ধর্মব্যবসায়ীদের মতোই নারীবাদের নামেও ইদানীং নারীবাদী ব্যবসায়ীদের অদ্ভুত উদ্ভব হয়েছে।বর্তমান সরকারকে ব্যবহার করে নিজেদের আখের গোছানোর জন্য এরা কুরআন শরীফ-এর
সরাসরি বিরোধিতায়, ইসলামের উপর আঘাত হানতে সরকারকে বিভ্রান্ত ও প্ররোচিত করছে।
মৌলবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের সুযোগ দিয়ে সরকারের পায়ে কুড়াল মারার পাঁয়তারা করছে।‘ভাই-বোন সমান সম্পত্তি চায়’- এমন দাবি ৬৮ হাজার গ্রামে ৬৮ নারীরও নেই।
ভাই যে দ্বিগুণ সম্পদ পায় তা আরেকজন নারীর জন্যই ব্যয়িত হয়।
সম্পত্তিতে ভাই-বোনের সমতা প্রণয়ন আওয়ামী আদর্শের সাথে সংঘাতপূর্ণ
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও বিশ্বাসের খেলাফ।বঙ্গবন্ধুর ’৭০-এর নির্বাচনী প্রচারণা ও বর্তমান মহাজোটের মহাবিজয়ের পিছনে মূল প্রচারণা,
‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’- তার সাথে প্রকাশ্য প্রতারণা।
যা দেশের ৯৭ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রচ-ভাবে আঘাত করবে।
দেশবাসীকে প্রবলভাবে আন্দোলিত করবে। সরকারকে তাই এক্ষণি আবহমান বাংলার গণমানসের সাথে
বিচ্ছিন্ন শহুরে সুযোগ সন্ধানী নব্য নারীবাদী ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও কথিত রোকেয়া দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ০৯.১২.২০১০ ঈসায়ী তারিখে পত্র-পত্রিকায় পত্রস্থ হয়:
“বেগম রোকেয়া দিবস আজ: আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। নারীমুক্তি আন্দোলন বেগবান করার দৃপ্ত শপথে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী, তার জন্মস্থান রংপুর এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ ও সামাজিক সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গভীর শ্রদ্ধায় রোকেয়ার নীতি ও আদর্শকে স্মরণ করবে।
রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থায় নারীর সমান অধিকারের জন্য মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া আমৃত্যু লড়াই করেছেন। মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে নারীকে গৃহকোণে আবদ্ধ রাখার ধ্যান-ধারণা পাল্টাতে তিনি ছিলেন সদা সোচ্চার। তার দেখিয়ে দেওয়া পথ ধরেই নারীমুক্তি আন্দোলন চলছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রদত্ত বাণীকে তারা রোকেয়ার চেতনা, নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নারীমুক্তি আন্দোলন বেগবান করার আহ্বান জানান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেছেন, নারীদের শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হয়ে উন্নয়নের মূলস্রোতে শামিল হতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার চেতনা ও আদর্শ নারীসমাজকে আরও উদ্যমী ও অনুপ্রাণিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
বলাবাহুল্য, ‘নারী অধিকার’ নিয়ে আন্দোলন স্বাধীনতা উত্তর শনৈঃ শনৈঃ সরব হয়েছে। এ পর্যন্ত নারী আন্দোলনে
দেশী-বিদেশী তকমা ও নেওয়াজও অনেক নারী নেত্রীর নসীবে জুটেছে।
বেগম রোকেয়াকে নারী আন্দোলনের অগ্রদূত বলে অন্তঃহীন মূল্যায়নও হয়েছে।
রোকেয়া বন্দনাতে মুখের ফেনা বন্ধ হয়ে নাভিশ্বাসও উঠেছে অনেকের।
কিন্তু কথিত নারী আন্দোলন এবং রোকেয়া বন্দনাকারীদের প্রতি অসংখ্য তীর্যক প্রশ্নের মাঝে একটি নিক্ষেপ করলেই তাদের ধরাশয়ী করা যায়।
সেটি হলো- বেগম রোকেয়া বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামের মধ্যে যে ক্ষুদ্র এক গ্রামে জš§গ্রহণ করেছিলেন ‘রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রাম’ সে গ্রামখানিকে কী আজ পর্যন্ত তারা নারী বঞ্চনা, শোষণ-নির্যাতন হীন করে তুলতে পেরেছেন?
