গেল ৮ই মাচ?‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস?হিসেবে সারাবিশে?নারীবাদী সংগঠনগুলো দিনটি পালন করেছে।
নারী দিবসের ইতিহাস হিসেবে জানা যায়, ১৮৫৭ সালের এই দিনে আমেরিকার নিউইয়কে?একটি সুঁচ কারখানার নারী শ্রমিকরা কারখানার মানবেতর পরিবেশ, অসম মজুরি ও নির্দিষ্ট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলন শুর?করলে তাদের উপর পুলিশী নির্যাতন করে কারাগারে আটকে রাখা হয়। ১৮৬০ সালে এই কারখানার নারী শ্রমিকরা ইউনিয়ন গঠন এবং তাদের ন্যয?দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়ে উঠেন। ১৯১০ সালের এই দিনে কোপেন হেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে জার্মানীর নারী নেত্রী ফারা জেটকিন দিনটিকে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার ব?বছর পর ১৯৮৪ সালে কথিত বিশ?নারী সমাজের ঐতিহাসিক সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ ৮মার্চকে ‘বিশ?নারী দিবস?ঘোষণা করে।
উল্লেখ?নারী দিবস যারা পালন করছেন তারা এ দিনকে নারীর অধিকার সমুন্নত করে তুলে ধরার প্রয়াস পান। সঙ্গতকারণেই বিষয়টি কি তবে এই দাঁড়ায় না যে, বছরের বাকি দিনগুলোতে তারা সে বিষয়ে তুলনামুলক কম সোচ্চার থাকেন?
বলাবহুল?এ ধরনের নারী দিবস পালন ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূন?নয়।
মূলতঃ এ দিনটিতেই যারা নারী অধিকার সম্পকে?সোচ্চার হতে চান তারা আসলে কেবল আনুষ্ঠানিকতা আর একটা গণ্ডীতেই বিষয়টি সীমাব?রাখতে চান। কিন্তু নারীর অধিকারের আবেদন মূলতঃ শুধু একটি দিনেই সীমাব?নয় বরং এর আবেদন সারা বছরের, সারা জীবনের তথা ক্বিয়ামত পর্যন্ত।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ?বিষয় ছিলো, ‘নারী ও কন্যা শি?নির্যাতনকারীদের আর ক্ষমা নয়।?
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ? সুদূর আফ্রিকার লাইবেরিয়ান প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী পোর্শিয়া সিম্পসন, চিলির প্রেসিডেন্ট মিশেল সবাই মহিলা। এদিকে মার্কিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস ছাড়া হিলারী ক্লিনটন এবং লরা বুশও অত্যš?ক্ষমতাধর মহিলা। কিন্তু প্রা?তথ্যমতে ঐসব কথিত রাষ্টে?নারী নির্যাতনের হার যে কোনো মুসলিম দেশের চেয়ে অনেক বেশী।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর ৫৫ কোটি দরিদ?কর্মজীবী মানুষের মধে?৬০ শতাংশই নারী। এছাড়া বিশ্বের ২৮০ কোটি কর্মজীবী মানুষের মধে?১১০ কোটি হচ্ছে নারী।
কিন্তু কর্মজীবী নারীদের ?ত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ?বিষয়ক স্কুল এবং স্বাস্থ?ও জেন্ডার সাম?কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের তিনজন নারীর মধে?একজন তার জীবদ্দশায় মারধর, যৌন কমে?বাধ?হওয়া কিংবা অন?কোনভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
মানবাধিকার, নারী নির্যাতনসহ মেয়েদের নানা অধিকার নিয়ে পশ্চিমা বিশ?বেশ সোচ্চার। তারা প্রচার করে থাকে, মুসলিম দেশগুলোতেই নারীরা বৈষম্যমূলক আচরনের শিকার হন এবং তাদের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
অথচ মানবাধিকার সচেতন পশ্চিমা বিশ্বেই অহরহ ঘটছে নারী নির্যাতনের মতো জঘণ?ঘটনা। নিজ গৃহেই স্বামী বা ছেলে বন্ধুর কাছে তারা হচ্ছেন নির্যাতিত ও নিপীড়িত। ব্রিটেনে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার তরুনীদের পাশে এসে দাড়িয়েছে ট্যাবলয়েড পত্রিকা সান।
