তাহারা আল্লাহ পাক-এর নূরকে ফুৎকার দিয়া নিভাইয়া দিতে চাহিয়াছিলো। তাহারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্বংশ বলিয়া ঘোষণা করিয়াছিলো। তাহারা জামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামে আ’যম, হাবীবে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, মুহইস্ সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর তাজদীদকে বেমালুম অস্বীকার করিয়া চলিতে চায়। উদ্ভট খোড়া যুক্তি আর মিথ্যার প্রপ্রাগাণ্ডার বেড়াজাল দিয়া ঢাকিয়া রাখিতে চায়। অথচ ইহারা জানেনা যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলিয়াছেন? তিনি বলিয়াছেন, “ইসলাম অল্প সংখ্যক লোকের দ্বারা শুরু হইয়াছে, অল্প সংখ্যক লোকের দ্বারা শেষ হইবে এবং অল্প সংখ্যক লোকের জন্যই কামিয়াবী।” ইহারা উপলব্ধি করিতে পারে না যে, অতীতে অনেক নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ অতীত হইয়াছিলেন যাহাদের একজনও উম্মতও ছিলো না। কিন্তু তাঁহারাই আল্লাহ পাক-এর মনোনীত ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত ছিলেন। উহারা বুঝিয়া উঠিতে পারে না, উহারা যেভাবে বিরোধিতা করিতেছে, যাহা বলিতেছে, তাহাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-ই বর্তমান সময়ের মুজাদ্দিদ। উহারা বলিয়াছে, ….. “বর্তমান সময়ের সব আলেমদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত বা ফতওয়া হইলো পর্দার লঙঘন বা ঈমান ও নৈতিকতার ক্ষতি করেনা- এ জাতীয় সব অনুষ্ঠানই জায়িয। …. কিন্তু রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী কেবল ব্যতিক্রম যার কাছে টিভিতে ইসলামী অনুষ্ঠান করাও নাকি হারাম।…..” ইহাদের এইরূপ কা-জ্ঞানহীন, জিহালতি কথা আমাদের সেই হাদীছ শরীফের কথাই স্মরণ করাইয়া দেয়। হাদীছ শরীফে বলা হইয়াছে, “ … এটা ইল্ম বিলুপ্ত হওয়ার সময় ঘটিবে।” এইকথা শুনিয়া হযরত জিয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কুরআন শরীফ পাঠ করিয়া থাকি, আমরা আমাদের পুত্রগণকে পাঠ করাইয়ে থাকি এবং আমাদের বংশধরগণ তাহাদের পুত্রগণকে ক্বিয়ামত অবধি তা পাঠ করাইতে থাকিবে, তবে কিরূপে ইল্ম বিলুপ্ত হইবে? জবাবে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, “আমি তোমাকে মদীনা শরীফের একজন শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ধারণা করিতাম, এই ইহুদী-খ্রীস্টানরা কি তাওরাত-ইঞ্জিল পাঠ করেনা? কিন্তু তাহারা উক্ত কিতাবদ্বয়ের হুকুমগুলির প্রতি আমল করে কোথায়?” এই প্রসঙ্গে কুরআন শরীফে ইরশাদ হইয়াছে, “যাহাদেরকে তাওরাত দেয়া হইয়াছিল, অতঃপর তাহারা সেই অনুযায়ী আমল করে নাই বা তাহার অনুসরণ করে নাই। তাহাদের মেছাল ঐ গাধার মত, যেই গাধা কেবল কিতাবই বহন করে।” এই গাধারা মন্তব্য করিয়াছে, … “বাইয়্যিনাত-এর মতে, ইসলামের নামে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করা হারাম। কিন্তু তাহারা এর পক্ষে কুরআনের কোনো আয়াত বা ছহীহ হাদীছের উল্লেখ করেন না। …” কুরআন শরীফে বিবৃত এই গাধাদের বলিতে হয়, তাহারা কি মনে করে যে, ‘ইসলামের নামে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করা হারাম’- এই বিষয়ে কুরআন শরীফের প্রাসঙ্গিক আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ তথা কিতাবের দলীলও আল বাইয়্যিনাত শব্দের পাশাপাশি দেয়ালে লিখিয়া দিতে হইবে। গাধারা অন্তত গরুর মত আকলমন্দ হইলেও বুঝিতে পারিত যে, কুরআন-সুন্নাহ্র যত দলীল তাহা আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়ই বিস্তারিত উল্লেখ রহিয়াছে তাহা দেয়ালে তুলিয়া ধরা সম্ভব নয়। কিন্তু গাধারা আল বাইয়্যিনাত সংগ্রহ না করিয়াই, আল বাইয়্যিনাত না খুলিয়াই, আল বাইয়্যিনাত না দেখিয়াই প্যাঁচার মত সূর্যকে অস্বীকার করার মত বলিতেছে যে, ‘টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠান করা হারাম’ এই সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল আল বাইয়্যিনাত উল্লেখ করে নাই। দেখা যাইতেছে, গাধারা শুধু গাধাই নহে উহারা মিথ্যাবাদীও বটে। আর মিথ্যাবাদীর উপর মহান আল্লাহ পাক-এর ঘোষিত লা’নত। আর লা’নত বর্ষায় বলিয়াই উহারা মূলতঃ গাধাই নহে বরং উহারও অধম বা বালহুম আদলে পরিণত হইয়াছে। রাঁধুনীর জন্য ভাত একটি টিপলেই যথেষ্ট। টিভি চ্যানেলে ইসলামী অনুষ্ঠান করা যাইবে কি যাইবে না উহার একটি উদাহরণ দিলেই আক্বলদারের জন্য যথেষ্ট। তথাকথিত ইসলামী দৈনিক, মৌলবাদীদের মুখপত্র ইনকিলাব গত ১১ নভেম্বর ‘চার চ্যানেলের ঈদ অনুষ্ঠান চূড়ান্ত’ শীর্ষক খবরে বলা হয়, “.. ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের চার চ্যানেল বিটিভি, এনটিভি, এটিএন ও চ্যানেল আই সপ্তাহব্যাপী জমজমাট অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত করেছে। এই চার চ্যানেল নাটক, টেলিফিল্ম, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, ছোটদের অনুষ্ঠান, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান ও বাংলা সিনেমাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। চার চ্যানেলে শুধু নাটকই প্রচার হবে প্রায় অর্ধশত। টেলিফিল্ম ২৩টি ও বাংলা সিনেমা প্রচার হবে প্রায় ৩০টির মতো। এইদিকে এনটিভি এবার চারদিনের ঈদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই চারদিনে থাকবে ৬টি নাটক, ৪টি টেলিফিল্ম, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, সঙ্গীতানুষ্ঠান, শিশুতোষ অনুষ্ঠান, ফ্যাশন শো, নৃত্যানুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র। এটিএন বাংলায় প্রচার হবে ১৩টি নাটক ও ৫টি টেলিফিল্ম। এছাড়া প্রথম বারের মতো ঈদে দু’টি নতুন ছবির প্রিমিয়ার শো করছে। অন্যদিকে চ্যানলে আইয়ে ঈদ উপলক্ষে সাতদিনের অনুষ্ঠানমালায় প্রচার হবে ১২টি নাটক, ৯টি টেলিফিল্ম, ৬টি সঙ্গীতানুষ্ঠান, ২টি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ও হুমায়ূন আহমেদের শ্যামল ছায়া সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার শো।” এখন কুরআন শরীফে সেই গাধাদের প্রতি আমাদের ফের প্রশ্ন- সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান ও বাংলা সিনেমা এগুলো সম্পর্কে কি কুরআন শরীফে জায়িয বলা হয়েছে? আর এইসবে আজ অশ্লীলতা, বেহায়াপনা কত বেশী সে সম্পর্কে দর্শকমাত্রই জানে। এমনকি এ প্রসঙ্গে একই ইনকিলাবে ক্ষোভ প্রকাশ করিয়া আরো বলা হইয়াছে, “এটিএন বাংলায় ঈদের দিন মুক্তি পাবে ‘প্রেম করেছি বেশ করেছি ছবি।’ “প্রেম করেছি বেশ করেছি” ছবির একটি দৃশ্য তুলে ধরা হইলো, চলচ্চিত্রে জনজীবনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়। যে দেশে শতকরা ৯০ (নব্বই) জন মুসলমান সে দেশে মুসলমান মহিলারা কি এই ভঙ্গীতে থাকেন? পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রদর্শিত ছবিটি ঈদের পবিত্রতা কতখানি বজায় রাখিয়াছে তাহা বলাই বাহুল্য।…..” (ইনকিলাব, ১১ নভেম্বর/২০০৪) অর্থাৎ ইহুদী-নাছারাদের কুচক্রে এখন টিভি চ্যানেলগুলোই যে মুসলমানদের চরিত্র নষ্ট করার, ঈমানী চেতনা হারাবারা, ইউরোপ-আমেরিকার মত বল্গাহার। জীবনবোধ সঞ্চারিত করিবার বিধ্বংসী মারণাস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে তাহা ইনকিলাবীদের মত অন্ধরাও স্বীকারে বাধ্য। তাহারপরেও কুরআন শরীফে ঘোষিত এই গাধারা কি করিয়া বলিতে চায় যে, টিভি চ্যানেলে ইসলামী অনুষ্ঠান করা জায়িয। ইহারা কি এতটাই মূর্খ, বধির, অন্ধ ও মহর পরা দিল যে, ইহার পরেও ইহারা বলিবে যে, কুরআন শরীফে টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠান করার বিপক্ষে কোন আয়াত শরীফ নেই। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হইয়াছে, যাহার কুরআন শরীফের কোন আয়াত শরীফ জানা নেই সে যেন একটা উজার ঘর। ইহারা কি এতই উজার ঘর যে ইহারা এটাও জানেনা যে, কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করিয়াছেন, “তোমরা হক্বকে বাতিলের সাথে মিশ্রিত করোনা।” কিছুদিন পূর্বে সাপ্তাহিক খবরের কাগজে ‘একি প শিরোনামে’ ব্যাঙ্গ করে উল্লেখ করা হইয়াছিলো- “সিনেমা চলছিলো বিকেল ৩টা থেকে। এর মধ্যেই আছরের আযান। আর আযানের পরেই দেখা গেল নায়ক-নায়িকার জড়াজড়ি।” (নাউযুবিল্লাহ) এই গাধারা কি ইসলামকে নিয়ে এমন করেই ছিনিমিনি খেলিতে চায়? যেখানে সমস্ত ফুক্বাহায়ে কিরাম ফতওয়া দিয়াছেন যে, গোসলখানায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা মাকরূহ তাহরীমী। সেখানে এই গাধারা কোথাকার গান্ধা, জাহিল, ইউসুফ আল কারজাভিকে হাজির করিয়া তাহার মত জাহির করিয়া বলিতে চাহিয়াছে যে, টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠান জায়িয। (নাঊযুবিল্লাহ) মূলতঃ এইসব জাহিলদের প্রতি সালাম। (ইনশাআল্লাহ চলবে) -মুহম্মদ ওয়ালীর্উ রহমান, ঢাকা।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১