আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ ফরমান, “তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক তবে দলীলসমূহ পেশ করো।” এই আয়াত শরীফের প্রেক্ষিতে উসূল হয়েছে যে, কে হক্ব বা নাহক্ব তা ফয়সালা হবে দলীলের উপর। বলাবাহুল্য, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে দলীল পেশ করা। এবং বলতে গেলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত অনেক সময় বিরোধীপক্ষের কিতাব থেকেও দলীল দেয়। মাসিক আল বাইয়্যিনাতে ‘দেওবন্দী’, সুন্নীদের কিতাব থেকেও দলীল দিয়ে তাদের গলদ আক্বীদা ও আমলকে ভুল প্রমাণিত করা হয়েছে। তাতে করে পাঠক সমাজে তাদের নিরেট জেহালতি আরো প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। প্রসঙ্গতঃ ‘যেসব মাওলানা টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে তারা উলামায়ে ‘ছূ।’ আল বাইয়্যিনাত-এর এ ফতওয়াকে অস্বীকারীদের বক্তব্যেই যে আল বাইয়্যিনাত-এর ফতওয়ার মূল সূর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তা তাদের মুর্দা দিল এখনও উপলব্ধি করতে পারছেন না। মূলতঃ এটা বাস্তবতার প্রেক্ষিতেই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তাদের থেকে বেরিয়ে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ তাদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে গত ২রা ডিসেম্বর ৭নং পৃষ্ঠায় ‘ঈদ নিয়ে তেলেসমাতি’ শীর্ষক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, “….. এবার আসা যাক টেলিভিশন চ্যানেলের কথা। দেশের ৪টি চ্যানেলে ঈদুল ফিত্র উপলক্ষে অসংখ্য বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হয় দর্শক-শ্রোতাদের সামনে কোন চ্যানেলের কোন অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে কোনটি দেখবে এ নিয়ে দর্শকের মধ্য হুড়োহুড়ি ভাব সৃষ্টি হয়েছে। বিটিভি তিনদিন, এটিএন বাংলা পাঁচ দিন, চ্যানেল আই ছয় দিন এবং এনটিভি চার দিনব্যাপী ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ছায়াছবি, নাটক, টেলিফিল্ম, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, গেম শো, ব্যাণ্ড শো, আনন্দমেলা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, টক শো সহ হরেক রকম অনুষ্ঠান প্রচার করে বিটিভি ও স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, অধিকাংশ অনুষ্ঠান ছিলো ইসলাম ও মুসলিম জাতিসত্ত্বা বহির্ভূত। বিশেষ করে এনটিভিতে তৃতীয় দিনে প্রচারিত মুসলমান অভিনেত্রীর মূর্তির কাছে মাথা নত করা, দেবতার কাছে প্রেমিককে পাওয়ার জন্য সাহায্য চাওয়া ও প্রার্থনা করা, শাখা সিদূঁর পড়া সত্যিই আপত্তিকর। মহান আল্লাহ পাক-এর চেয়ে প্রেমিক বড় হয়ে গেল।’ (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহ পাক কপাল সৃষ্টি করেছেন তাঁকে সিজদা করার জন্য। মূর্তি পুজা করার জন্য নয়। এছাড়া জয়যাত্রা ছবিতে দাড়ি-টুপি ও আলেম-উলামা সাজিয়ে রাজাকার বানানো মানে কি ইসলামকেই অবমাননা নয়? মুক্তিযুদ্ধ কি ইসলামের নামে হয়েছিলো না ব্রাহ্মবাদের নামে। এটিএন বাংলায় নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত সুন্দরী প্রতিযোগিতা মিস বাংলাদেশ ইউএসএ প্রচারিত হয়। কোন মুসলিম নারী কি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে? আর কোন টিভি চ্যানেলে কি তা প্রদর্শন করতে পারে? (দৈনিক সংগ্রাম ২ ডিসেম্বর/২০০৪) পাঠক! এই আপত্তি, এই বিপত্তি, এই প্রশ্ন, এই অভিযোগ, এটিএন টিভি চ্যানালের সমর্থক গোষ্ঠীর। আর তাদের কাছেই আমাদের প্রশ্ন