ম্প্রতি ইসরাইলের সেন্ট্রাল বুরো অব স্ট্যাটিসটিকস এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা ৭৩ লাখ। এর মধ্যে ইহুদীর সংখ্যা ৫৩ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৭৬%। হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের হারম্যান ইনস্টিটিউট অব কনটেম্পোরারি জিউরি-এর অধ্যাপক সার্গিও ডেলা পারগোলা জানান, গত স্বাধীনতা দিবসের পর থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩৮ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। তিনি দাবি করেছেন, বিশ্বের ইসরায়েলই একমাত্র দেশ যেখানে প্রাকৃতিকভাবে ইহুদীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বর্ধিষ্ণু হারের পরও ইহুদী জনগোষ্ঠী কত ক্ষুদ্র তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তার পরেও বলা চলে এই অভিশপ্ত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর উপর খোদার অভিশাপ এতই বেশী যে তারাই গোটা মুসলিম বিশ্বের জন্য নির্যাতনের স্টীম রোলার। ইবলিস একা হয়েও যেমন নমরূদ, ফেরআউনের উপর ভর করে মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছিল তেমনি ক্ষুদ্র এই জনগোষ্ঠী আমেরিকার মত পরাশক্তির উপর ভর করে সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে আঘাত করে চলেছে। উল্লেখ্য, আমেরিকায় ইহুদী লবির প্রভাব সর্বগ্রাসী। আমেরিকা কেন নিজ দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে বাড়াবাড়ি করে চলছে ইসরাইলের স্বার্থ নিয়ে? এর প্রভাব আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের এ নীতি শুধু তাদের নিরাপত্তাকেই আজ বিপন্ন করে তোলেনি, বিশ্বের অন্যান্য দেশের নিরাপত্তাকেও ঠেলে দিয়েছে হুমকির মুখে। এ বিষয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন মাশিমার এবং হার্ভার্ডের স্টিফেনওয়াল্ট তাদের ‘আমেরিকায় ইহুদী লবির প্রভাব’ শীর্ষক সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে সে কথা তুলে ধরেছেন। নিম্নে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো- “এই লবির কার্যকারিতার একটি মুখ্য স্তম্ভ হচ্ছে কংগ্রেসের ওপর এর প্রভাব। কংগ্রেসে ইসরাইল কার্যত সমালোচনার বাইরে। সমালোচনা থেকে সুরক্ষিত। বিষয়টি আসলেই উল্লেখযোগ্য। কংগ্রেস কলহপূর্ণ বিষয়-আশয় খুব কমই এড়িয়ে চলে। সাধারণত কংগ্রেসে বিতর্কিত বিষয়গুলোই আলোচিত হয়। কিন্তু যেখানে বিষয়টি ইসলাইল সংশ্লিষ্ট হয়, সেখানে সম্ভাবনাময় সমালোচকরাও নীরব হয়ে যান। এর একটা কারণ, কিছু মুখ্য কংগ্রেস সদস্য খ্রিস্টান ইহুদী। যেমন, ডিক আর্মে। তিনি ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে বলেন, ‘আমার এক নম্বর অগ্রাধিকার বিদেশ নীতিতে ইসরাইলকে সংরক্ষিত করা।’ যে কেউই ভাবতে পারেন, এক নম্বর অগ্রাধিকার একজন কংগ্রেসম্যানের হওয়া উচিত আমেরিকাকে সুরক্ষা করা, সেখানে এমন ইহুদী সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান আছেন, যারা মার্কিন বিদেশনীতিতে ইসরাইলি স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করেন। লবির শক্তির আরেকটি উৎস ইসরাইল সমর্থক কংগ্রেস স্টাফদের ব্যবহার করা। আইপ্যাকের সাবেক প্রধান মরিস অ্যামিতে একবার স্বীকার করেছিলেন, ক্যাপিটাল হিলে অনেকেই আছেন, যারা ইহুদী, যারা সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে ইহুদী দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখেন। এরা সেসব ব্যক্তি ও কংগ্রেসম্যানদের মতোই এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো ক্ষমতাধর অবস্থানে আছেন। শুধু স্টাফ পর্যায়ে আপনি দেখবেন চমৎকার কিছু কাজ হয়ে গেছে ইসরাইলীদের পক্ষে। তা সত্বেও, আইপ্যাকই হচ্ছে কংগ্রেসের ওপর প্রভাব খাটানোর পিছনে মূল শক্তি। এর সাফল্যের কারণ, যেসব বিধায়ক ও কংগ্রেস প্রার্থী এই এজেন্ডার সমর্থক, তাদের পুরস্কৃত করার বেলায় আইপ্যাকের রয়েছে বেশ ক্ষমতা। তেমনি যারা ইসরাইলি এজেন্ডা অস্বীকার বা চ্যালেঞ্জ করেন তাদের শাস্তি দেয়ার ক্ষমতাও রয়েছে আইপ্যাকের। মার্কিন