তারা নির্যাতিতদের এসব কাহিনী তুলে ধরতে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী হটলাইন অভিযান চালু করেছে। সান দাবি করেছে, ব্রিটেনের হাজার হাজার তরুনী নীরবে নিভৃতে তাদের স্বামী বা ছেলে বন্ধুর অত্যাচার, নিপীড়ন মুখ বুজে সহ?করে যাচ্ছে। এসব ঘটনা তাদের নিকটাত্মীয় এমনকি মা-বাবাও জানতে পারেন না।
ব্রিটেনে প্রতি চারজনে একজন মহিলা স্বামীর হাতে নির্যাতিত হন। কেবল ইংল্যা?এবং ওয়েলসেই প্রতি সপ্তাহে দু’জন মহিলা এ কারণে মৃত্যুবরণ করে।
পাশাপাশি উল্লেখ? বিগত ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় এ পর্যš?বাংলাদেশ সরকার প্রধান এবং বিরোধীদলীয় প্রধান উভয়ে ছিল নারী। এ সময়ে এদের একজন সরকার প্রধান থাকলে অপরজন বিরোধীদলীয় প্রধান থেকেছেন। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ?অনুযায়ী ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যš?ধর্ষণ, অপহরণ, এসিড নি?প, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার ২৪৬ জন নারী। এর মধে?২০০৪ সালে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫ হাজার ৯৮৬ জন।
ইউএনডিপি’র এক গবেষণার তথ?মতে, গত ১০ বছরে যৌতুকের কারণে নারীর উপর পারিবারিকভাবে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি।
২০০৪ সালে ৩৫৩ জন নারী যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশে মহিলা পরিষদের তথ?মতে ২০০৪ সালে যৌতুকের কারণে ২৩৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ২০০৬ সালে যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হয়েছে ৪৮৩ জন।
অতএব, প্রতভাত হচ্ছে, কি বিদেশে অথবা কি স্বদেশ; নারীর ক্ষমতায়ন হলেই কিন্তু নারী নির্যাতন ব?হয় না।
মুলতঃ নারী নির্যাতন, নারী অধিকার এসব সম্পকে?সর্বাগে?সুস্প?ও গ্রহণযোগ?ধারণা নিতে হবে। কোন্টা নারী নির্যাতন আর কেন্টা নারী অধিকার সে বোধ আগে সঠিক ও সমুন্নত করতে হবে।
বেলেল্লাপনা আর বেপর্দাকে নারী অধিকার বলে চালানোর জো নেই। এ?ত্রে উল্লেখ?পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো নারীদেরকে বিবস্ত্র করে রাখলেও তাদের অধিকার ও মর্যাদাকে সংরক্ষিত ও সমুন্নত করতে পারে নাই।
সঙ্গতকারণেই একথা বলার ?ত্রে কোন সন্দেহ নেই যে, একমা?ইসলামই নারী ও কন্যা শিশুদের অধিকার সমুন্নত করেছে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধে?ঐ ব্য?িউত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।?অন?হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যার তিনটি কন্যা সন্তান হবে, যে তাদের যথাযথ লালন-পালন করবে সে নিশ্চিত জান্নতাী হবে।?(সুবহানাল্লাহ)
ইন্টানেট সূত্রে জানা যায় যে, হলিউডের অভিনেত্রীরাও এখন হিজাবের দিকে ঝুঁকছেন। জরিপে জানা যায় যে, কিছু পশ্চিমা মহিলারাও এখন তাদের স্বামীদের গার্লফ্রেন্ড পছন্দ করছেন না। তার মানে এখনও পর্যš?অনেক পশ্চিমা মহিলারা এটাকে দোষের মনে করছেন না।
অর্থাৎ, পশ্চিমা মহিলারা তাদের অধিকার সম্পকে?সচেতন নয়। মূলত: অধিকার ও কর্তব?অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কর্তব?পালনের মধ?দিয়ে অধিকার আদায়ের পথ সুগম হয়। পশ্চিমা মহিলারা যেহেতু স্বামীর প্রতি তাদের কর্তব?পালন সম্পকে?সচেতন নয় সেহেতু স্বামী থেকে তাদের অধিকার সম্পর্কেও অবগত নয়।
অথচ ইসলামী মূল্যবোধ এ দু’টোই শিক্ষা দেয়। কিন্তু মুসলমানরা আজ গাফিল বলে তা প্রতিভাত ও উচ্চকিত করতে পারে না।