তাহলে তাদের এতোসব ঢাকঢোল পেটানো
এতোসব সেমিনার সিম্পোজিয়াম
এতোসব শোভাযাত্রা এতোসব কর্মসূচি করার ফলটা কী দাঁড়ালো?
কারা কী পেলো?
যে রোকেয়াকে নারী আন্দোলনের জননী ও গুরুমাতা বলে তাদের দীক্ষা
তাদের অভিযাত্রা-
সে গুরুমাতার গ্রামখানিকেও স্বাধীনতার ৩৯ বছরে তারা নারী অধিকার বাস্তবায়নে পর্যবসিত করতে পারলেন না।
এতে করে সত্যিকার অর্থে তারা কতোটুকু নারী অধিকার আন্দালনে অথবা রোকেয়া মূল্যায়নে নিবেদিত ও আগ্রসী- সে প্রশ্ন ঘনীভূত হয়।
তাই বলে নিজেদের প্রাপ্তি অর্জন তথা ব্যবসাকে কিন্তু
তারা অবজ্ঞা করেননি
অবহেলা করেননি
অস্বীকার করেননি।
তাই নারী আন্দোলনও এ সময়ে অনেক সুবিধা অর্জনের একটা মোক্ষম ব্যবসা হিসেবে অনেকের নজর কেড়েছে।
সে সন্ধানে এখন যত্র-তত্র ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক নারীবাদী সংগঠন যেমন গজিয়েছে
তেমনি সিনেমার তৃতীয় শ্রেণীর নায়িকা
অথবা এক্সট্রা কিংবা ফালতু পর্যায়ের অনেক নারী নেত্রী আগাছাও জন্মিয়েছে।
আসলে যে এরা নারী অধিকার বাস্তবায়নে সচেষ্ট নয়;
এক রোকেয়ার গ্রামে এখনো ৮০ ভাগ বঞ্চিত নারীর উপস্থিতি তো তার বড় প্রমাণ। আর এসব ব্যর্থতাকে আড়াল করতে তারা যে বিদেশী এজেন্টদের চর্বিত চর্বন তথা হিজ মাস্টার্স ভয়েস উচ্চারণ করেন তাহলো:
নারী অধিকার আন্দোলনের নামে-
ইসলামের বিরোধিতা করণ
পর্দার বিরুদ্ধে বিবৃতি বচন। (নাঊযুবিল্লাহ)
ভাবখানা এই যে, দেশ থেকে ইসলাম উঠিয়ে দিলে অথবা সব মুসলমান মুসলমানিত্ব ছেড়ে দিলেই দেশে নারী অধিকার বাস্তবায়িত হবে। (নাঊযুবিল্লাহ)
বলাবাহুল্য, ইসলাম এদেশে উল্লেখযোগ্য কিছুই নেই। মুসলমানে মাঝেও মুসলমানিত্ব তেমন কিছু নেই।
কিন্তু তাতেও কী কথিত নারী অধিকার বাস্তবায়িত হয়েছে?
সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে প্রতিভাত হয় যে, ইসলাম বৈরী ভাবাপন্নরাই তথা আধুনিক শিক্ষিত স্মার্ট ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারকারীরাই বীভৎস ও পৈশাচিক কায়দায় নারী নির্যাতন করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
ওই রিপোর্টে বলা হয়: ‘প্রযুক্তির সহায়তায় নারী উৎপীড়ন: রাজধানীর একটি স্বনামধন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী মাইশা (ছদ্মনাম)। প্রতিরাতে মাইশা ফেসবুক খুলে বসে এবং সেখানে তার অসংখ্য বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। মাইশার এক বন্ধু একদিন তাকে আমন্ত্রণ জানায় সামনাসামনি দেখা করার। বন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মাইশা আপত্তিকর পরিস্থিতির শিকার হয় এবং সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি মেনে নিতে না পেরে সে এখন মানসিক ভারসাম্যহীন।
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের ছাত্রী মুনিয়া আহমেদ। কদিন আগে রিকশায় যাচ্ছিলেন। ট্রাফিক সিগন্যালে রিকশা দাঁড়িয়ে থাকার সময় খেয়াল করলেন পাশ থেকে একটি ছেলে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তার ছবি তুলছে। বুঝতে পেরে দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলেন মুনিয়া।
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে নারী টিজিংয়ে (নারীকে
উত্ত্যক্ত করা) যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেটে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের নারী। মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা, নগ্ন ছবি এসএমএস করা এমন সব বিব্রতকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বড়রাও এসব পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি বিবেকবান মানুষ এখন উদ্বিগ্ন।
ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন ছাত্রী বললেন, কলেজের গেট পেরুতেই মোবাইল বেজে ওঠে, ফোন ধরতেই কেমন আছো, আমি তোমার শুভাকাঙক্ষী, বন্ধুত্ব করতে চাই কিংবা তোমাকে ভালোবাসি- বাসায় না পৌঁছানো পর্যন্ত শুনতে হয় এমন ভালো-মন্দ নানা টিজিং। এসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে রেগে গেলে শুনতে হয় আজেবাজে কথা। নয়তো মিসকল দিয়ে অতিষ্ঠ করে তোলে। ফোন রিসিভ না করলে আপত্তিকর ম্যাসেজ ও অশ্লীল ছবি পাঠায়।
ঢাকার কয়েকটি স্কুল-কলেজ পাড়া সরেজমিন পরিদর্শন করে ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। স্কুল-কলেজে আসা যাওয়ার সময়, বিশেষ করে বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর আশেপাশে ছুটির সময়ে বখাটে দলের উপস্থিতি ইদানীং কিছুটা কমে গেলেও এখন ফেসবুক ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নারীরা উত্ত্যক্ত হচ্ছে বেশি। উচ্চবিত্তরা উত্ত্যক্ত করছে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে, আর যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছে না তারা গলির মুখে, চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন আওয়াজ বা মন্তব্য ছুঁড়ে উত্ত্যক্ত করছে। এর সঙ্গে শীষ বাজানো, চোখ টিপ্পনী দেয়া, মোবাইল ফোনে মিসকল ও আপত্তিকর বার্তা পাঠানো, ভিড়ের মধ্যে ধাক্কা দেওয়া, ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সিগারেটের ধোঁয়া ছোড়া, যানবাহনের ভেতর খোঁচা মারার মতো বিষয়গুলো তো রয়েছেই।
আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ, সরকারের আইনরক্ষাকারী সংস্থার সদস্যরা বলেন, বখাটে বা উত্ত্যক্তকারীরা এখন শুধু স্কুল-কলেজের সামনে বা রাস্তা-ঘাটেই মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে ক্ষান্ত হচ্ছে না, তারা ব্যবহার করছে উন্নত সব প্রযুক্তি।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল বলেন, দেশে এখন সাইবার ক্রাইমও হচ্ছে। এজন্যে আইন দরকার এবং সমাজের সচেতনতা দরকার। সাইবার ক্রাইমের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে ও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে অনেকে। এছাড়া অনেকে নানা ধরনের মানসিক জটিলতার শিকার হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, এসব ক্ষেত্রে কথিত নারীবাদীদের
কোনো আওয়াজ নেই
কোনো সিদ্ধান্ত নেই
কোনো সমাধান জানা নেই।
তারা এ যাবৎ পর্যন্ত যা করতে পারছেন তা হলো- ওই ‘নতুন বোতলে পুরোনো মদ’- উদাহরণের নিকৃষ্ট প্রতিফলন। (নাঊযুবিল্লাহ)
সম্প্রতি একটি হোটেলে আয়োজিত ‘নারী প্রতিনিধির নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলো’ শীর্ষক আলোচনা সভা এর উদাহরণ।
এতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, শ্রমবাজারে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করেছে। এ জন্য ১৯৯৭ সালে প্রণীত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা সংশোধন করা হবে।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন কর্মজীবী নারীর সভাপতি শিরিন আখতার। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আআসম আরেফিন সিদ্দিক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, নিজেরা করি’র নির্বাহী পরিচালক খুশি কবির, কর্মজীবী নারীর সাধারণ সম্পাদক শারমিন কবির।
প্রধান অতিথির সুরে মূলত সভা আয়োজনকারীদের দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাসই সান্তনা স্বরূপ উচ্চারিত হয়েছে।
কিন্তু এক্ষেত্রে আবারও যা মূল্যায়নের বিষয় তাহলো- জালেম শাহী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিতর্কিত ও কুখ্যাত উপদেষ্টা রাশেদা আর চিহ্নিত ও বিতর্কিত খুশি কবির গংরা কিন্তু আদৌ এদেশের ৬৮ হাজার গ্রামের নারীর প্রতিভূ নন, প্রতিনিধিও নয়।