নির্বাচনে অর্থ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লবিস্ট জ্যাক আবরামফের কেলেঙ্কারির ঘটনা আমাদের সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আইপ্যাক এটুকু নিশ্চিত করে যে, অনেক ইসরাইল সমর্থক রাজনৈতিক কমিটি থেকে এর বন্ধুরা জোরালো অর্থসহায়তা যেন পায়। কাউকে যদি ইসরাইলের বিরূদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যায়, তবে এটা নিশ্চিত আইপ্যাক সরাসরি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমে পড়বে। ইসরাইল সেই সঙ্গে চিঠি লেখার মাধ্যমে প্রচারে নামে এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকদের প্রণোদিত করে ইসরাইল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষ নিতে। এই কৌশলের দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশে কোন অবকাশ নেই। এখানে একটা উদাহরণ দেই: ‘১৯৮৪ সালের নির্বাচনে আইপ্যাক সিনেটর চার্লস প্যারেকে ইলিনয়েতে পরাজিত করতে ভূমিকা রেখেছিল। একজন প্রখ্যাত লবি ব্যক্তিত্বের মতে ‘চার্লস প্যারে’ বোকামি করে ইসরাইলের স্বার্থে আঘাত হেনেছিলেন। তখন আইপ্যাকের প্রধান থামস ডাইন সে সময় কী ঘটেছিল তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন: ‘All the Jews in America, from coast to coast, gathered to oust perrey, And the American Politicians, those who hold public position now, and those who aspire- got the message.
ক্যাপিটল হিলের ওপরই আইপ্যাকের প্রভাব থেমে নেই। আইপ্যাক-এর সাবেক স্টাফ মেম্বার ডগলাস ব্লোমফিল্ডের মতে, যখনই তারা কোন ইশারা পান ‘কংগ্রেস সদস্য ও স্টাফদের জন্য সাধারণ কাজ হচ্ছে প্রথমে আইপ্যাকের দিকে ফিরে তাকানো।’ কমিটি স্টাফ, প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ এবং কংগ্রেসের গবেষণা সার্ভিস ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’-এর দিকে তাকানোর আগেই তাদের তাকাতে হবে আইপ্যাকের দিকে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আইপ্যাককে মাঝে মধ্যে ডাকা হয় ভাষণের খসড়া প্রণয়ন করতে, আইন প্রণয়নের কাজে অংশ নিতে, কৌশল প্রশ্নে পরামর্শ দিতে, গবেষণা পরিচালনা করতে, কোস্পন্সর সংগ্রহ করতে এবং ভোট মার্শাল করতে। মূল কথা হচ্ছে, একটি বিদেশী সরকারের জন্য একটি ডি-ফেক্টো এজেন্ট হিসেবে আইপ্যাকের শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে কংগ্রেসের ওপর। এর ফলে ইসরাইল প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবলম্বিত নীতি নিয়ে এখানে কোন বিতর্ক ওঠে না। যদিও অন্য কথায়, সরকারের তিনটি প্রধান শাখার একটি সুদৃঢ়ভাবে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেমন ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর আর্নেস্ট হোলিংস তার এ পদ ছাড়ার আগে বলেছিলেন: ”You can’t have an Israeli policy other than what AIPAC gives you around here. কিংবা অ্যারিয়েল শ্যারণ একবার আমেরিকান শ্রোতাদের বলেছিলেন, যখন আমাকে জনতা জিজ্ঞেস করে, তারা কিভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করতে পারে। তখন আমি তাদের বলে দেই ‘হেল্প আইপ্যাক’। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইহুদী ভোটারদের প্রভাবটাও এখানে উল্লেখ্য। লবির উল্লেখযোগ্য লেভারেজ রয়েছে নির্বাহী শাখার উপরও। যদিও ইহুদীরা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশের কম, তবুও এরা উভয় দলের প্রার্থীর প্রচার কাজের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা একবার অনুমিত হিসাব কষে দেখিয়েছিল, ডেমোক্রেটদলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ইহুদী সমর্থকদের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। নির্বাচনী খরচের প্রায় ৬০ শতাংশ তাদের আসে ইহুদী সমর্থকদের পক্ষ থেকে এবং যেহেতু ইহুদী ভোটারদের টার্ন আউটের হার উচ্চ এবং এদের বসবাস যেহেতু কিছু কিছু রাজ্যে ‘কেন্দ্রীভূত, যেমন ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, ইলিনয়ে, নিউইয়র্ক