সৌদি ওহাবী লবিং-এর টোপ গিলার আগে মশহুর সিলসিলার এক নাতি তার দাদার পরিচয় দিতেন বাংলা আসামের মুজাদ্দিদ হিসেবে। কথাটি বিলক্ষণ বোকামি এবং অজ্ঞতা। মূলতঃ মুজাদ্দিদে যামান শুধুমাত্র এক বা দুটো অঞ্চলের জন্য আসেন না। বরং তিনি আবির্ভূত হন গোটা বিশ্বের জন্য। পাশাপাশি উলামায়ে ‘ছ’ূ তথা ধর্মব্যবসায়ী আলিম, যারা দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়া হাছিল করে তারাও কিন্তু শুধুমাত্র একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না। মুজাদ্দিদে যামানের আগমনকালে গোটা বিশ্বেই থাকে তাদের অপতৎপরতা। অর্থাৎ, উলামায়ে ‘ছূ’ যে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই আছে তা নয়। পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান তথা গোটা মুসলিম বিশ্ব শুধু নয় বরং অমুসলিম বিশ্বেও মুসলিম কমিউনিটিতে রয়েছে এই উলামায়ে ছূ’দের শক্ত অবস্থান। যাদের সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা শুননি, তোমাদের বাপ-দাদা-চৌদ্দ পুরুষ শুনেনি।’ ঠিক যেন তাই হয়েছে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, সম্প্রতি ব্রিটিশ রাজনীতিক ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী জ্যাক স্ট্র মন্তব্য করেছেন, “নেকাব দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন যেসব মহিলা, তারা প্রকৃতপক্ষে সমাজের মূল ধারা থেকে আলাদা থাকতে চান। স্ট্র বলেন, একই সমাজে বসবাস করলে অপরিচিত জনের সঙ্গে কথা বলতে হয়। আর নেকাব (বোরকা) এক্ষেত্রে এক বড় বাধা। মহিলারা যদি মুখ ঢেকে রাখেন তাহলে তাদের সাথে সহজে কথা বলা সম্ভব নয়। এর আগে সংবাদপত্রে ছাপা একটি নিবন্ধে তিনি বলেন, তিনি যখন সাংসদ ছিলেন তখন যে কোন পর্দানশীন মহিলা তার সঙ্গে দেখা করতে এলে তিনি নেকাব সরিয়ে কথা বলার জন্য অনুরোধ করতেন। ” উল্লেখ্য, ২২ লাখ মুসলমান অধ্যুষিত ব্রিটেনে অধিকাংশ মহিলা হিজাব পরেন। পাশাপাশি লন্ডনের রাস্তায় শিখরা পাগড়ী পরে চলে। ইহুদী পুরুষরা স্কাল ক্যাপ ও মহিলারা ব্যান্ডানা পরে চলে। বৌদ্ধরা গেরুয়া আল খেল্লা ও খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা লম্বা পোশাক পরে দিব্যি ঘোরাফিরা করে। কিন্তু তখন গণতন্ত্রের ধারক-বাহক তথা সভ্যতার তল্পীবাহক লন্ডনীদের কোন প্রতিক্রিয়া তৈরী হয় না। অথচ মুসলমান মহিলা নেকাব পরলেই তাদের যত অস্বস্তি ও তীব্র প্রতিক্রিয়া। কথা ছিল, লন্ডনের এ বৈষম্যমূলক পদক্ষেপে তথা মুসলমান ও ইসলাম বিরোধী আচরণে বিশ্বের তাবত মুসলমান ক্ষেপে উঠবেন, তেতে উঠবেন। সংক্ষুব্ধ হবেন এবং তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করবেন। তাদের ঈমানের তেজোদ্বীপ্ত শিখায় ভড়কে যাবে ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী ইহুদী-খ্রিস্টানরা। কিন্তু সেক্ষেত্রে বড় বাধা মুসলমান নামধারী মুনাফিক। হাদীছ শরীফে যা ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়! এই দ্বীনের (ইসলামের) ক্ষতির ব্যাপারে আমি সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকারক মনে করি মুনাফিকদেরকে।” উল্লেখ্য, ব্রিটেনের হিজাব বিতর্কেও এই মুনাফিকরাই মুসলমানের আন্দোলনের জন্য বড় বিষফোঁড়া। খোদ লন্ডনেই উদ্ভব হয়েছে এই মুনাফিক তথা ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর। মুসলমান তথা মুসলমানের ধর্মীয় প্রতিনিধির ছদ্মাবরণে এসব ধর্মব্যবসায়ীই পর্দার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। আর অযাচিতভাবে এই সুযোগের সর্বাত্মক ব্যবহার করছে ইহুদী-খ্রিষ্টানরা। আজকের জ্যাক স্ট্র’র বিবৃতি দানের পূর্বেই পর্দার বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছিল ড: জকি নামক এক আলেমে ছু’ তথা ধর্মব্যবসায়ী। পিটিআই সূত্রে জানা যায়, লন্ডনে মুসলিম কলেজের প্রধান এবং মসজিদ ও ইমাম কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড: জকি বাদাবি মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরা বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তথাকথিত এই প্রগতিবাদী মুসলিম নেতা বাদাবি কয়েক দশক ধরে ব্রিটেনের মুসলিম ও ব্রিটিশ সমাজকে একাকার হয়ে যাবার পক্ষে ওকালতি করেছেন। বাদাবি অপব্যাখ্যা করে বলেন, পবিত্র কুরআনেও হিজাব পরিহারের যুক্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়, যখন হিযাব মুসলমান মহিলাদের চিহ্নিত হতে এবং নির্যাতিত হবার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন এটা পরিহার করা উচিৎ। উল্লেখ্য, কুরআন শরীফে যদি বলা হয় যে- হিযাব মুসলমান নারীদের জন্য হেফাযত স্বরূপ তবে কি সে কথা বিশ্বাসযোগ্য, নাকি জকির কথা গ্রহণযোগ্য? মূলতঃ মুসলমান হিসেবে কুরআন শরীফের কথাই পালনীয়। আর জকির কথা পর্দার বিরুদ্ধে একটা বাহানা মাত্র। অবস্থা সেরকম হলে মুসলমানদের বেপর্দা না হয়ে বরং পর্দার পক্ষে জিহাদ করা জরুরী। নতুবা হিজরত করাই ইসলামের নির্দেশ। কিন্তু পর্দা অস্বীকার করে ইহুদী খ্রিস্টানদের সাথে একাকার হয়ে যাওয়া ওদের ফাঁদে পা দিয়ে মুসলমানিত্ব হারানো ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “ইহুদী-খ্রিস্টানরা চায় তোমাদেরকে ইসলাম গ্রহণের পরে পুনরায় অমুসলিম বানিয়ে দিতে।” আফসোস আজ আখিরী যামানার আলামত হিসেবে মুনাফিক তথা উলামায়ে ছূ’রা সে লক্ষ্যেই যেন ইহুদী-খ্রিস্টানদের এজেন্ট হয়ে কাজ করছে। লন্ডনে মুসলিম নারীদের সংগঠন দ্য অ্যাসেম্বলি ফর দ্য প্রটেকশন অব দ্য হিজাব ড: জকির সমালোচনা করে বলেছে হিজাব পরা মুসলমানদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং এটা পরিত্যাগ করার অর্থ হচ্ছে সহিংসতার সাথে আপোস করা। কিন্তু শুধু লন্ডনের জকি বাদাবি নয়। এ ধরনের মুনাফিক তথা ধর্মব্যবসায়ীর উত্থান ঘটেছে সারা বিশ্বেই। দ্য এশিয়ান এজ জানায়, মুসলিম অভিবাসী নারীদের নেকাব দিয়ে মুখ ঢাকা উচিৎ নয় বলে ইতালির অমুসলিম নেতারা মত দিয়েছে। ইতালির মুসলিম সম্প্রদায়ের সংগঠন দ্য ইউনিয়ন অব ইসলামিক কমিউনিটিসের প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ নূর দ্য চান গত ১৬ই অক্টোবর/২০০৬ বুধবার এ কথা বলেন। এর আগে ১৫ই অক্টোবর মঙ্গলবার এক সাক্ষাতকারে ইতালির প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রদি বলেন, নেকাব দিয়ে মুখ ঢাকা ঠিক নয়। নেকাব থাকতে পারে কিন্তু মুখ দেখতে পাওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রীর সাথে একমত ঘোষণা করে মুহম্মদ নূর দ্য চান বলেন, ইসলামে নেকাব সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি ইতালীতে মুসলিম মহিলাদের নেকাব পরা উচিৎ নয় বলে ব্যক্ত করেন। ঠিক যেন হাদীছ শরীফের সেই কথা- মূলতঃ এদের কথাগুলো আখিরী যামানায় মূল দাজ্জাল আসার আগে এমন কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল তথা উলামায়ে ছূ’র উদ্ভব হবে, তারা এমন সব কথা বলছে, যা তোমরা শোননি, তোমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষ শোনেনি। এ ধারার আরেকটি আশ্চর্যজনক খবর হলো যে, বিবিসি সূত্রে জানা যায়, ইসলামবিরোধী আমেরিকা নয়, মুসলিম দেশ তিউনিশিয়া আইন করে নেকাব পড়া বন্ধ করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জিন এল আবিদিন বিন আলী বলেছেন, নেকাব পরা রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খার প্রতীক। তিউনিশিয়ার পুলিশ রাস্তায় নেকাব পরা কোন নারীকে দেখলে তাকে দাঁড় করিয়ে তা খুলে ফেলতে বাধ্য করছে এবং ভবিষ্যতে তারা যাতে আর নেকাব না পরে সে ব্যাপারে শাসিয়ে দিচ্ছে। তারা ১৯৮১ সালেই জনসম্মুখে নেকাব পরার নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করে। এদিকে আফগানিস্তানের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র তাজিকিস্তান, যার প্রায় ৯৫ ভাগ লোক মুসলমান। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ২০০৫ সালে ১৯ শে অক্টোবর পাশকৃত এক আইনে বলা হয়, ধর্মনিরপেক্ষ স্কুলগুলোতে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরা চলবে না। এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল জাবর রাখমোন বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ স্কুলগুলোতে মুসলিম মহিলাদের ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ হিজাব ও অন্যান্য ধর্মের প্রতীক পরা গ্রহণযোগ্য নয় এবং সংবিধান ও শিক্ষা আইনের লঙ্ঘন। অথচ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন মত প্রকাশের কোন ক্ষমতা নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথ ভ্রষ্টতায় পতিত হয়।’ (সূরা আহযাব-৩৬) আর একই সূরায় পর্দাকে অলঙ্ঘনীয় আদেশ হিসেবে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় কর। পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। ফলে সে ব্যক্তি কু-বাসনা করে যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে। তোমরা সংযতভাবে কথা বলবে। তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে। জাহিলি যুগের ন্যায় নিজেদের সৌন্দর্য্যকে প্রকাশ ও প্রদর্শন করবে না।’ (সূরা আহযাব) আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, “হে নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার সহধর্মিনী ও কন্যাগণ এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন তারা যেন তাদের চাদর দ্বারা নিজেদেরকে যথাযথভাবে আচ্ছাদিত করে। এতে তাদের চেনা সহজ হবে না। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আযহাব-৫৯) উল্লেখ্য, এ আয়াত শরীফের প্রেক্ষিতে চাদর দ্বারা নিজেদের আচ্ছাদিত করার অনুষঙ্গ বা প্রক্রিয়া হিসেবেই উদ্ভব হয়েছে নেকাব বা বোরকার। মূলতঃ শুধু চাদর দ্বারা সম্পূর্ণ দেহ আচ্ছাদিত করা কঠিন বিধায় তার অনুরূপ বোরকা বা নেকাবই মুসলমান মহিলারা ব্যবহার করে আসছেন। অর্থাৎ বোরকা বা নেকাব পরা মুসলমানদের একান্তই অলঙ্ঘনীয় ধর্মীয় নির্দেশ তথা ফরয। এর দ্বারা মূলতঃ অর্ধেক ইসলাম কায়েম হয়; শুধু তাই নয়, বরং ইসলাম প্রজন্মের তরে এগিয়ে যায়। কারণ একজন পর্দানশীন মা ঐতিহ্যগতভাবেই একটি ইসলামী মনোভাব সম্পন্ন শিশু প্রসব করে। অর্থাৎ আগামী প্রজন্মের তরেও ইসলামী মানস ও প্রেক্ষাপট তৈরী হয়। আর সেটাকেই জ্যাক স্ট্র থেকে ব্লেয়ার, বুশ সবারই ভয়। আর সে আশঙ্কা থেকেই ওরা পর্দার বিরুদ্ধে বলতে উদ্বুদ্ধ। সেক্ষেত্রে পর্দা তথা ইসলামী অনুশাসন ও অনুষঙ্গের বিরুদ্ধে বলার মত ঔদ্ধত্য ওরা তখনই প্রকাশ করে যখন দেখে ইসলামের বিরুদ্ধে ওদের নীল নকশায় নিয়োজিত এজেন্ট আগে থেকেই বিরুদ্ধে বলার মত ভিত তথা ক্ষেত্র তৈরীতে সক্ষম হয়েছে। তুরস্ক, তাজিকিস্তান আর তিউনিসিয়ার মত মুসলিম রাষ্ট্রই শুধু নয়, জকি আর নূর দ্য চানের মত ভিনদেশের ওলামায়ে ছু’রাও কেবল নয়, স্বদেশের নামধারী শাইখুল হাদীছ, খতীব, মুফতে, মাওলানারাও এক্ষেত্রে সমান দায়ী। কারণ তারাই রীতিমত নেকাববিহীন মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত করে এটাকে জায়িয প্রতিপন্ন করছে। এমনকি বেপর্দা ও খোলামেলা নারী নেতৃত্ব সমর্থন এবং তার অনুসরণ ও অনুগমন করে আরো শক্ত মাত্রা দিয়েছে। সুযোগ-সন্ধানী ইহুদী-খ্রিস্টান তথা জ্যাক স্ট্র সেটাই লুফেছে মাত্র। উলামায়ে ছু’রা যেটা অনেক আগেই ব্যক্ত করেছে, জায়িয করেছে সেটারই তারা (ইহুদী-খ্রিষ্টানরা) কেবল প্রতিধ্বনি করছে। কাজেই ওদের পূর্বে এসব উলামায়ে ছূ’দেরই সবার আগে চিহ্নিত ও প্রতিহত করতে হবে। কেননা হাদীছ শরীফের পরিভাষায় ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্ম বিকৃতকারী শাইখুল হদছ, কমিনী, খবিছ, মাহিউদ্দিন ঐসব ইহুদী খ্রিস্টান গং তথা বুশ, ব্লেয়ার আর জ্যাক স্ট্র’র চেয়েও ইসলামের জন্য ক্ষতিকর বা নিকৃষ্ট জীব। নাউযুবিল্লাহ।
-মুহম্মদ মাহবুব আল বদরী, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