কায়দা করে তারা যে কথাটা আপ্তভাবে উচ্চারণ করেছেন তা সারাদেশে আগুন জ্বেলে তাতে ঘি ঢালারই শামিল। যার উত্তাপে ভয় পেয়ে খোদ জালেম শাহী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পর্যন্ত সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ-এর সরাসরি খেলাফ নীতি প্রণয়ন থেকে ‘ছেড়ে দে মা- কেঁদে বাঁচি’র মতো করে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছে।
কিন্তু ইবলিসের বংশবদরা নতুন করে মাথা তোলার সাহস করেছে। তারা আজ উচ্চারণ করাচ্ছে যে, ১৯৯৭ সালে প্রণীত নারী নীতিতে উল্লেখযোগ্য কিছু এজেন্ডা বাদ পড়েছে। ওই সব নীতিমালা সংযোজন করে শীঘ্রই তা চূড়ান্ত করা হবে।
’দুইয়ে দুইয়ে চার’ -এর মত খুব সহজেই বলা যায় যে, বাদ বলতে মূলত তারা ওই সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথাই বোঝাতে চাইছেন। এবং সেটা পূরণ করেই নতুন নীতিমালা ঘোষণা করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)
বলাবাহুল্য, এসব নাকি তারা করতে যাচ্ছেন বর্তমান সরকারের নীতিমালার দাবিতে। আওয়ামী লীগের চেতনার প্রেক্ষিতে।
স্বয়ং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘এ সরকার নারীদের উন্নয়নে সকল প্রকার কাজ করে যাচ্ছে। নারীদের ক্ষমতায়ন এবং অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধ পরিকর।’
সঙ্গতকারণেই এখানে ইসলাম সম্পর্কিত খোদ বঙ্গবন্ধু’র স্পষ্ট উচ্চারণ এবং বর্তমান দিন বদলের সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা এসে যায়।
ইসলাম সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু স্পষ্টভাবে বলেছেন:
“জনসংখ্যার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের প্রিয় ধর্ম হলো ইসলাম। আওয়ামী লীগ এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, শাসনতন্ত্রে সুস্পষ্ট গ্যারান্টি থাকবে যে, পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহয় সন্নিবেশিত ইসলামের নির্দেশনাবলীর পরিপন্থী কোন আইন পাকিস্তানে প্রণয়ন বা বলবৎ করা চলবে না। শাসনতন্ত্রে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের পবিত্রতা রক্ষার গ্যারান্টি সন্নিবেশিত হবে। সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য পর্যাপ্ত বিধিব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করেছেন:
“আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য- লেবেল সর্বস্ব ইসলামে আমরা বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলাম। আমাদের ইসলাম হযরত রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইসলাম। যে ইসলাম জগদ্বাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের সুবক্তা সেজে পাকিস্তানের পাক মাটিতে বরাবর যারা অন্যায়, অনাচার, শোষণ বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন, আমাদের সংগ্রাম সেই মোশাবেকদেরই বিরুদ্ধে। যে দেশের শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমান; সে দেশে ইসলাম বিরোধী আইন পাসের সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারেন কেবল তারাই যাদের ঈমানই আদতে নাজুক আর ইসলামকে যারা ব্যবহার করেন দুনিয়াতে ফায়েদা তোলার কাজে।
অতএব, আমরা যারা আল্লাহ পাক উনার মজলুম বান্দাদের জন্য সংগ্রাম করছি, তারা ইসলামের বিরোধিতা করা তো দূরের কথা বরং ইসলামের বিধান মতে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠারই উমেদার, আর সে ব্যাপারে প্রতিবন্ধক হলেন তারাই যারা ইসলাম বিপন্নের জিগির তুলে জনগণকে ধোঁকা দিতে চান।” (সূত্র: আমার কিছু কথা- শেখ মুজিবুর রহমান। প্রকাশক: কাজী শহিদুল ইসলাম শামীম, নিউজ শিক্ষা প্রকাশনী, ৩৮/বাংলাবাজার। ফোন: ০১৭১৫১৩৪২০৬, প্রথম প্রকাশ: ২১ মে, ১৯৯৫)
