প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের প্রবর্তক- মুজাদ্দিদে আ’যম সহধর্মীনি সাইয়্যিদাতুন্ নিসা, ক্বায়িম-মক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন, হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহাল আলীয়া-এর নেক ছায়াতলে হাজির হয়ে তার ফয়েজ-বরকতে উদ্দীপ্ত হওয়া।
পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রেক্ষিতে নারী মর্যাদা অবলুণ্ঠিত হওয়ার ও তাদের পশুবত জীবনচিত্রের কাহিনী বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা।
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আপনহারা মুসলমানের চেতনায় আঘাত হানার। তথাকথিত প্রগতিবাদী নারীবাদীদের প্রতারণার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া।
মুজাদ্দিদে আ’যম সহধর্মীনি ক্বায়িম-মক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন, হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহাল আলীয়া-এর নারী মর্যাদা প্রতিষ্ঠার তাজদীদে দ্বীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়া। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে কবুল করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ জিশান, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২