বিশ্ব রাজনীতি ও সংসদীয় গণতন্ত্রের উন্নয়নধারা বিশ্লেষণের লক্ষ্য নিয়ে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী এসোসিয়েশন (সিপিএ) সম্মেলন। কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহে পার্লামেন্ট ও আইন সভার শীর্ষস্থানী পার্লামেন্টারীয়ানরা এ বার্ষিক প্লেনারী সম্মেলনে উপস্থাপন করেন। এর মূল লক্ষ্য গণতন্ত্রের প্রচার ও প্রসার। সিপিএ সম্মেলনঃ সিপিএ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯১১ সালে। তখন ৬টি রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বৃটেন ইত্যাদির সদস্য ছিল। ১৯৪৮ সালে সিপিএ বর্তমান অফিস নেয়। তখন একটি আলাদা সেক্রেটারিয়েট গঠন করা হয়। ১৯৮৯ সালে পেট্রন ও ভাইস পেট্রন নতুন দুটি সাংবিধানিক পদ তৈরি হয়। ১৯৪৮ সাল থেকে সিপিএ সম্মেলন হয়ে আসছে। সেই সময় থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত হতো দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। ১৯৬১ সাল থেকে সম্মেলন হয়ে আসছে বাৎসরিকভাবে। এ পর্যন্ত ৪৮টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনে। সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের লক্ষ্যে। সিপিএ বার্ষিক প্লেনারী সম্মেলনের পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক আঞ্চলিক সম্মেলনও করে। আফ্রিকা, বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জ, ভূমধ্যসাগরীয়, কানাডা, ক্যারিরীয়, আমেরিকা ও আটলান্টিক অঞ্চলে নিয়মিতভাবে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল যৌথভাবে আঞ্চলিক সম্মেলন করে। ২০০০ সালে এশীয় অঞ্চলে নিয়মিত আঞ্চলিক সম্মেলন শুরু হয়। ২০০২ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক সম্মেলন শুরু করা হয়। এসব আঞ্চলিক সম্মেলনে আঞ্চলিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়। প্রতিবছর এ প্লেনারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১১ থেকে ১৪ দিন ব্যাপী। প্রতিবছরই ৫ শতাধিক প্রতিনিধি এ সম্মেলনে যোগদান করে। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৪২ জন প্রতিনিধি যোগদান করে। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৪৮টি সম্মেলনের ৫টি আয়োজন করে যুক্তরাজ্য। নিউজিল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া ৪ বার করে সিপিএ সম্মেলনের আয়োজন করে। ভারত ও বাহামাস ৩ বার এবং শ্রীলংকা ২ বার এ সম্মেলনের আয়োজন করে। বাংলাদেশ অবশ্য এ বছর প্রথম এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সংসদীয় গণতন্ত্র, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক উন্নয়ন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণসহ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে সিপিএ প্রতিবছর প্লেনারী সম্মেলন করে। আঞ্চলিক সম্মেলন ও সেমিনার সিম্পেজিয়ামের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সুপারিশমালা প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়। এককথায় সিপিএ ও সিপিএ সম্মেলনগুলো বিশ্বের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা ও তার ব্যবস্থা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রসঙ্গতঃ সি.পি.এ সম্মেলনের এই কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে উল্লেখ করতে হয় যে, মূলতঃ এই কমনওয়েলথ ও সি.পি.এ সম্মেলনের নামে গণতান্ত্রিক ধ্যান ধারণা ও মূল্যবোধ মুসলিম দেশের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তথা হাতে শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে। এবারের সি.