লক্ষণীয়, বঙ্গবন্ধু নিজেই অত্যন্ত সাবলীল কন্ঠে জোরদার ভাষায় উচ্চারণ করেছেন যে, ইসলামই ইনসাফ। ইসলামের বিধান মেনেই তিনি সমাজে শান্তি ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চান। আর যারা ইসলামকে বিকৃত করতে চায়, যারা ইসলামের নামে ইসলামকে কম-বেশি তথা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে চায় তারা ইসলামের নামে ব্যবসায়ী।
তারা জামাতী এবং নব্য নারীবাদী।
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক সম্পত্তিতে নারীদের অর্ধেক করেছেন শুধু পিতার সম্পত্তির ক্ষেত্রে।
কিন্তু সে নারী তার স্বামীর সম্পদের হিস্যাও পায়; এবং স্বামী তার সবকিছুর জিম্মাদার।
কাজেই নারীকে এক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হয়েছে বলার কোন অবকাশ নেই।
বরং যে ছেলে বাবার সম্পত্তিতে দু’ভাগ পাচ্ছে; সে কিন্তু ওই সম্পদ ব্যয় করছে অপর একজন নারীর প্রতি তার ওয়াদাকৃত জিম্মাদারীর দায়িত্ব পালনেই।
কাজেই এক অর্থে সব সম্পত্তির সব কিছুই বলতে গেলে নারীর প্রতিই ব্যয়িত হচ্ছে।
আর ইসলামের এ সম্পত্তির ভাগটা মূলত নারীর প্রতি দায়িত্ব পালন ও সম্মান দানের অধিকতর আবেদনটি ফুটিয়ে তুলেছে। সুবহানাল্লাহ!
আর সে ইনসাফের কারণেই মূলত ইসলাম-এ তথা কুরআন শরীফ-এ বাবার সম্পত্তিতে ছেলের দুই ভাগ মেয়ের এক ভাগ ‘সূরা নিসা’-এ সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
কাজেই এর পরিবর্তন করতে যাওয়া মূলত
* কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ পরিবর্তন করা।
* ইসলামের উপর আঘাত হানা।
* রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের অবমাননা করা।
সে সাথে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আওয়ামী লীগের প্রচারণা; সর্বোপরি এবারের নির্বাচনে মহা বিজয়ের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাস হবে না’- এ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সাথে প্রকাশ্য বেঈমানী করা। (নাঊযুবিল্লাহ)
* এদেশের শতকরা ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হানা।
* এদেশের মুসলমানদের ধর্ম পালনে বাধাগ্রস্ত করা।
* অর্ধম করণে বাধ্য করা। (নাঊযুবিল্লাহ)
* বিজয়ের মূলে কুঠারাঘাত করা।
* সারা দেশে অশান্তির অনল জ্বালানো।
* মৌলবাদী-জামাতীদের সুযোগ করে দেয়া।
* খাল কেটে কুমির আনার চেয়েও বড় আত্মশ্লাঘার পথ প্রসারিত করা।
* দেশের ৬৮ হাজার নারীর বিপরীতে ৬৮ জনেরও কম নারী নেত্রীর কথায় নৃত্য করা।
* সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও বিশ্বাস এবং নীতিমালার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা।
কারণ, ৭০-এর নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধু দৃঢ়চিত্তে বলেছিলেন, “কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাস হবে না”- যা বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন তার বইয়ে লিখেছেন। অতএব, ধর্মব্যবসায়ীদের মতই নারীবাদের নামে যেসব নারীব্যবসায়ী নেত্রী সরকারকে ব্যবহার করে নিজেদের ব্যবসা প্রসার করতে প্রচ- আগ্রহ দেখাচ্ছেন, প্রচুর চেষ্টা করছেন তাদের প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন না হলে সরকারের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
[পুনশ্চঃ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নারীবাদের নামে ইসলাম বিদ্বেষী মহলটি সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমতা করতে উদ্যত হয়েছিলো- তখন লেখক বর্তমান আইনমন্ত্রীর বাসায় এ বিষয়টি আলোচনায় আনলে তিনি দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে জবাব দিয়েছিলেন- এটা কোনোমতেই হতে পারে না এবং পারবে না। কারণ এটা সরাসরি কুরআন শরীফ-এর খিলাফ ও কুরআন শরীফ-এর সাথে বিরোধিতা।
-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০