বলাবাহুল? আজ মুসলমান নারীবাদীরা জাটকিনকে যতটুকু মূল্যায়ন করে- এ যুগের ক্বায়িম-মক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসা, হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহাল আলীয়া যিনি মুজাদ্দিদে আ’যম-এর সহধর্মীনী-তাঁর ফযীলত বরকত তথা মর্যাদা-মর্তবা সম্পকে?তারা কিছুই অবগত নয়। এবং তাঁর মূল্যায়ন সম্পকে?শ্রদ্ধাশীল নয়। অথচ তিনিই প্রস্ফূটিত করছেন নারী ব্যক্তিত?ও জীবনকে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ?যে, বেগম রোকেয়া থেকে আরম্ভ নারীবাদী জাটকিন সহ এ যুগের নারীবাদীরা সবাই অবাধ নারী স্বাধীনতার প? আহবান জানিয়েছেন।
বলাবাহুল?তাদের কথিত নারী-স্বাধীনতা কিন্তু পুরোই তারা অর্জন করেছেন। নারী স্বাধীনতার নামে কথিত উচ্চ শিক্ষা, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট হওয়া, অভিনেত্রী থেকে নভোযাত্রী হওয়া সবই তারা হয়েছেন। হিমালয়ের শীষ?চুড়া থেকে মঙ্গলের মাটিতেও নারীর পা পড়েছে। অর্থাৎ নারী স্বাধীনতার নামে যা কিছু হতে পারে সবই তারা করেছেন।
কিন্তু তারপরেও বলতে হয়, নারী অধিকার কি তারা নিজেরা অর্জন করতে পেরেছেন না অপরের জন?নিশ্চিত করতে পেরেছেন আসলে কোনটাই পরেননি।
আজকে নারী স্বাধীনতার নামে শুধু বিকিনি অব ইউনিভাস?প্রতিযোগিতাই নয় এমনকি প্রকাশে?কাপড় খোলাখলির প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এমনকি একজন নারী কতজন পুরুষকে একাদিক্রমে দেহ দিতে পারে সে প্রতিযোগীতাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অর্থাৎ নারী স্বাধীনতার নামে তারা যে বিষয়টি পশ্বাধম পর্যায়ে নিয়ে গেছেন শুধু তাই উল্লেখ?নয় সাথে এর যে নিকৃষ্ট পর্যায়ে যে যাওয়া সম্ভব নয় তারও প্রমাণ রেখেছেন।
কিন্তু তারপরেও নারী সুখ তারা পেয়েছেন তা কিন্তু তারা স্বীকার ও প্রচার করেছেন না। তাহলে বোঝা যাচ্ছে এরপরও তাদের অনেক কিছু পাওয়ার আছে।
অথচ নারী স্বাধীনতার নামে নগ্নতা ও অশ্লীলতার চুড়ান্ত পর্যায়েই তারা পৌছেছেন। তাহলে সে?ত্রে নারী স্বাধীনতার নামে তাদের নতুন আর কিছু করার নেই। কারণ তারা দেহে একটা সূতোও যার অবমি?রাখেন নাই। কিন্তু তারপরে তাদের কথিত নারী সুখ ও অধিকার তারা পান নাই।
তাহলে নারী সুখ ও নারী অধিকার পেতে হলে তাদের এখন একটি পথই অগত্যা রয়েছে। তাহল ফিরে আসা। দেহে এক সূতাও না রাখার পরিবতে?দেহের এক চুলও মাতে কেউ না দেখে সে অবস্থার স্বাদ গ্রহণ করা।
এখানে উল্লেখ?যে, পর্দাটা যে আসলে কত স্বাদের বিষয়, রহমতের বিষয়, আনন্দের বিষয় সে বিষয়টি বর্তমান যামানার সঠিকভাবে অন?কেউ রূপায়ন, বিমূত?বা প্রতিফলন করতে পারেননি।
কারণ তার জন?দরকার আলাদা রূহানী যোগ্যতা, প্রজ্ঞা। বিশেষভাবে উল্লেখ?যে, বর্তমানে সে যোগ্যতার অধিকারী হলেন মুজাদ্দিদে আ’যম সহধর্মীনী, ক্বায়িম-মক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহাল আলীয়া।
তাঁর ফয়েজে নারী যেমন তার কর্তব?সম্পকে?সচেতন হচ্ছে, তেমনি তার ধারাবাহিকতায় তাদের অধিকারও লাভ করেছে পূর্ণমাত্রায়।
কাজেই এ যুগের নারীদের তিনিই ত্রাণকর্তা। তাঁর সম্পকে?জানা ও তাঁর ছোহবতে যাওয়া এ যুগের নারীদের জন?ফরয-ওয়াজিব। এ সত্যটি যতই উচ্চারণ ও প্রচার করা যায় ততই এই যুগের নারীর জন?দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে কল্যাণকর।
-মুহম্মদ আলম মৃধা, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২