বিখ্যাত সে উক্তিটি করেছিলেন সদ্য ক্ষমতাহীন প্রধানমন্ত্রী। তার উক্তির ভাবার্থ ছিল বাংলাদেশ যদি সত্যিই ধর্মপ্রাণ মুছল্লি মুত্তাকীর দেশ হয় তবে আমার মত মহিলা দু’বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয় কি করে?
প্রধানমন্ত্রীর সে প্রশ্ন মূলত: সাধারণ ধর্মপ্রাণদের প্রতি বিদ্ধ না হয়ে বিদ্ধ হয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দখলদার প্রতিনিধিত্বকারী মাওলানা, মুফতি, মুহাদ্দিস, শাইখুল হাদীস, খতীব নামধারীদের প্রতি। কারণ ইসলামের নাম দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে প্রবৃত্ত হবার পূর্বে তারাও পর্দার পক্ষে শক্ত কথা বলতে আগ্রহী ছিলেন। যদিও তাদের আজকের কর্মকাণ্ডে প্রতিভাত হয়, সে সময় পর্দার পথে কথা বলাই তাদের ধর্মব্যবসার জন্য সুবিধাজনক মনে হওয়ায় তারা তাই করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টিতে যে তারা আন্তরিক ছিলেন না আজকের বিচ্যুতিই তার প্রমাণ। তবে কতটুকু গুরুত্ব তারাও স্বীকার করতেন তার নিদর্শন রয়েছে বৈকি।
৩৬ বাংলাবাজার থেকে ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত। আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা শীর্ষক বইয়ে ৮১-৮২ পৃষ্ঠায় লিখেন:
“হক পন্থী পীর মুর্শিদগণ সর্বদা আল্লাহর ভয় এবং আখেরাতের চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন, কোন মহিলা মুরীদের সাথে মুছাফা করা বা তার শরীর স্পর্শ করা বা নিজের শরীর স্পর্শ করতে দেয়া তো দূরের কথা, নিজের সামনেও তাদেরকে আসতে দেন না। বরং পর্দার আড়াল থেকে তালীম, তালকীন দিয়ে থাকেন, আমাদের সিলসিলার প্রসিদ্ধ বুজর্গ হযরত মাওলানা খলীল আহমদ সাহেব মাহাজেরে মদনী (রহ) যখন মহিলাদেরকে বাই’আত করতেন তখন মাঝে পর্দা থাকা সত্ত্বেও মহিলাদের দিকে পিঠ দিয়ে বসতেন। এবং তালীম তালকীন করতেন। একদা এভাবেই কোন এক এলাকাতে মহিলাদেরকে বাই’আত করছিলেন তখন জনৈকা মহিলা আরয করে যে, মাঝে যখন পর্দা রয়েছে তারপরেও অন্যদিকে ফিরে বসার প্রয়োজন কি? জবাবে তিনি বললেন, তোমরা কি বরে বুঝলে আমর মুখ কোন দিকে রয়েছে। বোঝা যায় যে, পর্দার আড়াল থেকেও উকি দিয়ে তোমরা আমাকে দেখে ফেল। এজন্যই আমি পর্দার দিকে পিঠ দিয়ে বসে থাকি। আমাদের আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত সিলসিলার আরেক বুজুর্গ সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, একবার জনৈকা বয়স্কা নারী তার অল্প বয়স্কা পুত্রকে নিয়ে কোন প্রয়োজনে তার খিদমতে হাজির হওয়ার প্রার্থনা করলেন, স্ত্রী লোকটি পূর্ব থেকেই তার মুরীদ ছিলেন। কিন্তু তিনি তাকে খিদমতে হাজির হওয়ার অনুমতি না দিয়ে বলে পাঠালেন যে বালেগ মুহরিম সাথে নিয়ে এসো, তারপর তোমার বক্তব্য শুনবো। এটাই হল হকপন্থীদের আদর্শ এবং পর্দার প্রতি যতœ নেয়ার নিদর্শন।”
কিন্তু আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখতে পেলাম যে উল্লিখিত হক নিদর্শন থেকে তার সংকলক তথাকথিত শাইখুল হাদীস গং কি বেপরওয়া ও নির্লজ্জভাবে সরে আসছেন। প্রকাশ্যে পর্দার খেলাফ করছেন। তাদের ম্যাডামের সাথে ঘন ঘন সাক্ষাত করেছেন। গাড়ীতে পাশাপাশি বসেছেন। চেয়ারে পাশাপাশি বসে ইফতার করেছেন। মঞ্চে মহিলার পায়ের নীচে বসেছেন। এবং শুধু তিনিই নয় তার সমগোত্রীয় সবাইসহ তথাকথিত আল্লামা ফুলতলী পর্যন্ত এই মহিলা প্রধানমন্ত্রীর দর্শনার্থীদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। এত সব করে তারা যা প্রমাণ করেছেন যে বর্তমান ইসলামে আর পর্দার প্রয়োজন নেই। অথবা বেপর্দা হওয়া দোষের কিছু নয়।
অথবা বর্তমান যুগে চলতে হলে এ রকম বেপর্দা হতেই হবে। নইলে ইসলামের কাজ করা যাবে না, সমাজ জীবনে চলা যাবে না, বিশেষ করে ভোটের রাজনীতি করা যাবে না।
বলাবাহুল্য, এ কথাটিই ব্যক্ত করেছেন সম্প্রতি বৃটেনে হিজাব নিয়ে ফেতনা ও ঔদ্ধত্ব সৃষ্টিকারী ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জ্যাক স্ট্র। ল্যাঙ্কশায়ার টেলিগ্রাফ পত্রিকায় তিনি বলেছেন যে, হিজাব বা বোরখা পরা মুসলিম মহিলাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তার ব্যাপক অসুবিধা হয়।
উল্লেখ্য স্ট্র ব্লাক বার্ন নির্বাচনী এলাকার এমপি। আগামী নির্বাচনের ভিত তৈরীর জন্য এখনই তিনি গনসংযোগ জরুরী ভেবে তা করছেন। আর সেক্ষেত্রে তার এলাকা মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ায় মুসলিম মহিলার সম্মুখীন হচ্ছেন। স্ট্র বলেন, সহজ ও খোলামেলা যোগাযোগের স্বার্থে তিনি সব সময় নিজের নির্বাচনী এলাকায় মুসলিম নারীদের মুখ খোলা রেখে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।
অর্থাৎ দেখা গেল নির্বাচন তথা ভোটের স্বার্থে যেমন পর্দাকে চান না জ্যাক স্ট্র তেমনি তাদের রাজনৈতিক মতবাদ গণতন্ত্রের পথে চলতে গিয়ে ইসলামের নামধারী এদেশীয় ধর্মব্যবসায়ীরাও স্ট্রর মত একইভাবে পর্দাকে বিসর্জন দেন, ভোটের প্রয়োজনে মহিলাদের সাথে খোলামেলা বসেন কথা বলেন।
অর্থাৎ ভোট আর ক্ষমতার প্রশ্নে জ্যাক স্ট্র আর ধর্মব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই বরং হুবহুই মিল। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-মুহম্মদ মাহবুব বদরী, ঢাকা
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