যে, কোন মুসলমান নারী যদি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে না পারে আর কোন টিভি চ্যানেলে যদি তা প্রদর্শন করতে না পারে তবে যেসব টিভি চ্যানেলে তা প্রদর্শিত হয় তাতে কোন মাওলানা কিভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, ইসলামের নামে প্রোগ্রাম করতে পারে? স্মর্তব্য, এই এটিএন বাংলা চ্যানেলেই এক নামধারী মাওলানা আল বাইয়্যিনাত-এর দেয়াল লেখনীর বিরুদ্ধে বলেছিলো। সুতরাং তারা যে কোন্ ধরনের মাওলানা তা আজ তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর প্রতিবেদনে সহজেই বিচার করা যায়। তারা কতটুকু ইসলাম করে তাও আজ সহজেই ধরা পড়ে যায়। কারণ ইসলামের প্রবর্তক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমি এসেছি বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করার জন্য।” আর কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক গান-বাজনা, বেপর্দা, বেহায়া হারাম করেছেন। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো শয়তানের আযান বলে গণ্য। অতএব, যেখানে শয়তানের আযানের প্রাধান্যই একশত ভাগ সেখানে তথাকথিত ইসলামী প্রোগ্রামের কি মূল্য থাকতে পারে? যেমন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তারা আপনাকে প্রশ্ন করে শরাব ও জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন, শরাব ও জুয়াতে ভালও আছে মন্দও আছে। তবে ভালোর চেয়ে মন্দও বেশী। সুতরাং তা সম্পূর্ণই হারাম।” (সূরা বাক্বারা ২১৯) অতএব, যারা মনে করেছেন যে, টিভি চ্যানেলে ইসলামী প্রোগ্রাম হয়, শিক্ষণীয় বিষয় দেখায় উদ্ধৃত আয়াত শরীফের প্রেক্ষিতে তাদের মনে রাখা স্মর্তব্য যে, টিভি চ্যানেলে ভালোর চেয়ে মন্দটাই অনেক বেশী। সুতরাং তা দেখা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। এছাড়া স্মর্তব্য যে, ইসলামের দৃষ্টিতে ভাল-মন্দের সংমিশ্রণটাও গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ো না।’ প্রসঙ্গতঃ কথিত প্রতিক্রিয়ায় আরো যে ব্যক্ত হয়েছে যে, বর্তমান টিভি চ্যানেলগুলোতে হরদম সেক্স ভায়োলেন্স, উদ্ভট কাহিনী, অশ্লীল গান আর নৃত্যই মূলতঃ দেখানো হচ্ছে। তথাকথিত ইসলামী অনুষ্ঠানের আগে ও পড়ে এসবই দেখানো হচ্ছে। আর এক ফাকে সামান্য কিছু সময়ে তথাকথিত মাওলানারা ইসলামের নামে আজগুবি ও মিথ্যা বয়ান আওড়াচ্ছে। এর দ্বারা মূলত ইসলামকেই হেয় করা হচ্ছে। সঠিক ইসলামকে বিকৃত করা হচ্ছে। আর একটা সাধারন কথা এই যে, কোন মাওলানা যদি টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করা জায়িয মনে করেন তাহলে ‘মাওলানা’ লক্ববটিই তাকে বিসর্জন দিতে হয়। অথবা সেটা তাৎক্ষণিকভাবেই তা বিচ্যুত হয়ে যায়। কারণ, তারা যেসব কিতাব পড়ে ‘মাওলানা’ লক্বব বাগিয়েছেন সেসব কিতাবেই অনেক অনেক হাদীছ শরীফে এ মর্মে বর্ণিত রয়েছে যে, “ছবি তোলা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম।” সুতরাং সে কিতাবের কথা, হাদীছ শরীফের কথা যদি ভুল হয়, সে হাদীছ শরীফের হুকুম যদি আজকে অচল হয় তবে তাদের ব্যবহৃত ‘মাওলানা’ লক্ববও ভুল এবং আজকের যুগে অচল। আর এজন্যই আল বাইয়্যিনাতের ফতওয়ায় যেসব মাওলানা টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে তাদের মাওলানা হিসেবে অস্বীকার করে নামধারী মাওলানা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে ‘উলামায়ে ‘ছূ।’ উল্লেখ্য, হাদীছ শরীফে ‘উলামায়ে ‘ছূ’দের নিকৃষ্ট প্রাণী রূপে সাব্যস্ত করা হয়েছে। (মিশকাত শরীফ)
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১