পি.এ. সম্মেলনে অনুষ্ঠিত ছোট একটি ঘটনা তাই প্রতিয়মান করে। গত ১৩/১০/০৩ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকে নিম্নোক্ত শিরোনামে ঘটনাটি পত্রস্থ হয়। অভূতপূর্ব ঘটনা জাতীয় সংসদে অধিবেশন নেই, তবুও সংসদের অধিবেশন কক্ষ ছিল পূর্ণ। স্পীকারের আসনে ব্যরিস্টার জমির উদ্দীন সরকার নেই, বসে আছেন ঘানার বিশালাকৃতির এক এমপি। প্রধানমন্ত্রীর আসনে বেগম খালেদা জিয়া নেই, আছেন, আফ্রিকান একজন। বিরোধী নেত্রীর আসনে শেখ হাসিনা নয়, বৃটিশ এক এমপি দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষে কি করে এমনটি সম্ভব? কিন্তু বাস্তবে তাই ঘটেছে। ঘটনা গত শনিবার বিকেলের। এ এক অভুতপূর্ব ঘটনা। ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ পালামেন্টারী এসোসিয়েশনের ৪৯তম সম্মেলনের প্রতিনিধিরা গত শনিবার জাতীয় সংসদ ভবন দেখতে গেলে এ দৃশ্যের অবতারণা হয়। অধিবেশন কক্ষ অধিবেশনকালেই খোলা হয়ে থাকে। কিন্তু বিদেশী মেহমানদের সংসদ ভবন পরিদর্শনকালে শনিবার অধিবেশন কক্ষটি খোলা হয়। কক্ষের সব দরজাও ছিল খোলা। আর এ সুবাদে ভিতর থেকে হঠাৎ ‘অর্ডার অর্ডার’ শব্দ ভেসে আসে। এ শব্দ শুনে লবিতে অবস্থানরত সাংবাদিকরা দৌঁড়ে ভিতরে গিয়ে এ দৃশ্য দেখতে পান। বেলা তখন পৌনে ৪টা, স্পীকারের আসনে বসে ঘানার এক এমপি ‘অর্ডার, অর্ডার, বলে টেবিলে চাপড়াচ্ছেন। আর বিরোধীদলের আসনে ব্রিটিশ এমপি আর প্রধানমন্ত্রীর আসনে এক আফ্রিকান এমপি’র মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ চলছে। অন্য কিছু এমপি সরকারী দলের আসনে এবং কিছু বিরোধীদলের আসনে বসা, তারা কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে হৈ-চৈ করছেন, কথা বলছেন। এ অবস্থায় কিছু সাংবাদিকও ভিতরে প্রবেশ করেন। দু’পক্ষের মধ্যে বেশ বিতর্ক চলছে। আর এ পর্যায়ে স্পীকারের আসনে বসা বিদেশী মেহমান এমপি অর্ডার, অর্ডার, বলে চিৎকার করছেন। এতে সংসদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু করেন। বিশেষ করে স্পীকার ও প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসা প্রতিনিধিদের ক্ষ্যান্ত করার জন্য বিভিন্ন কৌশল নেন কিন্তু পারেননি। ১৫ মিনিটকাল বিতর্ক করে, চেয়ারে বসে আপনা থেকেই তারা বেরিয়ে আসেন। উল্লেখ্য, আমাদের দেশের একশ্রেণীর তথাকথিত ইসলামী রাজনীতিক আছেন যারা বলে বেড়ান ইসলাম আর গণতন্ত্র সমার্থক। কিন্তু তাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, গণতন্ত্রের প্রবর্তক কি কোন নবী-রসূল আউলিয়া-ই-কিরাম? তখন তাদের লা-জাওয়াব হওয়া ব্যতীত কোন গত্যান্তর থাকে না। পাশাপাশি যদি প্রশ্ন করা হয়, গণতন্ত্রের প্রবর্তক কে বা কারা? তার উত্তরে দেখা যায় যে গণতন্ত্রের প্রবক্তা গণতন্ত্রের শিক্ষাদাতা মূলতঃ বিধর্মী ইহুদী খ্রীষ্টানরা। আলোচ্য প্রতীকী ঘটনায়ও তাই উদ্ভাসিত হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে পার্লামেন্টে, সরকারী দল ও বিরোধীদল এবং তাদের মাঝে অহেতুক বাদানুবাদ এবং স্পীকার তার অর্ডার প্রক্রিয়া এসব কথিত সংসদীয় রীতির মহড়া আমাদেরকে সে সত্যই মনে করিয়ে দেয়। কাজেই যেসব ধর্মব্যবসায়ী ইসলামী রাজনীতিক গণতন্ত্র আর ইসলামকে সমার্থক বলে মনে করে তাদের উচিত বিষয়টি থেকে শিক্ষা নেয়া ও লজ্জা পাওয়া। (চলবে)
-মুহম্মদ ওলীউর রহমান, ঢাকা।
ইরাকের মীরজাফর সাদ্দাম রাশিয়ার বেলারুশ যেতে চায় কেন?
প্রসঙ্গঃ ছবি, অশ্লীল ছবি ইনকিলাব ও হাটহাজারীর আহমক শাফী উপাখ্যান