গত ২৪ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইসরাইলি পণ্য নিষিদ্ধ করছে তুরস্ক। গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের হত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলি পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইঙ্গিত দিয়েছেন, তার দেশ ইসরায়েলি কিছু পণ্য আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে চিন্তা করছে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি, ওআইসির সদস্য দেশগুলো সুপারিশ অনুযায়ী ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। কাজেই কোনোভাবেই ইসরায়েলি পণ্য আমদানি করা উচিত হবে না। স্বাভাবিকভাবেই আমরা এই পরিস্থিতির মূল্যায়ন করবো।’
প্রসঙ্গত, আমরা মনে করি, তুরস্কের এই পদক্ষেপ অনেক দেরীতে হলেও আংশিক ঠিক। কারণ সব পণ্য বর্জণ না করে তুরস্ক কেন কিছু পন্য বর্জনের কথা বলেছে সেটা আমাদের বোধোগম্য নয়। আমরা মনে করি ইসরাইলী সব পণ্যই বর্জন করা উচিত।
আন্তর্জাতিক এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত ৭ বছরে ইসরাইলি সেনাদের হামলায় প্রায় ১৫ হাজার (প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি) ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যার মধ্যে ৩০০০ হাজারেরও বেশি অসহায় শিশু। একই সময়ে ইহুদীদের বর্বরোচিত হামলায় আহত হয়েছে ১ লাখ ফিলিস্তিনি। গত ৭ বছরে ইসরাইলি হানাদার সেনারা ৮ লাখ ফিলিস্তিনিকে বন্দী করে নিয়ে গেছে। এদের মধ্যে ১০ হাজার ৫০০ জন শিশু ও ২০০০ জন নারী। গত ৩ বছরে ফিলিস্তিনের কারাগারে অমানুষিক নির্যাতনে ৫০০ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে। ইসরাইলি সেনারা গত ১ দশকে ফিলিস্তিনিদের ১৫ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছে। গত পাঁচ দশকে ভূমি জবরদখল করে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ ইহুদি অবৈধভাবে বসতি গেড়েছে ফিলিস্তিনে; নির্মিত হয়েছে ২৭০টি উপ-শহর। পূর্ব জেরুজালেমের ৮৬ শতাংশ এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের ৪২% জমি এখন অবৈধ ইহুদি বসতির দখলে।
ফিলিস্তিন ছাড়াও ইসরাইল বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোতে আগ্রাসন চালিয়ে সেসব দেশগুলোকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। মার্কিনীদের কাধে ভর করে এবং অর্থসাহায্য দিয়ে ইসরাইল ইরাকে ১৫ বছরে ৩০ লাখেরও বেশি নিরীহ মুসলমানদের শহীদ করেছে, সিরিয়ায় ২ লাখেরও বেশি মুসলমানকে নিমর্মভাবে শহীদ করেছে এবং সিরিয়ার সব বাসিন্দাদের অভিবাসী বানিয়েছে। ইয়েমেনে গোপনে অর্থায়ন ও অস্ত্র সাহায্য দিয়ে আরব বিশ্বের সন্ত্রাসবাদী শক্তি সউদী আরবকে দিয়ে ইয়েমেনের নিরীহ মুসলিমদের উপর অনবরত হামলা করে তাদেরকে শহীদ করেই যাচ্ছে। ইয়েমেনের সউদী ওহাবী সরকারের আগ্রাসনের ফলে সেখানকার পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, ইয়েমেনের ২ কোটি জনগণই ব্যাপক দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। এরমধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখের লোকের জরুরী খাদ্য সাহায্য আবশ্যক হয়ে পড়েছে। ২২ লাখ শিশু প্রচন্ড পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। পুষ্টিহীনতায় প্রতি ১০ মিনিটে ৫ বছরের কম বয়সী একটি করে শিশু মারা যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিদিন ১৪৫ জন শিশু জরুরী খাদ্যসাহায্যের অভাবে নির্মমভাবে মারা যাচ্ছে। ইয়েমেনে সউদী ওহাবী সরকারের সমর্থকেরা খাবার ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রাখায় কলেরায় মারা গেছে ৫ লাখ ইয়েমেনী মুসলমান।