ও পেনসিলভানিয়ায়। এসব রাজ্যে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা ইহুদী ভোটারদের চটাবার মতো কিছু করতে চায় না। লবির প্রধান প্রধান সংগঠনের কাজ হচ্ছে এদিকটায় নজর রাখা, যাতে গুরুত্বপূর্ণ ফরেন পলিসি সংশ্লিষ্ট পদে কোন ইসরাইল বিদ্বেষীরা নিয়োগ না পায়। জিমি কার্টার চেয়েছিলেন জর্জ বলকে তার ‘ফাস্ট সেক্রেটারি অব স্টেট’ করতে। কিন্তু ইহুদী লবি যখন জানতে পারল, জর্জ বল ইসরাইলের সমর্থক নন, তখন এ নিয়োগে বিরোধিতা করল। এভাবে নীতিনির্ধারক হতে ইচ্ছুকদের ইসরাইলের সমর্থক হতে উৎসাহিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন পলিসি এস্টাবলিশমেন্ট ইসরাইলি নীতির সমালোচকরা বিপদগ্রস্ত প্রজাতিতে রূপ নেয়। যখন হাওয়ার্ড ডিন আরব-ইসরাইল দ্বন্দ্বে নীতির আহবান জানান, সিনেটর জোমোর লিবারম্যান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন, তিনি ইসরাইলকে বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং বলেন, তার বিবৃতি ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’। কার্যত তখন প্রতিনিধি পরিষদের সব ডেমোক্রেটদলীয় শীর্ষ সদস্য ডিনের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে লেখা এক চিঠিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। আশঙ্কাটা ছিল অযৌক্তিক। ডিন ইসরাইলি নীতির পক্ষেই তীক্ষè দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তার নির্বাচনী প্রচারণার কো-চেয়ারম্যান ছিলেন আইপ্যাকের সাবেক এক প্রেসিডেন্ট এবং মধ্যপ্রাচ্য প্রশ্নে ডিনের অনেক ঘনিষ্ট পরামর্শেই আইপ্যাকের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি নিছক চেয়েছিলেন উভয় পক্ষকে কাছাকাছি নিয়ে আসতে। এক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের ভূমিকা হবে একটি ‘অনেস্ট ব্রোকা’র-এর। এটাই ছিল একটি বৈপ্লবিক ধারণা। কিন্তু ইসরাইলি লবি এই নিরপেক্ষতা সহ্য করতে পারেনি। ক্লিনটন প্রশাসনের আমলে, মধ্যপ্রাচ্য নীতি আকার পেত সুপরিচিত ইসরাইল সমর্থক সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে মার্কিন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। এদের মধ্যে আছেন আইপ্যাকের গবেষণা শাখার সাবেক উপপরিচালক ও ইসরাইলের সমর্থক সংগঠন ‘ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্টিন ইন্ডিক। আরো আছেন ডেনিস রস- যিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে ২০০১ সালে যোগ দেন উপরে উল্লিখিত ইনস্টিটিউটে। আছেন অ্যারোন মিলার, তিনি থাকতেন ইসরাইলে। মাঝে মধ্যে আসতেন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০০ সালের জুলাইয়ে অনুুষ্ঠিত ক্যাম্প ডেভিড সম্মেলনে এরা ছিলেন ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠ পরামর্শক। যদিও এরা তিনজনই ওসলো শান্তি প্রক্রিয়া সমর্থন করেছিলেন এবং সমর্থন জানিয়েছিলেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়, তারা তা করেছিলেন ইসরাইলের কাছে গ্রহণযোগ্য সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই। পরিস্থিতিটা আরো আলোচনায় উঠে আসে বুশ প্রশাসনের আমলে। এদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয় আরো যারপর নেই আগ্রহী ইসরাইল অনুসারী ব্যক্তিবর্গ: ইলিয়ট আবরামস, জন বোল্টন, ডগলাস ফিড, আই লিউয়িস লিবি, রিচার্ড পার্লি, পল উলপউইট্জ এবং ডেভিট উর্মসার। আমরা দেখতে পাব, এসব কর্মকর্তা অব্যাহত ভাবে মার্কিন নীতিকে ইসরাইলের অনুকূলে ঠেলে দিয়েছেন এবং এদের পেছনে আছে ইসরাইল লবির সংগঠনগুলো। এ লবি অবশ্য কোনো মুক্ত বিতর্কে যেতে চায় না। কারণ, এর ফলে আমেরিকা যতটুকু সহায়তা ইসরাইলকে দেয়, তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি এনে দাঁড় করানো হবে। সে মতে, ইসরাইল সমর্থক সংগঠনগুলো কঠোরভাবে কাজ করে ইনস্টিটিউটগুলোর ওপর প্রভাব খাটিয়ে জনমতকে ইসরাইলের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য।
-মুহম্মদ আলম মৃধা, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