প্রসঙ্গত, তুরস্ক সাম্প্রতিক সময়ে এসে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে তাদের পণ্য বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিলেও দীর্ঘদিনের জুলুম সত্ত্বেও গোটা মুসলিম বিশ্ব ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন “নিশ্চয়ই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইহুদী”। এই আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে ইহুদীদের শত্রু হিসেবে মুসলমানদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
মূলত, আজকের মুসলিম বিশ্ব সম্মানিত দ্বীন ইসলাম থেকে দুরে সরে যাওয়ার কারনে তারা শত্রু চিনতে পারছে না। ইহুদীবাদী ঘৃণ্য ইসরাইল মুসলিম বিশ্বকে ধ্বংস করতে চাইছে সেই ইসরাইলিদের সহায়তা করছে উল্টো বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ। এক জরীপে দেখা গেছে যে, ইসরাইল তাদের বিভিন্ন ব্রান্ডের পণ্যসামগ্রী মুসলিম বিশ্বে রফতানি করে তাদের অর্থনীতির ৮০ শতাংশ শক্তিশালী করছে। অর্থাৎ এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, মুসলিম বিশ্ব ইসরাইলের বিরুদ্ধে কতটা ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র খোদ বাংলাদেশেই ইসরাইলের বিভিন্ন কোম্পানি ও পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়ে আসছে। যার মধ্যে রয়েছে, পেপসুডেন্ট, ডাভ, স্যাভলন, সার্ফএক্সেল, হুইল, রেক্সোনা, রবিন ব্লু, রিন, সানসিল্ক, হেড এন্ড শোলডার, লাক্স, ক্লিয়ার, ওয়াল ক্লিয়ার, ডেইরি মিল্ক, ক্যাডবেরিস, নেসলে, হরলিক্স, কোকাকোলা, স্প্রাইড, ফানটা, নকিয়া, ইনটেল, ডেল, এইচপি, এলজি, পন্ডস, জনসন, সিন্ড্রেলা, এডোমাস, মনটেক্স, লাক্সার, পার্কার, এডিডাস, এ্যাকশন, নাইকি ইত্যাদি বহু পণ্য সামগ্রী।
প্রসঙ্গত, এক গবেষণায় জানা গেছে- যদি বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলোতে ইহুদীদের পণ্য বর্জন করা হয় তাহলে অবিলম্বে ইসরাইলের গোটা অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। ইসরাইলী অর্থনীতি ধ্বংসের পাশাপাশি যদি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর সামরিক শক্তি একজোট হয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়া যায় তাহলে বিশ্ব মানচিত্রে ইসরাইল শুধু ইতিহাসের একটি নাম হয়ে থাকবে। অস্তিত্ব মিটে যাবে ইসরাইলের। বিশ্বের ৫৭ টি দেশের সম্মিলিত বাহিনীর সক্রিয় সৈন্যের সংখ্যা দাঁড়াবে কমপক্ষে ৫২ লাখ ৬১০০। সেখানে সম্মিলিত প্রতিরক্ষা বাজেট দাঁড়াবে প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে ইসরাইলের সক্রিয় সেনার সংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার। তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন মাত্র। যে কারণে ইসরাইল সৈন্যরা কখনোই মুসলিম সৈন্যদের সঙ্গে পেরে উঠা সম্ভব নয়। বরং মুসলিম দেশগুলো চাইলে ইসরাইলকে চারদিক থেকে ঘিরেও ফেলতে পারবে।
সঙ্গতকারণেই ইসরাইলের বিরুদ্ধে সকল মুসলিম দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা তথা সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা বা যুদ্ধ করা এখন মুসলিম বিশ্বের জন্য ফরযের উপরে ফরয।
-মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান, ঢাকা।
প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১